প্রত্যয়ন পত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি অপরিহার্য ডকুমেন্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চাকরির ক্ষেত্র, আদালত, ব্যাংক কিংবা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কাজে প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু অনেকেই জানেন না কীভাবে সঠিক নিয়মে একটি গ্রহণযোগ্য প্রত্যয়ন পত্র লিখতে হয়। ভুল ফরম্যাট বা অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিলম্ব বা সমস্যা দেখা দেয়।
আরো পোস্ট :-সব ধরনের আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বাংলা ২০২৫
২০২৫ সালে এসেও অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি হাতে লেখা বা অনিয়মিতভাবে তৈরি করা প্রত্যয়ন পত্র ব্যবহার করেন, যা পরে আইনি বা প্রশাসনিক জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই গাইডে আপনি শিখবেন—
আরও পড়ুন
-
প্রত্যয়ন পত্র কী এবং কেন প্রয়োজন?
-
সব ধরনের প্রত্যয়ন পত্র লেখার সঠিক ফরম্যাট ও নিয়ম
-
স্কুল, কলেজ, চাকরি, আদালত ও ব্যক্তিগত কাজে প্রয়োজনীয় নমুনা
-
গুরুত্বপূর্ণ আইনি দিক ও সাধারণ ভুলগুলি এড়ানোর উপায়
এই ব্লগে বাংলায় ধাপে ধাপে প্রত্যয়ন পত্র লেখার সম্পূর্ণ গাইড দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৫ সালের সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী হালনাগাদ করা। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রহণযোগ্য ফরম্যাট, প্রয়োজনীয় এক্সটার্নাল লিঙ্ক এবং ডাউনলোডযোগ্য নমুনা সহ সব তথ্য পাবেন এখানে।
প্রত্যয়ন পত্র কি?
প্রত্যয়ন পত্র (Certificate/Affidavit) হলো একটি আইনগত বা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা জারি করা হয় এবং এতে নির্দিষ্ট তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। এটি স্কুল-কলেজ, চাকরি, আদালত, ব্যাংক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়া হয়।
প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজনীয়তা
-
শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণ
-
চাকরির অভিজ্ঞতা যাচাই
-
আয়ের প্রমাণপত্র
-
বাসস্থান নিশ্চিতকরণ
-
আদালতিক কাজ
প্রত্যয়ন পত্রের প্রকারভেদ
২০২৫ সালে প্রচলিত প্রধান প্রত্যয়ন পত্রগুলোর ধরন:
-
শিক্ষাগত প্রত্যয়ন পত্র (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়)
-
চাকরির প্রত্যয়ন পত্র (এমপ্লয়মেন্ট সার্টিফিকেট)
-
আয় প্রত্যয়ন পত্র (ইনকাম সার্টিফিকেট)
-
বাসস্থান প্রত্যয়ন পত্র (রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট)
-
চরিত্র প্রত্যয়ন পত্র (চ্যারাক্টার সার্টিফিকেট)
-
অ্যাফিডেভিট বা শপথনামা (নোটারি পাবলিক দ্বারা সত্যায়িত)
-
মেডিকেল প্রত্যয়ন পত্র (চিকিৎসা সংক্রান্ত)
প্রত্যয়ন পত্র লেখার সাধারণ নিয়ম
যেকোনো প্রত্যয়ন পত্র লেখার সময় নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করুন:
-
শিরোনাম: “প্রত্যয়ন পত্র” বা সংশ্লিষ্ট শিরোনাম (যেমন: “চাকরির মেয়াদ শেষের প্রত্যয়ন পত্র”)।
-
প্রাপকের ঠিকানা: (যদি প্রয়োজন হয়) যেমন— “প্রিয় মহোদয়/মহোদয়া”।
-
বিষয়: সংক্ষেপে উদ্দেশ্য উল্লেখ করুন, যেমন— “আয়ের প্রত্যয়ন পত্র”।
-
মূল বডি:
-
ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা।
-
সংশ্লিষ্ট তথ্য (যেমন— চাকরির মেয়াদ, পদবী, আয়ের পরিমাণ)।
-
প্রতিষ্ঠানের নাম ও সীল (যদি অফিসিয়াল হয়)।
-
-
তারিখ ও স্বাক্ষর: ইস্যুকারীর নাম, পদবী, স্বাক্ষর ও সীল।
উদাহরণ (সাধারণ ফরম্যাট):
প্রত্যয়ন পত্র এটি প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, জনাব/জনাবা [নাম], পিতা [নাম], মাতা [নাম], ঠিকানা [বিস্তারিত ঠিকানা], আমাদের প্রতিষ্ঠানে [পদবী] হিসেবে [সময়কাল] কর্মরত ছিলেন। তাঁর চাকরির মেয়াদে তিনি সৎ ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারিখ: [DD/MM/YYYY] স্বাক্ষর: ___________ নাম: [প্রদানকারীর নাম] পদবী: [পদবী] প্রতিষ্ঠান: [প্রতিষ্ঠানের নাম] সীল: [প্রতিষ্ঠানের সীল]
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম
শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল বা কলেজ থেকে নিম্নলিখিত প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন হতে পারে:
-
ভর্তি প্রত্যয়ন পত্র
-
চরিত্র প্রত্যয়ন পত্র
-
মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট
নমুনা ফরম্যাট:
[স্কুল/কলেজের লোগো] [প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা] প্রত্যয়ন পত্র এটি প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, জনাব/জনাবা [ছাত্র/ছাত্রীর নাম], পিতা [নাম], মাতা [নাম], আমাদের প্রতিষ্ঠানের [শ্রেণী/বর্ষ]-এ অধ্যয়নরত ছিলেন। তাঁর রোল নম্বর ছিল [রোল নম্বর] এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর [রেজিস্ট্রেশন নম্বর]। তিনি একজন মেধাবী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ শিক্ষার্থী ছিলেন। তারিখ: [DD/MM/YYYY] প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষের স্বাক্ষর: ___________ সীল: [প্রতিষ্ঠানের সীল]
