ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামাজ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমই নয়, বরং এটি মুসলিমদের আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতিরও একটি প্রধান উপায়। নামাজের প্রতিটি অংশই নির্দিষ্ট নিয়ম ও আদবের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়, এবং এর মধ্যে রুকু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রুকু নামাজের এমন একটি অংশ, যা ছাড়া নামাজ পূর্ণ হয় না। কিন্তু রুকুতে যাওয়ার পর কি পড়তে হয়? এই প্রশ্নটি অনেক মুসল্লির মনে ঘুরপাক খায়, বিশেষ করে যারা নতুনভাবে নামাজ শিখছেন বা নামাজের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা রুকুতে যাওয়ার পর কি পড়তে হয়, এর তাৎপর্য, এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা রুকুর দোয়া, এর গুরুত্ব, হাদিসের আলোকে রুকুর বিধান, এবং রুকুতে যাওয়ার পর সাধারণত যে ভুলগুলো করা হয় তা নিয়েও আলোচনা করব। আশা করি, এই পোস্টটি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে এবং নামাজের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আপনার জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
রুকু কি এবং এর গুরুত্ব
রুকু হল নামাজের একটি অংশ, যেখানে মুসল্লি কোমর থেকে ঝুঁকে হাত দিয়ে হাঁটু স্পর্শ করে। এটি নামাজের একটি ফরজ অংশ, যা ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। রুকুতে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও জিকির পড়া হয়, যা নামাজের পূর্ণতা আনে।
Also Read
রুকুতে যাওয়ার পর কি পড়তে হয়?
রুকুতে যাওয়ার পর নিম্নলিখিত দোয়া ও জিকির পড়া হয়:
- তাসবিহ:
রুকুতে যাওয়ার পর “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” (سبحان ربي العظيم) পড়া হয়। এর অর্থ হল “মহান আমার প্রতিপালক, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ।” এই তাসবিহ কমপক্ষে তিনবার পড়তে হয়। - অতিরিক্ত দোয়া:
কিছু হাদিসে রুকুতে অতিরিক্ত দোয়া পড়ারও উল্লেখ আছে। যেমন:- “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী”
অর্থ: “হে আল্লাহ, তোমার প্রশংসা সহ আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন।”
- “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী”
- ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার সময়:
যদি আপনি ইমামের পিছনে নামাজ পড়েন, তাহলে ইমাম “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” (سمع الله لمن حمده) বলার পর আপনি “রাব্বানা লাকাল হামদ” (ربنا ولك الحمد) বলবেন।
সুবাহানা রাব্বিয়াল আজিম অর্থ কি?
“সুবাহানা রাব্বিয়াল আজিম” (سبحان ربي العظيم) একটি আরবি বাক্য, যা ইসলামিক প্রার্থনায় বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ হলো:
“আল্লাহ তাঁর মহানতা ও পবিত্রতায় শুদ্ধ।”
এটি একটি দোয়া বা প্রার্থনা, যেখানে আল্লাহর পবিত্রতা এবং মহত্ত্বের প্রশংসা করা হয়। “সুবাহানা” শব্দটির অর্থ “পবিত্রতা” এবং “রাব্বিয়াল আজিম” এর অর্থ “আমার মহান প্রভু” বা “আমার মহান প্রতিপালক”।
রুকুর দোয়ার তাৎপর্য
রুকুর দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর মহানুভবতা ও শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দেই। এটি আমাদের আত্মাকে নম্র করে এবং আল্লাহর নিকট বিনীত হওয়ার শিক্ষা দেয়।
রুকু সম্পর্কিত হাদিস
হাদিস শরিফে রুকুর গুরুত্ব ও এর দোয়া সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। যেমন:
- হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রুকুতে যাওয়ার পর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করো।” (সহিহ বুখারী)
রুকুতে যাওয়ার পর ভুলগুলো
অনেকেই রুকুতে যাওয়ার পর কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন। যেমন:
- তাসবিহ কমপক্ষে তিনবার না পড়া।
- ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার সময় “রাব্বানা লাকাল হামদ” না বলা।
- রুকুতে সঠিকভাবে ঝুঁকতে না পারা।
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: রুকুতে যাওয়ার পর কি পড়তে হয়?
উত্তর: রুকুতে যাওয়ার পর “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” কমপক্ষে তিনবার পড়তে হয়।
প্রশ্ন ২: রুকুতে অতিরিক্ত দোয়া পড়া কি জরুরি?
উত্তর: না, এটি জরুরি নয়, তবে পড়লে সওয়াব বেশি।
প্রশ্ন ৩: ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার সময় কি বলতে হয়?
উত্তর: ইমাম “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলার পর আপনি “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলবেন।
উপসংহার
রুকু নামাজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সঠিকভাবে আদায় করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। রুকুতে যাওয়ার পর “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” পড়া এবং অন্যান্য দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকট নিজেদের নম্রতা প্রকাশ করি। আশা করি, এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে রুকুতে যাওয়ার পর কি পড়তে হয় সে সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