ইসলামে শহীদ ও মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। দোয়ার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয়, মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা করা যায়। বিশেষ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দোয়া পড়তেন, তা অনুসরণ করা আমাদের জন্য সর্বোত্তম আমল।
আরও পড়ুন-মানসিক অস্থিরতা দূর করতে ইসলামের ৭টি আমল
শহীদ ও মৃত ব্যক্তির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দোয়া
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবি আবু সালামা (রা.)-এর শাহাদাতের পর যে দোয়াটি করেছিলেন, তা সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
📖 আরবি দোয়া
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَبِي سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ
🗣 উচ্চারণ
আল্লাহুম্মাগফির লিআবি সালামাহ, ওয়ারফা’ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যীন।ওয়াখলুফহু ফি আকিবিহি ফিল গাবিরীন।ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রব্বাল আলামীন।ওয়াফসাহ লাহু ফি কবরিহি ওয়া নাওয়ির লাহু ফীহি।
🌸 অর্থ
হে আল্লাহ! আপনি আবু সালামাকে ক্ষমা করে দিন, হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন। তাঁর বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যান। হে রাব্বুল আলামীন! তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তাঁর কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং কবরকে আলোকময় করে দিন।
(সহিহ মুসলিম: ২০০২)
যে কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য পড়ার সাধারণ দোয়া
মহানবী (সা.)-এর অনুসরণে আমরা এই দোয়াটি যে কোনো মৃত ব্যক্তি বা শহীদের জন্য এভাবে পড়তে পারি—
📖 দোয়া
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ
🌿 অর্থ
হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন। তার পরিবার-পরিজনের দেখাশোনার দায়িত্ব আপনি নিজেই গ্রহণ করুন। হে রাব্বুল আলামীন! তাকে ও আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন। তার কবরকে প্রশস্ত ও নূরানী করে দিন।
সাহাবি আবু সালামা (রা.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
সাহাবি আবু সালামা (রা.)-এর মূল নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ। আবু সালামা ছিল তাঁর উপনাম। তিনি ছিলেন—
-
মহানবী (সা.)-এর ফুফাতো ভাই।
-
মহানবী (সা.)-এর দুধ ভাই।
-
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা (রা.)-এর স্বামী।
তিনি ইসলামের একেবারে প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কার কাফেরদের নির্যাতনের কারণে তিনি স্ত্রীসহ হাবাশায় হিজরত করেন। পরে আবার মক্কা হয়ে মদিনায় হিজরত করেন।
যুদ্ধ ও শাহাদাত
-
২য় হিজরি: বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ।
-
৩য় হিজরি: ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ, বাহুতে গুরুতর আঘাত।
-
৪র্থ হিজরি: ওহুদ যুদ্ধের আঘাতের কারণে শাহাদাত বরণ।
তার ইন্তেকালের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তার বাড়িতে যান এবং চোখ বন্ধ করে দেন ও দোয়া করেন।
হাদিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
এই হাদিস থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই—
✅ মৃত ব্যক্তির চোখ খোলা থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়া সুন্নত।
✅ শোকের সময় নিজের জন্য বা অন্যের জন্য বদদোয়া করা নিষেধ।
✅ ফেরেশতারা উপস্থিত থেকে মানুষের দোয়ায় “আমিন” বলেন।
✅ মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা জীবিতদের জন্যও কল্যাণকর।
উপসংহার
শহীদ ও মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি বড় ইবাদত। বিশেষ করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো দোয়া পড়লে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আমাদের উচিত—নিজেদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং সকল মুসলিম মৃতদের জন্য নিয়মিত এই দোয়া করা।
আরও পড়ুন-রোজা না রেখে কি ইফতার করা যাবে?
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


