ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি মধ্যযুগীয় ইসলামিক স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন এবং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। এই মসজিদের নির্মাণশৈলী, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই ব্লগে আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদের ইতিহাস, স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব এবং এর সঙ্গে জড়িত কিছু অজানা তথ্য নিয়ে আলোচনা করব।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ইতিহাস
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মাণকাল
ষাট গম্বুজ মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৫শ শতাব্দীতে, খান জাহান আলীর আমলে। তিনি ছিলেন একজন সুফি সাধক ও মুসলিম শাসক, যিনি বাগেরহাট অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই মসজিদটি তারই নির্দেশনায় নির্মিত হয়েছিল।
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি
১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ষাট গম্বুজ মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। এটি ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাট এর অংশ হিসেবে স্বীকৃত।
নামকরণের রহস্য
মসজিদটিতে প্রকৃতপক্ষে ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে, কিন্তু এটি “ষাট গম্বুজ মসজিদ” নামে পরিচিত। এর পেছনে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে:
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, ৬০টি প্রধান স্তম্ভের কারণে এর নাম ষাট গম্বুজ হয়েছে।
আবার কিছু গবেষক মনে করেন, সংখ্যার দিক থেকে (ষাট) শব্দটি সৌন্দর্য বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
গঠন ও নকশা
গম্বুজ: মসজিদটির নাম “ষাট গম্বুজ” হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে ৮১টি গম্বুজ রয়েছে (সাত সারিতে ১১টি করে)। তবে কেন্দ্রীয় নকশায় ৬০টি গম্বুজের আভাস পাওয়া যায়, তাই এটি এই নামে পরিচিত।
আকার: মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ১৬০ ফুট ও প্রস্থে ১০৮ ফুট। ভিতরে ৬০টি স্তম্ভ রয়েছে, যা ছাদকে ধারণ করে আছে।
নির্মাণশৈলী: ইট ও টেরাকোটা দ্বারা নির্মিত এই মসজিদে বাংলার স্বতন্ত্র স্থাপত্য রীতি ফুটে উঠেছে। গম্বুজগুলো তুর্কি-পারস্য ও বাংলার স্থানীয় শৈলীর মিশ্রণে তৈরি।
অলংকরণ: মসজিদের গায়ে ফুল, লতাপাতা ও জ্যামিতিক নকশা খোদাই করা আছে, যা তখনকার শিল্পকলার উৎকর্ষকে তুলে ধরে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
স্থাপত্য শৈলীর মিশ্রণ:
এই মসজিদে তুর্কি-পারস্য, বাংলার স্থানীয় ও হিন্দু স্থাপত্য রীতির সমন্বয় দেখা যায়, যা মধ্যযুগীয় বাংলার বহুসংস্কৃতির সহাবস্থানের প্রতীক।
গম্বুজ, স্তম্ভ ও টেরাকোটা নকশায় বাংলার নিজস্ব শিল্পরীতি ফুটে উঠেছে।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক:
এটি বাগেরহাটের “মসজিদের শহর”-এর কেন্দ্রবিন্দু, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পেয়েছে।
মধ্যযুগীয় বাংলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাস বুঝতে এই মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
জাতীয় পরিচয় ও গর্বের প্রতীক:
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের মুসলিম ঐতিহ্য ও স্থাপত্যকলার অহংকার।
এটি পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে এবং দেশি-বিদেশি গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয় (গবেষণার বিষয়)।
সংক্ষেপে:
সাংস্কৃতিক দিক: স্থাপত্যের সমন্বয়, বিশ্ব ঐতিহ্য, জাতীয় গর্বের প্রতীক।
এই মসজিদ সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে পারি।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বলা হয়
ষাট গম্বুজ মসজিদ নামকরণের পিছনে প্রধান কারণ হলো মসজিদটির ৬০টি গম্বুজ (গম্বুজ হলো গোলাকার বা অর্ধগোলাকার ছাদ)। যদিও প্রকৃতপক্ষে মসজিদে ৮১টি গম্বুজ রয়েছে (ছাদে ৭৭টি + চার কোণের ৪টি মিনার সহ), তবুও এটি (ষাট গম্বুজ) নামে পরিচিত।
নামকরণের সম্ভাব্য কারণ:
প্রধান গম্বুজের সংখ্যা: মূল ছাদে ৭৭টি গম্বুজ থাকলেও, মাঝের বড় গম্বুজকে কেন্দ্র করে চারপাশে ৬০টি গম্বুজ সুসজ্জিতভাবে দেখা যায়, যা নামের উৎস হতে পারে।
লোকপ্রচলিত নাম: স্থানীয়ভাবে এটি “ষাট গম্বুজ” নামে পরিচিতি পেয়েছে, যা সময়ের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য: গম্বুজগুলোর সারিবদ্ধ সৌন্দর্য ষাট সংখ্যাকে প্রাধান্য দেয়।
মসজিদের বিশেষত্ব:
এটি বাংলাদেশের বাগেরহাটে অবস্থিত এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
১৫শ শতাব্দীতে খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন।
এর স্থাপত্যে টেরাকোটা অলংকরণ ও ইসলামিক নকশা দেখা যায়।
সুতরাং, মূলত জনপ্রিয় নাম ও গম্বুজের সমাহারের কারণে এটি “ষাট গম্বুজ মসজিদ” নামে পরিচিত, যদিও প্রকৃত গম্বুজ সংখ্যা বেশি।
বাগেরহাটকে কেন মসজিদের শহর বলা হয়?
