যানবাহনের মামলা হলে করণীয়-সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন যানবাহনের পরিমাণ বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার মতো আকস্মিক ঘটনা। বেপরোয়া গাড়ি চালানো ট্রাফিক আইন অমান্য করা চারিপাশে এই সব ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর এর সাথে বাড়ছে যানবাহনের মামলা। এসব মামলা থেকে প্রতিদিন গড়ে আদায় করা হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। তাই যানবাহন রাস্তায় চালানোর আগে সকলেরই সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত।
প্রিয় পাঠক পাঠিকা বন্ধুরা আপনাদের জন্য আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে যানবাহনের মামলা সম্পর্কে। আজকের এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে আপনাদের যানবাহনের মামলার কারণ এবং মামলা দিলে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব। যানবাহন মামলা সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তারা আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়বেন।আশা করছি এতে করে আপনারা যানবাহন মামলা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
যানবাহনের মামলা কি
রাস্তায় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়।এসব আইন কানুন না মানলে আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে যানবাহনের উপর মামলা দেওয়া হয়। আরে মামলা দেওয়ার অধিকার থাকে দায়িত্বরত পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। একজন দায়িত্বগত পুলিশ যদি মনে করেন মামলা দেওয়া প্রয়োজন তাহলে তিনি মামলা করতে পারেন।
আরও পড়ুন
রাস্তায় তাৎক্ষণিক মামলার ক্ষেত্রে মামলা প্রদানকারী কর্মকর্তা যানবাহনের ডকুমেন্ট জব্দ করে নেন। তবে অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মটোর জন্যই ছাড়াও নিয়মিত মামলা করতে পারে পুলিশ।
যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণ
বিভিন্ন কারণে একজন ট্রাফিক পুলিশ বা সার্জেন্ট যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। যেমন;
১) যদি কোন চালকের বৈধ কাগজপত্র না থাকে। অর্থাৎ যদি কোন চালকের (রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, ইন্সুরেন্স, সাধারণ পরিবহনের জন্য রুট পারমিট) ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে সম্ভাবনা থাকে।
২) ট্রাফিক আইন অমান্য করলে মামলা হতে পারে। যেমন; ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করা, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, যখন তখন লেন পরিবর্তন করা, গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো ইত্যাদি ট্রাফিক আইন অমান্য করলে পুলিশ চালকের বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারে।
৩) যানবাহনের বিভিন্ন ত্রুটির কারণে মামলা হতে পারে। যেমন; যানবাহনের হেডলাইট না থাকা বা থাকলেও জ্বলে না, সাধারণ গাড়ির বডিতে বিবরণ না থাকা, গাড়ির মালিক মালিকের নাম ঠিকানা না থাকা, গাড়ির মধ্যে অতিরিক্ত আসন সংযোগ করা, অথবা গাড়িতে বিআরটি এর অনুমোদন ছাড়া কোন সংযোজন বা পরিবর্তন করা। এসব কারণে পুলিশ চালকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
ট্রাফিক আইন অমান্য করলে গাড়ি আটক
শাহরুখ যদি ট্রাফিক আইন ভাঙ্গাসহ অন্যান্য আপত্তিজনক কাজ করে থাকেন তাহলে পুলিশ তার গাড়ি আটক করতে পারে। পুলিশ বিভিন্ন কারণে একজন চালকের গাড়ি আটক করতে পারে। যেমন;সঠিক জায়গায় গাড়ি পার্ক না করা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চলতে গিয়ে পুলিশের নির্দেশনা না মানা, গাড়ির ফিটনেস সংক্রান্ত কাগজপত্র নবায়ন করা হয়নি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি এমন।
গাড়ি আটক করার সময় পুলিশ একটি বা দুইটি কাগজ শব্দ করে এবং চালককে একটি রশিদ দেয়। পুলিশ দেয়াই রশিদের পেছনে লেখা থাকে কোন জনের ট্রাফিক পুলিশ আপনার গাড়িটি আটক করল। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের চারটি জন রয়েছে। সেগুলো হলো; উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম।
যেই জনে ট্রাফিক পুলিশ আপনার গাড়িতে আটক করেছে সেই জনের অফিসে গিয়ে আপনাকে গাড়ি ছাড়িয়ে আনার জন্য যোগাযোগ করতে হবে। পুলিশের দেয়া রশিদের পেছনের জনভিত্তিক উপস্থিতির সময় উল্লেখ থাকে।তবে অন্তত চার পাঁচ দিন পরে যাওয়াই ভালো কারণ কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে পৌঁছাতে সাধারন ৩-৪ দিন সময় লাগে। সংশ্লিষ্ট জনের ডিপুটি কমিশনার জরিমানা নির্ধারণের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে থাকেন।
যানবাহনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
যানবাহনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেগুলো একজন চালকের গাড়ি চালানোর সময় সঙ্গে থাকা উচিত। জনমানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো হলো;
মোটরসাইকেল
১) রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
২) ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট।
৩) টেক্স টোকেন।
৪) ড্রাইভিং লাইসেন্স।
মাইক্রো/কার/বাস ভাড়া ব্যবহৃত হলে
১) রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
২) ফিটনেস সার্টিফিকেট।
৩) রুট পারমিট।
৪) টেক্স টোকেন।
৫) ড্রাইভিং লাইসেন্স।
৬) ইনস্যুরেন্স সার্টিফিকেট।
মাইক্রো/কার/বাস ভাড়ায় ব্যবহৃত না হলে
১) রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
২) ফিটনেস সার্টিফিকেট।
৩) ট্যাক্স টোকেন।
৪) ড্রাইভিং লাইসেন্স।
৫) ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট।
যানবাহনের মামলা হলে করণীয়
যানবাহনের যেকোনো আইন ভাঙ্গার কারণে মামলা হতে পারে। ডকুমেন্টারি বা অন্য কোন কারণে মটরযান আইনে মামলা হলে সেটা চিন্তার কোন কারণ নয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের চারটি জোন রয়েছে। এসব জীবনের দায়িত্ব পালন করেন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি ট্রাফিক)। যানবাহন সংক্রান্ত কোন মামলার ক্ষেত্রে আগে বিবেচনা করতে হবে মামলাটি কোন এলাকার আওতাভুক্ত। যে ট্রাফিক বিভাগের অধীনে মামলাটা হয়েছে সেটা জরিমানার সময় যে রশিদ দেওয়া হয় তার পেছনে লেখা থাকে।
সংশ্লিষ্ট জনের ডিপুটি কমিশনারের দপ্তরে গিয়ে কিছু দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে খুব সহজে মামলা নিষ্পত্তি করা যায়। তবে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে জরিমানা প্রদান করতে হবে। ডিসি ট্রাফিক অথবা বিচারক জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করে। জরিমানা নির্ধারণকারি পূর্ণ জরিমানা চার ভাগের একভাগ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন, এমনকি মুওকুফ করতে পারেন যদি না জরিমানার যথাযথ কারণ খুঁজে পান।জরিমানা প্রধানের পর পরই শব্দ হওয়ার ডকুমেন্ট বুঝে নেওয়া উচিত।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে মামলা
গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকাটা বাধ্যতামূলক। সড়ক পরিবহন আইনের ৬৯ ধারা অনুযায়ী কেউ যদি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে তাহলে তিনি অনধিক দুই বছর তবে ন্যূনতম ছয় মাসের কারাদণ্ড বাংলাদেশ পাঁচ লক্ষ টাকা তবে নূন্যতম এক লক্ষ টাকা উভয় দন্ডিত হতে পারে।
তাই গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে অরজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করাই উত্তম। যদি অরজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করতে একটু সময় লাগতে পারে তবুও সে সময়টুকু অপেক্ষা করে অরজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে মামলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জরিমানা পরিশোধ
কোন ব্যক্তি যদি পুলিশ করতে যানবাহনের মামলায় জরিমানা দিতে চায় তাহলে সে মোবাইলের মাধ্যমে তার জরিমানা পরিশোধ করতে পারবেন। বাংলা জরিমানা আধারের টাকায় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) এর ঢাকায় অবস্থিত যে কোন শাখায় অথবা ইউ ক্যাশ সেবা এর মাধ্যমে জমা দিতে পারবে।নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার সঠিক থাকা সাপেক্ষে গাড়ি যদি আটক করা হয় সেক্ষেত্রে গাড়ির কাগজপত্র সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঠিকানা অনুযায়ী পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
💰 জরিমানা ও শাস্তি
নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ (সংশোধিত ২০২৫)-এর আওতায় নিচের জরিমানাগুলো নির্ধারিত রয়েছে:
অপরাধ | জরিমানা (টাকা) |
---|---|
বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা | ৫,০০০ টাকা |
গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না থাকা | ১০,০০০ টাকা |
হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো | ১,০০০ টাকা |
ট্রাফিক নির্দেশনা না মানা | ২,০০০ টাকা |
মোবাইল ব্যবহার করে গাড়ি চালানো | ৫,০০০ টাকা |
মামলার ওয়ারেন্ট
নির্ধারিত সময়ের মতো মামলা যদি চালক নিষ্পত্তি করতে অপরাগ হয় তাহলে মামলা ওয়ারেন্ট ইস্যুর জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হয়।আদালত থেকে ওয়ারেন্টী সুর পর পুলিশ কর্মকর্তা কোন রাস্তায় সংশ্লিষ্ট গাড়িটি আটক করে এবং ওয়ারেন্টি সুর পর গাড়িটি ছেড়ে দেয়।
মামলার ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি
কোন চালক অথবা গাড়ির মানিক যদি মামলার ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি করতে চায় তাহলে তাকে অনেক নাম্বারটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টে হাজির হয়ে GRO এর মাধ্যমে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। এরপর মামলাটি ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি হয়ে গেলে মামলাটি উঠিয়ে নেওয়া হয়।
মোটরযান চালানোর পূর্বে অবশ্যই চালককে মোট সম্পর্কিত নতুন কার্যকর সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত। সড়ক পরিবহন আইনের বাধ্যতামূলক কোন অপরাধে কি মামলা হতে পারে তা জানা থাকলে ব্যক্তি সতর্কতার সাথে গাড়ি চালাতে পারবে এবং বড় বড় মামলার হাত থেকেও রক্ষা পাবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন:হেলমেট বা সেট বেল্ট ছাড়া গাড়ি চালালে জরিমানা কত?
উত্তর: হেলমেট অথবা সিটবেল্ট ছাড়া গাড়ি চালালে জরিমানা ১ হাজার টাকা।
প্রশ্ন:গাড়িতে ওভারলোডিং করলে জরিমানা কত?
উত্তর: গাড়িতে ওভারলোডিং করলে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
প্রশ্ন: ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চালালে জরিমানা কত?
উত্তর: ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে জরিমানা ৫০০০ টাকা।
শেষ কথা-
সুপ্রিয় পাঠক পাঠিয়ে বন্ধুরা আজকে আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যানবাহনের মামলা এবং ট্রাফিক আইন গুলো অমান্য করলে একজন ড্রাইভারের কি কি শাস্তি হতে পারে।তাই আপনারা শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়ে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন এসকল বিষয়গুলো সম্পর্কে। যদি আপনাদের কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কিত আরো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
আরও পড়ুন-
কিস্তিতে বাইসাইকেল কিভাবে কিনবেন জানতে ক্লিক করুন মেয়েদের সাইকেলের দাম কত