রোজার ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত জানুন

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য এক মহাসুযোগের মাস। এটি এমন এক সময়, যখন মানুষের আত্মা শুদ্ধ হয়, নেক আমলের ফজিলত বহুগুণে বাড়ে এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের দরজা সর্বত্র উন্মুক্ত হয়।

রমজান মাসের অন্যতম প্রধান ইবাদত হচ্ছে সাওম বা রোযা রাখা। এটি শুধু পেট খালি রাখার নাম নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণ, আল্লাহভীতি এবং তাকওয়ার অনুশীলন।

রোযার ফজিলত নিয়ে বহু সহীহ হাদিস ও কুরআনের আয়াত রয়েছে, যা জানলে আমাদের মধ্যে রোযা পালনে আগ্রহ ও নিষ্ঠা আরও বাড়ে। চলুন জেনে নিই রোযার ১০টি মূল ফজিলত—কুরআন ও হাদিসের আলোকে।

আরও পড়ুন-হ দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ ২০২৫

🌟 রোযার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত

১. রোযা ইসলামের স্তম্ভ

হাদিসে এসেছে:

“ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত… এর মধ্যে একটি হলো রমজানের রোযা।”
📚 – সহিহ বুখারি: ৮

🔹 অর্থাৎ, রোযা রাখা ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। এটি আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক গভীর করে।

২. তাকওয়া অর্জনের পথ

আল্লাহ বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করো।”
📖 – সূরা বাকারা: ১৮৩

🔹 রোযা মানেই হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আল্লাহভীতি, যা মু’মিনদের মূল পরিচয়।

৩. পাপ মোচনের মাধ্যম

হাদিসে এসেছে:

“যে ব্যক্তি ঈমানসহ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রোযা রাখে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”
📚 – সহিহ বুখারি: ৩৮

🔹 এক মাস নিয়মিত রোযা পালনের মাধ্যমে একজন বান্দা পাপমুক্ত জীবন শুরু করতে পারে।

৪. জান্নাতের বিশেষ দরজা—‘রাইয়্যান’

হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন:

“জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম ‘রাইয়্যান’। কিয়ামতের দিন কেবল রোযাদাররাই সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।”
📚 – সহিহ বুখারি ও মুসলিম

🔹 এই সম্মান কেবল রমজানের রোযাদারদের জন্যই বরাদ্দ!

৫. রোযা – জাহান্নামের ঢাল

রাসূল (সা.) বলেছেন:

“রোযা হলো জাহান্নামের আগুন থেকে ঢালস্বরূপ।”
📚 – তিরমিজি: ৭৬৭

🔹 মানে, রোযা মানুষের মন ও শরীরকে পাপ থেকে রক্ষা করে।

৬. রোজাদারের জন্য আলাদা পুরস্কার

আল্লাহ বলেন (হাদিসে কুদসিতে):

“রোযা আমার জন্য, এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব।”
📚 – সহিহ বুখারি: ১৯০৪

🔹 অন্যান্য আমলের জন্য ফেরেশতা পুরস্কার লিখলেও রোযার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দেন।

৭. দোয়া কবুলের সুবর্ণ সময়

হাদিসে আছে:

“রোজাদারের ইফতারের সময়ে যে দোয়া করা হয়, তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।”
📚 – ইবনু মাজাহ: ১৭৫৩

🔹 ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়—এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত।

৮. রোযার দুটি আনন্দ

“রোজাদারের দুটি আনন্দ রয়েছে—ইফতারের সময় এবং আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।”
📚 – সহিহ বুখারি: ১৮০৫

🔹 ইফতার ও আখিরাত—দুটোতেই আনন্দের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

৯. সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি

রমজান মাসে প্রতিটি নেক কাজের সওয়াব আল্লাহ অনেকগুণ বাড়িয়ে দেন।

🔹 এক হাদিসে বলা হয়েছে,

“রমজানে একটি নফল কাজের সাওয়াব একটি ফরজের সমান এবং একটি ফরজ কাজের সাওয়াব ৭০ ফরজের সমান।”
📚 – বায়হাকী

১০. আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের মাস

রাসূল (সা.) বলেছেন:

“এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম দশ দিন রহমত, মধ্য দশ দিন মাগফিরাত, এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য।”
📚 – সহিহ হাদিস

ℹ️ এই ধরনের আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন।

❓ প্রশ্নোত্তর

➤ প্রশ্ন ১: রোযা ফরজ না রাখলে কী গুনাহ হয়?

উত্তর:
রোযা ফরজ, তাই তা না রাখা মারাত্মক গুনাহ। কোনো বৈধ কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃত রোযা ভঙ্গ করলে বা না রাখলে আল্লাহর শাস্তি হতে পারে।

➤ প্রশ্ন ২: শুধু পানাহার বর্জন করলেই কি রোযা পালন হয়?

উত্তর:
না। রোযার প্রকৃত অর্থ হলো সব রকমের পাপ, খারাপ কথা, কু-চিন্তা, গীবত ইত্যাদি থেকেও বিরত থাকা।

➤ প্রশ্ন ৩: রমজান মাসে নফল রোযা রাখা কি উত্তম?

উত্তর:
রমজান মাসে ফরজ রোযা রাখা অবশ্যই কর্তব্য, তবে কেউ নফল আমল বেশি করলে, যেমন—নফল ইবাদত, কিয়ামুল লাইল, দান-সদকা—তা খুবই মহৎ কাজ।

➤ প্রশ্ন ৪: কীভাবে রোযা আমাদের তাকওয়া অর্জনে সাহায্য করে?

উত্তর:
রোযা মানুষকে সব ধরনের খারাপ থেকে বিরত রাখতে শেখায়। এতে আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায় ও আল্লাহর ভয় অন্তরে গেঁথে যায়।

🧠 উপসংহার

রমজানের রোযা এমন একটি ইবাদত যা শুধু শারীরিক কষ্ট নয় বরং আত্মিক উন্নতির মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে বারবার এর গুরুত্ব এসেছে। রোযা শুধুই না খেয়ে থাকা নয়, বরং আত্মাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, দেহ-মনের পবিত্রতা রক্ষা করা, এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ইবাদত।

রমজানের রোযা আমাদের জীবনে পরিবর্তন আনে, আমাদের গুনাহ মুছে দেয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেয় এবং আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির সুযোগ এনে দেয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের রোযা যথাযথভাবে রাখার তাওফিক দান করুন, আমীন।

👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।