বাংলাদেশে বিদেশে ভ্রমণ, চাকরি, চিকিৎসা বা পড়াশোনার জন্য পাসপোর্ট এখন এক অপরিহার্য নথি।
আগে পাসপোর্ট ছিল হাতে লেখা বা মেশিন রিডেবল, কিন্তু এখন বাংলাদেশ সরকার পুরোপুরি চালু করেছে ই-পাসপোর্ট (e-Passport)—যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, নিরাপদ ও প্রযুক্তিনির্ভর।
আরও পড়ুন-১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
অনেকেই পাসপোর্ট করতে গিয়ে একটি সাধারণ প্রশ্ন করেন —
👉 “পাসপোর্টের ৪৮ পেজ আর ৬৪ পেজ বলতে আসলে কী বোঝায়?”
👉 “এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য কী, আর কোনটা আমার জন্য উপযুক্ত?”
এই পোস্টে আমরা ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করব —
🔹 ৪৮ ও ৬৪ পেজ পাসপোর্টের মূল পার্থক্য
🔹 কার জন্য কোনটা ভালো
🔹 ফি, মেয়াদ ও সুবিধাসমূহ
🔹 এবং আবেদন করার আগে জানা দরকার এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়।
চলুন তাহলে জেনে নিই—👇
পাসপোর্টের ৪৮ পেজ ও ৬৪ পেজ মানে কী?
পাসপোর্টের “পেজ” বা পৃষ্ঠা সংখ্যা বলতে বোঝানো হয়, পাসপোর্টের ভেতরে থাকা ভিসা ও স্ট্যাম্প রাখার পৃষ্ঠা (Visa Pages)।
প্রতিবার বিদেশে যাওয়া-আসার সময়, ইমিগ্রেশন অফিসে স্ট্যাম্প বা ভিসা সিল দেওয়া হয় এই পৃষ্ঠাগুলিতে।
বাংলাদেশে ইস্যু করা ই-পাসপোর্ট দুটি সংস্করণে পাওয়া যায় —
-
৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট (Standard Size)
-
৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট (Extended Size)
৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট: সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য
এই পাসপোর্টে মোট ৪৮টি ভিসা পৃষ্ঠা থাকে।
যারা বছরে এক বা দুইবার বিদেশে যান, যেমন – শিক্ষা, চিকিৎসা, পর্যটন বা স্বল্প মেয়াদি সফরে, তাদের জন্য এটি যথেষ্ট।
৪৮ পৃষ্ঠা পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য:
-
কম খরচে পাওয়া যায়।
-
দ্রুত প্রসেস হয়।
-
সাধারণ নাগরিকদের জন্য উপযোগী।
-
মেয়াদ ৫ বছর বা ১০ বছর (নির্বাচনযোগ্য)।
যাদের জন্য উপযুক্ত:
-
ছাত্রছাত্রী
-
পর্যটক
-
চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাত্রী
-
যারা মাঝে মাঝে বিদেশ যান
৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট: ঘন ঘন ভ্রমণকারীর জন্য
যারা নিয়মিত বিদেশে যান — যেমন ব্যবসায়ী, প্রবাসী শ্রমিক, সরকারি কর্মকর্তা বা আন্তর্জাতিক প্রকল্পে যুক্ত ব্যক্তিরা —
তাদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট আদর্শ।
এই পাসপোর্টে অতিরিক্ত পৃষ্ঠা থাকার কারণে এতে বেশি সংখ্যক ভিসা ও ইমিগ্রেশন সীল রাখা যায়, ফলে বারবার নতুন পাসপোর্ট করতে হয় না।
৬৪ পৃষ্ঠা পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য:
-
১৬টি অতিরিক্ত ভিসা পৃষ্ঠা।
-
বেশি ভিসা স্ট্যাম্প রাখার সুযোগ।
-
ঘন ঘন ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
-
সময় ও ঝামেলা কমায়।
যাদের জন্য উপযুক্ত:
-
ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক।
-
প্রবাসী কর্মী।
-
আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরিরত ব্যক্তি।
-
সরকারি বা কূটনৈতিক সফরকারী।
তুলনামূলক পার্থক্য (৪৮ বনাম ৬৪ পৃষ্ঠা)
বিষয় | ৪৮ পৃষ্ঠা পাসপোর্ট | ৬৪ পৃষ্ঠা পাসপোর্ট |
---|---|---|
📄 মোট পৃষ্ঠা | ৪৮ | ৬৪ |
💼 উপযুক্ত কার জন্য | সাধারণ নাগরিক | ঘন ঘন ভ্রমণকারী |
💰 ফি (৫ বছর মেয়াদি সাধারণ ডেলিভারি) | ৪,০২৫ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা |
⏱️ মেয়াদ | ৫ বা ১০ বছর | ৫ বা ১০ বছর |
📦 ভিসা রাখার জায়গা | কম | বেশি |
⏳ পুনঃনবায়নের প্রয়োজন | তুলনামূলক দ্রুত | দীর্ঘ সময় পরে |
🌍 ব্যবহারকারীর ধরণ | পর্যটক / ছাত্র / সাধারণ নাগরিক | প্রবাসী / ব্যবসায়ী / কর্মকর্তা |
ফি ও ডেলিভারি সময়
বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টের ফি নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপর:
1️⃣ পৃষ্ঠার সংখ্যা (৪৮ বা ৬৪)
2️⃣ মেয়াদ ও ডেলিভারি টাইপ (সাধারণ / এক্সপ্রেস)
মেয়াদ | ডেলিভারি টাইপ | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৬৪ পৃষ্ঠা |
---|---|---|---|
৫ বছর | সাধারণ (২১ কার্যদিবস) | ৪,০২৫ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা |
৫ বছর | এক্সপ্রেস (১০ কার্যদিবস) | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা |
১০ বছর | সাধারণ (২১ কার্যদিবস) | ৫,৭৫০ টাকা | ৮,০৫০ টাকা |
১০ বছর | এক্সপ্রেস (১০ কার্যদিবস) | ৮,০৫০ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা |
👉 অফিসিয়াল সূত্র: https://www.epassport.gov.bd
কোনটি বেছে নেবেন?
এটা নির্ভর করবে আপনি কতবার বিদেশ ভ্রমণ করেন তার উপর।
✅ যদি বছরে ১–২ বার ভ্রমণ করেন → ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট যথেষ্ট।
✅ যদি নিয়মিত বিদেশ সফর বা ব্যবসায়িক কারণে যেতে হয় → ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট নিন।
উভয় পাসপোর্টই সমানভাবে বৈধ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।
ই-পাসপোর্টের অতিরিক্ত সুবিধা (৪৮ ও ৬৪ উভয় পৃষ্ঠায়)
-
বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা যুক্ত (Fingerprint + Face recognition)।
-
ডেটা চিপ সংযুক্ত, যা আন্তর্জাতিকভাবে মেশিনে স্ক্যান হয়।
-
৫ বা ১০ বছরের মেয়াদে ইস্যু করা হয়।
-
অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম।
-
ইমিগ্রেশনে দ্রুত প্রসেসিং।
-
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় সহজতা।
প্রশ্নোত্তর
❓ পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়ালে কি মেয়াদ বাড়ে?
➡️ না। মেয়াদ নির্ধারিত হয় ৫ বা ১০ বছর অনুযায়ী। পৃষ্ঠার সংখ্যা শুধু ভিসা রাখার জায়গা নির্ধারণ করে।
❓ ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টে কি অতিরিক্ত সুযোগ আছে?
➡️ হ্যাঁ, যারা ঘন ঘন বিদেশ যান তাদের জন্য এটি সময় ও খরচ বাঁচায়, কারণ দ্রুত পৃষ্ঠা শেষ হয় না।
❓ উভয় পাসপোর্ট কি আন্তর্জাতিকভাবে সমান বৈধ?
➡️ অবশ্যই। দুটোই একই ই-পাসপোর্ট প্রযুক্তিতে তৈরি এবং ICAO আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ইস্যু করা হয়।
❓ আমি চাইলে পরে ৪৮ থেকে ৬৪ পৃষ্ঠায় আপগ্রেড করতে পারব?
➡️ হ্যাঁ, নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার সময় আপনি ৬৪ পৃষ্ঠার অপশন নির্বাচন করতে পারবেন।
উপসংহার
বর্তমানে বিদেশ ভ্রমণ, পড়াশোনা, ব্যবসা কিংবা চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য পরিচয়পত্র।
বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের সুবিধার্থে ই-পাসপোর্ট চালু করে পাসপোর্ট সেবাকে আধুনিক, নিরাপদ ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে।
৪৮ পৃষ্ঠার এবং ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট — দুটিই সমানভাবে বৈধ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। পার্থক্য শুধু পৃষ্ঠার সংখ্যা এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।
আপনি যদি সাধারণ ভ্রমণকারী হন, বছরে এক-দু’বার বিদেশ যান, তাহলে ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট যথেষ্ট।
আর যদি আপনি ব্যবসায়ী, প্রবাসী বা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণকারী হন, তাহলে ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পাসপোর্ট নেওয়ার সময় নিজের প্রয়োজন বুঝে সঠিক ধরনটি নির্বাচন করা।
তাহলেই আপনি অল্প খরচে দীর্ঘ সময়ের জন্য নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ভুলবেন না —
🛂 “একটি সঠিক পাসপোর্ট, নিরাপদ ভ্রমণের প্রথম ধাপ।”
আরও পড়ুন-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?সর্বশেষ ফি কত?
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