ফিজিক্যাল সিম বন্ধ হয়ে কবে থেকে ই-সিম চালু হচ্ছে বাংলাদেশে?

বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে এখন মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ধরনেও আসছে বড় পরিবর্তন। প্রচলিত ফিজিক্যাল সিম কার্ড ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে নতুন প্রযুক্তি eSIM (ইলেকট্রনিক সিম)-এর কাছে। বিশ্বজুড়ে বহু দেশ ইতিমধ্যে eSIM-এ স্থানান্তর সম্পন্ন করেছে, আর বাংলাদেশও সেই পথে হাঁটছে।
প্রশ্ন হচ্ছে — ফিজিক্যাল সিম বন্ধ হয়ে কবে থেকে ই-সিম চালু হচ্ছে বাংলাদেশে? চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।

আরও পড়ুন-ফোনে eSIM সাপোর্ট আছে কিনা জানবেন কীভাবে?

eSIM কী?

eSIM মানে “Embedded SIM” — অর্থাৎ এটি একটি ডিজিটাল সিম, যা ফোন বা স্মার্টওয়াচের ভেতরেই বিল্ট-ইন অবস্থায় থাকে। এটি আলাদা করে ফোনে প্রবেশ করানোর প্রয়োজন হয় না।
ফিজিক্যাল সিমের মতোই এটি কল, এসএমএস এবং ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহারের সুযোগ দেয়, তবে এর সমস্ত কিছুই সম্পূর্ণভাবে সফটওয়্যার-ভিত্তিক।

বাংলাদেশে eSIM চালুর ইতিহাস

বাংলাদেশে প্রথমবার গ্রামীণফোন (Grameenphone) ২০২২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে eSIM সেবা চালু করে। এরপর ধীরে ধীরে রবি (Robi) এবং বাংলালিংক (Banglalink) তাদের গ্রাহকদের জন্য এই প্রযুক্তি চালু করে।
এখন ২০২5 সালে এসে দেখা যাচ্ছে — eSIM সাপোর্ট করা স্মার্টফোনের সংখ্যা বেড়ে গেছে, এবং অনেক ব্যবহারকারী ইতিমধ্যেই ফিজিক্যাল সিম বাদ দিয়ে eSIM-এ চলে গেছেন।

ফিজিক্যাল সিম বন্ধ হয়ে কবে থেকে eSIM চালু হবে?

সরকার ও বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে ফিজিক্যাল সিম বন্ধের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তবে এটি একবারে নয় — ধাপে ধাপে শুরু হবে।
প্রথমে নতুন স্মার্টফোনগুলোতে eSIM ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হবে, তারপর ধীরে ধীরে পুরোনো ফিজিক্যাল সিমকে বাদ দিয়ে eSIM সক্রিয় করা হবে।

📌 সংক্ষেপে:

  • ২০২2: প্রথম eSIM চালু হয়।

  • ২০২4: ৩টি বড় অপারেটর eSIM সেবা শুরু করে।

  • ২০২5: নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোতে eSIM ডিফল্ট ফিচার হিসেবে যুক্ত।

  • ২০২6 (প্রত্যাশিত): ধীরে ধীরে ফিজিক্যাল সিম উৎপাদন বন্ধ ও পূর্ণ eSIM যুগের সূচনা।

কেন eSIM ফিজিক্যাল সিমের চেয়ে উন্নত?

বিষয় ফিজিক্যাল সিম eSIM
🔄 পরিবর্তন সিম খুলে নতুন সিম ঢোকাতে হয় স্ক্যান কোডের মাধ্যমে সাথে সাথে পরিবর্তন সম্ভব
📦 জায়গা ফোনে আলাদা স্লট লাগে আলাদা স্লট লাগে না
🔐 নিরাপত্তা সিম হারিয়ে যেতে পারে ডিভাইসের সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত
🌍 ভ্রমণ সুবিধা আলাদা সিম কিনতে হয় একাধিক নেটওয়ার্ক সহজে অ্যাক্টিভ করা যায়
⚙️ একাধিক নম্বর সীমিত একসাথে একাধিক প্রোফাইল রাখা যায়

কোন কোন ফোনে এখন eSIM সাপোর্ট করছে?

বাংলাদেশে eSIM সাপোর্ট করা জনপ্রিয় ফোনগুলোর মধ্যে রয়েছে:

📱 Apple iPhone সিরিজ

  • iPhone XS, XS Max, XR

  • iPhone 11, 12, 13, 14, 15 (সব মডেলেই eSIM সাপোর্ট)

📱 Samsung Galaxy সিরিজ

  • Galaxy S20, S21, S22, S23, S24

  • Galaxy Z Flip এবং Fold সিরিজ

📱 Google Pixel সিরিজ

  • Pixel 3 ও তার পরের সব মডেল

📱 Huawei, Oppo, Xiaomi (কিছু নির্দিষ্ট মডেল)

  • Huawei P40 Pro, Oppo Find X3 Pro, Xiaomi 13 Pro ইত্যাদি

বর্তমানে কোন অপারেটরগুলো eSIM দিচ্ছে?

বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি প্রধান অপারেটর eSIM সেবা দিচ্ছে:

  1. গ্রামীণফোন (Grameenphone)

    • প্রথম eSIM চালু করে ২০২২ সালে।

    • অফিসিয়াল অ্যাপ বা গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সহজে অ্যাক্টিভ করা যায়।

  2. রবি (Robi)

    • ২০২৩ সালে eSIM চালু করে।

    • স্ক্যান কিউআর কোডের মাধ্যমে এক মিনিটেই eSIM সক্রিয় করা যায়।

  3. বাংলালিংক (Banglalink)

    • ২০২৪ সালে eSIM চালু করে।

    • বাংলালিংক অ্যাপের মাধ্যমে সহজে রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাক্টিভেশন সম্ভব।

ফিজিক্যাল সিম সম্পূর্ণ বন্ধ হলে কী হবে?

ফিজিক্যাল সিম বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা আর পুরোনো সিম কার্ড পরিবর্তন বা প্রবেশ করাতে পারবেন না।
তবে এতে কোনো ক্ষতি হবে না — কারণ eSIM ব্যবহার করে একইভাবে কল, ইন্টারনেট ও এসএমএস সেবা উপভোগ করা যাবে।

তবে যারা পুরনো মোবাইল ব্যবহার করেন (যেখানে eSIM সাপোর্ট নেই), তাদের নতুন ডিভাইসে পরিবর্তন করতে হতে পারে।

eSIM ব্যবহারের সুবিধা

  • মোবাইল হারালে eSIM সহজে ব্লক করা যায়

  • একসাথে একাধিক নম্বর চালানো যায়

  • নেটওয়ার্ক পরিবর্তন অনেক দ্রুত

  • আন্তর্জাতিক ভ্রমণে সিম বদলানোর ঝামেলা নেই

  • ফোনের ভেতরে জায়গা বাঁচায়

ভবিষ্যতের দিকে এক ধাপ: iSIM

eSIM-এর পর প্রযুক্তি আরও এগিয়ে যাচ্ছে iSIM (Integrated SIM) এর দিকে।
এটি eSIM থেকেও আরও উন্নত — যেখানে সিম প্রযুক্তি সরাসরি ফোনের প্রসেসরে সংযুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশে এটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, তবে ভবিষ্যতে এটি হবে মোবাইল যোগাযোগের পরবর্তী ধাপ।

উপসংহার

বাংলাদেশে ধীরে ধীরে eSIM প্রযুক্তি জনপ্রিয় হচ্ছে, এবং ২০২৬ সালের পর থেকে ফিজিক্যাল সিম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।এই পরিবর্তন শুধু প্রযুক্তিগত নয় — এটি হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেকটি বড় পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন- eSIM কী?eSIM এটি কীভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধাসমূহ কি কি?

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।