বাগেরহাটকে মসজিদের শহর বলা হয় প্রধানত এখানে অসংখ্য প্রাচীন মসজিদ ও ইসলামিক স্থাপনার উপস্থিতির কারণে, বিশেষ করে ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ-এর জন্য। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় স্থান।
ষাটগম্বুজ মসজিদ:
এটি বাগেরহাটের সবচেয়ে বিখ্যাত মসজিদ, যা ১৫শ শতাব্দীতে খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন।
নাম “ষাটগম্বুজ” হলেও প্রকৃত গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি (ছাদে ৭৭টি + ৪ কোণের চারটি)। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
খান জাহান আলীর স্থাপত্য:
সুফি সাধক খান জাহান আলী বাগেরহাটে একটি পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলেন, যেখানে ৩৬০টি মসজিদ ও অনেক পানিকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল।
বর্তমানে ৫০টির বেশি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যেমন নয়গম্বুজ মসজিদ, সিংগাইর মসজিদ, বিবি বেগনী মসজিদ ইত্যাদি।
ইসলামিক ঐতিহ্য:
মধ্যযুগে বাগেরহাট ছিল ইসলাম প্রচারের একটি কেন্দ্র। মসজিদগুলো শুধু ধর্মীয় স্থানই নয়, স্থাপত্য শিল্পেরও নিদর্শন।
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি:
১৯৮৫ সালে “ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাট” নামে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
ষাট গম্বুজ মসজিদ শুধু একটি প্রাচীন স্থাপত্য নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ধর্ম ও সংস্কৃতির এক অনন্য স্মারক। এর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নিম্নরূপ:
ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু:
১৫শ শতাব্দীতে খান জাহান আলী এই মসজিদ নির্মাণ করে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলায় ইসলামের প্রসার ঘটান।
এটি শুধু নামাজের স্থান ছিল না, বরং একটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতো, যেখানে ইসলামিক জ্ঞান ও সুফিবাদ প্রচারিত হত।
আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
খান জাহান আলী ছিলেন একজন সুফি সাধক, তাই মসজিদটি তার আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী।
স্থানীয় জনগণের কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান, এবং অনেকেই এখানে প্রার্থনা করে বরকত লাভের আশা করেন।
ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা:
মুসলিম শাসনামলে নির্মিত এটি বাংলার অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ, যা ইসলামিক স্থাপত্যের বিকাশকে চিহ্নিত করে।
সামগ্রিক প্রভাব:
ষাট গম্বুজ মসজিদ কেবল একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, এটি বাংলার সাংস্কৃতিক বিবর্তন, শিল্প-ইতিহাস এবং বহুসংস্কৃতির সহাবস্থানের একটি জীবন্ত নিদর্শন। এটি আমাদের অতীত গৌরবকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের আবশ্যকতা তুলে ধরে।
সংক্ষেপে:
ধর্মীয় দিক: ইসলামের প্রচার, সুফিবাদের কেন্দ্র, ধর্মীয় শিক্ষার স্থান।
এই মসজিদ সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে পারি।
ষাট গম্বুজ মসজিদের বর্তমান অবস্থা ও পর্যটন
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক নিদর্শন, যা বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত এবং মুঘল আমলের পূর্ববর্তী বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমলের (১৫শ শতাব্দী) গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
