বাংলাদেশে বর্তমানে টিন (Tax Identification Number) সার্টিফিকেট নেওয়া এখন অনেকের কাছেই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে — ব্যাংকে একাউন্ট খোলা, গাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা, পাসপোর্ট রিনিউ, ব্যবসায়িক লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য টিন নম্বর আবশ্যক। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন — টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি ট্যাক্স দিতে হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর হলো — না, টিন সার্টিফিকেট থাকলেই ট্যাক্স দিতে হয় না।
আরও পড়ুন- চাকরিজীবীদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম(চালানসহ)
চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নিই আসল নিয়ম ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রগুলো 👇
টিন সার্টিফিকেট কী?
টিন (TIN) বা Tax Identification Number হলো করদাতার একটি বিশেষ পরিচয় নম্বর, যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) থেকে প্রদান করা হয়। এটি মূলত একজন ব্যক্তির কর সংক্রান্ত সকল তথ্য রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
অর্থাৎ, টিন সার্টিফিকেট থাকলে সরকার আপনাকে একজন “নিবন্ধিত করদাতা” হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে এর মানে এই নয় যে আপনি অবশ্যই কর দেবেন।
টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি ট্যাক্স দিতে হয়?
না। টিন সার্টিফিকেট থাকা মানেই ট্যাক্স দিতে হবে— এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।যদি আপনার বার্ষিক আয় সরকার নির্ধারিত করযোগ্য সীমার নিচে থাকে, তাহলে আপনাকে কোনো কর দিতে হবে না। তবে, আইন অনুযায়ী আপনাকে প্রতি বছর একটি “জিরো রিটার্ন” দাখিল করতে হবে।
জিরো রিটার্ন কী?
‘জিরো রিটার্ন’ হলো এমন একটি ট্যাক্স রিটার্ন, যেখানে আপনি জানিয়ে দেন যে, আপনার আয় করযোগ্য সীমার নিচে, তাই কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
এটি মূলত সরকারের কাছে আপনার আর্থিক স্বচ্ছতার প্রমাণ।
জিরো রিটার্ন জমা দিলে NBR আপনাকে একটি Acknowledgement Receipt (প্রাপ্তি স্বীকার) দেয়, যা দেখায় আপনি নিয়ম অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করেছেন।
অনলাইনে জিরো রিটার্ন দাখিলের নিয়ম
বর্তমানে ট্যাক্স রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা যায় খুব সহজেই। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলো —
-
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে যান: https://www.incometax.gov.bd
-
লগইন করুন আপনার TIN নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে।
-
“Return Submission” সেকশনে গিয়ে আপনার আয় ও ব্যয়ের তথ্য পূরণ করুন।
-
করযোগ্য আয় না থাকলে “Zero Return” অপশন সিলেক্ট করুন।
-
সব তথ্য যাচাই করে সাবমিট করুন এবং রিসিপ্টটি ডাউনলোড করে রাখুন।
এই প্রক্রিয়ায় কোনো ফি দিতে হয় না, এবং কোনো অফিসে গিয়েও ঝামেলা করতে হয় না।
কারা ট্যাক্স দিতে বাধ্য?
যদি আপনার বার্ষিক আয় সরকারের নির্ধারিত করমুক্ত সীমার বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে আয়কর দিতে হবে।
২০২৫ সালের হিসাবে করযোগ্য আয়ের সীমা নিম্নরূপ —
-
পুরুষদের জন্য: ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
-
নারীদের ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য: ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
-
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য: ৪,৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
এর বেশি আয় হলে নির্ধারিত হারে ট্যাক্স দিতে হবে।
জিরো রিটার্ন না দিলে কী হয়?
যাদের টিন সার্টিফিকেট আছে কিন্তু রিটার্ন জমা দেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এর ফলে —
-
ভবিষ্যতে ব্যাংক লোন, গাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার সময় সমস্যা হতে পারে,
-
এনবিআর জরিমানা আরোপ করতে পারে,
-
টিন নম্বর স্থগিতও হতে পারে।
তাই ট্যাক্সযোগ্য আয় না থাকলেও প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জিরো রিটার্ন দাখিল করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
“টিন সার্টিফিকেট থাকলেই ট্যাক্স দিতে হয় না। তবে করযোগ্য আয় না থাকলে জিরো রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। এতে আপনি আইন মেনে চলবেন এবং ভবিষ্যতে কোনো আর্থিক জটিলতায় পড়বেন না।”
— একজন কর বিশেষজ্ঞ, এনবিআর অনুমোদিত ট্যাক্স কনসালট্যান্ট
সারসংক্ষেপ
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| টিন সার্টিফিকেট কি বাধ্যতামূলক? | হ্যাঁ, নির্দিষ্ট কাজের জন্য |
| টিন থাকলেই কি ট্যাক্স দিতে হবে? | না |
| ট্যাক্স না দিলে কী করতে হবে? | অনলাইনে জিরো রিটার্ন জমা দিতে হবে |
| করযোগ্য আয় সীমা | ৩.৫–৪.৭৫ লক্ষ টাকা (২০২৫ অনুযায়ী) |
| রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সময় | সাধারণত প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত |
শেষ কথা
টিন সার্টিফিকেট থাকলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি কেবল আপনার করদাতা পরিচয়, কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা নয়।
তবে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর অনলাইনে জিরো রিটার্ন দাখিল করা আপনার দায়িত্ব — এটি আপনার আর্থিক স্বচ্ছতা ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-টিন সার্টিফিকেট কি?টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


