২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের ভূমি রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থায় আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। বহু বছর ধরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দালালচক্র, অতিরিক্ত ফি আদায়, ভুল হিসাব দেখানো, অযথা ঝামেলা—এসব কারণে সাধারণ ভূমি মালিকরা যেভাবে হয়রানির শিকার হতেন, এবার সরকার সেই পুরো সিস্টেমকে ডিজিটাল, স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত করতে বড় উদ্যোগ নিয়েছে।
নতুন নিয়মে রেজিস্ট্রেশন ফি কাঠামো, দলিল লেখকদের লাইসেন্স ব্যবস্থা, অনলাইন ক্যালকুলেটর, অভিযোগ গ্রহণ ব্যবস্থা—সবকিছু পুনর্গঠন করা হয়েছে, যাতে ভূমি মালিকরা সহজে, দ্রুত ও নির্ভুলভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।
চলুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক ২০২৬ সালের নতুন দলিল রেজিস্ট্রেশন নিয়ম, করণীয় ও সুবিধাগুলো।
আরও পড়ুন-ভূমি অ্যাপ’ চালু: নামজারি, ভূমি কর ও খতিয়ান এখন এক ক্লিকে!
নতুন ফি কাঠামো: এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দলিলের শ্রেণী, জমির ধরণ, অবস্থান ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত ফি তালিকা এখন থেকে প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বাধ্যতামূলকভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
ফলে আপনি পাবেন—
-
কোন জমির দলিল করতে কত খরচ হবে।
-
স্ট্যাম্প ডিউটি কত।
-
রেজিস্ট্রেশন ফি কত।
-
আইটি সার্ভিস চার্জ কত।
-
মোট খরচ—আগেই জেনে যাওয়ার সুবিধা।
এতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বা ভুল হিসাব দেখানোর সুযোগ আর থাকবে না।
দলিল লেখকদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
বছরের পর বছর অভিযোগ ছিল—
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে মানুষকে জোর করে দলিল লেখকদের সিন্ডিকেটের কাছে যেতে হয়; তারা ইচ্ছেমতো ফি বাড়িয়ে নিত।
২০২৬ থেকে সরকার কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে যাচ্ছে দলিল লেখক লাইসেন্স বিধিমালা, ২০১৪।
এখন থেকে—
-
শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী অনুমোদিত দলিল লেখকরাই অফিসে কাজ করতে পারবেন।
-
সিন্ডিকেট, দালাল বা অনুমোদনবিহীন কেউ অফিস এলাকায় থাকতে পারবেন না।
-
ফি বেশি চাইলে বা ভুল হিসাব দেখালে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এতে একদিকে প্রতারণা কমবে, অন্যদিকে ভূমি মালিকদের সময় ও খরচ দুটোই কমে আসবে।
অনলাইন দলিল রেজিস্ট্রেশন ক্যালকুলেটর: প্রকৃত খরচ জানুন ঘরে বসেই
যারা ফি হিসাব করতে বিভ্রান্ত হন, তাদের জন্য চালু করা হয়েছে “দলিল রেজিস্ট্রেশন ক্যালকুলেটর”।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে আপনি—
-
জমির শ্রেণী
-
পরিমাণ
-
অবস্থান
-
মৌজা
ইত্যাদি তথ্য দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিক খরচ দেখাবে।
এতে যা সুবিধা পাবেন—
-
অফিসে গিয়ে ভুল হিসাবের ফাঁদে পড়তে হবে না।
-
আগেই বাজেট প্ল্যান করা যাবে।
-
দালালচক্রের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে।
রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ — যা না জানলেই নয়
আইন অনুযায়ী:
-
জমি ক্রয়–বিক্রয় সংক্রান্ত সব দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক
-
দলিল রেজিস্টার না করলে
-
মালিকানা দাবি করা যাবে না।
-
কোন রেকর্ড (ROR) সংশোধন করা যাবে না।
-
ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা তৈরি হবে।
-
এই কারণেই সরকার জনগণকে সচেতন করতে বিশেষ প্রচারণা শুরু করেছে।
প্রতারণা বা অতিরিক্ত ফি চাইলে কোথায় অভিযোগ করবেন?
যদি কোনো দলিল লেখক, স্টাফ বা দালাল বাড়তি টাকা দাবি করে, তখন ভূমি মালিকরা সরাসরি—
অভিযোগ করতে পারবেন
-
জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে লিখিত অভিযোগ।
-
দুদক (ACC) হটলাইন নম্বর।
-
অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থায়।
অভিযোগ করলে দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা আছে।
নতুন নিয়মে প্রধান সুবিধাগুলো
| সুবিধা | কীভাবে উপকার পাবেন |
|---|---|
| স্বচ্ছ ফি কাঠামো | অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বন্ধ হবে |
| অনলাইন ক্যালকুলেটর | প্রকৃত খরচ আগে থেকেই জানা |
| দালালমুক্ত পরিবেশ | ঝামেলা ও হয়রানি কমবে |
| লাইসেন্সধারী দলিল লেখক | পেশাদার ও সঠিক সার্ভিস |
| অভিযোগ ব্যবস্থা | প্রতারণা হলে দ্রুত ব্যবস্থা |
| ডিজিটাল ডাটাবেজ | সময় কম লাগবে, ভুল কম হবে |
ভূমি মালিকদের করণীয় (২০২৬ থেকে)
- দলিল রেজিস্ট্রেশন ক্যালকুলেটর দিয়ে খরচ মিলিয়ে নিন।
- শুধুমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত দলিল লেখকের কাছে কাজ করুন।
- অফিসে টানানো ফি তালিকার সাথে আপনার হিসাব মিলিয়ে নিন।
- অতিরিক্ত টাকা চাইলে সাথে সাথে অভিযোগ করুন।
- দলিল রেজিস্টার ছাড়া মালিকানা দাবি করবেন না।
- সব কাগজপত্র ডিজিটাল কপি করে রাখুন।
উপসংহার
দলিল রেজিস্ট্রেশনে ২০২৬ সালের এই নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিনের দালাল–নির্ভর, অস্বচ্ছ ও ঝামেলাপূর্ণ সিস্টেম থেকে দেশ বের হয়ে আসবে। সাধারণ ভূমি মালিকেরা সময়, টাকা ও মানসিক চাপ—সব দিক থেকেই রেহাই পাবেন।
স্বচ্ছ ফি তালিকা, ডিজিটাল ক্যালকুলেটর, লাইসেন্সধারী দলিল লেখক এবং শক্তিশালী অভিযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় আসবে সম্পূর্ণ পরিবর্তন।
এটি বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-জমির মামলা থেকে বাঁচতে আগে থেকেই যেসব কাজ করবেন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


