কোন কোন সূরা দিয়ে তারাবি নামাজ পড়তে হয়?

কোন কোন সূরা দিয়ে তারাবি নামাজ পড়তে হয়?-চলছে পবিত্র মাহে রমজানের মাস। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে তারাবির নামাজ কিভাবে পড়তে হয়, তারাবির নামাজের শেষ সময় কখন, তারাবির নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে। রমজান মাসের তারাবির নামাজ নফল ইবাদত বলা হয় অথবা সুন্নত বলা হয়। তারাবির নামাজ কি?  তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি ওয়াজিব?  অনেকের মাঝে প্রশ্ন আছে।

তারাবির নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম এবং কোন কোন সূরা দিয়ে তারাবি নামাজ পড়তে হয়।

সমাজে প্রচলিত আছে যে, তারাবির সময় কোরআনে কারিম খতম করার জন্য সূরা ইখলাস তিনবার পড়তে হয়। আশা করি সকল তথ্য আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

তারাবির নামাজের শেষ সময়

পবিত্র রমজান মাসে এশার নামাজের পর যে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, তাকে তারাবির নামাজ বলে।

পুরুষদের জন্য তারাবির নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ খতম করা সুন্নত আমল। নারীদের জন্যও ২০ রাকাত তারাবি সুন্নত। তারাবির নামাজের সময় হলো- এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত।

কোরআন তেলাওয়াতে যেমন সওয়াব, কোরআন পাঠ শ্রবণেও একই রকম সওয়াব। রমজানের খতমে তারাবি এই সওয়াব লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ।

খতমে তারাবিতে উঁচু আওয়াজে বিসমিল্লাহ বলা

দেশের অনেক মসজিদে এখন খতমে তারাবি অনুষ্ঠিত হয়। খতমে তারাবির সময় হাফেজ সাহেবরা যে কোনো একটি সূরার শুরুতে উচ্চ আওয়াজে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম তেলাওয়াত করেন। এর কারণ হলো- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোরআনে কারিমের স্বতন্ত্র একটি আয়াত, যা দুই সূরার মাঝে পার্থক্য করার জন্য আল্লাহতায়ালা অবতীর্ণ করেছেন।

আর তারাবরি নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের পুরো কোরআনের খতম শোনাতে চাইলে যে কোনো একটি সূরার শুরুতে উঁচু আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। অন্যথায় বিসমিল্লাহ না বলার কারণে মুসল্লিদের খতম অপূর্ণ থেকে যায়। আর ইমামের জন্য সব নামাজেই সূরা ফাতেহা এবং সব সূরার শুরুতে অনুচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। -ইমদাদুল ফাতাওয়া: ১/৩২৮

খতমে তারাবিতে সূরা ইখলাস একবারই পড়া

সমাজের প্রচলিত আছে যে, তারাবির সময় কোরআনে কারিম খতম করার ক্ষেত্রে সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার। কিন্তু ইসলামি শরীয়তে এমন কোনো বিধান নেই। সাহাবা-তাবেয়িন থেকেও এমন কোনো আমলের প্রমাণ নেই। ইসলামি স্কলাররা এই আমলকে অপছন্দ করেছেন। সুতরাং তারাবিতে কোরআন খতমের সময় সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার প্রচলনটি ঠিক নয়। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং অন্য সূরার মতো যথানিয়মে সূরা ইখলাস একবারই তেলাওয়াত করবে।

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

ব্যস্ততার দরুণ অনেকেই নির্ধারিত সময়ে তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যেতে পারেন না। আবার অনেককে দেখা যায়, তারাবির নামাজ কয়েক রাকাত পড়ার পর মসজিদে যাচ্ছেন। এমন মুক্তাদির জন্য এশা ও তারাবির নামাজ আদায়ের নিয়ম হলো- প্রথমে এশার ফরজ ও সুন্নত আদায় করা। পরে ইমামের সঙ্গে তারাবির নামাজে অংশ নেওয়া। তারাবির জামাত শেষে ইমামের সঙ্গে বেতর নামাজও জামাতে পড়ে নেওয়া। এরপর শুরুতে ছুটে যাওয়া তারাবির বাকি নামাজ আদায় করা।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

