জুমার দিন মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ, এবং এর একটি অপরিহার্য অংশ হলো খুতবা। ইমাম সাহেব জুমার নামাজের আগে দুইটি খুতবা দেন, যা শ্রবণ করা ওয়াজিব। অনেক মুসল্লি খুতবার আরবি ভাষা বুঝতে না পারায় বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা জুমার প্রথম ও দ্বিতীয় খুতবা বাংলা উচ্চারণ সহ পড়ার নিয়ম, খুতবার গুরুত্ব, ফজিলত এবং বিস্তারিত আলোচনা করব।
জুমার খুতবা কি?
জুমার খুতবা হলো একটি বক্তৃতা যা ইমাম জুমার নামাজের আগে প্রদান করেন। এটি দুই অংশে বিভক্ত:
আরও পড়ুন
-
প্রথম খুতবা – এতে সাধারণত আল্লাহর প্রশংসা, দরুদ, তাকওয়া ও ইমানের কথা বলা হয়।
-
দ্বিতীয় খুতবা – এতে দোয়া, সমাজের সমস্যা ও ইসলামিক নির্দেশনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
খুতবা শোনা নামাজের অংশ, তাই এটি মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং কথা বলা নিষেধ।
জুমার খুতবার গুরুত্ব ও ফজিলত
জুমার খুতবা শোনা ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে নামাজের জন্য আসে, তার যতটা সম্ভব অংশ নেয়, চুপ করে খুতবা শোনে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯১০)
খুতবার সময় কথা বলা, নামাজ পড়া বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা নিষিদ্ধ।
জুমার প্রথম খুতবা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
জুমার প্রথম খুতবা সাধারণত নিম্নলিখিতভাবে শুরু হয়:
আরবি:
إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
বাংলা উচ্চারণ:
ইন্নাল হামদা লিল্লাহি, নাহমাদুহু ওয়া নাসতাঈনুহু ওয়া নাসতাগফিরুহু, ওয়া নাউজু বিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ওয়া মিন সাইয়্যিআতি আ’মালিনা। মাই ইয়াহদিল্লাহু ফালা মুদিল্লা লাহু, ওয়া মাই ইউদলিল ফালা হাদিয়া লাহু। ওয়া আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ:
“নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর কাছেই সাহায্য চাই এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই আমাদের অন্তরের কুপ্রবৃত্তি থেকে এবং আমাদের মন্দ কাজসমূহ থেকে। যাকে আল্লাহ হিদায়াত দেন, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোনো পথপ্রদর্শক নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল।”
এরপর ইমাম সাধারণত কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন এবং উপদেশ দেন।
জুমার দ্বিতীয় খুতবা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
দ্বিতীয় খুতবায় ইমাম সাধারণত দোয়া ও সমাপ্তি টানেন।
আরবি:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আali মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আali ইব্রাহীমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আali মুহাম্মাদিন, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আali ইব্রাহীমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
অর্থ:
“হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করুন, যেমন আপনি ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।”
এরপর ইমাম সাধারণত মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেন এবং খুতবা শেষ করেন।
জুমার খুতবা শোনার নিয়ম
-
চুপ করে শুনতে হবে – খুতবার সময় কথা বলা নিষেধ।
-
মনোযোগ দেওয়া – ফোন ব্যবহার বা অন্যমনস্ক হওয়া থেকে বিরত থাকুন।
-
দোয়া ও আমিন বলা – ইমাম যখন দোয়া করেন, তখন আমিন বলুন।
-
খুতবার সময় নামাজ পড়া নিষেধ – খুতবা চলাকালীন সুন্নত নামাজ পড়া যাবে না।
জুমার খুতবার সাধারণ ভুল ও সতর্কতা
-
খুতবার সময় মোবাইল ব্যবহার করা।
-
অনর্থক কথাবার্তা বলা।
-
খুতবা না শুনে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া।
১. জুমার খুতবা বাংলায় দেওয়া যাবে কি?
জুমার খুতবা মূলত আরবিতে দেওয়া হয়, তবে প্রয়োজন হলে স্থানীয় ভাষায় ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। (সূত্র: ইসলাম QA)
২. খুতবার সময় কথা বললে কি নামাজ হবে?
খুতবার সময় কথা বললে জুমার সওয়াব কমে যায়, তবে নামাজ শুদ্ধ হবে।
৩. খুতবা কতক্ষণ চলবে?
খুতবা সংক্ষিপ্ত ও অর্থপূর্ণ হওয়া উচিত। রাসুল (সা.) দীর্ঘ খুতবা দিতেন না।
উপসংহার
জুমার খুতবা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু বক্তৃতা নয়, বরং ইমানি শিক্ষা ও সমাজের জন্য দিকনির্দেশনা। আমরা যদি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনি এবং এর শিক্ষা জীবনে প্রয়োগ করি, তাহলে আমাদের ইমান ও আমল উন্নত হবে।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