বর্তমান অবস্থা
সংরক্ষণ: মসজিদটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং এর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত করা হয়। অবকাঠামো মূলত অক্ষত থাকলেও সময়ের সাথে প্রাকৃতিক ক্ষয় ও পরিধানের চিহ্ন দেখা যায়।
গম্বুজ সংখ্যা: নাম “ষাট গম্বুজ” হলেও প্রকৃত গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি (ছোট-বড় মিলিয়ে), যা অনন্য স্থাপত্য শৈলীর পরিচয় দেয়।
অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা: মসজিদের ভেতরে বিশাল প্রার্থনা কক্ষ, সুউচ্চ স্তম্ভ এবং ইসলামিক নকশাখচিত দেওয়াল রয়েছে।
পর্যটন
দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত: মসজিদটি সারা বছর পর্যটক ও ধর্মীয় দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। প্রবেশে ন্যূনতম ফি লাগে (স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকের জন্য আলাদা)।
ভ্রমণের সময়: শীতকাল (নভেম্বর–মার্চ) ভ্রমণের জন্য আদর্শ, কারণ গরমে এখানে তাপমাত্রা বেশি থাকে।
আকর্ষণ:মসজিদের চারপাশে সবুজ উদ্যান ও জলাশয় রয়েছে, যা ফটোগ্রাফির জন্য জনপ্রিয়।
বাগেরহাটে অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান যেমন খান জাহান আলীর মাজার এবং নয় গম্বুজ মসজিদও ঘুরে দেখা যায়।
স্থানীয় গাইডদের কাছ থেকে মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।
ষাট গম্বুজ মসজিদে যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এই মসজিদে যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা নিচে দেওয়া হলো:
যাতায়াত ব্যবস্থা:
ঢাকা থেকে বাগেরহাট:
বাস: ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে বাস পাওয়া যায় (যেমন: হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সাকুরা, ঈগল)। ভাড়া ৫০০-৮০০ টাকা। সময় ৬-৮ ঘণ্টা।
ট্রেন: ঢাকা থেকে খুলনা গামী ট্রেনে (সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস) রূপসা বা খুলনা নেমে সেখান থেকে বাস/অটোতে বাগেরহাট যাওয়া যায়।
প্রাইভেট কার/মাইক্রোবাস: ঢাকা থেকে বাগেরহাটের দূরত্ব প্রায় ৩২০ কিমি, সময় ৭-৮ ঘণ্টা।
খুলনা থেকে বাগেরহাট:
বাস বা সিএনজি অটোরিকশায় ৪০-৫০ কিমি, সময় ১-১.৫ ঘণ্টা। ভাড়া ১০০-২০০ টাকা।
বাগেরহাট শহর থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদ:
অটোরিকশা বা রিকশায় যাওয়া যায়, দূরত্ব প্রায় ৩.৫ কিমি। ভাড়া ৫০-১০০ টাকা।
থাকার ব্যবস্থা:
বাগেরহাটে সাধারণ মানের হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। কিছু বিকল্প:
হোটেল রূপসী বাংলা (বাগেরহাট সদর) – মাঝারি মানের, ভাড়া ৮০০-১৫০০ টাকা।
হোটেল সিটি ইন – বেসিক সুবিধা, ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা।
খুলনাতে থাকার ব্যবস্থা (যদি বাগেরহাটে ভালো অপশন না মেলে):
হোটেল টাইগার গার্ডেন (খুলনা)
হোটেল ক্যাসেল সালাম (খুলনা)
পরিদর্শনের সময় ও টিকেট:
সময়: সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (শুক্রবারে জুমার নামাজের সময় বন্ধ থাকে)।
টিকেট: বাংলাদেশি দর্শকদের ২০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের ২০০ টাকা।
পরামর্শ:
শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) ভ্রমণের জন্য ভালো সময়।
মসজিদের আশেপাশে মোঘল আমলের অন্যান্য স্থাপনাও দেখতে পারেন (যেমন: খান জাহান আলীর মাজার, নয় গম্বুজ মসজিদ)।
আরও তথ্যের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আরো-ইতিহাসের জনক কে?
