মহরম ও আশুরা ২০২৫:কত তারিখে,আমল,রোজা,ফজিলত,ইতিহাস জানুন

মহরম হলো ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস, যা মুসলিমদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। এতে প্রকাশ পায় ইসলামী মহাকাশবিজ্ঞানের সূচনা, ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ-সংস্কৃতির নানা দিক। ২০২৫ সালে মহরম কোন তারিখ থেকে শুরু হবে এবং এর পবিত্রতা ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এই পোস্টে তুলে ধরা হবে।

আরও পড়ুন-সিজদা থেকে উঠে কোন দোয়া পড়তে হয়?

মহরম ও আশুরা সম্পর্কে জানুন

ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহরম, আর এই মাসের দশম দিনটি হলো আশুরা। মুসলিমদের জন্য এই দিন শুধু একটি তারিখ নয়, বরং এটি এক বেদনার্ত ইতিহাস, আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি এবং শিক্ষা গ্রহণের অনন্য সময়।

মহরম মাসকে পবিত্র চারটি মাসের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। এই মাসে বিশেষ করে নফল রোযা রাখা, ইবাদতে মগ্ন থাকা এবং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া সুন্নাহ হিসেবে বিবেচিত।

আশুরা দিবস (১০ মহরম) মুসলিম ইতিহাসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত––

  • এই দিনে হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা ফেরাউন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।

  • হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পর্বতে থেমেছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মত রয়েছে।

  • সর্বোপরি, আশুরার দিনেই কারবালার ময়দানে হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) তাঁর পরিবার ও সাহাবীদের নিয়ে শহীদ হন, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গভীর শোকের দিন।

এই দিন আমাদের শেখায়—

“সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় থাকা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং আল্লাহর প্রতি সর্বোচ্চ তাওয়াক্কুল রাখা।”

মহরম ও আশুরার রোজা কয়টি?

আশুরার রোজা ২টি রাখা সুন্নত:

  1. ৯ মহরম + ১০ মহরম (একসাথে ২টি রোজা) – এটি সর্বোত্তম

  2. শুধু ১০ মহরম (১টি রোজা) – মৌলিকভাবে জায়েয

হাদিসের দলিল:
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন:
“আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ৯ তারিখেও রোজা রাখব।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৩৪)

মহরম ও আশুরার রোজার ফজিলত

মহরম মাসের ১০ তারিখ, যা আশুরা নামে পরিচিত, ইসলামে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে রোজা রাখার বিশেষ গুরুত্ব ও সওয়াব রয়েছে, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নবী মুহাম্মদ (স.) নিজে এই দিনে রোজা রাখতেন এবং উম্মতকে তা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।

১. গুনাহ মাফের সুযোগ

আশুরার রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী এক বছরের ছোট গুনাহ (সগিরা) মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
“আশুরার রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গণ্য হয়।” (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, আশুরার রোজা শুধু একটি ইবাদতই নয়, বরং তা মুমিনের জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত।

২. সর্বোত্তম সুন্নত আমল

ইসলামের ইতিহাসে আশুরার রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন,
“আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে রমজান ও আশুরা ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত গুরুত্ব সহকারে রোজা রাখতে দেখিনি।” (সহিহ বুখারি: ২০০৪)।
এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, এই রোজা রমজানের পরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমলগুলোর একটি।

৩. ইহুদিদের থেকে ভিন্নতা ও সুন্নত পদ্ধতি

ইহুদিরাও আশুরার দিনে রোজা রাখত, কারণ এই দিনে নবী মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইল ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। রাসুল (স.) যখন মদিনায় হিজরত করলেন, তখন তিনি দেখলেন ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখছে। তিনি বললেন,
“আমরা তোমাদের চেয়ে মুসা (আ.)-এর বেশি নিকটবর্তী।”
এরপর তিনি মুসলিমদের এই দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দেন এবং পরের বছর ৯ মহরমও রোজা রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, যাতে ইহুদিদের থেকে আলাদা হওয়া যায় (সহিহ মুসলিম: ১১৩৪)। এজন্যই ৯ ও ১০ মহরম রোজা রাখা সর্বোত্তম।

