পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং –বিভিন্ন সড়ক পথে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে অপরিহার্য জিনিসটি হলো একজন ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। আর তাই একজন গাড়ি চালকের অবশ্যক ও কাজটি হলো তার ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করা।
একজন পেশাদার ও অপেশাদার উভয় চালকের ক্ষেত্রেই ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রয়োজন অনুস্বীকার্য।ড্রাইভিং করা যদি কোন চালকের পেশা হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে ড্রাইভার এর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক এছাড়াও ড্রাইভিং যদি কারো নেশা হয়ে থাকে তার ক্ষেত্রেও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সড়কপথে গাড়ি চালানো বাংলাদেশ আইন বিরোধী। বাংলাদেশ আইনে এই অপরাধের দণ্ডনীয় শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সুপ্রিয় পাঠক পাঠিকা বন্ধুরা আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মধ্য বিদ্যমান পার্থক্য কি। অনেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে জানেন না।
পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দুটি ভিন্ন বিষয় যা হয়তো আমরা অনেকেই বুঝিনা।তাই আপনাদের অনুরোধ করবো আজকের পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মধ্যে ভিন্নতা সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের সাহায্য করবে।
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স কি
যে ড্রাইভিং লাইসেন্স একজন ব্যক্তি কে বেতনভুক্ত চালক না হয়েও হালকা জাম চালানোর জন্য দেওয়া হয় তাকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার হয় না। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে নবায়ন করার জন্য কোন প্রকার পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। এই ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্বারা হালকা মোটরযান চালানো যায়।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স কি
যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্বারা একজন গাড়িচালক বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কোন মোটরযান চালনা করেন তাকে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে ভারী মটরযান চালনা করা যায়।
পেশাদার এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মধ্যে পার্থক্য
*পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে যেকোনো গাড়ি চালানো যাবে। ৬৫০০ কেজি ওজনের ওজনের বেশি গাড়িগুলো পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্বারা চালানো যাবে। যেমন বাস, কার,রেগুনার ইত্যাদি।
*অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে একজন চালক চাইলে শুধু ২৫০০ কেজির নিচে যে মোটরযান গাড়িগুলো সেগুলো চালাতে পারবেন। যেমন মোটরসাইকেল,প্রাইভেটকার, ছোট রেগুনার এই সমস্ত ছোটখাট গাড়ি অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মাধ্যমে চালানো যায়।
বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রকারভেদ
বাংলাদেশে কয়েক প্রকারের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে যেগুলো একজন চালকের জন্য জেনে রাখা আবশ্যিক।
১) শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স।
২) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স।
৩) অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স।
৪) পিএসভি ড্রাইভিং লাইসেন্স।
৫) ইন্সট্রাক্টর ড্রাইভিং লাইসেন্স।
একজন চালকের মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে গেলে প্রথম কাজ হচ্ছে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করা। বিআরটিএর নির্ধারিত ফ্রি প্রদান করে বাংলাদেশের রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) থেকে এই লাইসেন্সটি সংগ্রহ করতে হয়। লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণের পর গ্রাহককে ২/৩ মাস এই লাইসেন্স দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের পর গ্রাহককে লিখিত মৌখিকোফিল টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
একজন চালকের শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেই সে পেশাদার ও অপেশাদার লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন জানাতে পারবে।পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে নূন্যতম চালকের বয়স ২০ বছর এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম চালকের বয়স ১৮ বছর হওয়া বাধ্যতামূলক।
পিএসভি ড্রাইভিং লাইসেন্স
পাবলিক সার্ভিস ভেহিকেল বা গণপরিবহন চালনার ক্ষেত্রে আলাদা লাইসেন্স দরকার হয় যাকে বলা হয় পিএসভি ড্রাইভিং লাইসেন্স।
ইন্সট্রাক্টর ড্রাইভিং লাইসেন্স
ইন্সট্রাক্টর লাইসেন্স মূলত ইন্সট্রাক্টরদের জন্য যারা গাড়ি কিংবা পরিবহন ইত্যাদি সম্পর্কে ইন্সট্রাক্টর বা উপদেষ্টার হিসেবে কাজ করেন।
যানবাহনের ধরনের উপর ড্রাইভিং লাইসেন্স
১) মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।
২) অটোরিকশা ও অটো টেম্পু চালানোর ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স দরকার।
৩) হালকা যান জীপ কিংবা মাইক্রোবাস চালানো হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রয়োজন।
৪) মাঝারি মানের মটরজান চালনার ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন।
৫) ভারী কিংবা ওজন বিশিষ্ট মোটরযান চালনায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন।