ষাট গম্বুজ মসজিদ দর্শনার্থীদের জন্য কিছু নিয়ম
ষাট গম্বুজ মসজিদ (বাগেরহাট, বাংলাদেশ) একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান হওয়ায় দর্শনার্থীদের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা আবশ্যক।
সাধারণ নিয়ম:
সময়সূচী:
মসজিদ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে (নির্দিষ্ট সময় রমজান বা অন্যান্য উপলক্ষ্যে পরিবর্তিত হতে পারে)।
জুমার নামাজের সমায় দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ বা সীমিত হতে পারে।
পোশাকের নিয়ম:
মহিলাদের জন্য: মাথা ঢাকা ও শরীর ঢেকে রাখা (স্কার্ফ ও লম্বা পোশাক)।
পুরুষদের জন্য: হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা পোশাক (প্যান্ট বা লুঙ্গি)।
অশালীন বা অতিরিক্ত টাইট পোশাক পরা নিষেধ।
আচরণ:
মসজিদের ভিতরে উচ্চস্বরে কথা বলা, হাসাহাসি বা শোরগোল করা নিষেধ।
নামাজরত ব্যক্তিদের বিরক্ত করা যাবে না।
ধূমপান, খাওয়া বা ময়লা ফেলা নিষিদ্ধ।
ফটোগ্রাফি:
সাধারণত ছবি তোলার অনুমতি আছে, নামাজের সময় বা নির্দিষ্ট স্থানে নিষেধ হতে পারে।
ড্রোন বা প্রফেশনাল ক্যামেরার জন্য বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন।
অন্যান্য:
জুতা মসজিদের প্রবেশদ্বারে খুলে রাখতে হয়।
শিশুদের সাথে আসলে তাদের শিষ্টাচার মেনে চলতে নির্দেশ দিন।
ধর্মীয় সম্মান:
এটি একটি সক্রিয় মসজিদ, তাই অমুসলিম দর্শনার্থীদেরও ধর্মীয় রীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো প্রয়োজন।
কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা কার্যক্রমে অংশ নিতে হলে আগে জিজ্ঞাসা করুন।
পরামর্শ:
ভ্রমণের আগে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সময়সূচী ও নিয়ম যাচাই করুন।
ষাট গম্বুজ মসজিদ নিয়ে উক্তি
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক marvel, যা মুসলিম শিল্পকলার এক অনন্য নিদর্শন। এখানে এই মসজিদ সম্পর্কে ২০টি উক্তি দেওয়া হলো:
ষাট গম্বুজ মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী।
এই মসজিদের গম্বুজগুলো যেন আকাশের দিকে প্রার্থনায় মগ্ন এক ঝাঁক সাদা পাখি।
ষাট গম্বুজ মসজিদের স্থাপত্য দেখলে বোঝা যায়, কী পরিমাণ শিল্পবোধ ও শ্রম দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল।
এটি শুধু ইট–পাথরের নির্মাণ নয়, এটি একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রমাণ করে, ইসলামী স্থাপত্যে বাংলার নিজস্ব একটি স্বকীয়তা আছে।
প্রতিটি গম্বুজ যেন এক একটি ইতিহাসের পাতা, যা শতাব্দী ধরে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে আছে।
এই মসজিদের নকশায় প্রকৃতি ও ধর্মের মেলবন্ধন দেখা যায়।
ষাট গম্বুজ মসজিদের সৌন্দর্য শুধু চোখে নয়, হৃদয়েও গভীর ছাপ রাখে।
এটি শুধু মুসলমানদের নয়, সমগ্র মানবজাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।
প্রাচীন এই মসজিদ আজও দাঁড়িয়ে আছে, সময়ের সাক্ষী হয়ে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের নির্মাণশৈলী দেখলে মনে হয়, যেন শিল্পী আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এঁকেছিলেন এক মহাকাব্য।
এই মসজিদের প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে ইতিহাসের গল্প।
ষাট গম্বুজ মসজিদ শান্তির প্রতীক, যা যুগ যুগ ধরে মানুষকে শান্তির বার্তা দিয়ে আসছে।
এখানে এসে মনে হয়, সময় যেন থমকে দাঁড়িয়েছে শতাব্দী আগের এক সুন্দর মুহূর্তে।
এই মসজিদ প্রমাণ করে, স্থাপত্য কেবল ব্যবহারিক নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক অভিব্যক্তিও বটে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের মতো স্থাপনা কেবল দেখার জন্য নয়, অনুভব করার জন্য।
প্রতিটি গম্বুজ যেন এক একটি মিনার, যা মানুষকে ডাকে ইবাদত ও শান্তির দিকে।
এই মসজিদের দেওয়ালে যেন লেগে আছে শত শত বছরের ধ্যানমগ্নতা।
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলার গৌরব, এটি আমাদের অহংকার।
এই মসজিদ শুধু অতীত নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাটে অবস্থিত এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা পেয়েছে। এটি দেখতে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমী মানুষ ভিড় জমান।
প্রশ্নোত্তর বিভাগ (FAQ)
ষাট গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: এটি বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত।
মসজিদটি কে নির্মাণ করেছিলেন?
উত্তর: খান জাহান আলীর নির্দেশনায় এটি নির্মিত হয়।
মসজিদে প্রকৃত গম্বুজ সংখ্যা কত?
উত্তর: ৭৭টি, কিন্তু এটি ষাট গম্বুজ নামে পরিচিত।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি পায়?
উত্তর: ১৯৮৫ সালে।
উপসংহার
ষাট গম্বুজ মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, এটি বাংলাদেশের গৌরব ও ইতিহাসের প্রতীক। এর নির্মাণশৈলী, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সাংস্কৃতিক অবদান এটিকে একটি অনন্য ঐতিহ্যবাহী করে তুলেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক ও পর্যটন দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি অমূল্য সম্পদ।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