৪. শুধু ১০ মহরম রোজা রাখার বিধান

যদি কেউ ৯ মহরম রোজা রাখতে না পারে, তাহলে শুধু ১০ মহরম রোজা রাখলেও তা গ্রহণযোগ্য। তবে ৯ ও ১০ উভয় দিন রোজা রাখলে সওয়াব অনেক বেশি। অন্যদিকে, শুধু ১১ মহরম রোজা রাখা বা ১০ ও ১১ মহরম রোজা রাখা মাকরুহ, কারণ এটি ইহুদিদের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে।

৫. আশুরার দিনের অন্যান্য ফজিলত

  • এই দিনে নবী নূহ (আ.)-এর জাহাজ নিরাপদে স্থানে পৌঁছেছিল।

  • নবী মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায় সমুদ্র অতিক্রম করে মুক্তি পেয়েছিলেন।

  • এই দিনে তাওবা কবুল হওয়ারও বিশেষ সুযোগ রয়েছে।

৬. বাংলাদেশে আশুরার রোজার প্রস্তুতি

বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী আশুরার তারিখ নির্ধারিত হয়। তাই স্থানীয় মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টার থেকে তারিখ নিশ্চিত করে রোজা রাখা উচিত। এছাড়াও, এই দিনে বেশি বেশি দান-সদকা, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।

এই দিনে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণ করেও মুসলিমদের উচিত সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থাকা এবং বিভেদ এড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা। আশুরার রোজা শুধু একটি ধর্মীয় রীতি নয়, বরং তা ঈমানী শক্তি ও আত্মশুদ্ধির একটি মাধ্যম।

মহরম ও আশুরার আমল

মহরম মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো আশুরার রোজা রাখা। নবী করিম (স.) এরশাদ করেছেন, “আশুরার রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এটি পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে” (সহিহ মুসলিম)। এই রোজা রাখার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো ৯ ও ১০ মহরম একসাথে রোজা রাখা, যা ইহুদিদের থেকে ভিন্নতা প্রকাশ করে। তবে শুধু ১০ মহরম রোজা রাখলেও তা গ্রহণযোগ্য। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, ১০ ও ১১ মহরম রোজা রাখা মাকরুহ, কারণ এটি ইহুদিদের আমলের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে।

দান-সদকার গুরুত্ব ও প্রয়োগ

আশুরার দিনে দান-সদকার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে এই দিনের দান-সদকা সাধারণ সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের কারণ হয়। উত্তম হলো গরিব-দুঃখীদের সরাসরি সাহায্য করা, বিশেষত এতিম ও অসহায়দের খাবার বিতরণ করা। এছাড়া মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করাও এই দিনের বিশেষ আমলের অন্তর্ভুক্ত। মনে রাখতে হবে, দানের ক্ষেত্রে নিয়তের বিশুদ্ধতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কুরআন তিলাওয়াত ও জিকিরের বিশেষ মর্যাদা

আশুরার দিনে ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এই দিনে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা, বিশেষ করে ইয়াসিন, ওয়াকিয়া ও মুলক সুরাগুলো পড়া উত্তম। তাসবিহ-তাহলিল ও দরুদ শরিফ বেশি পড়ার পাশাপাশি ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার বিশেষ সুযোগ এই দিনে লাভ করা যায়। নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ পড়াও এই দিনের বিশেষ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।

কারবালার শিক্ষা ও ইতিহাস চর্চা

ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা থেকে গভীর জীবনবোধের শিক্ষা গ্রহণ করা আশুরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। এই দিনে ইসলামি ইতিহাস বিশেষভাবে অধ্যয়ন করা, পরিবার-পরিজনের সাথে কারবালার ঘটনা আলোচনা করা এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার দৃঢ়তা অর্জন করা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে, শোক প্রকাশের নামে বাড়াবাড়ি ইসলামে অনুমোদিত নয়।

কবর জিয়ারতের সুন্নত পদ্ধতি

আশুরার দিনে কবর জিয়ারত করা যায়, তবে এটিকে বিশেষ দিন হিসেবে গণ্য করা যাবে না। সুন্নত পদ্ধতিতে কবর জিয়ারত করার সময় মৃতদের জন্য দোয়া করা, কুরআন খতম করা এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা উচিত। কবরস্থানে গিয়ে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি বা অন্য কোনো প্রকারের বাড়াবাড়ি পরিহার করতে হবে।

