রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় একটি সময়। এই মাসে ইবাদতের গুরুত্ব বেড়ে যায়, বিশেষ করে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা। ইফতারের সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি এমন একটি মুহূর্ত যখন আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ইফতারের আগে কোন দোয়া কবুল হয়, তার তাৎপর্য, এবং এই সময়ে দোয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।
ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার হাদিস
ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।” (ইবনে মাজাহ)
এই হাদিসটি ইফতারের সময় দোয়ার গুরুত্বকে তুলে ধরে। এ সময়ে একজন রোজাদার আল্লাহর কাছে যা চায়, তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইফতারের আগে পড়ার জন্য দোয়া
ইফতারের আগে পড়ার জন্য কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। এই দোয়াগুলো পড়লে আল্লাহ তাআলা রোজাদারের দোয়া কবুল করেন।
- ইফতারের সময়ের দোয়া:
“ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ”
অর্থ: “পিপাসা দূর হয়েছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ সওয়াব ঠিক হয়ে গেছে।” (আবু দাউদ) - সাধারণ দোয়া:
ইফতারের সময় যে কোনো দোয়া করা যায়। যেমন:“اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِي”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার সেই রহমতের দ্বারা ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যা সব কিছুকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে।”
ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার কারণ
ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার পেছনে কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে:
- আল্লাহর রহমতের সময়:
রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। ইফতারের সময় এই রহমতের ধারা আরও বৃদ্ধি পায়। - রোজাদারের কষ্টের প্রতিদান:
সারা দিন রোজা রাখার পর একজন রোজাদার ক্ষুধা ও পিপাসায় কষ্ট পায়। এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করেন। - আত্মসমর্পণের মুহূর্ত:
ইফতারের সময় একজন রোজাদার সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণের মুহূর্তে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইফতারের সময় দোয়ার আদব
ইফতারের সময় দোয়া করার কিছু আদব রয়েছে, যা মেনে চললে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে:
- নিয়ত পরিষ্কার রাখা:
দোয়া করার সময় নিয়ত পরিষ্কার রাখা জরুরি। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করা উচিত। - বিনয় ও নম্রতা:
দোয়া করার সময় বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বিনয়ী বান্দার দোয়া পছন্দ করেন। - দোয়ার পূর্বে তাওবা করা:
দোয়া করার আগে তাওবা করা উচিত। গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে দোয়া শুরু করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। - দোয়ার সময় ধৈর্য ধরা:
দোয়া করার পর ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা তার বান্দার দোয়া কবুল করেন তার নিজের সময়ে।
ইফতারের সময় দোয়ার ফজিলত
ইফতারের সময় দোয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। এই সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মাফ করেন, রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং জীবনের সমস্যা সমাধান করেন।
- গুনাহ মাফ:
ইফতারের সময় দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মাফ করেন। - রিজিক বৃদ্ধি:
এই সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার রিজিক বৃদ্ধি করেন। - সমস্যা সমাধান:
ইফতারের সময় দোয়া করলে জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়।
প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার হাদিস কি?
উত্তর: হ্যাঁ, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।” (ইবনে মাজাহ)
প্রশ্ন ২: ইফতারের সময় কোন দোয়া পড়া উত্তম?
উত্তর: ইফতারের সময় এই দোয়া পড়া উত্তম:
“ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ”
প্রশ্ন ৩: ইফতারের সময় দোয়া করার আদব কি?
উত্তর: ইফতারের সময় দোয়া করার আদব হলো নিয়ত পরিষ্কার রাখা, বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা, দোয়ার পূর্বে তাওবা করা এবং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা।
উপসংহার
ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি ইসলামিক শরিয়াহ দ্বারা প্রমাণিত। এই সময়ে একজন রোজাদার আল্লাহর কাছে যা চায়, তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই ইফতারের আগে ও পরে নিয়মিত দোয়া করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই পবিত্র সময়ে দোয়া কবুল করার তাওফিক দিন।
আরও –তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত বাংলায় উচ্চারণ সহ
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