বর্তমানে প্রযুক্তির এই যুগে ইউটিউব আমাদের বিনোদন, শিক্ষাদান এবং তথ্য জানার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তবে সম্প্রতি ইউটিউবের পক্ষ থেকে একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— কম বয়সীদের জন্য ইউটিউব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তটি প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক আলোড়ন তুলেছে।
আরও পড়ুন-গুগলের নতুন ‘ওয়েব গাইড’ ফিচার বদলে দিচ্ছে সার্চের ধরন!
👶 কেন এই নিষেধাজ্ঞা?
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
-
ডিজিটাল আসক্তি থেকে শিশুদের রক্ষা
-
অনুপযুক্ত কনটেন্টের প্রভাব কমানো
-
সক্রিয় শৈশব নিশ্চিত করা (অফলাইন জীবন)
-
পরিবারের হাতে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়া
বিশ্বজুড়ে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে আসছিলেন যে, ইউটিউব শিশুমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেক সময় তারা অনুপযুক্ত বা ভুল তথ্যভিত্তিক ভিডিওতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এই প্রেক্ষিতে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে এবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি (Anthony Albanese) জানিয়ে দিয়েছেন, ১৬ বছরের নিচে কেউ আর ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারবে না।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো—
“অনলাইনে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা ও তাদের সাইবার ঝুঁকি থেকে দূরে রাখা।”
ইউটিউব কেবল লাইভ নয়, সম্পূর্ণ ব্যবহারে আসবে সীমাবদ্ধতা!
অনেকেই মনে করছেন শুধু লাইভ স্ট্রিমিং-এ নিষেধাজ্ঞা আসছে, কিন্তু বাস্তবে এটি আরও ব্যাপক। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী—
✅ ১৬ বছরের নিচে কেউ ইউটিউব অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না
✅ কোনো ভিডিও আপলোড, কমেন্ট বা লাইভ করতে পারবে না
✅ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশেও থাকতে পারে বয়সভিত্তিক আইডি ভেরিফিকেশন
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
অনেক মনোবিজ্ঞানী বলছেন, সামাজিক মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের মধ্যে—
-
আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি
-
ঘুমের সমস্যা
-
সাইবার বুলিং
-
আসক্তির মতো সমস্যা তৈরি করছে।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার তাই প্রাথমিকভাবে এসব সমস্যা রোধে “ডিজিটাল আইডেন্টিটি যাচাই” এবং বয়সভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব কী হতে পারে?
বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে ভবিষ্যতে শিশুর সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় এই উদ্যোগ একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
বিশেষ করে গার্ডিয়ানদের এখন থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত—আপনার সন্তান কী দেখছে, কার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে—এসব বিষয় নিয়ে।
🤖 ইউটিউব এখন বয়স নির্ধারণ করবে AI দিয়ে!
শুধু লাইভ স্ট্রিমিং নয়, ইউটিউব এবার আরও একধাপ এগিয়ে AI প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইউজারের বয়স আন্দাজ করবে।
হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন!
AI এখন ইউজারের অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের ধরন, ভিডিও দেখার ইতিহাস, এবং অন্যান্য উপাদান বিশ্লেষণ করে বুঝে নেবে আপনি কত বছর বয়সী।
যদি ইউটিউব বুঝতে পারে যে আপনি কম বয়সী, তাহলে—
-
ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ হবে
-
নির্দিষ্ট কিছু কনটেন্ট দেখাতে দেবে না
-
মাঝে মাঝে “Take a break” টাইপের রিমাইন্ডার দেখাবে
-
আপনার আপলোড বা কমেন্ট করার সময় সতর্ক বার্তা দেখাতে পারে
এগুলো মূলত ১৩–১৭ বছর বয়সী ইউজারদের জন্য চালু হচ্ছে।
👨👩👧 ইউটিউব কিডস ও সুপারভাইজড অভিজ্ঞতা
শিশুদের সুরক্ষায় ইউটিউব আগে থেকেই YouTube Kids অ্যাপ চালু করেছে, যেখানে শুধু বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত ভিডিও থাকে।
তাছাড়া, এখন ইউটিউবে Supervised Experience চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে—
-
অভিভাবক ও সন্তানের অ্যাকাউন্ট যুক্ত করা যায়
-
অভিভাবক দেখতে পারেন সন্তান কী দেখছে বা আপলোড করছে
-
কনটেন্ট ফিল্টার করা যায় বয়সভিত্তিকভাবে
এগুলো সবই ইউজারের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে।
📱 ইউটিউব কিডস কি এখনও থাকবে?
হ্যাঁ। ইউটিউবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিশুরা যদি ভিডিও দেখতে চায়, তবে তারা শুধুমাত্র YouTube Kids অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবে, যেখানে বয়স উপযোগী ভিডিও কনটেন্টই শুধুমাত্র দেখানো হয়।
📌 কীভাবে এই নিয়ম কার্যকর হবে?
-
ইউটিউবে সাইন ইন করার সময় বয়স যাচাই করতে হবে
-
বয়স কম হলে মূল ইউটিউব অ্যাপে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে
-
অভিভাবকদের জন্য থাকবে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেটিংস
-
ইউটিউব অ্যালগরিদম শিশুদের জন্য কনটেন্ট রিকমেন্ড করবে না
❓প্রশ্ন–উত্তর
🔸 প্রশ্ন: আমি ১৫ বছর বয়সে ইউটিউবার, এখন কী করতে হবে?
উত্তর: আপনি চাইলে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন, তবে লাইভ স্ট্রিম করতে চাইলে অভিভাবকের অনুমতি ও উপস্থিতি লাগবে।
🔸 প্রশ্ন: ইউটিউব কি আমার বয়স নিজে থেকেই বুঝবে?
উত্তর: হ্যাঁ, AI ব্যবহার করে ইউটিউব অনুমান করতে পারবে আপনি কত বছর বয়সী। তবে আপনি চাইলে সনদপত্র বা পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারবেন।
🔸 প্রশ্ন: ইউটিউব কিডস কি বাংলাদেশের জন্য চালু?
উত্তর: হ্যাঁ, Google Play Store থেকে YouTube Kids অ্যাপ ডাউনলোড করা যায়। এখানে ভিডিওগুলো বয়স উপযোগী এবং নিরাপদ।
🔸 প্রশ্ন: আমার বাচ্চা ইউটিউব ব্যবহার করে। এখন কী করব?
উত্তর: আপনি চাইলে Supervised Account তৈরি করতে পারেন এবং Family Link অ্যাপে সন্তানের অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল করতে পারবেন।
ℹ️ এই ধরনের আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন।
✅ উপসংহার
বলা যায়, ইউটিউবের এই আপডেট ডিজিটাল নিরাপত্তার দিক থেকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ—তাদের অনলাইন অভিজ্ঞতা যাতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর হয়, সেটাই ইউটিউব নিশ্চিত করতে চায়।
এই পরিবর্তন হয়তো প্রথমে অনেকের কাছে কঠোর মনে হতে পারে, কিন্তু শিশুদের সুরক্ষার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র:YouTube Official Blog
আরও পড়ুন-AdSense for Search চালু করছে RAFs – কীভাবে প্রভাব ফেলবে আপনার আয়?
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