তারাবির নামাজ কি সুন্নত না নফল?

রমজান মাস ইসলামী বর্ষপঞ্জির সবচেয়ে পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এই মাসে মুসলিমরা রোজা রাখে, নামাজ আদায় করে এবং কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। রমজানের রাতগুলিতে আদায় করা তারাবির নামাজ এই মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। কিন্তু তারাবির নামাজ সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এটি কি সুন্নত না নফল? এই প্রশ্নের উত্তর জানা এবং তারাবির নামাজের বিস্তারিত হুকুম ও ফজিলত সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা তারাবির নামাজের প্রকৃতি, এর হুকুম, রাকাত সংখ্যা, আদায়ের নিয়ম এবং এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাশাপাশি, সাধারণত যে প্রশ্নগুলো মনে আসে, সেগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এই পোস্টটি আপনাকে তারাবির নামাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেবে এবং রমজান মাসে এই বিশেষ ইবাদতটি সঠিকভাবে আদায় করতে সাহায্য করবে।

চলুন, শুরু করা যাক তারাবির নামাজ সম্পর্কে গভীরভাবে জানার এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।

তারাবির নামাজ কি?

তারাবির নামাজ হল রমজান মাসের রাতগুলিতে আদায় করা একটি বিশেষ নামাজ। এটি সাধারণত ইশার নামাজের পরে পড়া হয় এবং এতে ৮ থেকে ২০ রাকাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করা হয়। তারাবির নামাজের প্রধান উদ্দেশ্য হল রমজানের পবিত্র রাতগুলিতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা এবং কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জন করা।

তারাবির নামাজ কি সুন্নত না নফল?

তারাবির নামাজের হুকুম নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নিয়মিত আমল ছিল এবং তিনি সাহাবাদেরকেও এটি আদায় করতে উৎসাহিত করতেন। তবে এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে, তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অন্যদিকে, কিছু আলেম এটিকে নফল হিসেবে গণ্য করেন। তবে এটি যে সুন্নত বা নফলই হোক না কেন, এর ফজিলত এবং গুরুত্ব অপরিসীম।

তারাবির নামাজ পড়ার হুকুম কি?

তারাবি নামাজ হলো রমযান মাসে রাতে মুসলিমদের দ্বারা ইবাদত হিসেবে আদায় করা একটি সুন্নত নামাজ। এর হুকুম হলো সুন্নত মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ এটি সুন্নত তবে অবশ্যই পালনের জন্য গুরুত্ব সহকারে আদায় করা উচিত। তবে, এটি ফরজ নয়, তাই যদি কেউ না পড়ে, তার উপর কোন গুনাহ নেই, তবে তিনি তা না পড়ে থাকলে এই ইবাদতের ব্যাপারে তার পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

তারাবি নামাজ সাধারণত রমযান মাসের মধ্যে মসজিদে জামাতে পড়া হয়, তবে এককভাবে বা পরিবারের সঙ্গে বাসায়ও পড়া যেতে পারে। এর প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য জামাতে পড়া উত্তম।

অতএব, তারাবি নামাজ পড়া সুন্নত, এবং রমযান মাসে তা আদায় করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে

তারাবি নামাজ ফরজ না হলেও, এটি একটি সুন্নত মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত নামাজ। তবে, যদি কেউ তারাবি নামাজ না পড়ে, তাহলে তার উপর কোনো গুনাহ হবে না। কিন্তু, এটি বাদ দেওয়ার কারণে তিনি একটি বড় ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। কারণ, রমযান মাসে তারাবি নামাজ পড়ার মাধ্যমে একটি বিশাল সওয়াব অর্জন করা সম্ভব।

এছাড়া, যারা তারাবি নামাজ পড়তে সক্ষম, কিন্তু তা ছেড়ে দেন, তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে এ জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে এটি পড়ার চেষ্টা করা উত্তম।

তবে, যদি কোনো ব্যক্তি শারীরিক অসুবিধা বা অন্য কোনো বৈধ কারণে তারাবি নামাজ না পড়ে, তাহলে তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন এবং আল্লাহ জানেন সঠিক পরিস্থিতি।