বর্জনীয় কাজ ও সতর্কতা

আশুরার দিনে কিছু কাজ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা জরুরি। শরীরকে আঘাত করা বা রক্তাক্ত করা, অতি বাড়াবাড়ি করে শোক প্রকাশ, ভিত্তিহীন রসম-রেওয়াজ পালন এবং গুজব ও বিভ্রান্তিকর কথা ছড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া বিশেষ কোনো খাবার তৈরি করা বা বিশেষ পোশাক পরার মতো আমলগুলোও পরিহার করা উচিত, যেহেতু এগুলোর ইসলামি কোনো ভিত্তি নেই।

দোয়া ও ইস্তেগফারের বিশেষ সময়

আশুরার দিনে এই বিশেষ দোয়া বেশি পড়া উত্তম: “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার ইয়া মুজিরু” (হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন)। এই দিনে বেশি বেশি ইস্তেগফার করা, তাওবা করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পারিবারিক সদাচরণ, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া এবং অমুসলিম প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহার করাও এই দিনের ইবাদতের অংশ।

আশুরা ও মহরম সম্পর্কে আলোচনা

মহরম ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস হিসেবে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এই মাসটি আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যন্ত সম্মানিত, যা কুরআনের সূরা তাওবায় উল্লেখ করা হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি”। চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে মহরম অন্যতম, যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। এই মাসের ১০ তারিখে সংঘটিত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা এটিকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছে। নবী মুসা (আ.)-এর মুক্তি, নূহ (আ.)-এর জাহাজের নিরাপদে স্থান পাওয়া এবং কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা – সবই এই মাসের সাথে সম্পর্কিত।

আশুরার দিন ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। এই দিনে নবী মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইল ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, যা ইহুদিরাও স্মরণ করে। ইসলামে এই ঘটনার স্বীকৃতি দিয়ে রাসুল (স.) মুসলিমদের রোজা রাখার নির্দেশ দেন। ৬১ হিজরিতে এই দিনেই ইমাম হুসাইন (রা.) সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন। এই ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গভীর শিক্ষা বহন করে।

আশুরার রোজা ইসলামে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন: “আমি আশাবাদী যে আশুরার রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে”। সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো ৯ ও ১০ মহরম রোজা রাখা, যা ইহুদিদের থেকে ভিন্নতা প্রকাশ করে। তবে শুধু ১০ মহরম রোজা রাখাও জায়েজ। এই রোজার বিশেষত্ব হলো এটি রমজানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত রোজাগুলোর একটি।

আশুরার দিনে দান-সদকার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে এই দিনের দান সাধারণ সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের কারণ হয়। উত্তম পদ্ধতি হলো গরিব-দুঃখীদের সরাসরি সাহায্য করা, বিশেষত এতিম ও অসহায়দের খাবার বিতরণ। মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করাও এই দিনের বিশেষ আমলের অন্তর্ভুক্ত। দানের ক্ষেত্রে নিয়তের বিশুদ্ধতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আরও পড়ুন-আরাফার রোযার নিয়ত ও ফজিলত

আশুরার দিনে ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা, বিশেষ করে ইয়াসিন, ওয়াকিয়া ও মুলক সুরাগুলো পড়া উত্তম। তাসবিহ-তাহলিল ও দরুদ শরিফ বেশি পড়ার পাশাপাশি ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার বিশেষ সুযোগ এই দিনে লাভ করা যায়। নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ পড়াও এই দিনের বিশেষ ইবাদত।

ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা মুসলিমদের জন্য এক গভীর জীবনবোধের শিক্ষা। এই ঘটনা থেকে আমরা শিখি সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থাকার গুরুত্ব, জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস এবং ঈমানের দৃঢ়তা বজায় রাখার কৌশল। তবে শোক প্রকাশের নামে বাড়াবাড়ি ইসলামে অনুমোদিত নয় বরং ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাই মূল উদ্দেশ্য।

আশুরার দিনে কবর জিয়ারত করা যায় তবে এটিকে বিশেষ দিন হিসেবে গণ্য করা যাবে না। সুন্নত পদ্ধতিতে কবর জিয়ারত করার সময় মৃতদের জন্য দোয়া করা, কুরআন খতম করা এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা উচিত। কবরস্থানে গিয়ে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি বা অন্য কোনো প্রকারের বাড়াবাড়ি পরিহার করতে হবে।