যেহেতু রমজান মাস অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতের মাস, এ মাসে ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব অনেক বেশি। তাই রমজানে নামাজ ও জামাতের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই মসজিদে চলে যাওয়া উচিত।

তারাবির নামাজে শুধু তাশাহহুদ নয়, দরূদ এবং দোয়াও পড়তে হবে-

অনেক মসজিদে তারাবির সময় ইমাম সাহেব নামাজের শেষ বৈঠকে এ পরিমাণ বসার পর সালাম ফিরিয়ে নেন, যে সময়ে শুধু তাশাহহুদ পড়া যায়। দরূদ শরীফ ও দোয়া মাছুরা পড়া যায় না। নামাজে এমন তাড়াহুড়া করা ঠিক না।

অন্য নামাজের মতো তারাবির নামাজের শেষ বৈঠকে দরূদ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়া সুন্নত। ইমাম-মুক্তাদি সবার জন্যই সুন্নত। তাই ইমামের উচিত শেষ বৈঠকে দোয়া-দরূদ এমন ধীরগতিতে পড়া যেন ওই সময়ের মধ্যে মুক্তাদিদের দরূদ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়া সম্ভব হয়।

তারাবির নামাজে দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়তে হবে না- এমন কোনো নিয়ম নেই। ইমাম-মুক্তাদি সবার জন্য তা পড়া সুন্নত। -আল বাহরুর রায়েক: ২/৬৯

তারাবির নামাজে ভুলে এক সালামে চার রাকাত পড়ে ফেললে করণীয়?

একা একা তারাবির নামাজের সময় ভুলে কেউ যদি একসঙ্গে চার রাকাত আদায় করে, অর্থাৎ দুই রাকাতের পর তাশাহহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে আরও দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে; তাহলে তার নামাজ হয়ে যাবে। এখানে চার রাকাত নামাজ পড়া হয়েছে বলে ধরা হবে।

তবে তারাবির নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে একসঙ্গে চার রাকাত পড়া ঠিক না। -আল বাহরুর রায়েক: ২/৬৭

তারাবির নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে?

তারাবী শব্দটি আরবী । তারাবীহাহ্ তার বহুবচন, যার অর্থ ক্ষনিক বিশ্রাম। রমজানের এই নামাজে প্রতি ৪ রাকায়াতের পরে কিছু সময় অর্থাৎ ৪ রাকায়াত নামাজের সম পরিমান সময় বিলম্ব ও বিশ্রামের নিয়ম থাকায় এ নামাজে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে ।

যে রাতে রমজানের চাঁদ দেখা যাবে সে রাত থেকে তারাবীহ নামাজ শুরু করতে হবে। ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেলে তারাবীহ বন্ধ করতে হবে।

তারাবির নামাজের সময় এশার নামাজের পর থেকে শুরু হয় এবং ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত থাকে । যদি কী এশার নামাজের পূর্বে তারাবী পড়ে তাহলে তারাবী হবে না।

তারাবির নামাজের ফজিলত

রাসূল (সাঃ) বলেন, “(হে আমার উম্মতগন), তোমরা জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন এবং উহার রাত্রে তারাবীহের নামাজ সুন্নাত করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি খালেস নিয়তে ঈমানের সাথে কেবল সোয়াবের আশায় এ মাসে দিনের বেলায় রীতিমত রোজা রাখবে এবং রাত্রিতে রীতিমত তারাবীহের নামাজ পড়বে তার বিগত সব সগীরা গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে।” অতএব, এ পবিত্র মাসে অধিক নেকী সঞ্চ্য করে লওয়া উচিৎ। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমান নেকী পাওয়া যায়।

