বর্তমান যুগে মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ, হতাশা ও মানসিক চাপ আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আমরা কোনো না কোনোভাবে মানসিক চাপে ভুগি—কখনো অর্থনৈতিক সমস্যা, কখনো সম্পর্ক, কখনো ব্যর্থতা বা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।
কিন্তু ইসলাম আমাদের জীবনের প্রতিটি সমস্যার সমাধান দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে।”
(সূরা রা’দ: আয়াত ২৮)
অতএব, মানসিক অস্থিরতা দূর করার জন্য আমাদের আল্লাহর নিকটে ফিরে আসাই একমাত্র উপায়।
চলুন জেনে নিই—ইসলামের আলোকে মানসিক অস্থিরতা দূর করতে কোন ৭টি আমল আমাদের করা উচিত।
আরও পড়ুন-সেহরি বা ইফতার না করলে কি রোজা কবুল হয়?
১️⃣ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিন
নামাজ হলো মুমিনের মনকে প্রশান্ত করার সর্বোত্তম মাধ্যম। প্রতিটি নামাজে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, তাঁর সামনে নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে পারে।
আল্লাহ বলেন,
“তুমি ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই নামাজ ধৈর্যশীলদের জন্য সহজ।”
(সূরা বাকারা: আয়াত ৪৫)
নিয়মিত নামাজ আদায় করলে আত্মা প্রশান্ত হয়, মানসিক চাপ কমে যায় এবং জীবনের প্রতি এক নতুন আশাবাদ জন্ম নেয়।
২️⃣ সকালে ও সন্ধ্যায় যিকির করুন
যিকির মানে শুধু মুখে আল্লাহর নাম বলা নয়, বরং হৃদয়কে আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত রাখা।
সকালে ও সন্ধ্যায় কিছু নির্দিষ্ট দোয়া ও যিকির আছে, যা নবী করিম ﷺ নিজে করতেন এবং উম্মতকেও করতে বলেছেন।
যেমন:
- 
সুবহানাল্লাহ,
 - 
আলহামদুলিল্লাহ,
 - 
আল্লাহু আকবার,
 - 
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
 - 
আস্তাগফিরুল্লাহ।
 
এসব যিকির নিয়মিত করলে মন শান্ত হয়, ভয় ও দুঃখ দূর হয় এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।
৩️⃣ কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ
কুরআনের শব্দই মানুষের অন্তরে শান্তি আনতে পারে। দিনে অন্তত কিছুটা সময় বের করে কুরআন তিলাওয়াত করুন বা শ্রবণ করুন।
আল্লাহ বলেন,
“আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। তাহলে কেউ কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?”
(সূরা ক্বামার: আয়াত ১৭)
কুরআন পড়ার সময় আমরা অনুভব করি আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলছেন। এতে মন স্থির হয়, ভয় দূর হয়, আত্মার প্রশান্তি আসে।
৪️⃣ তাওবা ও ইস্তেগফার বৃদ্ধি করুন
মানুষের অনেক মানসিক কষ্ট ও অস্থিরতা আসে নিজের পাপ ও গুনাহ থেকে। তাই আল্লাহর দরবারে ফিরে আসা ও ইস্তেগফার করা মনকে পরিষ্কার করে।
নবী ﷺ বলেছেন,
“যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তার প্রতিটি সংকট থেকে মুক্তির পথ করে দেন, দুঃখ থেকে পরিত্রাণ দেন এবং অপ্রত্যাশিত স্থানে তাকে রিজিক দান করেন।”
(আবু দাউদ)
প্রতিদিন অন্তত ১০০ বার “আস্তাগফিরুল্লাহ” বললে অন্তর হালকা হয় এবং মন থেকে উদ্বেগ কমে যায়।
৫️⃣ দোয়া ও আল্লাহর উপর ভরসা
মানসিক অস্থিরতার সময় দোয়া হলো সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। আল্লাহর কাছে আপনার সমস্ত কষ্ট খুলে বলুন।
যেমন, নবী ইউনুস (আঃ) যখন মাছের পেটে ছিলেন, তখন তিনি দোয়া করেছিলেন:
“লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমিন।”
(সূরা আনবিয়া: আয়াত ৮৭)
এই দোয়াটি মানসিক কষ্টে, দুঃখে বা উদ্বেগে বারবার পড়ুন। আল্লাহ অবশ্যই মুক্তি দেবেন।
৬️⃣ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
প্রতিদিন নিজের জীবনের ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
যেমন — চোখে দেখতে পারা, হাঁটতে পারা, পরিবার থাকা, খাবার পাওয়া — এগুলোই আল্লাহর বড় নিয়ামত।
আল্লাহ বলেন,
“যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বৃদ্ধি করব।”
(সূরা ইব্রাহিম: আয়াত ৭)
কৃতজ্ঞ মানুষ কখনো হতাশ হয় না, কারণ সে জানে — আল্লাহ তাকে কখনো একা ফেলে দেন না।
৭️⃣ একাকিত্ব নয়, সমাজে যুক্ত থাকুন
ইসলাম আমাদের সমাজে, পরিবারে, বন্ধুবান্ধবের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে বলেছে।
একাকিত্ব অনেক সময় মানসিক অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই নামাজে জামাতে অংশগ্রহণ করুন, পরিবার ও বন্ধুদের সময় দিন, ভালো কাজের উদ্যোগ নিন।
নবী করিম ﷺ বলেছেন,
“যে মুসলিম অন্যদের উপকারে আসে, সে আল্লাহর প্রিয় বান্দা।”
(সহিহ মুসলিম)
মানুষের উপকারে আসলে মন শান্ত হয়, অন্তর তৃপ্ত থাকে।
উপসংহার
মানসিক অস্থিরতা দূর করা শুধু মানসিক চিকিৎসা বা ওষুধের বিষয় নয়; বরং এটি আত্মার প্রশান্তির বিষয়।
আল্লাহর নিকটে ফিরে আসা, নামাজ, যিকির, দোয়া, কুরআন তিলাওয়াত, ইস্তেগফার ও কৃতজ্ঞতা— এই ৭টি আমল একজন মানুষকে মানসিকভাবে দৃঢ়, শান্ত ও আল্লাহনির্ভর করে তোলে।
✨ তাই আজ থেকেই শুরু করুন এই সাতটি আমল।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবার হৃদয়ে প্রশান্তি ও সন্তুষ্টি নাজিল করুন — আমিন।
আরও পড়ুন-রোজা না রেখে কি ইফতার করা যাবে?
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


