বাংলাদেশে ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (TIN Certificate) হলো করদাতার পরিচয়পত্র। যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আয়কর রিটার্ন জমা দিতে, ব্যবসায়িক লেনদেন করতে বা বিভিন্ন সরকারি কাজে অংশ নিতে এই টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে। তবে অনেক সময় কিছু কারণে টিন সার্টিফিকেট আর প্রয়োজন হয় না—যেমন:
-
ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
-
একই ব্যক্তির একাধিক টিন সার্টিফিকেট হয়ে যাওয়া।
-
চাকরিজীবী বা করদাতা আর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার আওতায় না থাকা।
-
বিদেশে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়া।
এক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যায়। আজকে আমরা জেনে নেবো বাংলাদেশে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম, কাগজপত্র এবং শর্তাবলী।
আরও পড়ুন-টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার নিয়ম
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার কারণ
একজন করদাতা তার টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারেন নিম্নলিখিত কারণে:
- ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ – ব্যবসার কোনো কার্যক্রম না থাকলে।
- ডুপ্লিকেট টিন – ভুলবশত একাধিক টিন নাম্বার হলে।
- প্রবাসে স্থায়ী বসবাস – বিদেশে চলে গেলে আর আয়কর দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
- মৃত্যুর পর – করদাতার মৃত্যু হলে উত্তরাধিকারীরা টিন বাতিলের আবেদন করতে পারেন।
- অন্য কর অঞ্চলে স্থানান্তর – বিশেষ ক্ষেত্রে টিন বাতিল করে নতুন অঞ্চলভিত্তিক টিন নেওয়া যায়।
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে হলে নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে:
-
আবেদনপত্র (করদাতার নিজস্ব স্বাক্ষরিত)
-
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
-
বিদ্যমান টিন সার্টিফিকেটের কপি
-
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের কপি
-
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ক্লোজ সার্টিফিকেট (যদি ব্যবসা বন্ধ হয়)
-
প্রবাসী হলে পাসপোর্ট ও ভিসার কপি
-
মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত্যু সনদের কপি
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার ধাপসমূহ(অফলাইন)
-
আবেদন প্রস্তুত করা
প্রথমে আপনাকে একটি লিখিত আবেদন তৈরি করতে হবে যেখানে উল্লেখ করতে হবে কেন টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে চান। -
কাগজপত্র সংগ্রহ
উপরোক্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহ করুন এবং ফটোকপি সত্যায়িত করে রাখুন। -
কর অফিসে জমা দেওয়া
আবেদনপত্রসহ সব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর সার্কেলে (Tax Circle/Tax Zone) জমা দিতে হবে। -
অফিস যাচাই
কর অফিস আপনার টিন নাম্বার চেক করবে এবং নিশ্চিত হবে যে আপনার আর কোনো কর দায় নেই। -
বাতিল অনুমোদন
সব কিছু ঠিক থাকলে কর কমিশনার টিন সার্টিফিকেট বাতিলের অনুমোদন দেবেন এবং একটি নোটিশ ইস্যু করবেন।
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের জন্য ডেমো আবেদনপত্র
প্রাপক
কর কমিশনার
[আপনার সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল/সার্কেলের নাম]
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)
ঢাকা, বাংলাদেশ। বিষয়: টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন। মাননীয় মহোদয়, আমি [আপনার পূর্ণ নাম], পিতা/স্বামী – [পিতার/স্বামীর নাম], বর্তমানে [আপনার পূর্ণ ঠিকানা]-এর বাসিন্দা। আমার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর [NID নম্বর] এবং ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) [TIN নম্বর]। আমি এই মর্মে আবেদন করছি যে, [আপনার কারণ উল্লেখ করুন – যেমন: আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে / আমি স্থায়ীভাবে বিদেশে চলে যাচ্ছি / ভুলবশত একাধিক টিন সার্টিফিকেট তৈরি হয়েছে]। তাই উপরোক্ত কারণে আমার টিন সার্টিফিকেটটি আর প্রযোজ্য নয়। অতএব, আমার উল্লিখিত TIN সার্টিফিকেটটি বাতিল করার জন্য আপনাকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনার সদয় বিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো। সংযুক্তি (Attachment):