তারাবির নামাজের জামায়াত

রাসুল (সাঃ) রমজানে তিন রাত ২৩, ২৫ এবং ২৭ শে রাত তারাবীহ নামাজ জামায়াতে পড়িয়েছিলেন। তারপর তিনি যখন সাহাবীদের মধ্যে বিরাট উৎসাহ উদ্দীপনা ও অনুরাগ দেখলেন তখন মসজিদে এলেন না। সাহাবাগন তখন তাঁ দরজায় আওয়াজ দিতে লাগলেন। তখন নবীজি বললেন, আল্লাহ তোমাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় আরও বরকত দিন ।

আমি এ আশংকায় মসজিদে যাইনি যে, এ নামাজ তোমাদের উপর ফরজ হয়ে না যায় এবং সর্বদা তোমরা তা পালন করতে না পার। কারণ, নফল নামাজ ঘরে পড়াতে বেশী সওয়াব ও বরকতের জারণ হয় (বুখারী)।

এ হাদিস থেকে প্রমানিত হয় যে, রাসূল (সাঃ) ৩ রাত জামায়াতের পরে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) রীতিমত জামায়াত কায়েম করেন এবং সাহাবায়ে কিরাম তা মেনে নেন। পরবর্তীকালে কোন খলিফাই এ সুন্নতের বিরোধিতা করেননি। এ জন্য আলেম সমাজ এ নামাজকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া বলেছেন।

তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলায়

নিয়ত আরবিতে করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আরবি কিংবা বাংলায় নিয়ত করলে তা হয়ে যাবে।

তারাবিহ’র দুই রাকাআত নামাজ ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য (এ ইমামের পেছনে) পড়ছি- (اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।

২ রাকাআত করে আলাদা নিয়তে ৪ রাকাআত নামাজ পড়া। ৪ রাকাআত পড়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া। সেসময় তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার পড়া। গোনাহ মাফে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

খানিক বিশ্রামের পর আবার ২/২ রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করা। আবার কিছু বিশ্রাম করে আবার নামাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।

প্রত্যেক ৪ রাকাআত নামাজ পড়ার পর বিশ্রামের সময় অনেকেই আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকেন। অনেকে মুনাজাতও করে থাকেন। প্রতি ৪ রাকাতে মুনাজাত না করে একেবারে শেষে করলেও কোনো সমস্যা নেই।

তারাবিহ নামাজের দোয়া

তারাবিহ নামাজের পর মুনাজাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তবে গোনাহমুক্ত জীবন লাভে তাওবা-ইসতেগফারের বিকল্প নেই।

তবে আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে, যা তারাবিহ নামাজে পড়া হয়। আর এ দোয়াটি ব্যাপকভাবে পড়ার কারণে অনেক মানুষই তা মুখস্ত জানে। চাইলে এ দোয়াটিও প্রতি ৪ রাকাআত পর পর পড়া যেতে পারে। আর তাহলো-

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

উচ্চারণ: ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’

তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাআত পর পর শুধু এ দোয়াটিই পড়তে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো দোয়া-ই পড়া যেতে পারে। এতে তারাবিহ নামাজেরও কোনো অসুবিধা হবে না।

তারাবির নামাজ শেষে মুনাজাত

আবার তারাবিহ নামাজ শেষ হলেও সবাই সমবেতভাবে মুনাজাত করে। আবার অনেকে একাকি মুনাজাত করে। এ মুনাজাত সমবেত হোক আর একাকি হোক যে কোনো দোয়া দিয়ে তা করা যেতে পারে।মনের একান্ত কথাগুলো যেভাবে ইচ্ছা আল্লাহর কাছে তুলে ধরায় কোনো অসুবিধা নেই। তবে তারাবিহ নামাজের দোয়ার মতো মুনাজাতেরও একটি ব্যাপক প্রচলিত দোয়া রয়েছে। ইচ্ছা করলে এ দোয়াটিও পড়া যায়। আর তাহলো-

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

– অনেকে রমজানজুড়ে এ দোয়াও বেশি বেশি পড়ে থাকেন-

اَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ اﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।

– তাছাড়া তারাবিহ নামাজের পর সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।

মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহাঅনুগ্রহের মাস রমজান। এ মাসের মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি।

