আরাফার দিনের রোজা, নিয়ত, নিয়ম ও ফজিলত

আরাফার দিন ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটির বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং এই দিনে রোজা রাখা সুন্নত। তাই এই ব্লগ পোস্টে আমরা আরাফার দিনের রোজার নিয়ত, রোজা রাখার সঠিক নিয়ম এবং এই রোজার ফজিলত বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আরাফার দিনের রোজা

আরাফার দিন হজের নবম দিন। এই দিনটি হজ পালনকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা হজ পালন করেন না, তাঁদের জন্য এই দিন রোজা রাখা সুন্নত। এই রোজা পালন করলে বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ এবং ভবিষ্যৎ এক বছরের গুনাহ মাফ হয়, যেমন হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।

রোজার নিয়ত কীভাবে করবেন?

রোজার নিয়ত খুবই সহজ। নিয়ত হলো একটি মনের ইচ্ছা, যা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করা হয়। আরাফার দিনের রোজার জন্য নিয়ত এভাবে করা যেতে পারে:

নিয়ত বাংলা অর্থে: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আরাফার দিনের রোজা রাখছি।”

আরবি নিয়ত: بِننِيّةِ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ لِلّهِ تَعَالَى‬

রোজা রাখার সঠিক নিয়ম

১. নিয়ত করা: রোজা শুরু করার আগে নিয়ত করতে হবে। নিয়ত আল্লাহর প্রতি ইবাদতের ইচ্ছা প্রকাশ করে।

২. সেহরি খাওয়া: ভোরের আগে সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সেহরিতে বরকত রয়েছে।

৩. ইফতার করা: সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে হবে। ইফতার দেরি করা অনুচিত।

৪. রোজার শর্ত পালন করা: রোজার সময় কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকতে হয়, যেমন খাওয়া-দাওয়া, পান করা, মিথ্যা বলা, ঝগড়া করা ইত্যাদি।

আরাফার দিনের রোজার ফজিলত

১. গুনাহ মাফ: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আরাফার দিনের রোজা বিগত এক বছরের গুনাহ এবং ভবিষ্যৎ এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম)

২. আখিরাতের প্রস্তুতি: এই রোজা মানুষের আত্মাকে শুদ্ধ করে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুত করে।

৩. আল্লাহর নৈকট্য: এই দিনে রোজা রাখা আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম।

আরাফার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “আরাফার দিন শয়তান অত্যন্ত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। কারণ এই দিনে আল্লাহ অধিক সংখ্যক বান্দার গুনাহ মাফ করেন।” (মুসনাদ আহমাদ)

আরাফার দিন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আরাফার দিন মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা ইসলামী ইতিহাস ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে গভীরভাবে জড়িত। আরাফার দিনের গুরুত্বের কিছু প্রধান দিক নিচে তুলে ধরা হলো:

হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ

আরাফার দিন হজের মূল অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। হজ পালনকারীরা এই দিনে আরাফাতের ময়দানে জমায়েত হন, যা হজের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এটি এমন একটি দিন যেখানে উপস্থিত হওয়া ছাড়া হজ পূর্ণ হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“হজ হলো আরাফা।” (সহীহ মুসলিম)

মাগফিরাতের দিন

আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য অশেষ রহমত ও মাগফিরাত ঘোষণা করেন। এই দিনে অনেক মানুষকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এটি এমন একটি সময় যখন দোয়া কবুল হয়, এবং আল্লাহ তাআলা নিজের বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া করেন।

রোজার গুরুত্ব

আরাফার দিনে যারা হজে অংশ নিচ্ছেন না, তাদের জন্য রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, এই দিনের রোজা এক বছরের পূর্ববর্তী এবং এক বছরের পরবর্তী গুনাহের কাফফারা হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আরাফার দিনের রোজা অতীত ও ভবিষ্যতের এক বছরের পাপের কাফফারা।” (মুসলিম)

ইসলামের পূর্ণতা ঘোষণার দিন

এই দিনেই আল্লাহ তাআলা কুরআনের একটি বিশেষ আয়াত নাজিল করেছিলেন, যেখানে ইসলামের পূর্ণতা এবং আল্লাহর নিয়ামত সম্পূর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে:
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদা: ৩)

দোয়ার বিশেষ সময়

আরাফার দিনে আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য এটি অত্যন্ত বিশেষ একটি দিন। এই দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আরাফার দিনের দোয়া, দোয়াগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম।” (তিরমিজি)

ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

এই দিনটি কিয়ামতের ময়দান এবং পুনরুত্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আরাফাতের ময়দানে লাখ লাখ মুসলমানের একত্র হওয়া একতা, নম্রতা এবং আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রতীক।

সারমর্ম:
আরাফার দিন আল্লাহর রহমত, ক্ষমা এবং কল্যাণ লাভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হজের সবচেয়ে পবিত্র দিন এবং ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ মর্যাদা রাখে।

