যাকাত শব্দের অর্থ কি? ৯৯% মানুষ জানে না

ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধু ধর্মীয় কর্তব্যই নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, “যাকাত শব্দের অর্থ কি?” এবং এটি কেন ইসলামে এত গুরুত্বপূর্ণ? এই ব্লগ পোস্টে আমরা যাকাত শব্দের অর্থ, এর ধর্মীয় ও সামাজিক তাৎপর্য, হিসাব পদ্ধতি, এবং যাকাত সম্পর্কে সাধারণভাবে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।

যাকাত শুধু একটি আর্থিক ইবাদতই নয়, এটি মানবতার সেবা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতীক। এটি গরিব ও ধনীর মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে এবং সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করে। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি যাকাত সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন এবং এর মাধ্যমে কীভাবে আপনার সম্পদ পবিত্র ও বরকতময় করা যায়, তা জানতে পারবেন।

চলুন, প্রথমে জেনে নিই যাকাত শব্দের অর্থ কি এবং এটি ইসলামে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।

যাকাত শব্দের অর্থ কি?

আরবি শব্দ “যাকাত” (زكاة) এর আক্ষরিক অর্থ হলো পবিত্রতাবৃদ্ধি, এবং প্রশংসা। এই শব্দটি ইসলামী পরিভাষায় একটি বিশেষ অর্থ বহন করে। যাকাত হলো একজন মুসলিমের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব, অসহায় ও প্রয়োজনমাফিক মানুষের মধ্যে বিতরণ করা। এটি সম্পদকে পবিত্র করে এবং এর বরকত বৃদ্ধি করে।

ইসলামে যাকাত শুধু একটি দানই নয়, বরং এটি একটি ফরজ ইবাদত। এটি ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হয়। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার সম্পদকে শুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।

যাকাতের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক তাৎপর্য

  1. পবিত্রতা: যাকাতের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয়। এটি মানুষের লোভ ও সম্পদের প্রতি মোহ কমায়।
  2. বৃদ্ধি: যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদের বরকত বৃদ্ধি পায়। এটি আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে সুফল বয়ে আনে।
  3. সামাজিক ভারসাম্য: যাকাত গরিব ও ধনীর মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে, যা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কুরআন ও হাদিসে যাকাতের উল্লেখ

কুরআনে আল্লাহ বলেন,
“তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত দাও” (সূরা বাকারা, আয়াত ৪৩)।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যাকাত ইসলামের সেতুসমূহের মধ্যে একটি সেতু” (সহিহ বুখারি)।

এই আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায়, যাকাত শুধু একটি আর্থিক ইবাদতই নয়, বরং এটি ইসলামের একটি মৌলিক স্তম্ভ এবং মুসলিম সমাজের জন্য অপরিহার্য।

সংক্ষেপে

যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। এটি ইসলামের একটি ফরজ ইবাদত, যা সম্পদকে পবিত্র করে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে এবং সমাজে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখে।

যাকাতের গুরুত্ব

যাকাতের গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। এটি শুধু একটি আর্থিক ইবাদতই নয়, বরং এটি সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবতার প্রতীক। কুরআন ও হাদিসে যাকাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে।

  1. আল্লাহর নির্দেশ: কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত দাও” (সূরা বাকারা, আয়াত ৪৩)।
  2. সম্পদের পবিত্রতা: যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয় এবং এর বরকত বৃদ্ধি পায়।
  3. সামাজিক ন্যায়বিচার: যাকাত গরিব ও ধনীর মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান কমায় এবং সামাজিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে।

যাকাত কাকে দিতে হবে?

যাকাত শুধু গরিব ও অসহায় মানুষকেই দেওয়া যায় না। ইসলামে যাকাতের হকদার আট শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, “যাকাত তো কেবল ফকীর, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়” (সূরা তাওবা, আয়াত ৬০)।

যাকাতের হিসাব

যাকাত দেওয়ার জন্য সম্পদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ (নিসাব) অতিক্রম করতে হবে। নিসাব হলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য। বর্তমানে নিসাবের পরিমাণ টাকার অঙ্কে নির্ধারণ করা হয়।

যাকাতের হার হলো সম্পদের ২.৫%। অর্থাৎ, যদি আপনার সম্পদ নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তার ২.৫% যাকাত হিসাবে দিতে হবে।

আরও –কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ?