তারাবীহ নামাজের মাসয়ালা

০১। তারাবীহ নামাজের নিয়ত এভাবে করতে হবে আমি দু’রাকায়াতের সুন্নাত তারাবীহ নামাজের নিয়ত করছি। এমনিভাবে দশ সালাম সহ ২০ রাকায়াত নামাজ পুরা করতে হবে।

০২। তারাবীহ নামাজের পর বেতেরের নামাজ পড়া উত্তম । কিন্তু কোন কারণে যদি কিছু তারাবীহ পড়ার পূর্বে অথবা সমস্ত তারাবীহ পড়ার পূর্বে বেতেরের নামাজ পড়াও জায়েজ হবে।

০৩। যদি কোন মুক্তাদির বিলম্বে নামাজে যোগ দেবার করণে তার কিছু তারাবীহ বাকী থাকতে ঈমাম বেতেরের নামাজের জন্য দাঁড়ালেন, এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উচিৎ হবে ঈমামের সাথে বেতেরের নামাজ পড়া এবং তারপর বাদ পড়া তারাবীহ পড়া।

০৪। চার রাকায়াত পড়ার পর এত সময় পর্যন্ত বিশ্রাম নেয়া মুস্তাহাব যত সময়ে চার রাকায়াত পরা হয়েছে।

০৫। যদি এশার ফরজ না পড়ে তারাবীতে শরীক হয় তাহলে তার তারাবী দুরস্ত হবে না ।

০৬। যদি কেউ এশার ফরজ জামায়াতে পড়ল এবং তারাবীহ জামায়াতে পড়ল না, সে-ও বেতেরের নামাজ জামায়াতে পড়তে পারে।

০৭। যদি কেউ এশার ফরজ জামায়াতে পড়ল না সে তারাবীহ ও বেতেরের নামাজ জামায়াতে পড়তে পারবে।

০৮। বিনা কারণে বসে বসে তারাবীহ নামাজ পড়া মাকরূহ ।

০৯। ফরজ ও বেতের এক ঈমাম এবং তারাবীহ অন্য ঈমাম পড়াতে পারে।

১০। তারাবীহ দ্বিতীয় রাকায়াতে বসার পরিবর্তে ঈমাম দাঁড়িয়ে গেল, যদি তৃ্তীয় রাকায়াতে সিজদার পূর্বে তার মনে পড়ে যায় অথবে কোন মুক্তাদি মনে করিয়ে দেয় তাহলে ঈমামের উচিত বসে যাওয়া এবং তাশাহুদ পড়ে এক সালাম ফিরিয়ে সিজদায় সাহু দেবে, তারপর নামাজ পুরা করে সালাম ফেরাবে। তাতে দু’রাকায়াত সহীহ হবে।

সাহাবীদের যুগে তারাবির নামাজ

মুসলিম সমাজে প্রচার করা হয় যে, ওমর ও আলী (রাঃ) উভয়েই বিশ (২০) রাকাত তারাবি চালু করেছিলেন; এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা; মর্যাদাশীল জান্নাতি সাহাবীগণের বিরুদ্ধে এগুলো মিথ্যা অপবাদ মাত্র; কারণ তারা কখনো রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমলের বিপরীতে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়েননি, নির্দেশও দেননি; নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল-

১।সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত-

তিনি বলেন, ওমর (রাঃ) উবাই ইবনে কা’ব ও তামীম আদ-দারী (রাঃ)-কে লােকদেরকে নিয়ে ১১ রাকাত সালাত আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন।

মুয়াত্তা মালেক ১/১১৫ পৃঃ, রামাযান মাসে রাত্রির সালাত’ অনুচ্ছেদ; সহীহ ইবনে খুযায়মা ৪/৬৯৮ পৃঃ; সাঈদ ইবনু মানসূর, আস-সুনান; কিয়ামুল লাইল, পৃঃ ৯১; আবু বকর আন-নিশাপুরী, আল ফাওয়ায়েদ ১/১৩৫ পৃঃ; বায়হাকী আল-মারেফা; ফির ইয়াবী ১/৭৬ পৃঃ ও ২/৭৫ পৃঃ; আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৮৫/১৪০৫), ১/৪০৭ পৃঃ হা/১৩০২-এর টীকা সহ দ্রঃ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৫২ পৃঃ, হা/১২২৮ রমজানের রাতের সালাত অনুচ্ছেদ।

