বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া সম্পর্কে জানুন

জীবনে চলার পথে আমরা নানা রকম বিপদ-আপদের সম্মুখীন হই। এই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে ইসলাম আমাদেরকে কিছু বিশেষ দোয়া ও আমল শিখিয়েছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা “বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া” নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আরবি দোয়াগুলোর বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, এবং এগুলোর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানব। পাশাপাশি, এই দোয়াগুলো কিভাবে পড়তে হবে এবং কখন পড়তে হবে তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

দোয়া ইউনুস (আ.)

আরবি:  لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।
অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।”

এই দোয়াটি হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে থাকা অবস্থায় পড়েছিলেন। এটি বিপদ থেকে মুক্তির জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দোয়া।

দোয়া ইস্তিগফার

আরবি: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ
বাংলা উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম।
অর্থ: “আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
এই দোয়াটি নিয়মিত পড়লে আল্লাহ তায়ালা বিপদ দূর করে দেন।

দোয়া কুনুত

আরবি:اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুসনি আলাইকাল খাইরা ওয়া নাশকুরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাইয়াফজুরুকা।

আরও আপনার জন্য –শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে সাহায্য চাই, তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, তোমার উপর ঈমান রাখি, তোমার উপর ভরসা করি, তোমার প্রশংসা করি, তোমার শুকরিয়া আদায় করি এবং তোমার অবাধ্যতা পরিত্যাগ করি।”

এই দোয়াটি বিশেষ করে বিপদ-আপদে পড়া হয়।

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

ইসলামে দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
“আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সূরা গাফির, আয়াত ৬০)
বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং দোয়া করা আমাদের ঈমানের অংশ। দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিপদ দূর করেন এবং আমাদেরকে সহজ পথ দেখান।

কিভাবে দোয়া করবেন?

১. ইখলাসের সাথে দোয়া করুন: দোয়ার সময় একান্ত মনে এবং ইখলাসের সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।
২. নিয়মিত দোয়া করুন: বিপদে পড়ার আগেই নিয়মিত দোয়া করা উচিত।
৩. দোয়ার আদব মেনে চলুন: দোয়ার আগে ওজু করে নিন, আল্লাহর প্রশংসা করুন এবং দরুদ শরিফ পড়ুন।

বিপদ থেকে মুক্তির জন্য অন্যান্য আমল

১. সালাতুত তাসবিহ: এই নামাজটি বিপদ থেকে মুক্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
২. সদকা দেওয়া: সদকা বিপদ দূর করে এবং রিজিক বৃদ্ধি করে।
৩. কুরআন তিলাওয়াত: নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করলে আল্লাহ তায়ালা বিপদ থেকে রক্ষা করেন।

বিপদ থেকে মুক্তির সুরা

বিপদ থেকে মুক্তি পেতে কুরআনে অনেক দোয়া ও সুরা রয়েছে, তবে নিম্নলিখিত সুরাগুলো বিশেষভাবে সহায়ক বলে গণ্য করা হয়:

১. সুরা আল-ফাতিহা (সুরা ১)

  • এই সুরাকে “শিফা” বা আরোগ্যের সুরা বলা হয়।
  • এটি সব ধরনের বিপদ ও কষ্ট থেকে রক্ষা পেতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. সুরা আল-বাকারা (সুরা ২: আয়াত ২৫৫, ২৮৫-২৮৬)

  • আয়াতুল কুরসি (আয়াত ২৫৫): এটি শয়তান, জিন এবং যেকোনো অশুভ শক্তি থেকে সুরক্ষা দেয়।
  • শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬): রাতের বেলা পড়লে বিপদ থেকে আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়।

৩. সুরা আল-ইখলাস, সুরা আল-ফালাক, সুরা আন-নাস (সুরা ১১২, ১১৩, ১১৪)

  • এই তিনটি সুরাকে “মুয়াওয়িযাত” বলা হয় এবং এগুলো জাদু, বদনজর ও সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • সকালে ও সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়া উত্তম।

৪. সুরা আল-আনআম (সুরা ৬: আয়াত ১৬২-১৬৩)

  • বিপদ থেকে মুক্তি ও সফলতার জন্য পড়া যায়।

৫. সুরা আল-তাওবা (সুরা ৯: আয়াত ৫১)

  • لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا
  • অর্থ: “আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তা-ই হবে।”

৬. সুরা আল-আম্বিয়া (সুরা ২১: আয়াত ৮৭) – ইউনুস (আ.) এর দোয়া

  • لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
  • এই দোয়া বিপদ থেকে রক্ষার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

৭. সুরা আল-হাশর (সুরা ৫৯: আয়াত ২১-২৪)

  • সকালে ও সন্ধ্যায় পড়লে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৮. সুরা আর-রহমান (সুরা ৫৫)

  • দুশ্চিন্তা ও মানসিক বিপদ থেকে রক্ষার জন্য এই সুরা খুব উপকারী।

৯. সুরা আল-মুলক (সুরা ৬৭)

  • রাতে পড়লে কবরের আযাব ও বিভিন্ন বিপদ থেকে সুরক্ষা দেয়।

১০. সুরা আল-কাহফ (সুরা ১৮)

  • শুক্রবার পড়লে পুরো সপ্তাহ বিপদ থেকে নিরাপদ থাকা যায়।

আকস্মিক বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”এটি যে কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পাঠ করা যায়। পাশাপাশি, আপনি নিম্নলিখিত দোয়া বা আছরও পড়তে পারেন:

“اللهم إني أعوذ بك من شر ما عملت ومن شر ما لم أعمل”

(আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযু বিকা মিন শারী মা’ আমাল্তু ওয়া মিন শারী মা’ লাম আ’মাল)

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই আমার কাজের শাস্তি থেকে এবং আমার অজানা কাজের শাস্তি থেকেও।”এটি বিপদ ও অকল্যাণ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করতে পারে।

বিপদ থেকে মুক্তির উপায়

বিপদ থেকে মুক্তির জন্য কিছু কার্যকরী উপায় হলো—

১. আল্লাহর ওপর ভরসা করা ও দোয়া করা:

  • বিপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
  • নিয়মিত নামাজ পড়া ও দোয়া করা, বিশেষ করে আয়াতুল কুরসি, সূরা আল-ফালাক, সূরা আন-নাস এবং সূরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া উপকারী।
  • “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” (لا حول ولا قوة إلا بالله) বেশি বেশি বলা।

২. ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা:

  • ধৈর্য এবং ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখলে সমস্যার সমাধান সহজ হয়।
  • সমস্যাকে ঠাণ্ডা মাথায় বিশ্লেষণ করে সমাধানের পথ খোঁজা উচিত।

৩. যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা:

  • বিপদ থেকে মুক্তি পেতে শুধু দোয়া নয়, বাস্তব পদক্ষেপও নিতে হবে।
  • সমস্যার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী সমাধান খোঁজা।
  • কোনো আইনি বা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।

৪. ভালো কাজ করা ও সৎ পথে থাকা:

  • অন্যের উপকার করলে নিজেও উপকৃত হওয়া যায়।
  • অন্যকে কষ্ট না দেওয়া ও সততার সঙ্গে চললে বিপদ কমে আসে।
  • গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা, সদকা দেওয়া ও দান করা বরকত বয়ে আনে।

৫. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও কুসংস্কার পরিহার:

  • ভীতি ও হতাশা দূর করা জরুরি।
  • কুসংস্কার বা ভিত্তিহীন ধারণার ওপর নির্ভর না করে বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজা উচিত।

৬. ধৈর্যশীল ও ইতিবাচক মানুষদের সাথে থাকা:

  • ভালো ও সহানুভূতিশীল মানুষদের সংস্পর্শে থাকলে মনোবল বাড়ে।
  • হতাশা ও দুশ্চিন্তা কমাতে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা ভালো।

বিপদ থেকে মুক্তির নামাজ

বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং কার্যকর একটি উপায়। এটি সালাতুল হাজত বা দুঃসময়ে নফল নামাজ নামে পরিচিত।

নামাজের রাকাত: ২ রাকাত (বা ৪ রাকাত)
নিয়ত: “নফল হাজতের নামাজ আদায় করছি, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।”
পদ্ধতি:

  1. প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যে কোনো সূরা পড়তে পারেন (উদাহরণস্বরূপ, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক বা সূরা নাস)।
  2. দ্বিতীয় রাকাতেও একইভাবে নামাজ পড়তে হবে।
  3. নামাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন এবং আপনার সমস্যার সমাধান প্রার্থনা করুন।

উপসংহার

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া এবং আমলগুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই দোয়াগুলো নিয়মিত পড়লে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করেন। তাই, আমাদের উচিত নিয়মিত দোয়া করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া কখন পড়তে হবে?

উত্তর: বিপদে পড়ার সময় বা বিপদ আসার আগেই নিয়মিত এই দোয়াগুলো পড়া উচিত।

প্রশ্ন ২: দোয়া ইউনুস (আ.) কতবার পড়তে হবে?

উত্তর: এই দোয়াটি যতবার সম্ভব পড়া উচিত। বিশেষ করে বিপদে পড়লে বারবার পড়তে পারেন।

প্রশ্ন ৩: দোয়ার পাশাপাশি আর কী কী আমল করা উচিত?

উত্তর: দোয়ার পাশাপাশি সদকা দেওয়া, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং নামাজ পড়া উচিত।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

Assalamu Alaikum wa Rahmatullah. I am Md. Sanaul Bari. I am a salaried employee by profession and the admin of this website. Apart from my job, I have been writing on my own website for the past 14 years and creating content on my own YouTube and Facebook. Special Note - If there is any mistake in the writing, please forgive me. Thank you.