উদাহরণ: যদি আপনার সম্পদের মূল্য ১,০০,০০০ টাকা হয় এবং এটি নিসাব পরিমাণ অতিক্রম করে, তাহলে আপনার যাকাত হবে ২,৫০০ টাকা।

১ লাখ টাকায় যাকাতের হিসাব

  • মোট সম্পদ: ১,০০,০০০ টাকা
  • যাকাতের হার: ২.৫%
  • যাকাতের পরিমাণ: ১,০০,০০০ × ২.৫% = ২,৫০০ টাকা

অর্থাৎ, ১ লাখ টাকায় যাকাতের পরিমাণ হবে ২,৫০০ টাকা

যাকাতের নিসাব কি?

যাকাতের নিসাব হলো ইসলামী শরীয়ত দ্বারা নির্ধারিত একটি ন্যূনতম সীমা, যা অতিক্রম করলে যাকাত প্রদান করা ফরজ হয়। নিসাবের পরিমাণ স্বর্ণ, রূপা বা টাকার অঙ্কে নির্ধারণ করা হয়। নিসাবের উদ্দেশ্য হলো, শুধু সেই ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ করা, যার সম্পদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিক্রম করেছে এবং যার সম্পদে এক বছর পূর্ণ হয়েছে।

যাকাতের সামাজিক প্রভাব

যাকাত শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতই নয়, বরং এটি সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যাকাতের মাধ্যমে:

  1. দারিদ্র্য বিমোচন: গরিব ও অসহায় মানুষের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
  2. অর্থনৈতিক ভারসাম্য: ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে।
  3. সামাজিক সম্প্রীতি: যাকাতের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি

কুরআনে যাকাতের হকদার ৮ শ্রেণীর মানুষকে উল্লেখ করা হয়েছে:
১. ফকির: যার সম্পদ নেই।
২. মিসকিন: যার সম্পদ খুবই কম।
৩. যাকাত আদায়কারী: যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি।
৪. নওমুসলিম: ইসলাম গ্রহণকারী নতুন মুসলিম।
৫. দাস মুক্তির জন্য: দাসত্ব থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে।
৬. ঋণগ্রস্ত: যারা ঋণে জর্জরিত।
৭. আল্লাহর পথে জিহাদকারী: যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করছে।
৮. মুসাফির: যাত্রাপথে অসহায় ব্যক্তি।

সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে?

যদি আপনার কাছে ৬,০০,০০০ টাকা থাকে এবং এটি এক বছর ধরে আপনার মালিকানায় থাকে, তাহলে যাকাতের পরিমাণ হবে:

৬,০০,০০০×২.৫%=১৫,০০০ টাকা

সুতরাং, ৫,৯৫,০০০ টাকা (বা তার বেশি) থাকলে যাকাত দিতে হবে।

প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১: যাকাত কখন ফরজ হয়?
উত্তর: যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ অতিক্রম করতে হবে এবং এক বছর পূর্ণ হতে হবে।

প্রশ্ন ২: যাকাত শুধু টাকায় দেওয়া যায় কি?
উত্তর: না, যাকাত টাকা, স্বর্ণ, রূপা, পণ্য, বা অন্য কোনো সম্পদে দেওয়া যায়।

প্রশ্ন ৩: যাকাত না দিলে কী হবে?
উত্তর: যাকাত ইসলামের ফরজ ইবাদত। এটি না দেওয়া গুনাহের কাজ এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনে।

প্রশ্ন ৪: যাকাতের টাকা দিয়ে কি মসজিদ বানানো যায়?
উত্তর: না, যাকাতের টাকা শুধু যাকাতের হকদারদেরই দেওয়া যায়। মসজিদ বানানোর জন্য অন্য সাদকা বা দান ব্যবহার করতে হবে।

উপসংহার

যাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আমরা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টিই অর্জন করি না, বরং সমাজে দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করি। আশা করি, এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে যাকাত সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

Assalamu Alaikum wa Rahmatullah. I am Md. Sanaul Bari. I am a salaried employee by profession and the admin of this website. Apart from my job, I have been writing on my own website for the past 14 years and creating content on my own YouTube and Facebook. Special Note - If there is any mistake in the writing, please forgive me. Thank you.