উপরিউক্ত হাদীছটি অনেকগুলো হাদিস গ্রন্থে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলােই সহীহ।

আল্লামা নীমভী হানাফী (রহঃ) তাঁর আছারুস সুনান গ্রন্থে হাদিসটির সনদ সম্পর্কে বলেন, এই হাদীসের সনদ ছহীহ।

শায়খ আলবানী বলেন, এই হাদীসের সনদ অতীব বিশুদ্ধ; কারণ সায়িব ইবনু ইয়াযীদ একজন সাহাবী, তিনি ছােটতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হজ্জ করেছেন।

অন্যত্র তিনি বলেন, আমি বলছি, এই হাদীসের সনদ অত্যন্ত ছহীহ; কেননা এর রাবী মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ ইমাম মালেক (রহঃ)-এর উস্তাদ; সকলের ঐকমত্যে তিনি একজন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য রাবী; তাছাড়া ইমাম বুখারী ও মুসলিম তার হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন।

উল্লেখ্য যে, মুয়াত্তার ভাষ্যকার আল্লামা যারকানী ইবনু আব্দিল বার-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, ইমাম মালেক ছাড়া অন্যরা কেউ ১১ রাকাতের কথা বর্ণনা করেননি; বরং সবাই ২১ রাকাত বর্ণনা করেছেন, যা মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে বর্ণিত হয়েছে; অবশ্য পরেই তিনি এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন; ২১ রাকাত সংক্রান্ত উক্ত বক্তব্য চরম বিভ্রান্তির;

কারণ ইমাম মালেক ছাড়াও অনেকেই ১১ রাকাতের উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন; আবু বকর নিশাপুরী, ফিরইয়াবী, বায়হাক্বী, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-ক্বাত্বান,২৪ ইসমাঈল ইবনে উমাইয়া, উসামা ইবনে যায়েদ, মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, ইসমাইল ইবনে জাফর প্রমুখ ওমর (রাঃ) নির্দেশিত ১১ রাকাতের হাদীস বর্ণনা করেছেন।

২।আব্দুর রহমান মুবারকপুরী উক্ত বক্তব্যের বিরুদ্ধে বলেন-

আমি বলছি, ১১ রাকাত ত্রুটিপূর্ণ’ ইবনে আব্দুল বার-এর এই বক্তব্য আমার নিকট অতীব ভ্রান্তিপূর্ণ।

শায়খ আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (মৃঃ ১৯৯৪ খৃঃ) তার মিশকাতুল মাসাবীহ-এর জগদ্বিখ্যাত ভাষ্য ‘মিরআতুল মাফাতীহ’ গ্রন্থে উক্ত হাদীসের আলোচনায় বলেন,

ওমর (রাঃ) রমজানের রাতের সালাতের জন্য লােকদেরকে যে একত্রিত করেছিলেন এবং তিনি যে তাদেরকে বিতর সহ ১১ রাকাত করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই হাদীস তার প্রামাণ্য দলীল। এছাড়া তার যুগে সকল সাহাবা ও তাবেয়ীগণ যে তারাবীর সালাত ১১ রাকআতই পড়তেন এটা তারও সুস্পষ্ট প্রমাণ। কারণ এ হাদীছটি পূর্বে বর্ণিত আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীসের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল এবং জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের সাথেও সামঞ্জস্যশীল।

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ রাঃ বলেন, সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)-কে জানানো হয়েছে যে, ওমর (রাঃ) উবাই ও তামীম আদ-দারীর মাধ্যমে লােকদের একত্রিত করেন। অতঃপর তারা উভয়ে ১১ রাক’আত ছালাত আদায় করান।