দহরম মহরম বাগধারাটির অর্থ কি

‘দহরম-মহরম’ একটি বাংলা বাগধারা, যা সাধারণত অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা বা জটিল পরিস্থিতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দগুচ্ছের উৎপত্তি ইসলামি পরিভাষা ‘মহরম’ থেকে, যা হিজরি বর্ষের প্রথম মাস এবং পবিত্র মাসগুলোর একটি। মহরম মাসে কারবালার трагиিক ঘটনার স্মরণে শোক পালন করা হয়, যা কিছু ক্ষেত্রে আবেগপ্রবণ ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে। এই প্রেক্ষাপটে ‘দহরম-মহরম’ বলতে এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে অস্থিরতা, হট্টগোল বা বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান।

আজ মহরমের কত তারিখ?

আজ (২৮ জুন ২০২৫) হিজরি অনুযায়ী চলছে মহরম মাসের ৩য় দিন (কিছু জায়গায় ২য় দিন হিসেবে হিসেব করা হতে পারে)।

বাংলা তারিখ Gregorian হিজরি মাস ও তারিখ
আজ (ন্যারায়গঞ্জ সময়) ২০২৫‑০৬‑২৮ (শনিবার) মহরম ৩, ১৪৪৭ হিজরি (hijri-calendar.com, datehijri.com)

 

আরও পড়ুন-জুমার প্রথম ও দ্বিতীয় খুতবা পড়ার নিয়ম ,বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

মহরম ও আশুরার কেন পালন করা হয়?

মহরম ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস হিসেবে এবং চারটি পবিত্র মাসের অন্যতম হিসেবে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এই মাসের ১০ তারিখ ‘আশুরা’ নামে পরিচিত, যা ইসলামের ইতিহাসে গভীর তাৎপর্য বহন করে। মহরম পালনের প্রধান কারণ তিনটি দিক থেকে বিবেচনা করা যায়:

প্রথমত, ঐতিহাসিক দিক থেকে আশুরার দিনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। নবী মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ এই দিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: “অতঃপর আমি মুসা ও তাঁর সঙ্গীদেরকে রক্ষা করলাম” (সূরা শুআরা: ৬৫)। এছাড়া নবী নূহ (আ.)-এর জাহাজ নিরাপদে স্থলভাগে পৌঁছানোর ঘটনাও এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় আমলের দিক থেকে রাসুলুল্লাহ (স.) এই দিনে রোজা রাখতেন এবং উম্মতকে তা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে: “আশুরার রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এটি পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে” (সহিহ মুসলিম)। বিশেষভাবে ৯ ও ১০ মহরম রোজা রাখার মাধ্যমে ইহুদিদের থেকে ভিন্নতা প্রকাশ করা হয়।

তৃতীয়ত, ৬১ হিজরির ১০ মহরম কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতবরণের ঘটনা এই মাসকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছে। এই ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থাকার শিক্ষা বহন করে। তবে ইসলামি বিধান অনুযায়ী, শোক পালনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহরম মাস ভিন্নভাবে পালিত হয়। সুন্নি মুসলিমরা প্রধানত রোজা, দান-সদকা ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এই মাস অতিবাহিত করেন। অন্যদিকে শিয়া সম্প্রদায় ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের স্মরণে শোকানুষ্ঠান পালন করেন। তবে সকলের জন্যই এই মাস আত্মসমালোচনা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির সুযোগ বয়ে আনে।

মহরম আশুরার ইতিহাস

মহরম (আরবি: مُحَرَّم) ইসলামি হিজরি সনের প্রথম মাস হিসেবে খোলাফায়ে রাশেদীন যুগ থেকেই বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এই মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহুমাত্রিক:

প্রাক-ইসলামি যুগ:
মহরম আরবদের নিকট ‘সফরুল আওয়াল’ নামে পরিচিত ছিল। জাহেলি যুগে এটি যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ৪টি পবিত্র মাসের অন্যতম ছিল। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারো…তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত” (সূরা তাওবা: ৩৬)।

নববী যুগের সূচনা:
৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সন চালু হলে মহরমকে প্রথম মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। রাসুল (স.) মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইহুদিরা ১০ মহরম রোজা রাখছে। তিনি বলেন: “আমরা মুসা (আ.)-এর সাথে তোমাদের চেয়ে বেশি সম্পর্কিত”, অতঃপর নিজে রোজা রাখেন ও সাহাবাদের নির্দেশ দেন (বুখারি: ৩৩৯৭)।

