কে এই অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী? জেনে নিন সম্পূর্ণ জীবন কাহিনী

মতিয়া চৌধুরী-বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একাধিক নারীর অবদান অবিস্মরণীয়। তাদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি একজন শক্তিশালী রাজনৈতিক নেত্রী, সমাজসেবিকা এবং কৃষি উন্নয়নের একজন অভিভাবক। তার জীবন ও কর্মের বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হবে এই পোস্টে।

প্রাথমিক জীবন

মতিয়া চৌধুরী ১৯৪২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মা গৃহিনী। ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনায় খুব উৎসাহী ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন।

শিক্ষা ও যুবককাল

মতিয়া চৌধুরী স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই সময়ের অভিজ্ঞতা তাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর প্রভাব ফেলে।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

মতিয়া চৌধুরী ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, বিশেষ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। তার নেতৃত্বে কৃষি খাতে অনেক উন্নয়ন ঘটে, যা তাকে “অগ্নিকন্যা” উপাধিতে ভূষিত করেছে।

কৃষি উন্নয়নে অবদান

মতিয়া চৌধুরী কৃষি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে কৃষকদের জন্য সরকারী ঋণ, প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং কৃষি উপকরণের সরবরাহে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি কৃষকদের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছিলেন, যাতে তারা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারেন।

সামাজিক আন্দোলন

মতিয়া চৌধুরী শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেত্রী নন, তিনি একজন সমাজসেবিকা হিসেবেও পরিচিত। নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা প্রসারে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। তার উদ্যোগে গড়ে উঠেছে নানা নারী সংগঠন, যা নারীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

মতিয়া চৌধুরী দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জন করেছে।

ব্যক্তিগত জীবন

মতিয়া চৌধুরী বিবাহিত এবং তিন সন্তানের মা। তিনি পরিবারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন এবং তাদের শিক্ষায় সহায়তা করতে সদা সচেষ্ট। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন স্বামী ও সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল মা।

সাংস্কৃতিক অবদান

মতিয়া চৌধুরী শুধুমাত্র রাজনৈতিক জীবনে সীমাবদ্ধ নন, বরং তিনি সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও সক্রিয়। তিনি শিল্প ও সাহিত্য নিয়ে কাজ করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তার আগ্রহের ফলে অনেক নতুন প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছে।

চ্যালেঞ্জ ও সংগ্রাম

মতিয়া চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন চ্যালেঞ্জে ভরা। বিভিন্ন সময় তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, কিন্তু কখনোই তিনি হার মানেননি। প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে তার দৃঢ়তা তাকে আরও শক্তিশালী করেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মতিয়া চৌধুরী রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি কৃষি ও সমাজ উন্নয়নে আরও কাজ করতে চান। তিনি চান বাংলাদেশ একদিন বিশ্ব মানচিত্রে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়।

মতিয়া চৌধুরী বাড়ি কোথায়

মতিয়া চৌধুরী বাংলাদেশের একটি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, যিনি আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই তার বাড়ি অবস্থিত।

মতিয়া চৌধুরীর স্বামী কে

মতিয়া চৌধুরীর স্বামী ছিলেন মনির চৌধুরী। তিনি একজন শিক্ষাবিদ এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন।

মতিয়া চৌধুরী ডুগডুগি

ডুগডুগি হল বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরীর লেখা একটি বই। এই বইটি মূলত বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ এবং দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা ও সংগ্রাম নিয়ে লেখা হয়েছে। মতিয়া চৌধুরী তার লেখায় সমাজের অবহেলিত মানুষদের কথা তুলে ধরেছেন এবং তাদের জীবন সংগ্রামের নানা দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।

“ডুগডুগি” বইটিতে মতিয়া চৌধুরী সমাজের নানা অসঙ্গতি, বৈষম্য এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমস্যাগুলো তুলে ধরে সমাধানের জন্য ভাবনা-চিন্তা উপস্থাপন করেছেন। এটি একটি সমাজসচেতন এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা বই।

মতিয়া চৌধুরীর সন্তান

মতিয়া চৌধুরীর কোনো সন্তান নেই।

মতিয়া চৌধুরী কোন আসনের এমপি ছিলেন?

মতিয়া চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং তিনি শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই আসনটি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী এবং নকলা উপজেলা নিয়ে গঠিত।

মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগদান

মতিয়া চৌধুরী ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন সময়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

মতিয়া চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পরও তিনি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমে অব্যাহতভাবে জড়িত ছিলেন এবং এক পর্যায়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেত্রীত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মতিয়া চৌধুরী মৃত্যু

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

৮২ বছর বয়সী মতিয়া চৌধুরী বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই আজ তাঁর মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছে তাঁর পরিবার। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রমনা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে তাঁর বাসভবনে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর সাবেক একান্ত সচিব মো. শাহজালাল।

এরপর তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। তবে, তাঁর জন্য কবরের জায়গার আবেদন করা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে। যদি জায়গা না পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে তাঁর প্রয়াত স্বামী, বিশিষ্ট সাংবাদিক বজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হবে।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন তিনি সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতার দায়িত্ব পালন করছিলেন, যা তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও বহাল রেখেছিলেন।

মতিয়া চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল বামপন্থী রাজনীতি দিয়ে। ইডেন কলেজে পড়াশোনা করার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং চারবার কারাবরণ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং দলের বিভিন্ন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

মতিয়া চৌধুরী ছবি

মতিয়া চৌধুরী ছবি

 

উপসংহার

মতিয়া চৌধুরী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নাম। তার জীবন ও কর্ম সবার জন্য অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন যে নারীরা সমাজের উন্নয়নে সমান ভূমিকা রাখতে পারেন। তার অসামান্য অবদান অমর হয়ে থাকবে ইতিহাসে।

মতিয়া চৌধুরীর জীবন কাহিনী একটি উদাহরণ, যেখানে কঠোর পরিশ্রম, নেতৃত্ব এবং দৃঢ়তা একত্রিত হয়ে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়।

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-

ঈদের নামাজের নিয়ম ও মাসলা সম্পর্কে জানুন
দুই অক্ষরের ছেলেদের অর্থসহ ইসলামিক নামের তালিকা 
ক দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ
ল দিয়ে মেয়েদের সুন্দর অর্থসহ ইসলামিক নাম

↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇

↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇

➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন

➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

➡️IMO চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

Assalamu Alaikum wa Rahmatullah. I am Md. Sanaul Bari. I am a salaried employee by profession and the admin of this website. Apart from my job, I have been writing on my own website for the past 14 years and creating content on my own YouTube and Facebook. Special Note - If there is any mistake in the writing, please forgive me. Thank you.