মুহাম্মাদ ইবনু আবী শায়বা আল-কুফী, আল-মুসান্নাফ (বৈরুত: দারুল ফিকর, ১৯৮৯/১৪০৯ হিঃ), ২/২৮৪ পৃঃ, হা/৭৭২৭, রামাযান মাসে রাতের সালাত অনুচ্ছেদ।

হাদীছটি সম্পর্কে আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, হাদিসটির সনদ ছহীহ।

মুহাদ্দিসগণের পক্ষ থেকে সহীহ বলে স্বীকৃত উক্ত হাদীস দ্বয়ের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের ন্যায় ১১ রাকাত তারাবিহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এক্ষণে আমরা জানব, ওমর (রাঃ)-এর যুগে কত রাকআত তারাবীহ পড়া হত।

৩।মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রাঃ) বলেন-

আমি সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, আমরা ওমর (রাঃ)-এর যামানায় ১১ রাকাত সালাত আদায় করতাম।

সাঈদ ইবনু মানছুর, আস-সুনান, আওনুল মাবুদ ৪/১৭৫, হা/১৩৭২-এর আলােচনা দ্রঃ।

হাদিসটির সনদ সম্পর্কে শায়খ আলবানী ও আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (৮৪৯৯১১ হিঃ) বলেন, হাদিসটির সনদ ছহীহ পর্যায়ভুক্ত।

৪।সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন-

আমরা ওমর (রাঃ)-এর যামানায় রামাযান মাসে ১৩। রাকাত সালাত পড়তাম।

মুহাম্মাদ ইবনু নাছর, কিয়ামুল লাইল; ফাৎহুল বারী ৪/৩১৯ পৃঃ।

উক্ত বর্ণনাতে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ বর্ণিত হয়েছে; আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীছের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে যেখানে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ এসেছে; সেই সাথে ইমাম মালেক বর্ণিত ওমর (রাঃ)-এর নির্দেশিত ১১ রাকআতের হাদীসের সাথেও মিল রয়েছে।

৫।তাই আল্লামা নীমভী হানাফী সম্পর্কে বলেন-

ইমাম মালেক মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ থেকে যা বর্ণনা করেছেন, এ হাদীসটি তার অতীব নিকটবর্তী অর্থাৎ সহীহ।

ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, হাদীছটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাত্রির সালাতের ব্যাপারে বর্ণিত মা আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইবনে ইসহাক বলেন, তারাবীর সালাত সম্পর্কে আমি যা শুনেছি তার মধ্যে এটিই সর্বাধিক বলিষ্ঠ বর্ণনা।

আমরা এতক্ষণ আট বা এগারো রাকাতের পক্ষে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ এবং তাদের যুগ পর্যন্ত যে হাদীসগুলো পেশ করলাম তার সবগুলোই সহীহ। রিজাল শাস্ত্র বিদগণ এবং বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস গণের বলিষ্ঠ উক্তির মাধ্যমে যা প্রমাণিত হয়েছে।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি ওয়াজিব?

মাহে রমজানে রাত্রিকালে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা।

তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি দুই রাকাত বা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবি নামাজ বলা হয়।

রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ও কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ।

তবে ঘরে সূরা-কিরাআতের মাধ্যমে আদায় করলেও সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবি নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবি নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে।

নবী করিম (সা.) বেশির ভাগ সময় রাতের শেষাংশে তারাবি আদায় করতেন এবং প্রথমাংশে বিশ্রাম নিতেন। তিনি কখনো আট রাকাত, কখনো ১৬ রাকাত, আবার কখনো ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু বিশেষ কারণবশত নিয়মিত ২০ রাকাত পড়তেন না।