তারাবির নামাজের ইতিহাস

তারাবি নামাজের ইতিহাসে দেখা যায় যে, এটি প্রাথমিকভাবে নবী (সা.) এর সময়ে ইবাদত হিসেবে ছিল এবং পরবর্তীতে খলীফা উমর (রা.) এর সময়ে তা নিয়মিত জামাতে পড়া শুরু হয়। এর মাধ্যমে মুসলিম সমাজে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজও পৃথিবীজুড়ে মুসলিমরা পালন করে থাকেন।

তারাবির নামাজ কত রাকাত সহীহ হাদিস

তারাবি নামাজের রাকআতের সংখ্যা নিয়ে ইসলামী ঐতিহ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে, সহীহ হাদিসে ২০ রাকআত তারাবি নামাজের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে ২০ রাকআত নামাজের ওপর অনেক পুরনো ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তারাবির নামাজের নিয়ত

“নাওয়াইতু আন ওয়া তাহাদ্দা লিল্লাহি তাআলা, তারাবি নামাজ আল-ইমাম।”

অর্থ:
“আমি আল্লাহর জন্য নিয়ত করছি, তারাবি নামাজ পড়ার জন্য, ইমামের পেছনে।”

তারাবির নামাজের ফজিলত

১. রমজানের বিশেষ ইবাদত: তারাবির নামাজ শুধুমাত্র রমজান মাসেই আদায় করা হয়, যা এটিকে বিশেষ মর্যাদা দেয়।
২. গুনাহ মাফের সুযোগ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
৩. কুরআনের নৈকট্য: তারাবির নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, যা মুসলিমদের জন্য আত্মিক প্রশান্তি বয়ে আনে।

তারাবির নামাজ কত রাকাত

তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে।

  • হানাফি মাজহাব: ২০ রাকাত
  • শাফিঈ মাজহাব: ২০ রাকাত
  • মালিকি মাজহাব: ৩৬ রাকাত
  • হাম্বলি মাজহাব: ২০ রাকাত

তবে অধিকাংশ আলেম ২০ রাকাত তারাবির নামাজকে প্রাধান্য দেন। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা সমর্থিত।

তারাবির নামাজ আদায়ের নিয়ম

১. ইশার নামাজের পরে আদায় করা: তারাবির নামাজ ইশার নামাজের পরে পড়া হয়।
২. জামাতের সাথে আদায় করা: তারাবির নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা উত্তম, তবে একা পড়াও জায়েজ।
৩. কুরআন তিলাওয়াত: তারাবির নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করা সুন্নত। পুরো কুরআন খতম করা অনেক মুসলিমের লক্ষ্য।
৪. বিরতি নেওয়া: প্রতি চার রাকাত পর বিরতি নেওয়া সুন্নত। এই বিরতিতে তাসবিহ, দোয়া বা কুরআন তিলাওয়াত করা যায়।

তারাবির নামাজের গুরুত্ব

তারাবির নামাজ রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মুসলিমদের আত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বিশেষ ঘর তৈরি করেন।” (তিরমিজি)

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: তারাবির নামাজ কি ফরজ?
উত্তর: না, তারাবির নামাজ ফরজ নয়। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

প্রশ্ন ২: তারাবির নামাজ একা পড়া যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, তারাবির নামাজ একা পড়া যাবে, তবে জামাতের সাথে পড়া উত্তম।

প্রশ্ন ৩: তারাবির নামাজে কুরআন খতম করা কি জরুরি?
উত্তর: না, কুরআন খতম করা জরুরি নয়, তবে এটি একটি উত্তম আমল।

প্রশ্ন ৪: মহিলারা কি তারাবির নামাজ মসজিদে পড়তে পারবেন?
উত্তর: হ্যাঁ, মহিলারা মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে পারেন, তবে ঘরে পড়াও উত্তম।

উপসংহার

তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এর ফজিলত অপরিসীম। এই নামাজের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জন করতে পারে। তাই রমজান মাসে তারাবির নামাজ নিয়মিত আদায় করা উচিত।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

Assalamu Alaikum wa Rahmatullah. I am Md. Sanaul Bari. I am a salaried employee by profession and the admin of this website. Apart from my job, I have been writing on my own website for the past 14 years and creating content on my own YouTube and Facebook. Special Note - If there is any mistake in the writing, please forgive me. Thank you.