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
বিদ্যমান টিন সার্টিফিকেটের কপি
[কারণভেদে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন – ব্যবসা বন্ধের প্রমাণ/পাসপোর্ট কপি/মৃত্যু সনদ ইত্যাদি]
আবেদনকারীর নাম: [আপনার নাম]
স্বাক্ষর: ____________
তারিখ: [দিন/মাস/বছর]
মোবাইল নম্বর: [আপনার নম্বর]
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম
-
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন:
👉 https://secure.incometax.gov.bd -
আপনার e-TIN অ্যাকাউন্টে লগইন করুন।
-
TIN ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করুন।
-
যদি পাসওয়ার্ড ভুলে যান তাহলে পাসওয়ার্ড রিসেট অপশন ব্যবহার করতে পারবেন।
-
-
“সার্টিফিকেট ম্যানেজমেন্ট” বা প্রোফাইল সেকশন চেক করুন।
-
এখানে আপনি আপনার টিন সম্পর্কিত তথ্য পাবেন।
-
বর্তমানে সরাসরি “Cancel TIN” বাটন নেই, তবে “Update/Correction Request” এর মাধ্যমে আপনি আবেদন শুরু করতে পারবেন।
-
-
অভিযোগ/আবেদন ফরম জমা দিন।
-
অনলাইনে একটি লিখিত আবেদন (Application for Cancellation) করতে হয়।
-
এখানে আপনার কারণ উল্লেখ করতে হবে, যেমন: ব্যবসা বন্ধ, স্থায়ীভাবে বিদেশ যাওয়া, ডুপ্লিকেট টিন ইস্যু হয়েছে ইত্যাদি।
-
-
ডকুমেন্ট আপলোড করুন।
-
জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
-
বিদ্যমান TIN সার্টিফিকেট
-
প্রয়োজন হলে ব্যবসা বন্ধের সনদ/প্রমাণপত্র
-
-
কর অফিস থেকে যোগাযোগ করা হবে।
-
আবেদন জমা দেওয়ার পর কর অফিস আপনার তথ্য যাচাই করবে।
-
প্রয়োজনে অফিসে সরাসরি গিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে।
-
ℹ️ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
-
শুধুমাত্র অনলাইনে ফরম পূরণ করলেই টিন বাতিল হয়ে যায় না।
-
টিন বাতিল চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর কমিশনার/কর সার্কেল অফিসে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
-
যাদের একাধিক টিন আছে, তারা “ডুপ্লিকেট TIN বাতিলের আবেদন” করতে পারবেন।
-
বর্তমানে বাংলাদেশে টিন বাতিল সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক সিস্টেম চালু হয়নি, তবে ভবিষ্যতে এটি চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
টিন সার্টিফিকেট কতদিনে বাতিল হয়?
সাধারণত সব ডকুমেন্ট সঠিক থাকলে টিন সার্টিফিকেট বাতিল হতে ৭-১৫ কর্মদিবস সময় লাগে। তবে কোনো জটিলতা থাকলে বা কর পরিশোধ বাকি থাকলে সময় বেশি লাগতে পারে।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার আগে যা খেয়াল রাখবেন
-
আপনার কোনো কর বকেয়া থাকলে আগে পরিশোধ করতে হবে।
-
কোনো সক্রিয় মামলা থাকলে টিন বাতিল করা যাবে না।
-
একাধিক টিন নাম্বার থাকলে একটি রেখে বাকিগুলো বাতিল করা যায়।
-
ব্যবসা বন্ধ হলে ব্যাংক ও লাইসেন্স-সম্পর্কিত প্রমাণ দিতে হবে।
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: আমি যদি চাকরিজীবী হই এবং এখন আর আয় না করি, টিন বাতিল করতে পারবো?
👉 হ্যাঁ, পারবেন। তবে প্রথমে আয়কর অফিসে কারণ উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন ২: মৃত্যুর পর টিন সার্টিফিকেট কে বাতিল করবে?
👉 উত্তরাধিকারী বা পরিবারের সদস্যরা আবেদন করে বাতিল করতে পারবেন।
প্রশ্ন ৩: টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে কোনো ফি লাগে কি?
👉 সাধারণত কোনো চার্জ নেই, তবে কাগজপত্র সংগ্রহে সামান্য খরচ হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যায় কি?
👉 না, বর্তমানে শুধুমাত্র কর অফিসে সরাসরি গিয়ে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে হয়।
উপসংহার
বাংলাদেশে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা খুব জটিল প্রক্রিয়া নয়। সঠিক কারণ, প্রমাণপত্র ও আবেদন জমা দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই টিন বাতিল করা সম্ভব। তবে আবেদন করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার কোনো বকেয়া কর নেই।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-টিন সার্টিফিকেট কি?টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