কারবালার ট্র্যাজেডি (৬১ হিজরি):
ইসলামি ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায় রচিত হয় ১০ মহরম। ইমাম হুসাইন (রা.) সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের সৈন্যদের বিরুদ্ধে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন। এই ঘটনা পরবর্তীতে শিয়া-সুন্নি ঐতিহ্যে ভিন্নভাবে স্মরণীয় হয়।

মধ্যযুগে বিকাশ:
ফাতেমি খিলাফতকালে (১০-১২ শতক) আশুরার শোকানুষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। অন্যদিকে সুফি সাধকরা এদিনকে আত্মশুদ্ধির উপলক্ষ হিসেবে গ্রহণ করেন। মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে ‘তাজিয়া’ মিছিলের প্রচলন শুরু হয়।

আধুনিক যুগ:
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১০ মহরম নানাভাবে পালিত হয়:

  • ইরান/ইরাকে শোক মিছিল ও মাতম

  • বাংলাদেশ/ভারতে তাজিয়া ও জুলুস

  • সৌদি আরবে কেবল রোজা ও ইবাদত

মহরমের ইতিহাস শুধু ধর্মীয় ঘটনার সমষ্টি নয়, বরং তা ন্যায়-অন্যায়ের চিরন্তন দ্বন্দ্বের প্রতীক। কারবালার ঘটনা ইসলামি সভ্যতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, যা আজও মানবতাবাদী চেতনার উৎস হিসেবে বিবেচিত।

আশুরার নামাজের নিয়ত

📌 নিয়ত (আরবি):
“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকআতাই সালাতিল আশুরা সুন্নাতান রাসুলিল্লাহি (স.) মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরিফাতি আল্লাহু আকবার।”

📌 বাংলা অর্থ:
“আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আশুরার ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার!”

প্রশ্নোত্তর

১. মহরম কী?

মহরম হলো ইসলামি হিজরি সনের প্রথম মাস এবং চারটি পবিত্র মাসের অন্যতম। এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল।

২. আশুরা কেন পালন করা হয়?

১০ মহরমে নবী মুসা (আ.)-এর মুক্তি ও কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের স্মরণে আশুরা পালিত হয়।

৩. আশুরার রোজার ফজিলত কী?

রাসুল (স.) বলেছেন: “আশুরার রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফের কারণ হয়” (সহিহ মুসলিম)।

৪. কয়টি রোজা রাখতে হয়?

সুন্নত হলো ৯ ও ১০ মহরম রোজা রাখা। শুধু ১০ তারিখ রাখলেও চলবে।

৫. শিয়া ও সুন্নিদের পালনে পার্থক্য কী?

  • সুন্নিরা রোজা রাখেন ও ইবাদত করেন

  • শিয়ারা শোক পালন ও মাতম করেন

৬. কারবালার ঘটনা কী ছিল?

৬১ হিজরিতে ইমাম হুসাইন (রা.) সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শাহাদাতবরণ করেন।

৭. আশুরার বিশেষ আমল কী?

  • রোজা রাখা

  • দান-সদকা করা

  • কুরআন তিলাওয়াত

৮. বাংলাদেশে কীভাবে পালিত হয়?

সরকারি ছুটি থাকে। শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া মিছিল বের করেন, সুন্নিরা রোজা রাখেন।

৯. আশুরার বিশেষ দোয়া কী?

“আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার” (হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন)।

১০. ভুল ধারণা কী কী?

  • বিশেষ খাবার বানানো ফরজ নয়

  • শরীরে আঘাত করা নিষিদ্ধ

  • ১১ মহরম রোজা রাখা মাকরুহ

উপসংহার

মহরম ও আশুরা ইসলামের একটি গৌরবময় অধ্যায়। এটি শুধু শোকের মাস নয়, বরং ত্যাগ, ইবাদত ও ঐক্যের শিক্ষা নিয়ে আসে। ২০২৫ সালের ৬ই জুন আশুরা পালনের মাধ্যমে আমরা এই দিনের মর্যাদা রক্ষা করব এবং ভুল ধারণাগুলো পরিহার করব।

সূত্র:

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।