আরাফার দিনের রোজা হাদিস

আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে হাদিসে বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এটি হজে অংশগ্রহণ না করা ব্যক্তিদের জন্য সুন্নত রোজা। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরাফার দিনের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন:

হাদিসের বিবরণ:

  • পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ হয়: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
    “আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, আরাফার দিনের রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের (সগীরা) গুনাহের কাফফারা হবে।”
    (সহীহ মুসলিম: 1162)
  • আল্লাহর কাছে এটি অত্যন্ত প্রিয়: আরাফার দিনে রোজা রাখা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি ইবাদত। যারা হজে অংশগ্রহণ করেন না, তাদের জন্য এটি আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ নেকী লাভের একটি সুযোগ।
  • আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের দিন: আরাফার দিন মাগফিরাত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে রোজা রাখা আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম হিসেবে হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।

আরাফার দিনের রোজা শুধু হজে অংশগ্রহণ না করা ব্যক্তিদের জন্য সুন্নত।

এটি সগীরা গুনাহ মাফ করার এবং আল্লাহর কাছে নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম।

উপদেশ:
আরাফার দিনে রোজা রাখার চেষ্টা করা উচিত, যদি শারীরিকভাবে সম্ভব হয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় পুরস্কার ও মাগফিরাত লাভের একটি মহান সুযোগ।

আরাফার রোজা কয়টি

আরাফার রোজা কেবল একটি, যা ইসলামী হিজরি ক্যালেন্ডারের জ্বিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে রাখা হয়। এই দিনটি পবিত্র হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) এটিকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলেছেন।

আরাফার রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে যে, এটি আগের বছরের এবং পরের বছরের ছোট ছোট গুনাহ মাফ করার কারণ হয় (মুসলিম শরিফ)।

আরাফার দিনের রোজা বাংলাদেশে কবে

আরাফার রোজা ইসলামী ক্যালেন্ডারের জিলহজ মাসের ৯ তারিখে রাখা হয়, যা হজের সময় আরাফাত ময়দানে অবস্থানের দিন। বাংলাদেশে এই রোজা সাধারণত সৌদি আরবের একদিন পর পালন করা হয়, কারণ চাঁদ দেখার তারতম্যের কারণে ঈদুল আজহা সৌদি আরবের পরের দিন উদ্‌যাপিত হয়।

সঠিক তারিখ নির্ধারণের জন্য জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করতে হয়। সাধারণত, সৌদি আরবে চাঁদ দেখার পরের দিন থেকে বাংলাদেশে জিলহজ মাস গণনা শুরু হয়। তাই, সৌদি আরবে আরাফার দিন যেদিন হয়, বাংলাদেশে তা পরের দিন হয়।

আরাফার দিনের রোজা কত তারিখে

আরাফার দিনের রোজা ইসলামী ক্যালেন্ডারের জ্বিলহজ মাসের ৯ তারিখে পালিত হয়। এই তারিখ চাঁদ দেখার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা অনুযায়ী হজের দিন এবং আরাফার দিন ঠিক হয়, আর বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে এটি স্থানীয় চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।

২০২5 সালের আরাফার রোজার সঠিক তারিখ জানতে হলে স্থানীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
সাধারণত সৌদি আরবের একদিন পর বাংলাদেশে আরাফার দিন পড়ে। আপনি যদি চাঁদ দেখার খবর জানেন, তাহলে তার থেকে নির্ধারণ করতে পারবেন।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: আরাফার দিন কখন হয়?

উত্তর: আরাফার দিন হজের নবম দিন, যা যিলহজ মাসের ৯ তারিখ।

প্রশ্ন ২: এই রোজা কি হজ পালনকারীদের জন্য ফরজ?

উত্তর: না, হজ পালনকারীদের জন্য এই রোজা রাখা সুন্নত নয়। তবে যাঁরা হজ পালন করেন না, তাঁদের জন্য এটি সুন্নত।

প্রশ্ন ৩: আরাফার দিনের রোজা রাখতে হলে সেহরির শেষ সময় কখন?

উত্তর: ফজরের আজানের আগে সেহরি শেষ করতে হবে।

প্রশ্ন ৪: এই রোজার সঙ্গে কোনো নফল নামাজের সম্পর্ক আছে কি?

উত্তর: আরাফার দিনের রোজা রাখতে হলে নফল নামাজ পড়া অতিরিক্ত সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম হতে পারে, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।

উপসংহার

আরাফার দিনের রোজা মুসলমানদের জন্য বিশেষ বরকতময় ইবাদত। এই দিনে রোজা রেখে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারি এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারি। এই ফজিলতপূর্ণ দিনে রোজা রাখা আমাদের আত্মিক উন্নতি সাধন করে এবং গুনাহ থেকে মুক্তি দেয়।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

Assalamu Alaikum wa Rahmatullah. I am Md. Sanaul Bari. I am a salaried employee by profession and the admin of this website. Apart from my job, I have been writing on my own website for the past 14 years and creating content on my own YouTube and Facebook. Special Note - If there is any mistake in the writing, please forgive me. Thank you.