চাকরির প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম
চাকরি পরিবর্তন, ভিসা বা লোনের জন্য চাকরির প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন।
নমুনা ফরম্যাট:
[কোম্পানির লেটারহেড] এমপ্লয়মেন্ট সার্টিফিকেট এই সার্টিফিকেট দ্বারা প্রত্যয়িত করা যাচ্ছে যে, জনাব/জনাবা [নাম], পিতা [নাম], মাতা [নাম], আমাদের কোম্পানিতে [পদবী] হিসেবে [যোগদানের তারিখ] থেকে [চাকরি শেষের তারিখ] পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তাঁর মাসিক বেতন ছিল [টাকার পরিমাণ] এবং তিনি দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন। তারিখ: [DD/MM/YYYY] স্বাক্ষর: ___________ নাম: [এইচআর ম্যানেজার/এমডির নাম] পদবী: [এইচআর ম্যানেজার/এমডি] কোম্পানির সীল: [সীল]
আয় প্রত্যয়ন পত্র
ব্যাংক লোন বা ভিসার জন্য আয়ের প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন।
নমুনা ফরম্যাট:
আয় প্রত্যয়ন পত্র এটি প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, জনাব/জনাবা [নাম], পিতা [নাম], মাতা [নাম], ঠিকানা [বিস্তারিত ঠিকানা], আমাদের প্রতিষ্ঠানে [পদবী] হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর মাসিক আয় [টাকার পরিমাণ] (শুধুমাত্র বেসিক: [টাকার পরিমাণ] + অন্যান্য ভাতা: [টাকার পরিমাণ])। তারিখ: [DD/MM/YYYY] স্বাক্ষর: ___________ নাম: [প্রদানকারীর নাম] পদবী: [অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা] প্রতিষ্ঠান: [প্রতিষ্ঠানের নাম] সীল: [প্রতিষ্ঠানের সীল]
বাসস্থান প্রত্যয়ন পত্র
ভোটার আইডি, পাসপোর্ট বা অন্যান্য কাজে বাসস্থান প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন।
নমুনা ফরম্যাট:
বাসস্থান প্রত্যয়ন পত্র এটি প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, জনাব/জনাবা [নাম], পিতা [নাম], মাতা [নাম], বর্তমানে [ঠিকানা]-এ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি সর্বশেষ [বছর] থেকে এই ঠিকানায় রয়েছেন। তারিখ: [DD/MM/YYYY] স্বাক্ষর: ___________ নাম: [ইউনিয়ন চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাম] পদবী: [ইউনিয়ন চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলর] সীল: [অফিসিয়াল সীল]
অ্যাফিডেভিট বা শপথনামা লেখার নিয়ম
অ্যাফিডেভিট একটি শপথনামা যা নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত করতে হয়।
নমুনা ফরম্যাট:
শপথনামা আমি, [নাম], পিতা [নাম], মাতা [নাম], বয়স [বয়স], ধর্ম [ধর্ম], পেশা [পেশা], ঠিকানা [বিস্তারিত ঠিকানা], সশপথে ঘোষণা করছি যে— 1. [বিস্তারিত বিবরণ] 2. [প্রাসঙ্গিক তথ্য] আমি এই ঘোষণাটি সত্য ও সঠিক বলে জানাচ্ছি এবং কোনো মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়নি। তারিখ: [DD/MM/YYYY] স্থান: [লেখার স্থান] স্বাক্ষর: ___________ [নাম] নোটারি পাবলিক/ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত
প্রত্যয়ন পত্রের নমুনা (PDF/DOC)
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল নমুনা পেতে নিচের লিঙ্কগুলো দেখুন:
প্রত্যয়ন পত্র সম্পর্কিত FAQs
১. প্রত্যয়ন পত্র কোথায় সত্যায়িত করতে হয়?
সাধারণ প্রত্যয়ন পত্র প্রতিষ্ঠান প্রধান বা কর্তৃপক্ষ দ্বারা সত্যায়িত হয়। অ্যাফিডেভিট নোটারি পাবলিক বা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত করতে হয়।
২. প্রত্যয়ন পত্রে কি স্টাম্প পেপার প্রয়োজন?
সাধারণ ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই, তবে অ্যাফিডেভিটের জন্য ১০০-৫০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্টাম্প লাগে।
৩. ভুয়া প্রত্যয়ন পত্র দেওয়ার শাস্তি কি?
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৪৬৩ ধারা অনুযায়ী জাল প্রত্যয়ন পত্র দেওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর কারাদণ্ড।
উপসংহার
২০২৫ সালে সব ধরনের প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম বাংলায় জানতে এই গাইডটি অনুসরণ করুন। স্কুল, চাকরি, আদালত বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সঠিক ফরম্যাটে প্রত্যয়ন পত্র তৈরি করুন এবং আইনগত জটিলতা এড়িয়ে চলুন।
আরো পোস্ট :-যে কোন চাকরির পদোন্নতির আবেদন পত্র লেখার নিয়ম ও সেরা নমুনা
আরও জানতে: বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রণালয়
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
আরো পোস্ট :-সব ধরনের চাকরির রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম ২০২৫