প্রবাসী কল্যাণ কার্ড অনলাইনে আবেদন, সুবিধা, মেয়াদ ও পূর্ণাঙ্গ গাইড

প্রবাসী কল্যাণ কার্ড হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের একটি অফিসিয়াল পরিচয়পত্র, যা শুধুমাত্র নিবন্ধিত ও বৈধ প্রবাসী কর্মীরা পান। এই কার্ডটি BMET (Bureau of Manpower, Employment and Training) এর মাধ্যমে ইস্যু করা হয় এবং এটি সরকারের প্রবাসী ডাটাবেজে সংযুক্ত থাকে।

এই কার্ডের মাধ্যমে একজন প্রবাসী বিদেশে অবস্থানকালীন ও দেশে ফিরে বিভিন্ন সরকারি সেবা, আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ, বীমা সুবিধা, পুনর্বাসন প্রকল্পসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পান।

আরও পড়ুন- প্রবাসীদের ডাকযোগে ভোটের সুযোগ ২০২৬ -কিভাবে নিবন্ধন করবেন?

প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের মূল সুবিধাসমূহ

আর্থিক সহায়তা ও ঋণ সুবিধা

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কার্ডধারীদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রদান করে।

  • বিদেশে যাওয়ার আগে বা ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করতে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায়।

  • পুনর্বাসনের জন্যও সহায়তা পাওয়া যায়, যাতে প্রবাসীরা দেশে ফিরে স্বনির্ভর হতে পারেন।

👉 উদাহরণ:
একজন প্রবাসী সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে কৃষি বা ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে চাইলে এই কার্ডের মাধ্যমে ৪%–৭% সুদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন।

চিকিৎসা ও বীমা সুবিধা

প্রবাসীর মৃত্যু বা দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও বীমা সহায়তা দেওয়া হয়।

  • বিদেশে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনা বা মৃত্যু হলে পরিবার পায় সরকারি ক্ষতিপূরণ।

  • দেশে ফিরে অসুস্থ হলে চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া যায়।

  • অনেক সময় পরিবারকেও এই বীমার আওতায় আনা হয়।

প্রবাসী সন্তানদের শিক্ষা সহায়তা

কার্ডধারী প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বৃত্তি ও স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু রেখেছে।
এর মাধ্যমে সন্তানরা সহজেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

দূতাবাসে দ্রুত সেবা

কার্ডধারী প্রবাসীদের তথ্য BMET ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
ফলে বিদেশের দূতাবাসে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত পরিচয় যাচাই করা যায় এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা দেওয়া হয়।

👉 যেমন – পাসপোর্ট হারানো, আইনি সহায়তা, দেশে ফেরার টিকিট ইত্যাদি বিষয়ে কার্ডধারীরা অগ্রাধিকার পান।

দেশে ফেরার পর পুনর্বাসন সুবিধা

বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর অনেক প্রবাসী নতুনভাবে জীবিকা শুরু করতে সমস্যায় পড়েন।
এই কার্ডধারীদের জন্য রয়েছে –

  • দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ

  • ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা

  • প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পুনর্বাসন ঋণ

বিমানবন্দর ও সরকারি দপ্তরে বিশেষ সেবা

ঢাকা বিমানবন্দরসহ প্রধান সরকারি দপ্তরগুলোতে প্রবাসী কল্যাণ কার্ডধারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সার্ভিস ডেস্ক
এর ফলে তারা দ্রুত ও সম্মানের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারেন।

ডিজিটাল আইডেন্টিটি সুবিধা

কার্ডের QR কোড বা নম্বরের মাধ্যমে অনলাইনে একজন প্রবাসীর তথ্য যাচাই করা যায়।
👉 এতে দালালচক্র বা ভুয়া এজেন্সির প্রতারণা থেকে প্রবাসীরা অনেকটা সুরক্ষিত থাকেন।

প্রবাসী কল্যাণ কার্ড অনলাইনে সংগ্রহের নিয়ম

প্রবাসী কল্যাণ কার্ড অনলাইনে আবেদন করা খুবই সহজ। নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হলো:

✅ ধাপ ১: ওয়েবসাইটে প্রবেশ

প্রথমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন BMET এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান:
🔗 https://www.bmet.gov.bd

✅ ধাপ ২: প্রবাসী নিবন্ধন

ওয়েবসাইটে গিয়ে “Expatriate Registration” বা “প্রবাসী নিবন্ধন” অপশন সিলেক্ট করুন।
এখানে আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (NID), পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর, এবং বিদেশের কর্মস্থল সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে।

✅ ধাপ ৩: তথ্য যাচাই ও ফর্ম পূরণ

সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর আপনি একটি BMET Registration Number পাবেন।
এই নম্বরটি ভবিষ্যতে সব ধরনের সরকারি প্রবাসী সেবার জন্য প্রয়োজন হবে।

✅ ধাপ ৪: প্রবাসী কল্যাণ কার্ড আবেদন

BMET নিবন্ধন সম্পন্ন করার পর প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের আবেদন করতে পারবেন।
এখানে পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র স্ক্যান কপি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করতে হবে।

✅ ধাপ ৫: ফি পরিশোধ ও কার্ড সংগ্রহ

একটি নির্ধারিত ফি (সাধারণত ৫০০–৭০০ টাকা) পরিশোধ করতে হয়।
এরপর নির্ধারিত সময়ে BMET অফিস বা আপনার স্থানীয় জেলা কর্মসংস্থান অফিস থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

📩 অনেক সময় কার্ডটি ডাকযোগেও প্রেরণ করা হয়।

প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের মেয়াদ

এই কার্ড সাধারণত ৫ বছর মেয়াদী হয়। মেয়াদ শেষে সহজেই নবায়ন করা যায়।
নবায়নের জন্য অনলাইনে বা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান অফিসে আবেদন করলেই হয়।

প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের উপকারিতা এক নজরে

সুবিধা বর্ণনা
🧾 অফিসিয়াল আইডেন্টিটি BMET ডাটাবেজে নিবন্ধিত সরকার স্বীকৃত পরিচয়
💰 সহজ ঋণ সুবিধা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ঋণ
🩺 বীমা ও চিকিৎসা সহায়তা প্রবাসী ও পরিবারের জন্য
🎓 শিক্ষাবৃত্তি প্রবাসী সন্তানদের জন্য স্কলারশিপ
🛂 দূতাবাস সেবা বিদেশে দ্রুত ও অগ্রাধিকার সহ সেবা
🏠 পুনর্বাসন সহায়তা দেশে ফিরে কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ সুবিধা
✈️ সার্ভিস ডেস্ক বিমানবন্দরে বিশেষ কাউন্টার সেবা
💻 অনলাইন যাচাই ভুয়া দালাল প্রতিরোধ ও তথ্য নিরাপত্তা

প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের কিছু সীমাবদ্ধতা

যদিও এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ, তবে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে—

  1. সব প্রবাসী দেশভেদে কার্ডটি সহজে ব্যবহার করতে পারেন না।

  2. কিছু দূতাবাসে এখনো কার্ডধারীদের জন্য পৃথক সার্ভিস ডেস্ক পুরোপুরি চালু হয়নি।

  3. অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় ওয়েবসাইটে সার্ভার সমস্যায় পড়তে হয়।

  4. কার্ড হারিয়ে গেলে পুনরায় ইস্যু করতে কিছুটা সময় লাগে।

প্রবাসী কল্যাণ কার্ড কেন জরুরি?

বাংলাদেশে প্রায় এক কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছেন যারা প্রতিবছর ২,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠান।
তাদের সুরক্ষা, অধিকার ও সুবিধা নিশ্চিত করতেই এই কার্ডটি চালু করা হয়েছে।

এটি শুধু একটি “কার্ড” নয় — এটি প্রবাসীদের প্রতি সরকারের কৃতজ্ঞতা ও সম্মানের প্রতীক

উপসংহার

প্রবাসী কল্যাণ কার্ড বাংলাদেশের প্রবাসীদের জন্য এক অনন্য উদ্যোগ।
এর মাধ্যমে প্রবাসীরা পাবেন নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহায়তা, চিকিৎসা সুবিধা ও সরকারি অগ্রাধিকার সেবা।
বিদেশে অবস্থানরত প্রতিটি বৈধ প্রবাসীর উচিত এখনই এই কার্ডটি সংগ্রহ করা —
কারণ এটি ভবিষ্যতের সুরক্ষা ও প্রাপ্য অধিকার পাওয়ার এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।

🌐 অফিশিয়াল ওয়েবসাইট: https://www.bmet.gov.bd
📞 হেল্পলাইন: ০৯৬০২-৬৬৬৬৩৩
📍 অধিদপ্তর: প্রবাসী কল্যাণ ভবন, ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা।

শেষ কথা

প্রবাসীরা দেশের সম্পদ, দেশের গর্ব।
তাদের জন্য সরকারের এই কার্ড একটি সুরক্ষার ছায়া — যা বিদেশে বা দেশে, সব জায়গায় সম্মান ও সহায়তার প্রতীক।
তাই আজই আবেদন করুন প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের জন্য এবং হয়ে উঠুন নিরাপদ ও সম্মানিত প্রবাসী নাগরিক।

আরও পড়ুন-বোয়েসেল বিদেশি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!

আরও পড়ুন-কোন দেশের ভিসা সহজ, জীবনযাপন আরামদায়ক এবং বেতন সর্বোচ্চ

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।