বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বাগেরহাট জেলার অন্যতম একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো ষাট গম্বুজ মসজিদ। এই মসজিদটি শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং স্থাপত্যিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বেও সমৃদ্ধ। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই মসজিদটি শত শত বছর ধরে পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ।
❖ নির্মাণ ইতিহাস
ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন খান জাহান আলী (রহঃ) ১৫শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, অর্থাৎ সুলতানি আমলে। তাঁর শাসনামলে তিনি বাগেরহাট অঞ্চলকে এক ইসলামিক শহর হিসেবে গড়ে তোলেন যা সে সময় ‘খলিফাতাবাদ’ নামে পরিচিত ছিল। ষাট গম্বুজ মসজিদ ছিল তাঁর স্থাপিত শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।
এটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল টেরাকোটা ও পোড়ামাটির ইট এবং স্থাপত্যের নান্দনিক সৌন্দর্য এতে ফুটে উঠেছে।
❖ মসজিদের নামকরণ ও ভুল ধারণা
অনেকেই মনে করেন, এই মসজিদে ষাটটি গম্বুজ রয়েছে বলেই এর নাম “ষাট গম্বুজ মসজিদ”। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মসজিদটিতে রয়েছে ৭৭টি গম্বুজ, যার মধ্যে ৭টি মূল গম্বুজ কেন্দ্রে এবং ১১টি সারিতে বিভক্ত ৭টি করে গম্বুজ রয়েছে। তবে ‘ষাট’ সংখ্যাটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে – যা বৃহৎ সংখ্যার ইঙ্গিত দেয়।
❖ স্থাপত্যশৈলী
ষাট গম্বুজ মসজিদের স্থাপত্যশৈলীতে ইসলামী, তুর্কি ও সুলতানি আমলের ছাপ বিদ্যমান। নিচে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
▸ গম্বুজ ও খিলান:
মসজিদটিতে মোট ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে। ৬টি সারিতে ১১টি করে খিলান আছে। এগুলো অভ্যন্তর থেকে সুন্দরভাবে বিন্যস্ত। মূল কিবলার পাশে রয়েছে তিনটি মেহরাব, যা পোড়ামাটির কারুকাজে খচিত।
▸ স্তম্ভ বা পিলার:
মসজিদের ছাদকে ধরে রাখার জন্য রয়েছে মোট ৬০টি শক্তিশালী পিলার বা স্তম্ভ। প্রতিটি স্তম্ভের ওপরের অংশ খিলান আকারে বাঁকানো, যা নির্মাণশৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
▸ প্রবেশদ্বার:
মসজিদের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে একাধিক প্রবেশপথ। মূলত পূর্ব পাশের তিনটি দরজা মূল প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
❖ ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব
এই মসজিদ শুধু একটি উপাসনালয়ই নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও ছিল। তখনকার সময়ে এটি জুমার নামাজ, দ্বীনি শিক্ষা ও বিচারকার্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হতো। খান জাহান আলী (রহঃ) এখান থেকেই জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেন।
❖ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি
১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ষাট গম্বুজ মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি ছিল বাংলাদেশের তৎকালীন কয়েকটি স্থাপনার মধ্যে একটি যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
❖ ভ্রমণ নির্দেশিকা ও উপকারিতা
📍 অবস্থান:
বাগেরহাট জেলার সদর থেকে প্রায় ৬ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।
🚗 যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাটগামী বাস পাওয়া যায়। এছাড়া খুলনা থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় ট্রেনে খুলনা গিয়ে সেখান থেকে বাস বা সিএনজি করেও যাওয়া যায়।
🕰️ খোলার সময়:
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে (নামাজের সময় ছাড়া)।
💳 প্রবেশ মূল্য:
বাংলাদেশি দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট মূল্যে ২০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য আলাদা চার্জ প্রযোজ্য।
❖ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে এই মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষিত হয়। বিগত কয়েক দশকে মসজিদের সংস্কারকাজ চালানো হয়েছে যাতে এর ঐতিহাসিক সৌন্দর্য বজায় থাকে।
60 গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
ষাট গম্বুজ মসজিদ (৬০ গম্বুজ মসজিদ) বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলাতে অবস্থিত। এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত, এবং বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনের কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত।
এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মসজিদ এবং ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান (World Heritage Site)।
🔹 ঠিকানা: ষাট গম্বুজ মসজিদ, মোড়েলগঞ্জ রোড, বাগেরহাট সদর, বাগেরহাট, বাংলাদেশ।
🔹 নির্মাতা: খান জাহান আলী (১৫শ শতকে)
🔹 প্রসিদ্ধি: এর মূল স্থাপত্য কাঠামোয় ৬০টি গম্বুজ না থাকলেও নামটি জনপ্রিয়ভাবে “ষাট গম্বুজ মসজিদ” নামে পরিচিত।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কিভাবে যাব?
ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ থেকে বাসে খুলনা বা সরাসরি বাগেরহাট যাওয়া যায়। খুলনা থেকে লোকাল বাস বা সিএনজিতে করে সহজেই বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদে পৌঁছানো যায়।
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত। এটি খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কত সালে নির্মিত হয়
উত্তর: ষাট গম্বুজ মসজিদ ১৫শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, অর্থাৎ ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের আমলে খান জাহান আলী কর্তৃক নির্মিত হয়। এটি বাংলা অঞ্চলের মুসলিম শাসনামলের একটি অসাধারণ স্থাপত্য নিদর্শন।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কে নির্মাণ করেন কত সালে
উত্তর: ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন মুসলিম শাসক ও বীর সেনানী উলুগ খান জাহান আলী। এটি নির্মাণ করা হয় ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে, সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বলা হয়?
ষাট গম্বুজ মসজিদকে “ষাট গম্বুজ” বলা হলেও এতে প্রকৃতপক্ষে রয়েছে ৭৭টি গম্বুজ এবং ৬০টি খুঁটি (স্তম্ভ)। এই ৬০টি খুঁটির কারণে একে “ষাট গম্বুজ মসজিদ” বলা হয়ে থাকে। এটি মূলত লোকমুখে প্রচলিত একটি নাম, যা স্থাপত্যশৈলীর বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে।
❖ সমাপ্তি
ষাট গম্বুজ মসজিদ কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয় – এটি একটি ইতিহাস, একটি স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন এবং বাঙালি মুসলমানদের ঐতিহ্যের গর্ব। যারা বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ইসলামিক স্থাপত্য ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এটি একবার হলেও ঘুরে দেখার মতো স্থান।
আরও পড়ুন-ইতিহাসের জনক কে?
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