বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate) অনেকের জন্যই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ব্যবসা করা, গাড়ি কেনা, জমি রেজিস্ট্রেশন, এমনকি ব্যাংক লোন নেওয়ার ক্ষেত্রেও এখন টিন সার্টিফিকেট একটি বাধ্যতামূলক নথি। কিন্তু অনেকের মধ্যেই একটি প্রশ্ন থেকে যায়— টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে?
অনেকে মনে করেন টিন সার্টিফিকেট পেতে হয়তো অনেক টাকা খরচ করতে হবে। আবার কেউ কেউ ধরে নেন এটি করতে হলে কোনো এজেন্টকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। কিন্তু আসলে বিষয়টি অনেক সহজ এবং সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এর রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সামান্য খরচ থাকতে পারে। আজকের এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব— ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগতে পারে, কোথায় আবেদন করবেন, এবং কী কী কাজে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
আরও পড়ুন-টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে
টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে?
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) অনুযায়ী টিন সার্টিফিকেট (e-TIN) করা সম্পূর্ণ ফ্রি। অর্থাৎ অনলাইনে আপনি নিজেই আবেদন করলে এক টাকাও খরচ হবে না।
তবে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ সুবিধার জন্য সার্ভিস এজেন্ট বা সাইবার ক্যাফে ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে সাধারণত ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ নেওয়া হতে পারে। এই চার্জ আসলে সরকারি নয়, বরং আপনার পক্ষ থেকে অনলাইন ফর্ম পূরণ ও প্রিন্ট করার জন্য সার্ভিস প্রদানকারীর নেওয়া ফি।
অর্থাৎ সংক্ষেপে:
-
সরকারি ফি: ফ্রি
-
সাইবার ক্যাফে/এজেন্ট চার্জ: ২০০ – ৫০০ টাকা (সুবিধাভেদে)
টিন সার্টিফিকেট করার জন্য কী কী কাগজপত্র লাগে?
টিন সার্টিফিকেট করতে গেলে কিছু মৌলিক কাগজপত্র লাগবে:
-
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
-
মোবাইল নম্বর (যেটি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন)
-
ইমেইল আইডি (আবশ্যক নয়, তবে থাকা ভালো)
-
বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা
-
ব্যবসা করলে ট্রেড লাইসেন্স নম্বর
টিন সার্টিফিকেট করার ধাপসমূহ
-
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) e-TIN পোর্টালে প্রবেশ করুন।
-
নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করুন।
-
প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন (NID, নাম, ঠিকানা ইত্যাদি)।
-
ফর্ম সাবমিট করার পর একটি e-TIN সার্টিফিকেট অনলাইনে জেনারেট হবে।
-
সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে?
টিন সার্টিফিকেট মূলত করদাতার পরিচয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো:
-
ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা বা লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে
-
জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে
-
গাড়ি রেজিস্ট্রেশনে
-
ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে
-
শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে
-
চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় (কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক)
-
বিদেশে ভ্রমণের সময় ভিসা প্রসেসিং এ
টিন সার্টিফিকেটের সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা:
-
সরকারিভাবে স্বীকৃত করদাতা হিসেবে পরিচয়
-
ব্যাংক ও ব্যবসায়িক সুবিধা পাওয়া সহজ
-
ভবিষ্যতে বড় আর্থিক লেনদেনে কোনো জটিলতা হয় না
অসুবিধা:
-
একবার টিন সার্টিফিকেট করলে আপনাকে নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে (যদিও আয় না থাকলে “শূন্য রিটার্ন” দেওয়া যায়)।
-
যারা টিন সার্টিফিকেট নিয়েছেন কিন্তু আয়কর রিটার্ন জমা দেন না, তাদের জন্য জরিমানা হতে পারে।
২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে কর দিতে হবে কাদের?
অনেকেই মনে করেন টিন সার্টিফিকেট নিলেই কর দিতে হবে। আসলে তা নয়।
কর দিতে হবে কেবল তখনই, যখন আপনার বার্ষিক আয় নির্দিষ্ট ট্যাক্স-ফ্রি সীমার বেশি হবে।
২০২৫-২৬ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত সীমা হলো:
-
ব্যক্তিগত আয়: ৩.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
-
মহিলা ও প্রবীণ (৬৫ বছর বা তার বেশি): ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
-
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষেত্রে: ৪.৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: টিন সার্টিফিকেট করতে সরকারি কোনো টাকা লাগে কি?
না, এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।
প্রশ্ন ২: টিন সার্টিফিকেট করার জন্য কোথায় যেতে হবে?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন ৩: টিন সার্টিফিকেট করলে কি আয়কর দিতে হবে?
না, আপনার আয় যদি নির্দিষ্ট সীমার নিচে হয় তবে আপনাকে কর দিতে হবে না, শুধু শূন্য রিটার্ন জমা দিতে হবে।
প্রশ্ন ৪: সাইবার ক্যাফে বা এজেন্ট কেন টাকা নেয়?
তারা অনলাইনে ফর্ম পূরণ ও সার্টিফিকেট প্রিন্ট করে দেয়ার জন্য সার্ভিস চার্জ নেয়।
প্রশ্ন ৫: টিন সার্টিফিকেট ছাড়া কি জমি বা গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা যায়?
না, বর্তমানে এসব কাজের জন্য টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক।
উপসংহার
সারসংক্ষেপে বলা যায়, টিন সার্টিফিকেট করতে সরকারি কোনো টাকা লাগে না, তবে এজেন্ট বা সাইবার ক্যাফে ব্যবহার করলে সামান্য খরচ হতে পারে। এটি মূলত একটি ফ্রি সরকারি সেবা, যেটি আপনি নিজেই অনলাইনে আবেদন করে পেতে পারেন।
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে প্রায় সব আর্থিক ও ব্যবসায়িক কাজের জন্য টিন সার্টিফিকেট একটি অপরিহার্য নথি হয়ে উঠবে। তাই এখনই এটি করে রাখাই উত্তম।
আরও পড়ুন-টিন সার্টিফিকেটের আসল সুবিধা ও অসুবিধা
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