কেননা, তিনি কোনো কাজ নিয়মিত করলে তা উম্মতের জন্য ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। এ করুণা দৃষ্টির কারণে তিনি তাঁর আমলে প্রতিনিয়ত ২০ রাকাত পূর্ণ তারাবি জামাত হতে দেননি। যার দরুন সালাতুত তারাবিহ সুন্নত, ওয়াজিব নয়; তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা জরুরি সুন্নত। ২০ রাকাত তারাবি নামাজ হওয়ার সপক্ষে দলিল সহিহ হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘নবী করিম (সা.) রমজান মাসে বিনা জামাতে (একাকী) ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর বিতর নামাজ পড়তেন।’ (বায়হাকি)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর তারাবি নামাজ ওয়াজিব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আর থাকেনি। তাই তারাবির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব হজরত ওমর (রা.)-এর আমলে কার্যকর হয়। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবুবকর (রা.) ও দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালেও তারাবি নামাজ ২০ রাকাত পড়া হতো।

হজরত ওমর (রা.) মসজিদে নববিতে সাহাবিদের খণ্ড খণ্ড জামাতে ও একাকী তারাবির নামাজ পড়তে দেখে সবাই মিলে এক জামাতে তারাবি পড়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালে সাহাবিদের ইজমা দ্বারা মূলত রমজান মাসের মধ্যে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার রীতির প্রচলন হয়।

মহানবী (সা.) রমজান মাসে তারাবি নামাজ আদায় করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করতেন। তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব প্রাপ্তির আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে, তার অতীতকৃত পাপগুলো ক্ষমা করা হয়।’

(বুখারি ও মুসলিম) মাহে রমজানে রোজা, তারাবি নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের দরুন আল্লাহ তাআলা রোজাদার ব্যক্তির আগের সব গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা তারাবি নামাজ আদায় করতেন। তবে তিনি মাত্র চার রাত তারাবি নামাজ জামাতে পড়েছিলেন; কারণ যদি তিনি সর্বদা জামাতে তারাবি নামাজ আদায় করেন, তাহলে তাঁর উম্মতেরা ভাববেন যে হয়তো এ তারাবি নামাজ ফরজ।

তারাবির নামায নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা। (সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়ে যেতেও পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে। – আল্লামা জুরজানী রাহ)

তারাবির নামাজ নিয়ে প্রশ্ন উত্তর

১। প্রশ্ন:তারাবিহ শব্দের অর্থ কি?

উত্তরঃ তারাবিহ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্রাম করা’।

২। প্রশ্ন:তারাবির নামাজ কি?

প্রতি চার রাকাআত নামাজ শেষ করে যাতে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করা যায় তাই একে তারাবির নামাজ বলা হয়।

৩।প্রশ্ন: তারাবির নামাজ কত রাকাত?

উত্তরঃ হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকআত, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকআত এবং আহলে হাদীসরা ৮ রাকআত তারাবির পড়েন।

৪।প্রশ্ন: তারাবির নামাজ কি সুন্নত না নফল?

উত্তর: তারাবির নামায নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

৫।প্রশ্ন: খতম তারাবীহ এবং সূরা তারাবীহ কি?

উত্তর: বাংলাদেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়। খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফিযগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।

৬।প্রশ্ন:তারাবির নামাজ কেন পড়ব? ফযিলত কি?

উত্তর;রাসূল(সাঃ) বলেছেন,”যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব পাওয়ার আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে ,তার অতিতকৃত পাপগুলো ক্ষমা করা হয়।(বুখারি ও মুসলিম)

হাদিস দ্বারা তারাবির নামাজের অশেষ সওয়াবের কথা প্রমানিত।

৭।প্রশ্ন:তারাবি নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে?

উত্তর:অবশ্যই গুনাহ হবে।কারন তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদ্দাহ(নামাজে যেসব সুন্নত পালন না করলে নামাজ মাকরুহ হয়) ।বিনা ওজরে তারাবির নামাজ ছেড়ে দিলে কবিরা গুনাহ হবে।

৮।প্রশ্ন:তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে?

উত্তর:রোজা হবে।কারন রোজা ফরয ইবাদত এর সাথে তারাবির সংযোগ আছে কিন্তু তুলনা করাটা বোকামো।বিনা ওজরে তারাবি ছেড়ে দিলে রোজা মাকরুহ হবে।

৯।প্রশ্ন:  তারাবির সালাতে বা তাহাজ্জুদের সালাতে সুরা ফাতিহার পরে একাধিক ছোট সুরা পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে কি না?

উত্তর: না, এতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনি একাধিক সুরা একসঙ্গে মিলিয়ে পড়তে পারেন বা এক সুরা আপনি বারবার পড়তে পারেন অথবা আপনি কোরআনের মুসহাব থেকে তিলাওয়াত করতে পারবেন। এটা আপনার জন্য জায়েজ রয়েছে। তবে উত্তম হচ্ছে, যদি মুখস্থ থাকে, তাহলে বড় সুরা পড়া।

১০।প্রশ্নঃ আমাদের দেশে কত ধরণের তারাবি প্রচলিত আছে?

উত্তরঃআমাদের দেশে দুই ধরণের তারাবি প্রচলিত আছে। যথা-

১।একটি হলো সুরা তারাবি

এবং

২।অন্যটি হলো খতম তারাবি।

১১।প্রশ্নঃআমাদের কোনো কোনো মসজিদে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়া হয় আবার কোনো কোনো মসজিদে ৮ রাকাত পড়া হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যারা ৮ রাকাত পড়েন তাঁরা বলেন,  রাসুলুল্লা (স.) কখনো ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়েননি। আমি জানতে চাচ্ছিলাম তারাবির নামাজ কোনটা সঠিক, ২০ রাকাত না ৮ রাকাত?

উত্তরঃ আপনি তারাবির নামাজ ২০ রাকাতও পড়তে পারেন। এটি ওলামায়েকেরামের বক্তব্য রয়েছে এবং এ বিষয়ে সাপোর্ট রয়েছে এবং এর পক্ষে দলিলও রয়েছে। ৮ রাকাতও আপনি পড়তে পারেন। ৮ রাকাতের বিষয়ে ওলামায়েকেরামের ইস্তিহাদ রয়েছে তারাবির সালাতের বিষয়ে।

আপনি যে কথা বলেছেন, রাসুলুল্লা (স.) কখনো তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়েননি, এ কথা সত্য বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কোনো সহিহ হাদিসের মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত হয়নি রাসুলুল্লাহ (স.) ২০ রাকাত পড়েছেন।

১২।প্রশ্ন: তারাবির নামাজ আসলে কী? আমরা কি এটিকে সালাতের সঙ্গে তুলনা করব?

উত্তর: তারাবির সালাত এক ধরনের নফল সালাত। এটির নির্দিষ্ট কোনো সালাতের কথা বলা হয়নি, দুই রাকাত করে ৮ রাকাত, ১০ রাকাত, ১২ রাকাত, ১৬ রাকাত, ২০ রাকাত, ২৪ রাকাত, ৩০ রাকাত যার যতটুকু সমর্থ রয়েছে তিনি ততটুকু পড়বেন।

তারাবির সালাত মূলত রাতের নামাজ এবং রাতের নামাজের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নির্দেশনা হচ্ছে দুই রাকাত, দুই রাকাত করে আদায় করা। কত রাকাত, রাসুলুল্লাহ (স.) তা নির্ধারণ করে যাননি। কেউ যদি ২০ রাকাত পড়েন তাহলে পড়তে পারেন, কেউ যদি ৮ রাকাত পড়েন তাহলে সেটাও পড়তে পারেন।

প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-

ঈদের নামাজের নিয়ম ও মাসলা সম্পর্কে জানুন
দুই অক্ষরের ছেলেদের অর্থসহ ইসলামিক নামের তালিকা 
ক দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ
ল দিয়ে মেয়েদের সুন্দর অর্থসহ ইসলামিক নাম

↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇

  • ইংলিশের স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন
  • ফ্রিল্যান্সারদের স্বপ্ন পূরণের ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন
  • বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন
  • ফেসবুকে ব্লগিং, ইউটিউবিং, ফেসবুকিং সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে –এখানে ভিজিট করুন
  • বাংলায় অনলাইন থেকে টাকা আয় করা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন

↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇

➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন

➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি। বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment