রমজান মাস মুসলিমদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে রোজা পালন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়। রোজা পালনের নিয়ম ও শর্তগুলো সব মুসলিমের জন্য একটি মহান কর্তব্য। তবে অনেকেই জানেন না, সেহরি বা ইফতার না করলে কি রোজা কবুল হবে? এই প্রশ্নটি অনেকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আজকের এই পোস্টে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করব এবং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক তথ্য প্রদান করব।
সেহরি বা ইফতার কি?
সেহরি হলো রোজা রাখার পূর্বে ভোরের আগে খাবার গ্রহণ করা। এটি রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং রোজা রাখার জন্য আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে করা হয়।
ইফতার হলো রোজা ভঙ্গ করার সময়, যা সূর্যাস্তের পর করা হয়। ইফতারও এক গুরুত্বপূর্ণ রীতি যা মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ মাহাত্মপূর্ণ কাজ।
সেহরি ও ইফতার না করলে কি রোজা কবুল হবে?
রমজান মাসে সেহরি ও ইফতার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। তবে অনেক মুসলিম মনে করেন, যদি সেহরি বা ইফতার না করা হয়, তবে তাদের রোজা কবুল হবে না। কিন্তু ইসলামে এর সাথে সম্পর্কিত কিছু স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। আসুন বিষয়টি বিশদভাবে জানি।
-
সেহরি না করলে রোজা কি হবে?
সেহরি না খেলে রোজা আদায় হতে পারে, তবে সেহরি খাওয়ার ফযিলত অনেক বেশি। সেহরি খাওয়া শুধু একটি সুন্নত নয়, বরং এটি রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গণ্য হয়। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে, তাই সেহরি খাও এবং এতে শয়তানও দূরে থাকে।” (বুখারি)
সেহরি না খেলে রোজা না হওয়ার কোনো বিষয় নেই, তবে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজার জন্য এক ধরনের বরকত লাভ হয়।
-
ইফতার না করলে রোজা কি হবে?
ইফতার হলো রোজা ভঙ্গ করার সময়, যা সূর্যাস্তের পর করা হয়। ইসলামে সূর্যাস্তের পর ইফতার করা ওয়াজিব। এর ফলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। তবে যদি কেউ ইফতার না করে ভুলবশত বা অজান্তে রোজা ভঙ্গ না করে, তবে রোজা ঠিকই থাকবে, কিন্তু এর জন্য কাফফারা লাগবে।
ইফতার না করা মানে রোজার অবৈধ ক্ষতি নয়, তবে সঠিক সময়ে ইফতার করা বাধ্যতামূলক।
সেহরি ও ইফতারের গুরুত্ব
১. সেহরি: সেহরি খাওয়া রোজার শুরু থেকে শরীরকে শক্তি প্রদান করে এবং দীর্ঘ সময় fasting এর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। এই খাবারের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়। এটি একটি সুন্নতও বটে, যার মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।
- ইফতার: ইফতার রোজা ভঙ্গ করার বিশেষ মুহূর্ত। এটি একটি সৌভাগ্যজনক সময়, যখন মুসলিমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরতে পারেন এবং তাঁর রহমত কামনা করেন। ইফতার করার সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং অসহায়দের জন্য দান করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
রোজা কবুল হওয়ার শর্ত
এখন, প্রশ্ন আসে—সেহরি বা ইফতার না করলে কি রোজা কবুল হবে? ইসলামে রোজার কবুল হওয়ার শর্ত রয়েছে:
- রোজার নিয়ত করা
- রোজার শরয়ী শর্ত পূরণ করা (যেমন, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা)
- কোন ভুল কাজ না করা (যেমন, খাওয়া, পান করা ইত্যাদি)
যতদিন সেহরি বা ইফতার না খেলে রোজার ফজিলত কমে না এবং শরীয়তের বিধি অনুসারে আপনি রোজা রেখেছেন, ততদিন রোজা কবুল হবে। তবে সেহরি ও ইফতার ছাড়া রোজা আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে এবং শরীরের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: সেহরি না খেলে কি রোজা যাবে?
উত্তর: সেহরি না খেলে রোজা যায়, তবে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়, যা রোজাকে আরও সহজ এবং উপকারী করে তোলে।
প্রশ্ন ২: ইফতার না করলে কি রোজা হবে?
উত্তর: ইফতার না করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে না, তবে যথাসময়ে ইফতার করা ইসলামী বিধি অনুসারে বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন ৩: যদি কেউ সেহরি বা ইফতার ভুলে না খায়, তবে কি তার রোজা বাতিল হবে?
উত্তর: না, যদি কেউ ভুলে সেহরি বা ইফতার না খায়, তার রোজা আদায় হবে, তবে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
উপসংহার
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সেহরি বা ইফতার না করলেও রোজা আদায় হবে, তবে এর মাধ্যমে আল্লাহর দেওয়া সুন্নত এবং বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়া সম্ভব। তাই সেহরি ও ইফতার করা রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আমাদের দেহ ও আত্মার কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, এবং সেহরি বা ইফতার করা আমাদের এই লক্ষ্যকে আরো সহজতর করে তোলে।