অনাপত্তি পত্র (No Objection Certificate বা NOC) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনগত নথি, যা বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত কাজে প্রয়োজন হয়। যেমন—চাকরি পরিবর্তন, জমি বিক্রয়, বিদেশে ভ্রমণ, ব্যাংক লোন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই দলিলটি আবশ্যক।
২০২৫ সালে নতুন কিছু নিয়ম ও ফরম্যাট পরিবর্তন হয়েছে, যা মাথায় রেখে সঠিকভাবে অনাপত্তি পত্র লেখা প্রয়োজন। এই গাইডে আপনি অনাপত্তি পত্র লেখার সম্পূর্ণ নিয়ম, নমুনা ফরম্যাট এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন।
আরও পড়ুন:-বিদেশ যাওয়ার চুক্তিপত্র
আরও পড়ুন
অনাপত্তি পত্র কি? (What is a No Objection Certificate?)
অনাপত্তি পত্র বা NOC হল একটি আইনগত দলিল, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে তারা নির্দিষ্ট বিষয়ে কোনো আপত্তি রাখে না। এটি সাধারণত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়:
-
চাকরি পরিবর্তন: পূর্বের কর্মস্থল থেকে NOC নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।
-
জমি বা সম্পত্তি হস্তান্তর: ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সম্মতি নিশ্চিত করতে।
-
বিদেশে ভ্রমণ বা ইমিগ্রেশন: কিছু দেশে ভিসার জন্য NOC প্রয়োজন।
-
ব্যাংক লোন বা ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস: ঋণ নেওয়ার সময় পূর্ববর্তী ব্যাংক থেকে NOC লাগে।
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: এক স্কুল/কলেজ থেকে অন্যত্র ট্রান্সফারের জন্য।
সঠিকভাবে NOC লেখা না হলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে, তাই এর ফরম্যাট ও ভাষা জানা জরুরি।
অনাপত্তি পত্র লেখার নিয়ম ২০২৫(চাকরি থেকে NOC)
[প্রতিষ্ঠানের লোগো] এবিসি লিমিটেড ১২৩ বিজনেস টাওয়ার, ঢাকা-১০০০ তারিখ: ১০ জুন, ২০২৫ প্রতি, এক্সওয়াইজেড কোম্পানি ম্যানেজার, এইচআর ডিপার্টমেন্ট বিষয়: চাকরি থেকে অব্যহতি সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র জনাব মো. সাকিব আলম আমাদের প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। তার চাকরিকালে কোনো অসatisfactory Conduct বা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নেই। তিনি ৩০ জুন, ২০২৫ থেকে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করবেন। তার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ধন্যবাদান্তে, [স্বাক্ষর ও সীল] মো. রহিমুল ইসলাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবিসি লিমিটেড
অনাপত্তি পত্র লেখার নিয়ম জমি বিক্রয়ের NOC
[সরকারি সীল] জেলা প্রশাসক, ঢাকা তারিখ: ১৫ জুন, ২০২৫ বিষয়: জমি বিক্রয় সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, মো. আলমগীর হোসেন (জমির মালিক) তার名下 ৫ কাঠা জমি (জে.এল. নং ১২৩৪) মো. করিমুল ইসলামের কাছে বিক্রয় করতে ইচ্ছুক। এই লেনদেনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। [স্বাক্ষর] জেলা প্রশাসক, ঢাকা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনাপত্তি পত্র
[প্রতিষ্ঠানের হেডার/লোগো]
বিদ্যালয়/কলেজের নাম
ঠিকানা: [ইনস্টিটিউশনের সম্পূর্ণ ঠিকানা]
ইমেইল: [অফিসিয়াল ইমেইল]
ফোন: [যোগাযোগ নম্বর]
তারিখ: [ডিডি/এমএম/ইয়াইয়াই]
প্রতি,
[প্রাপকের নাম/প্রতিষ্ঠানের নাম]
[প্রাপকের ঠিকানা]
বিষয়: শিক্ষার্থীর বদলি/ট্রান্সফার সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র
এটি স্বীকার করা যাচ্ছে যে, শিক্ষার্থীর নাম: [পূর্ণ নাম], শ্রেণী: [বর্তমান শ্রেণী], রোল নং: [রোল নম্বর], শাখা: [শাখা (যদি প্রযোজ্য)] আমাদের প্রতিষ্ঠানের একজন নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল শিক্ষার্থী ছিলেন। উক্ত শিক্ষার্থী [স্থানান্তর করার কারণ, যেমন: “পারিবারিক কারণে”/”উচ্চশিক্ষার জন্য”] [নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম]-এ ভর্তি হতে ইচ্ছুক।
ঘোষণা:
-
উক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো শৃঙ্খলামূলক বা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নেই।
-
আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার বদলি বা নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে কোনো আপত্তি নেই।
-
এই অনাপত্তি পত্র [X মাস/দিন] পর্যন্ত বৈধ থাকবে।
সংযুক্তি (যদি প্রযোজ্য):
-
শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড কপি
-
সর্বশেষ পরীক্ষার রেজাল্ট
ধন্যবাদান্তে,
[স্বাক্ষর ও সীল]
[প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষের নাম]
[পদবী]
[প্রতিষ্ঠানের নাম]
মোবাইল: [যোগাযোগ নম্বর]
উদাহরণ (সাধারণ বাংলা নমুনা)
ঢাকা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ
১২/ক, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
ইমেইল: info@dpsc.edu.bd | ফোন: ০১৭XXXXXXX
তারিখ: ২০ জুন, ২০২৫
প্রতি,
প্রধান শিক্ষক,
সানশাইন স্কুল, গুলশান, ঢাকা
বিষয়: শিক্ষার্থীর বদলি সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র
এটি প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, জন্য মো. আরিফুল ইসলাম, শ্রেণী: দশম (বিজ্ঞান), রোল নং: ২৫**, আমাদের প্রতিষ্ঠানের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পিতার বদলির কারণে উক্ত শিক্ষার্থী আপনার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ইচ্ছুক।
ঘোষণা:
-
তার বিরুদ্ধে কোনো শৃঙ্খলামূলক বা আর্থিক অনিয়মের রেকর্ড নেই।
-
ঢাকা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষ থেকে তার ট্রান্সফারে কোনো আপত্তি নেই।
-
এই NOC ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত বৈধ থাকবে।
সংযুক্তি:
-
শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন সনদ (কপি)
-
নবম শ্রেণীর বার্ষিক রেজাল্ট
ধন্যবাদান্তে,
[স্বাক্ষর ও সীল]
প্রফেসর মো. কামাল হোসেন
প্রধান শিক্ষক
ঢাকা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মোবাইল: ০১৯XXXXXXX
পাসপোর্টের জন্য অনাপত্তি পত্রের আবেদন
তারিখ: ২০ জুলাই ২০২৫
প্রতি,
জনাব/জনাবা [কার্যালয় প্রধান/প্রতিষ্ঠান প্রধানের নাম]
[প্রতিষ্ঠানের নাম]
[প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা]
বিষয়: পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য অনাপত্তি পত্র প্রদানের আবেদন
মহোদয়/মহোদয়া,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি [আপনার পূর্ণ নাম], [আপনার পদবী], [প্রতিষ্ঠানের নাম]-এ কর্মরত/অধ্যয়নরত। বিদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আমার পাসপোর্ট ইস্যুর প্রয়োজন হয়েছে। এমতাবস্থায়, আমার পক্ষ থেকে পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানের অনাপত্তি পত্র (NOC) প্রদান করা প্রয়োজন।
আমার বিবরণ:
-
নাম: [পূর্ণ নাম]
-
পিতার নাম: [পিতার পূর্ণ নাম]
-
মাতার নাম: [মাতার পূর্ণ নাম]
-
জন্ম তারিখ: [DD/MM/YYYY]
-
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: [NID নম্বর]
-
পদবী/শ্রেণী: [আপনার পদবী/শ্রেণী]
-
কর্মরত/অধ্যয়নরত: [প্রতিষ্ঠানের নাম]
অতএব, বিনীত অনুরোধ করছি, পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য আমাকে একটি অনাপত্তি পত্র প্রদান করে বাধিত করবেন।
সংযুক্তি:
১. জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
২. প্রতিষ্ঠান আইডি কার্ডের ফটোকপি
বিনীত,
[আপনার স্বাক্ষর]
[আপনার পূর্ণ নাম]
[যোগাযোগ নম্বর]
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
১. অনাপত্তি পত্র কোথায় জারি করা হয়?
-
প্রতিষ্ঠান প্রধান/এইচআর (চাকরির ক্ষেত্রে)
-
জেলা প্রশাসক/ইউনিয়ন পরিষদ (জমি/সম্পত্তির ক্ষেত্রে)
-
ব্যাংক ম্যানেজার (লোন ক্লিয়ারেন্সের জন্য)
২. NOC-এর ফি কত?
সাধারণত NOC বিনামূল্যে জারি করা হয়, তবে কিছু প্রতিষ্ঠান অ্যাডমিন ফি নিতে পারে (বাংলাদেশ সচিবালয় নোটিফিকেশন দেখুন)।
৩. NOC কতদিন বৈধ থাকে?
সাধারণত ৬ মাস, তবে প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হতে পারে।
উপসংহার
২০২৫ সালে অনাপত্তি পত্র লেখার নিয়ম আগের তুলনায় আরও প্রক্রিয়াজাত ও ডিজিটাল হয়েছে। সঠিক ফরম্যাট ও ভাষা ব্যবহার করে আইনি জটিলতা এড়াতে পারেন। এই গাইড অনুসরণ করে আপনি সহজেই একটি বৈধ NOC তৈরি করতে পারবেন।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন