যাকাতের খাত কয়টি?

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি শুধু আর্থিক ইবাদতই নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও গরীবের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু যাকাতের অর্থ কোথায় ব্যয় করা যাবে, তা অনেকেরই অজানা। এই ব্লগ পোস্টে আমরা “যাকাতের খাত কয়টি?” এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাশাপাশি যাকাতের গুরুত্ব, বিধান, এবং এর সামাজিক প্রভাব নিয়েও আলোকপাত করা হবে।

যাকাত শব্দের অর্থ কি

যাকাত আরবি শব্দ, যার অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, যাকাত হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ আল্লাহর নির্দেশে গরীব ও প্রয়োজনমাফিক লোকদের মধ্যে বণ্টন করা। এটি একটি ফরজ ইবাদত, যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য অবশ্য পালনীয়।

যাকাতের খাত কয়টি?

কুরআন ও হাদিসের আলোকে যাকাত ব্যয়ের জন্য মোট ৮টি খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন:

“যাকাত তো কেবল ফকীর, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তাওবা, ৯:৬০)

এই আয়াতের আলোকে যাকাতের ৮টি খাত নিম্নরূপ:

  1. ফকীর: যাদের আয় আছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
  2. মিসকীন: যাদের কোনো আয় নেই এবং জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টকর।
  3. যাকাত আদায়কারী: যারা যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত।
  4. মুয়াল্লাফাতুল কুলুব: যাদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার প্রয়োজন আছে।
  5. দাসমুক্তি: দাসদের মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা।
  6. ঋণগ্রস্ত: যারা ঋণের বোঝা之下 জীবনযাপন করছে।
  7. ফি সাবিলিল্লাহ: আল্লাহর পথে জিহাদ বা সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ।
  8. ইবনুস সাবিল: মুসাফির বা পথচারী, যারা প্রয়োজনে অর্থের অভাবে পড়েছেন।

আরও-বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়?

যাকাতের খাতগুলোর বিস্তারিত আলোচনা

1. ফকীর

ফকীর হলো সেই ব্যক্তি, যার আয় আছে কিন্তু তা তার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। ইসলামে ফকীরদের সাহায্য করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যাকাতের অর্থ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করে।

2. মিসকীন

মিসকীন হলো সেই ব্যক্তি, যার কোনো আয় নেই এবং জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টকর। মিসকীনদের সাহায্য করা যাকাতের একটি প্রধান উদ্দেশ্য।

3. যাকাত আদায়কারী

যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের জন্য যারা নিয়োজিত, তাদের বেতন বা খরচ যাকাতের অর্থ থেকে দেওয়া যায়। এটি যাকাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।

4. মুয়াল্লাফাতুল কুলুব

ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যাদের সাহায্য প্রয়োজন, তাদের যাকাতের অর্থ দেওয়া যায়। এটি ইসলামের প্রচার ও প্রসারে সাহায্য করে।

5. দাসমুক্তি

ইসলামে দাসমুক্তিকে একটি মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাকাতের অর্থ দাসমুক্তির জন্য ব্যয় করা যায়।

6. ঋণগ্রস্ত

যারা ঋণের বোঝা之下 জীবনযাপন করছে, তাদের ঋণমুক্ত করতে যাকাতের অর্থ ব্যবহার করা যায়। এটি তাদের জীবনকে সহজ করে তোলে।

7. ফি সাবিলিল্লাহ

আল্লাহর পথে জিহাদ বা সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যায়। এটি ইসলামের প্রচার ও সমাজের উন্নয়নে সাহায্য করে।

8. ইবনুস সাবিল

মুসাফির বা পথচারী, যারা প্রয়োজনে অর্থের অভাবে পড়েছেন, তাদের সাহায্য করা যাকাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।

যাকাতের গুরুত্ব

যাকাত শুধু একটি আর্থিক ইবাদতই নয়, বরং এটি সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও গরীবের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা হয়। এটি সমাজে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করে।

প্রশ্ন-উত্তর 

প্রশ্ন ১: যাকাত কাকে দিতে হবে?

উত্তর: যাকাত ফকীর, মিসকীন, ঋণগ্রস্ত, মুসাফির এবং অন্যান্য যাকাতের খাতভুক্ত ব্যক্তিদের দিতে হবে।

প্রশ্ন ২: যাকাতের পরিমাণ কত?

উত্তর: যাকাতের পরিমাণ হলো সম্পদের ২.৫%।

প্রশ্ন ৩: যাকাতের অর্থ কোথায় ব্যয় করা যাবে না?

উত্তর: যাকাতের অর্থ ধনী ব্যক্তি, নিজের পরিবার বা অমুসলিমদের দেওয়া যাবে না।

প্রশ্ন ৪: যাকাত কখন দেওয়া যায়?

উত্তর: যাকাত বছরে একবার দেওয়া যায়, যখন সম্পদ নিসাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর অতিবাহিত হয়।

উপসংহার

যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যাকাতের ৮টি খাত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে আমরা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করতে পারব এবং সমাজে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যাকাতের বিধান সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।