৬) ট্রাক্টর বা বিশেষ শ্রেণীর গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে শাস্তি
কোন চালক যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সড়কে গাড়ি চালাতে চাই সে ক্ষেত্রে তা আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে। আর বাংলাদেশ বিআরটিএ এর আইন অনুসারে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড অথবা ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন পদ্ধতি
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার ক্ষেত্রে একজন লাইসেন্স আবেদনকারী কে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে উক্ত পরীক্ষায় সফলভাবে কৃতকার্য হলে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ সার্কেল নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন করতে হবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করলে ১৫৬৫ টাকা ফি এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ সময় ১৫ দিন পার হয়ে গেলে প্রতি বছর ২৩০ টাকা হারে জরিমানা সহ ফি প্রদান করতে হবে।
এবং পরবর্তীতে আবেদনকারী সমস্ত ডকুমেন্ট সঠিক হলে বিআরটিএ কর্তৃক আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক্স (আঙ্গুলের ছাপ ডিজিটাল স্বাক্ষর এবং ছবি) তথ্যসমূহ সংগ্রহ করবে। এরপর পুনরায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং করার জন্য প্রস্তুত করা হবে। এবং সেটি প্রিন্ট হয়ে গেলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীকে জানাবে। এবং আবেদনকারী সদ্য নবায়নকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সটি উক্ত স্থান থেকে সংগ্রহ করবেন।
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন পদ্ধতি
বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমাট দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ এর অফিসে আবেদন করতে হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করলে ২৪২৭ টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় ১৫ দিন পার হয়ে গেলে প্রতি বছরের জন্য ২৩০ টাকা হারে জরিমানা সহ ফি প্রদান করতে হবে।
আবেদনকারীর সকল ডকুমেন্ট সঠিক হলে একই দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স তথ্যাদি (ডিজিটাল স্বাক্ষর ছবি এবং আঙুলের ছাপ) সংগ্রহ করা হবে।এরপর উক্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে গেলে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স টি পুনরায় পেইন্টিং এর জন্য প্রস্তুত করা হবে।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট হওয়ার পর বিআরটিএ এর সংশ্লিষ্ট সার্কেল থেকে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। এবং সেখান থেকে শব্দ নবায়নকৃত স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সটি সংগ্রহ করতে হবে।
বাংলাদেশের সকল প্রকার যানবাহন এর লাইসেন্স প্রদান করে বিআরটিএ এই সংস্থাটি।এটি বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান যেটা সকল প্রকারের যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে থাকে। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (সংশোধনী ১৯৮৭) এর দ্বিতীয় অধ্যায় অনুযায়ী বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ১৯৮৮ সাল থেকে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন: অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে কত ওজনের গাড়ি চালানো যাবে?
উত্তর:অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে একজন চালক শুধু ২৫০০ কেজির নিচে যে মোটরযান গাড়িগুলো রয়েছে সেগুলো চালাতে পারবেন।
প্রশ্ন: পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীর বয়স কত হতে হবে?
উত্তর: একজন পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ২০ বছর হতে হবে।
প্রশ্ন: অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীর বয়স কত হতে হবে?
উত্তর: একজন অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।
শেষ কথা-
প্রিয় পাঠক পাটিকা বন্ধুরা আজকের কনটেন্টের মাধ্যমে আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ড্রাইভিং লাইসেন্সে পেশাদার ও অপেশাদার দুটি বিষয়ের মধ্য কি কি পার্থক্য বিদ্যমান। যারা পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর সম্পর্ক কনফিউজড ছিলেন তারা অবশ্যই আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে পেশাদার অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
এছাড়াও কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
আরও পড়ুন-
যানবাহনের মামলা হলে করণীয় কি? কিস্তিতে বাইসাইকেল কিভাবে কিনবেন জানতে ক্লিক করুন মেয়েদের সাইকেলের দাম কত
↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇
- ইংলিশের স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন।
- ফ্রিল্যান্সারদের স্বপ্ন পূরণের ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন।
- ফেসবুকে ব্লগিং, ইউটিউবিং, ফেসবুকিং সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে –এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় অনলাইন থেকে টাকা আয় করা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন
↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇
➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন।
➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।
➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।