গ্যাস্ট্রিক এমন একটি রোগ যেটি খুব সহজেই দেহে তৈরি হয়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বর্তমানে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নেই এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। সকলেরই কমবেশি গ্যাস রয়েছে। আর এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান সকলেই জানতে চায়। অনেকেই অনেক ধরনের ঔষধ কিংবা ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান পায় না।
তারা এমন একটি সমাধান খোঁজে যেটি করার ফলে এই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তাই আজকে আর্টিকেলটি আমি নিয়ে এসেছি গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে কোন সিরাপটি খেলে আপনার গ্যাস কমবে এই বিষয়টি সম্পর্কে। যাদের বিভিন্ন ট্যাবলেট বা প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস কমছে না তারা গ্যাসের সিরাপ খেয়ে দেখতে পারেন আশা করছি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান পাবেন। চলুন দেখে নেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য কোন সিরাপটি ভালো।
গ্যাস্ট্রিক কি
গ্যাস্ট্রিক পরিপাকতন্ত্রের একটি জটিলতা জনিত রোগ। আমাদের দেহে পরিপাকতন্ত্রের কাজ হচ্ছে আমাদের গ্রহণকৃত খাবার বিভিন্ন ধরনের খাদ্য রসের মাধ্যমে ভেঙে হজম করানো। যদি পরিপাকতন্ত্র এই সমস্ত খাদ্য হজমের কাজ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করতে না পারে তখনই গ্যাস্ট্রিকের সৃষ্টি হয়। যকৃতের দীর্ঘদিন প্রদাহ থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সূত্রপাত ঘটে।
আরও পড়ুন
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই তার নির্মূল করার জন্য প্রাকৃতিক খাবার কিংবা ওষুধ সেবন করা উচিত।গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা যদি প্রকোট আকার ধারণ করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে সময় মতো চিকিৎসা না করা হলে।
🩺 গ্যাস্ট্রিকের সাধারণ লক্ষণ
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা চিনে নেওয়ার জন্য কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
-
পেট ফুলে যাওয়া বা ভারী লাগা
-
বুকে জ্বালাপোড়া (Heartburn)
-
ঢেঁকুর ওঠা
-
পেট ব্যথা
-
বমিভাব
এগুলো যদি নিয়মিত হয়, তাহলে গ্যাস্ট্রিককে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
💊 গ্যাস্ট্রিকের জন্য সবচেয়ে ভালো ওষুধ ২০২৫
বর্তমানে বাংলাদেশে গ্যাস্ট্রিকের জন্য কার্যকর ওষুধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
১. Regler 30 (Dexlansoprazole INN)
-
এটি PPI ক্লাসের ওষুধ।
-
দিনে ১ বার খালি বা ভরা পেটে খাওয়া যায়।
-
এটি গ্যাস্ট্রিকের এসিড নিঃসরণ কমায়।
২. Omeprazole
-
সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য ওষুধ।
-
সকালে খালি পেটে ১টি ক্যাপসুল খেতে হয়।
৩. Esomeprazole (Nexium)
-
তুলনামূলক শক্তিশালী।
-
বুকে জ্বালাপোড়া কমাতে কার্যকর।
৪. Domperidone + PPI কম্বিনেশন (Domp + Omeprazole)
-
গ্যাস, ঢেঁকুর ও পেট ভারী লাগার জন্য কার্যকর।
❗ দ্রষ্টব্য: কোনও ওষুধ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য কোন সিরাপ ভালো
বর্তমানে গ্যাস্ট্রিকের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে যার কারণে অনেক কোম্পানি গ্যাস্ট্রিকের বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরি করছে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ট্যাবলেট এবং সিরাপ দুই ধরনের ঔষধি বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক ধরনের ট্যাবলেট খাওয়ার পরেও গ্যাস্ট্রিক কমে না। তবে অনেক সময় ট্যাবলেট খাওয়ার পর গ্যাস্ট্রিক না কমলেও গ্যাস্ট্রিকের সিরাপ খাওয়ার পর গ্যাস্ট্রিক কমে যায়। বাজারে এমন কিছু গ্যাস্ট্রিকের কার্যকারী শিরা রয়েছে যেগুলো খেলে গ্যাস কমবে। যেমন:
আরলজাইম সিরাপ
যাদের পাকস্থলীতে আলসার অতিরিক্ত গ্যাস বদহজম এই সমস্যাগুলো রয়েছে এছাড়াও যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে লড়াই করে তাদের জন্য এই সিরাপটি খুব উপকারী।
অ্যানটানিল প্লাস
এই সিরাপটি গ্যাস্ট্রিকের জন্য অন্যতম কার্যকারী একটি সিরাপ। যাদের অতিরিক্ত গ্যাস, ক্ষুধা মন্দা, বদ হজম, বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা, পেট ফুলা এবং অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া এই সমস্যাগুলো নিয়ে ভোগে তারা এই সিরাপটি খেলে সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাবে।
কারমিনা সিরাপ
কারমিনা সিরাপ খেলে পেটের নয়টি সমস্যা দূর হবে। অম্বল, বায়োজনিত পেট ব্যথা, পাকস্থলী লিভারের দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধামন্দা এই সমস্যাগুলো থেকে কারমিনা সিরাপ আরাম দেবে।
এন্টাসিড প্লাস সিরাপ
ঢেকুর ওঠা, বুক জ্বালাপোড়া, পেট জ্বালাপোড়া, আলসার, বদহজম এই সমস্যা গুলো যাদের হয় তারা অ্যান্টাসিড প্লাস নামে এই সিরাপটি খাবেন। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে খেতে হবে।
গ্যাভিসল
অনেকেই প্রশ্ন করেন গর্ভবতী মায়েদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কোন সিরাপ দেওয়া যাবে। গর্ভবতী মা সহ সকলেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য এই সিরাপটি খেতে পারে। আপনি জেনে খুশি হবেন যে এটি একটি চিনি মুক্ত সিরাপ। এটি বদহজম ঢেকুর উঠা বুক জ্বালাপোড়া পেট ফাঁপা পেট ব্যথা সকল গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান দিবে। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি খেতে হবে।
গ্যাসট্রোকন ডি এ সিরাপ
যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অতি জটিল। অর্থাৎ যারা অতিরিক্ত গ্যাসে ভুগছেন এছাড়াও ঢেকুর তোলা বমি আসা অম্বল বেড়ে যাওয়া পেট ফুলে থাকা ইত্যাদি সকল সমস্যার জন্য এই সিরাপটি আপনি খেতে পারেন। অবশ্যই তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।
ফেমোট্যাক সিরাপ
ফেমোট্যিক সিরাপটি বাচ্চাদের গ্যাসের জন্য খাওয়ানো হয়। বাচ্চাদের গ্যাসের জন্য এটি খুব ভাল সেরা। এক থেকে ১৬ বছর বয়স্ক যে কোন ব্যক্তি এই সিরাপ খেতে পারেন। যেসব বাচ্চার বদহজম এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই সিরাপটি খুবই কার্যকারী।
হারবিসল সিরাপ
বাচ্চার পেটে গ্যাস এবং বদহজম একটি বড় ধরনের সমস্যা। এই কারণে বাচ্চা অনেক সময় কান্নাকাটি করে শরীরে অনেক বেশি ঘাটতি যায়। এই হারবিসল সিরাপটি এসব সমস্যা সমাধান করতে পারে।একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই সিরাপটি আপনি আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারেন গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে।
উল্লেখিত সিরাপ গুলো আপনি তখনই খাওয়াতে পারেন যখন আপনাকে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক নিয়ম-কানুন অনুযায়ী ওষুধটি খেতে বলবেন। ওষুধ কখনোই নিজের মতো করে নিজের নিয়মে খাওয়া উচিত নয় তার শরীরের উন্নতির চেয়ে অবনতি ডেকে আনে। তাই অবশ্যই ওষুধগুলো খেতে হলে আপনি একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেটের নাম
বাজারে এখন বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ পাওয়া যায়।বাজারের এইসব কোম্পানির ঔষধ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কোম্পানির ঔষধের নাম হলো:
*রেনিটেডিন।
*সার্জেল।
*রোলাক।
*সেকলো।
*রাবি প্লাজল
*ইসুমি প্লাজল
*প্যানটোনিক্স।
*নিউ ট্রাক।
*ওর ট্রাক।
*লোসেক্টিল।
*ম্যাক্সপ্রো।
*এক্সিজিয়াম।
*ওসেপ্লাজল।
*ইসুলুক।
*এন্টাসিড ইত্যাদি।
