বাংলাদেশে কোন কোন অপারেটর eSIM চালু করেছে?

বিশ্ব যখন দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের ফোন ব্যবস্থাপনাও বদলে যাচ্ছে। আগে যেভাবে একটি প্লাস্টিকের সিম কার্ড মোবাইলে প্রবেশ করিয়ে সংযোগ নেওয়া হতো, এখন সেটি অনেকটা পুরোনো প্রযুক্তি হয়ে যাচ্ছে। এখন এসেছে eSIM (embedded SIM) — একটি এমন প্রযুক্তি, যেখানে ফিজিক্যাল সিম ছাড়াই আপনি নেটওয়ার্ক সংযোগ ব্যবহার করতে পারেন।

বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তি এখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেক প্রিমিয়াম ফোন ব্যবহারকারীরা এখন eSIM সক্রিয় করে সহজে দুটি নম্বর ব্যবহার করছেন — একটি ফিজিক্যাল সিম ও অন্যটি eSIM। আজকের এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব বাংলাদেশে কোন কোন মোবাইল অপারেটর ইতিমধ্যে eSIM চালু করেছে, কবে চালু করেছে এবং কীভাবে ব্যবহার করা যায়।

আরও পড়ুন- ভবিষ্যতে কি ফিজিক্যাল সিম বন্ধ হয়ে যাবে? জানুন

বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর eSIM যাত্রা

বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি প্রধান মোবাইল অপারেটর কার্যক্রম পরিচালনা করছে —
১️⃣ গ্রামীণফোন (Grameenphone)
২️⃣ রবি (Robi Axiata)
৩️⃣ বাংলালিংক (Banglalink)
৪️⃣ টেলিটক (Teletalk)

এদের মধ্যে তিনটি অপারেটর ইতোমধ্যেই eSIM সেবা চালু করেছে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য এটি উন্মুক্ত করেছে। নিচে প্রতিটি অপারেটরের বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া হলো।

গ্রামীণফোন (Grameenphone) — বাংলাদেশের প্রথম eSIM সেবা প্রদানকারী

বাংলাদেশে eSIM সেবা প্রথম চালু করে গ্রামীণফোন
২০২২ সালের দিকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেবা চালু করে, মূলত প্রিমিয়াম এবং আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য।

💡 গ্রামীণফোনের eSIM-এর প্রধান সুবিধা:

  • ফিজিক্যাল সিম ছাড়াই সংযোগ ব্যবহার

  • ডুয়াল সিম সুবিধা (একটি eSIM + একটি Nano SIM)

  • দ্রুত নম্বর অ্যাক্টিভেশন ও প্রোফাইল পরিবর্তন

  • পরিবেশবান্ধব — কারণ কোনো প্লাস্টিক সিম লাগে না

📍 কিভাবে পাবেন:

গ্রামীণফোনের eSIM পাওয়া যায় তাদের নির্বাচিত Experience Center-এ বা MyGP অ্যাপের মাধ্যমে অনুরোধ করে
আপনার ফোন যদি eSIM সমর্থন করে, তাহলে তারা একটি QR কোড পাঠাবে — সেটি স্ক্যান করলেই আপনার নতুন eSIM সক্রিয় হয়ে যাবে।

যেসব মোবাইলে গ্রামীণফোনের eSIM কাজ করে:

  • iPhone XS, XS Max, XR, 11 সিরিজ, 12, 13, 14, 15 সিরিজ

  • Samsung Galaxy Z Fold / Z Flip / S20, S21, S22, S23 সিরিজ

  • Google Pixel 4 ও এর পরের মডেল

  • Huawei P40 Pro

  • Motorola Razr (2022)

রবি (Robi Axiata) — দ্বিতীয় অপারেটর হিসেবে eSIM চালু করে

বাংলাদেশে eSIM সেবা চালুর পরপরই রবি ব্যবহারকারীদের জন্য এই সুযোগ উন্মুক্ত করে।
তারা প্রথমে ঢাকায় সীমিত পরিসরে এটি চালু করে, পরে সারা দেশে প্রসারিত করে।

💡 রবির eSIM সুবিধা:

  • এক মোবাইলে দুটি নম্বর (eSIM + ফিজিক্যাল সিম)

  • কোনো সিম পোর্ট ক্ষতি বা হারানোর ঝুঁকি নেই

  • ভ্রমণের সময় সহজে আন্তর্জাতিক eSIM প্রোফাইল যুক্ত করার সুযোগ

📍 রবি eSIM সক্রিয় করার নিয়ম:

রবি গ্রাহকরা তাদের রবি Customer Care Center-এ গিয়ে বা Robi eSIM Portal থেকে QR কোডের মাধ্যমে eSIM অ্যাক্টিভ করতে পারেন।
এছাড়াও, নতুন গ্রাহকরাও সরাসরি eSIM হিসেবে নতুন নম্বর নিতে পারেন।

📱 সমর্থিত মোবাইল মডেল:

  • iPhone XS বা এর পরের মডেলসমূহ

  • Samsung Galaxy Z Flip/Fold, S20, S21, S22, S23 সিরিজ

  • Google Pixel 4, 5, 6

  • Huawei P40 Pro, Mate 40 Pro

বাংলালিংক (Banglalink) — eSIM সেবায় যুক্ত হয় ২০২৩ সালে

বাংলালিংক তাদের 4G নেটওয়ার্ককে আরও উন্নত করার পাশাপাশি ২০২৩ সালের দিকে eSIM সেবা চালু করে। তারা এটিকে “বাংলালিংক ডিজিটাল লাইফ আপগ্রেড” নামে প্রচার করে।

💡 বাংলালিংকের eSIM-এর বিশেষ সুবিধা:

  • সহজ অনলাইন অ্যাক্টিভেশন

  • যেকোনো সময় নম্বর ট্রান্সফার

  • ডুয়াল সিম ব্যবহারের স্বাধীনতা

  • নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব

📍 কিভাবে পাবেন:

বাংলালিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে eSIM-এর জন্য অনলাইন ফর্ম পূরণ করে QR কোড নেওয়া যায়।
অথবা, আপনি Banglalink Service Center এ গিয়ে সরাসরি আবেদন করতে পারেন।

📱 সমর্থিত স্মার্টফোন:

  • iPhone XS, XR, 11, 12, 13, 14, 15 সিরিজ

  • Samsung Galaxy S21, S22, S23, Z Flip/Fold

  • Google Pixel সিরিজ

  • Huawei P40 Pro

⚪ ৪. টেলিটক (Teletalk) — এখনো eSIM চালু করেনি

সরকারি মালিকানাধীন অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড এখনো পর্যন্ত eSIM সেবা চালু করেনি।
তবে তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে 5G রোলআউটের সঙ্গে সঙ্গে eSIM সুবিধাও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও eSIM সেবা পাওয়া যাবে।

🌐 কেন eSIM এত জনপ্রিয় হচ্ছে?

বর্তমানে eSIM প্রযুক্তি শুধু বিলাসবহুল সুবিধা নয়, বরং একে বলা যায় ভবিষ্যতের মোবাইল কানেক্টিভিটির মূল ভিত্তি।

কারণগুলো হলো—

  • 🔄 নম্বর পরিবর্তন ও নেটওয়ার্ক বদলানো সহজ

  • 🌍 বিদেশ ভ্রমণে আন্তর্জাতিক eSIM প্রোফাইল যুক্ত করা যায়

  • 🔋 ফিজিক্যাল স্লট না থাকায় ফোনে আরও বেশি জায়গা বাঁচে

  • ♻️ প্লাস্টিকমুক্ত প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব

উপসংহার

বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে।
গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংক ইতিমধ্যেই eSIM সেবা চালু করেছে, যা দেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আগামী বছরগুলিতে টেলিটকও যুক্ত হলে, eSIM হবে বাংলাদেশের প্রতিটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সাধারণ পছন্দ।

আপনি যদি নতুন প্রজন্মের স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাহলে এখনই আপনার অপারেটরের কাছ থেকে eSIM সক্রিয় করে দেখতে পারেন —
কারণ ভবিষ্যৎ এখন eSIM-এর হাতে!

আরও পড়ুন- eSIM কী?eSIM এটি কীভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধাসমূহ কি কি?

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।