আশুরার নামাজের নিয়ত ২০২৫: নিয়ম, দোয়া, রাকাত ও ফজিলত

আশুরার নামাজের নিয়ত ২০২৫:আশুরা, অর্থাৎ হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের দশম দিন, ইসলামী ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে বিভিন্ন নবীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, বিশেষ করে হজরত ইমাম হুসাইন (রা.)-এর কারবালার শহীদ হওয়া মুসলিম উম্মাহর জন্য এক স্মরণীয় ঘটনা। আশুরা উপলক্ষে মুসলিমরা রোজা রাখার পাশাপাশি নফল নামাজ আদায়, দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। অনেকেই জানতে চান — “আশুরার নামাজের নিয়ত ২০২৫ সালে কিভাবে করব?” — এই ব্লগ পোস্টে আমরা তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

আরও পড়ুন-আশুরার রোজার ফজিলত ২০২৫

আশুরার নামাজ কী?

আশুরার নামাজ কোনো ফরজ নামাজ নয়; এটি একটি নফল ইবাদত। রাসুল (সা.) থেকে সরাসরি আশুরার দিন আলাদা করে নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়া না গেলেও সালাফে সালেহীন ও ইমামগণ নফল নামাজ, দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে দিনটি পালন করতেন। এই নামাজ আত্মশুদ্ধি, দোয়া কবুল ও গুনাহ মাফের এক অনন্য সুযোগ।

আশুরার নামাজের নিয়ম

নামাজের সময়:

আশুরার দিন যেকোনো সময় (ফজরের পর থেকে আসরের আগ পর্যন্ত) নফল নামাজ আদায় করা যায়। তবে কেউ কেউ ফজরের পরেই আশুরার নির্দিষ্ট নফল নামাজ পড়ে থাকেন।

নামাজের রাকাত:

সাধারণত ২ রাকাত বা ৪ রাকাত নফল নামাজ আদায় করা হয়।

আশুরার নামাজের নিয়ত

নিচে আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ আশুরার নামাজের নিয়ত দেওয়া হলো:

🔸 আরবি:

نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَيْنِ صَلَاةً نَافِلَةً لِيَوْمِ عَاشُورَاءَ أَدَاءً لِلّٰهِ تَعَالٰى، اَللّٰهُ أَكْبَرُ

🔹 উচ্চারণ:

নাওয়াইতু আন উসল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক‘আতাইনি সালাতান নাফিলাতান লি ইয়াওমি আশুরা, আদা’আন লিল্লাহি তা‘আলা, আল্লাহু আকবার।

🔹 বাংলা অর্থ:

আমি নিয়ত করছি যে, আমি আশুরার দিনে দুই রাকাত নফল নামাজ আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে আদায় করব; আল্লাহু আকবার।

প্রতি রাকাতে সূরা পাঠ:

  • প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা ইখলাস
  • দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা ইখলাস

সূরা ইখলাস ১১ বার পাঠের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে যে, এটি জান্নাতে একটি বাড়ি নিশ্চিত করে।

আশুরার দিনে আর কী কী আমল করা উত্তম?

  • আশুরার রোজা রাখা (৯ ও ১০ মহররম, অথবা ১০ ও ১১)
  • দোয়া ও ইস্তিগফার করা
  • আত্মীয়দের মাঝে খরচ করা (রাসুল (সা.) এর হাদিস: “যে আশুরার দিনে পরিবারের প্রতি খরচ করবে, আল্লাহ্‌ তার রিজিক বাড়াবেন”) — Dar-us-Salam ব্লগ
  • কুরআন তিলাওয়াত
  • গরীবদের দান করা
  • গুনাহ থেকে তওবা করা

আশুরার ইবাদতের ফজিলত

  • রাসুল (সা.) বলেন:

“আশুরার রোজা বিগত এক বছরের গুনাহর কাফফারা।” — সহিহ মুসলিম: ১১৬২

  • “যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারের জন্য খরচ করে, আল্লাহ তাআলা সারাবছর তার জন্য রিজিক বৃদ্ধি করে দেন।” — (বায়হাকি, শরহে মিশকাত)
  • “আল্লাহ আশুরার দিনে বহু নবীকে মুক্তি দিয়েছেন ও বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।”

আশুরার দোয়া

আশুরার দিনে পড়ার জন্য একটি বিশেষ দোয়া নিচে দেওয়া হলো:

আরবি: اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي فِيهِ مِنَ المُتَوَكِّلِينَ عَلَيْكَ، وَاجْعَلْنِي فِيهِ مِنَ الفَائِزِينَ لَدَيْكَ، وَاجْعَلْنِي فِيهِ مِنَ المُقَرَّبِينَ إِلَيْكَ، بِإِحْسَانِكَ يَا غَايَةَ الطَّالِبِينَ

বাংলা অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমাকে আশুরার দিনে তোমার ওপর ভরসাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো, তোমার নৈকট্যপ্রাপ্ত বিজয়ীদের অন্তর্ভুক্ত করো, আর তোমার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। হে দয়াবান রব!

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: আশুরার নামাজ ফরজ না সুন্নত?

উত্তর: এটি ফরজ নয়, বরং নফল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তবে এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব।

প্রশ্ন ২: আশুরার নামাজে কি বিশেষ সূরা পড়তে হয়?

উত্তর: হাদিসে নির্দিষ্টভাবে সূরা ইখলাস ১১ বার পড়ার কথা এসেছে। তবে সাধারণ নফল নামাজের মতোও পড়া যেতে পারে।

প্রশ্ন ৩: মহিলারা কি আশুরার নামাজ পড়তে পারবে?

উত্তর: অবশ্যই। মহিলারাও ঘরে বসে আশুরার নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।

প্রশ্ন ৪: আশুরার নামাজ জামাতে পড়া যাবে?

উত্তর: এটি ব্যক্তিগত নফল নামাজ হওয়ায় জামাতে না পড়ে একাকী পড়াই উত্তম।

উপসংহার

আশুরার নামাজ ২০২৫ সালে আমাদের জন্য হতে পারে এক আত্মশুদ্ধির সোপান। এটি আমাদের ঈমান, তাওয়াক্কুল, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যদিও এই নামাজ ফরজ নয়, তবে এই দিনের গুরুত্ব ও ফজিলতের কারণে নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। রোজা, দোয়া, তাওবা ও ইবাদতের মাধ্যমে আশুরার দিনটিকে পূর্ণতা দেওয়াই হবে প্রকৃত সফলতা।

আরও পড়ুন-মহরম ও আশুরা ২০২৫:কত তারিখে,আমল,রোজা,ফজিলত,ইতিহাস জানুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।