গ্যাস্ট্রিকে কোন ট্যাবলেট খাওয়া ভালো
বাজারের বিভিন্ন ধরনের গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ কোম্পানিদের সকল ঔষধি গ্যাস্ট্রিকের জন্য উপকারী। তবে আসলে চিকিৎসকরা ভালো বলতে পারবেন গ্যাস্ট্রিকের জন্য কোন ওষুধটি আপনার খাওয়া উচিত। তবে সাধারণত বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে যে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ গুলো সেগুলো হচ্ছে;
*সার্জেল ২০ এমজি।
*সেক্লু ২০ এমজি।
*এন্টাসিড।
*ম্যাক্সপ্রো।
*ওমেপ্রাজল।
*ফিনিক্স ২০ এমজি।
*ওপি ২০ এমজি।
*লোসেক্টিল।
*টার্গেট ২০ এমজি।
🌿 গ্যাস্ট্রিকের ঘরোয়া প্রতিকার
ওষুধ ছাড়াও কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে আনা যায়:
✅ আদা
আদা হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমাতে কার্যকর।
✅ পুদিনা পাতা (Peppermint)
পেট ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
✅ ক্যামোমাইল চা
চিন্তা-উদ্বেগ কমিয়ে হজমে সহায়তা করে।
✅ আপেল সাইডার ভিনেগার
এক চা চামচ ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক কমে।
🍽️ খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম
-
প্রতিদিন এক সময়ে খাওয়া
-
অতিরিক্ত মশলাদার ও ভাজাপোড়া খাবার এড়ানো
-
ঠান্ডা পানি ও কার্বনেটেড পানীয় কম খাওয়া
-
খাওয়ার পরপরই না ঘুমানো
📊 গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকিপূর্ণ কারণসমূহ
-
অতিরিক্ত চা/কফি পান
-
ধূমপান ও মদ্যপান
-
দীর্ঘদিন খালি পেটে থাকা
-
মানসিক চাপ
👨⚕️ চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন?
যদি নিচের লক্ষণগুলো থাকে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন:
-
প্রতিদিন বুকে জ্বালাপোড়া
-
পেট ব্যথা সারাদিন থাকে
-
ওষুধেও আরাম না হয়
-
রক্ত বমি বা কালো পায়খানা
সচরাচর জিজ্ঞাসা
গ্যাস্ট্রিকের সিরাপ কোনটি ভালো?
গ্যাস্ট্রিকের সিরাপ আসলে কোনটি ভালো সেটা একজন রেজিস্টার চিকিৎসা কি বলতে পারবেন। তবে সব গ্যাস্ট্রিকের সিরাপই গ্যাস্টিকের সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়।
বাচ্চাদের পেটে গ্যাস ও বদ হজমের সিরাপ কোনটি?
হারবিসল, ফেমোট্যাক এই দুইটি সেরা বাচ্চাদের গ্যাস্ট্রিক এবং বদহজমের জন্য কাজ করে।
পাকস্থলীর আলসার নিরাময় করে কোন সিরাপ?
আরলজাইম নামক সিরাপটি পাকস্থলীর আলসার গ্যাস এবং অন্যান্য অনুরূপ সমস্যা গুলোর সমাধান দেয়। বদহজম, পেটের আলসার, কুষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে এই সিরাপ।
প্রতিদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া কি নিরাপদ?
উত্তর: দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিক সারানো সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেই গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
গ্যাস্ট্রিকের স্থায়ী সমাধান কী?
উত্তর: নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
📢 শেষ কথা
গ্যাস্ট্রিক বাড়ে এমন কাজগুলো সবসময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। ওষুধ খেয়ে গ্যাস্ট্রিক কমানো কখনোই একটি ভালো সমাধান হতে পারে না। মনে রাখবেন গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করাই উত্তম।ওষুধের মধ্যে অনেক রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে যেগুলো শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই বাইরের খাবার অতিরিক্ত তেল মসলাদার খাবার এবং গ্যাস বাড়ে এমন কোন খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খান সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
সতর্কতা: এই ব্লগ শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আরো পোস্ট সমূহ:-
গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানুন