বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী কিংবা ব্যাংক লেনদেনকারীর জন্য TIN (Tax Identification Number) একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করেন — টিন সার্টিফিকেট থাকলেই হয়তো কর দিতে হয়। কিন্তু আসলেই কি তাই? ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের বাজেট অনুযায়ী কর ব্যবস্থা ও করমুক্ত আয়ের সীমায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। আজ আমরা বিস্তারিতভাবে জানব — টিন থাকলেই কি কর দিতে হবে, কারা করমুক্ত থাকবেন, আর কাদের জন্য কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুন-টিন সার্টিফিকেটের আসল সুবিধা ও অসুবিধা
টিন সার্টিফিকেট কী?
TIN বা Tax Identification Number হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক প্রদত্ত একটি ইউনিক নম্বর, যা একজন করদাতার পরিচয় বহন করে। এটি মূলত সরকারের কাছে করদাতা সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ব্যাংক একাউন্ট খোলা, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন, জমি কেনা, অথবা বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে বর্তমানে TIN সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে?
👉 সহজ উত্তর হলো না।
শুধু TIN থাকলেই আপনাকে কর দিতে হবে না। কর দিতে হবে তখনই যখন আপনার বার্ষিক আয় নির্দিষ্ট করমুক্ত সীমা অতিক্রম করবে।
২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের করমুক্ত আয়ের সীমা
নতুন অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
-
👨 পুরুষ করদাতা → ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
-
👩 নারী ও ৬৫+ বয়সী করদাতা → ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
-
👨🦽 শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী করদাতা → ৪,৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
অর্থাৎ, আপনার আয় যদি এই সীমার মধ্যে থাকে তবে কর দিতে হবে না, যদিও আপনার কাছে TIN সার্টিফিকেট থাকবে।
কেন TIN সার্টিফিকেট প্রয়োজন?
TIN সার্টিফিকেট থাকলেই কর দিতে হবে না, তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে আবশ্যক। যেমন:
-
ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি টাকা লেনদেন
-
গাড়ি বা জমি রেজিস্ট্রেশন
-
সরকারি টেন্ডার বা সাপ্লাই কন্ট্রাক্ট
-
সঞ্চয়পত্র বা বিভিন্ন আর্থিক বিনিয়োগ
-
বিদেশ ভ্রমণের জন্য কিছু নির্দিষ্ট অনুমোদন
এ কারণে অনেকেই আয় করযোগ্য সীমার মধ্যে না পড়লেও শুধু এসব সেবা গ্রহণের জন্য TIN সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন।
কর দিতে হবে কখন?
TIN সার্টিফিকেট থাকলেই কর নয়, বরং কর দিতে হবে যদি –
-
বার্ষিক আয় করমুক্ত সীমার বেশি হয়
-
ব্যবসায় বা চাকরির মাধ্যমে আয় নির্ধারিত সীমার ওপরে যায়
-
নির্দিষ্ট বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ে সরকারের আরোপিত কর প্রযোজ্য হয়
উদাহরণ
ধরা যাক, রফিক নামে একজন ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৩,০০,০০০ টাকা। তার কাছে TIN সার্টিফিকেট রয়েছে, কারণ তিনি ব্যাংক লোন নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আয় করমুক্ত সীমার কম হওয়ায় তাকে কোনো কর দিতে হবে না।
অন্যদিকে করিম নামে একজন চাকরিজীবীর বার্ষিক আয় ৫,০০,০০০ টাকা। তার আয় করমুক্ত সীমার বেশি হওয়ায় তাকে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে কর পরিশোধ করতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা অসুবিধা
টিন সার্টিফিকেট থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো – আপনি আইনগতভাবে করদাতা হিসেবে পরিচিত হবেন এবং বিভিন্ন সরকারি ও আর্থিক কাজে সহজে সুবিধা পাবেন। যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, গাড়ি বা জমি কেনা, কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স করা, বিদেশ ভ্রমণের সময় ভিসা প্রসেস ইত্যাদি। তবে অসুবিধার দিক হলো – একবার টিন নিলে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়, এমনকি আপনার আয় ট্যাক্সযোগ্য সীমার নিচে হলেও ফাইলিং করতে হয়।
টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে
বর্তমানে বাংলাদেশে টিন সার্টিফিকেট করতে কোনো সরকারি ফি নেই, অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ ফ্রি। অনলাইনে NBR (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)-এর e-TIN পোর্টালের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন। তবে যদি কারো মাধ্যমে (যেমন কনসালট্যান্ট বা এজেন্ট) করতে চান, তারা সার্ভিস চার্জ নিতে পারে।
টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে
টিন সার্টিফিকেট মূলত একজন নাগরিকের করদাতা পরিচয়ের স্বীকৃতি। এটি দিয়ে আপনি জমি/ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন, ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন, ব্যাংক লোনের আবেদন করতে পারবেন, এমনকি চাকরিতে আবেদন বা বিদেশ যাত্রার সময় অনেক ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে। সংক্ষেপে বললে, আধুনিক জীবনের প্রায় সব ধরনের আর্থিক ও সরকারি কাজে টিন সার্টিফিকেট একটি অপরিহার্য কাগজপত্র।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: টিন সার্টিফিকেট থাকলে কি আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক?
উত্তর: না। রিটার্ন দাখিল করতে হবে শুধুমাত্র তখনই, যখন আয় করযোগ্য সীমার বেশি হয়।
প্রশ্ন ২: টিন ছাড়া কি সরকারি সেবা পাওয়া যায়?
উত্তর: কিছু সেবা পাওয়া যায়, তবে জমি রেজিস্ট্রেশন, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংকে উচ্চ পরিমাণ লেনদেন ইত্যাদির জন্য TIN বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন ৩: আমি একজন ফ্রিল্যান্সার, আয় বছরে ৩ লাখ টাকা। আমার কি কর দিতে হবে?
উত্তর: না, কারণ আপনার আয় করমুক্ত সীমার নিচে। তবে নির্দিষ্ট পেমেন্ট বা ব্যাংক লেনদেনে TIN লাগতে পারে।
প্রশ্ন ৪: আয় করযোগ্য না হলেও কি TIN রাখা উচিত?
উত্তর: হ্যাঁ, কারণ ভবিষ্যতে বিভিন্ন সরকারি বা আর্থিক কাজে এটি প্রয়োজন হবে।
উপসংহার
TIN সার্টিফিকেট থাকলেই যে কর দিতে হবে তা নয়। কর দিতে হবে তখনই যখন আপনার বার্ষিক আয় নির্ধারিত করমুক্ত সীমার বেশি হবে। তবে সরকারি বিভিন্ন সেবা গ্রহণের জন্য TIN সার্টিফিকেট এখন প্রায় অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, আপনার আয় করযোগ্য সীমায় না পড়লেও আগেভাগেই TIN সংগ্রহ করা ভালো।
আরও পড়ুন-টিন সার্টিফিকেট কি?টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