বাংলাদেশ সরকার অনলাইন ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুযায়ী, ইন্টারনেট, বেতার বা টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে যদি কেউ ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, ঘৃণামূলক পোস্ট বা বার্তা প্রচার করে, তাহলে তার সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা ৯৯ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এই খসড়াটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বুধবার প্রকাশ করেছে, এবং সাধারণ নাগরিক ও অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য এটি বিভাগের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মতামত পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২৫।
আরও পড়ুন-কেন BTCL সিম জনপ্রিয় হতে পারে?
অধ্যাদেশের ৬৬(ক) ধারা — মূল বিধান
অধ্যাদেশের ধারা ৬৬(ক)-তে বলা হয়েছে:
যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা বা জনশৃঙ্খলার ক্ষতি করে — যেমন ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বক্তব্য, জাতিগত বিদ্বেষ, কিংবা সহিংসতা সৃষ্টির আহ্বান জানায়, তবে এটি একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এই অপরাধের জন্য দণ্ডের পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে:
-
সর্বোচ্চ কারাদণ্ড: ৫ বছর
-
সর্বোচ্চ জরিমানা: ৯৯ কোটি টাকা
-
অথবা উভয় দণ্ডই একসাথে প্রযোজ্য হতে পারে
এছাড়া, যদি কোনো টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে বা সময়মতো প্রতিক্রিয়া না জানায়, তাহলেও একই শাস্তির বিধান প্রযোজ্য হবে।
কোন কোন কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে
এই আইনের আওতায় নিচের কাজগুলোকে স্পষ্টভাবে অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে—
✅ ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার
✅ জাতিগত বৈষম্যমূলক মন্তব্য বা সহিংসতা উস্কে দেওয়া
✅ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা
✅ কৌশলগত ফাইবার নেটওয়ার্ক বা টেলিকম সার্ভার হ্যাকিং
✅ ভুয়া জিও-লোকেশন বা নেভিগেশন সংকেত প্রেরণ
✅ বাল্ক এসএমএস বা এআই কল প্রতারণা
✅ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যে ক্ষতি সাধন
৬৯(ক) ধারা — অশ্লীল ও ভীতিকর বার্তার শাস্তি
অধ্যাদেশের ৬৯(ক) ধারায় বলা হয়েছে:
যদি কোনো ব্যক্তি টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অশ্লীল, অপমানজনক, ভয়ভীতিকর বা হুমকিমূলক বার্তা পাঠায়, তাহলে—
-
প্রস্তাবকারী বা প্রেরণকারী সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড বা ১.৫ কোটি টাকা জরিমানা পাবেন।
-
চাঁদাবাজি বা ভয়ভীতিমূলক বার্তা পাঠালে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
এক্ষেত্রে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সাইবার সুরক্ষা আইন-এর সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে।
৭০ ধারা — বিরক্তিকর ফোন কলও এখন অপরাধ
এই ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি অকারণে অন্য কোনো ব্যক্তিকে বারবার ফোন করে বিরক্ত বা হয়রানি করে, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
-
শাস্তি: সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা জরিমানা
-
জরিমানা না দিলে: ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড
মতামত জানানোর সুযোগ
অধ্যাদেশটি এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে, এবং নাগরিকদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। যে কেউ নিচের ঠিকানায় মতামত পাঠাতে পারেন—
ই-মেইল: secretary@ptd.gov.bd
ডাকযোগে:
সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ,
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।
শেষ সময়: ১৫ নভেম্বর ২০২৫
কেন এই আইন গুরুত্বপূর্ণ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও জাতিগত বিদ্বেষমূলক প্রচারণা বেড়েছে, যা সামাজিক বিভাজন ও সহিংসতা বাড়াচ্ছে। এই আইন প্রণয়ন করলে—
-
অনলাইনে ঘৃণামূলক কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
-
সাইবার প্রতারণা, হ্যাকিং ও ফেক নিউজ রোধে ভূমিকা রাখবে।
-
দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা সহজ হবে।
নাগরিকদের করণীয়
✅ অনলাইনে পোস্ট, মন্তব্য বা শেয়ার করার আগে যাচাই করুন তথ্যটি সঠিক কিনা।
✅ কোনো ধর্ম, জাতি বা সম্প্রদায়কে অবমাননাকর মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন।
✅ ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্ট বা প্রতারণামূলক বার্তা রিপোর্ট করুন।
✅ সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন এবং সচেতন ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করুন।
উপসংহার
‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও নৈতিক ইন্টারনেট ব্যবহারের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এখন সময় এসেছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ঘৃণার নয়, বরং জ্ঞান, সহনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন- BTCL সিমের দাম কত, কোথায় পাওয়া যাবে ও সুবিধা কী কী
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


