পুরনো ১ টাকার কয়েন নিয়ে তুমুল আলোচনা! আসলেই কি কোটি টাকা দাম?

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে—“আপনার কাছে যদি পুরনো ১ টাকার কয়েন থাকে, তবে আপনি পেতে পারেন ৯ কোটি টাকা পর্যন্ত পুরস্কার!”শোনার পর অনেকেই অবাক! কেউ খোঁজছেন সেই পুরনো কয়েন, কেউ আবার বিভিন্ন গ্রুপে বিক্রির পোস্ট দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে কি সত্যিই এমন কোনো পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে?

চলুন, এই আলোচিত কয়েন এবং এর পেছনের সত্যটা ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন-বাংলাদেশের জরুরি ফোন নাম্বার ২০২৫

পুরনো ১ টাকার কয়েন আসলে কোনটি?

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো অ্যালুমিনিয়াম ও স্টেইনলেস স্টিলের ১ টাকার কয়েন চালু করে ১৯৭৪ সালে।
এই কয়েনের এক পাশে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক—ধানের শীষ, নদীর পানি ও পদ্মফুলের চিত্র, আর অপর পাশে লেখা ছিল “বাংলাদেশ” ও “১ টাকা”।
কয়েক বছরের মধ্যেই এই কয়েন ধীরে ধীরে লেনদেন থেকে উঠে যায়, কারণ কাগজের নোট ব্যবহারে তা অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিল।

কেন এই কয়েন আবার ভাইরাল হলো?

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে অনেক পেজে এমন কিছু পোস্ট দেখা যাচ্ছে—

“পুরনো ১ টাকার কয়েন বিক্রি করুন, পাবেন ৯ কোটি টাকা!”
“এই কয়েন থাকলে আপনি ভাগ্যবান!”

এই ধরণের পোস্টে সাধারণত কিছু আকর্ষণীয় ছবি দেখানো হয় এবং মন্তব্যে বা ইনবক্সে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব পেজের উদ্দেশ্য হলো ক্লিকবেইট (Clickbait) — অর্থাৎ বেশি ভিউ ও লাইক পাওয়া, যাতে বিজ্ঞাপন আয় বৃদ্ধি পায়।

আসল সত্যতা কী বলে বাংলাদেশ ব্যাংক?

বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি তথ্যানুসারে —

“বর্তমানে কোনো পুরনো কয়েন বা নোটের জন্য সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের পুরস্কার বা বিশেষ মূল্য ঘোষণা করা হয়নি।”

অর্থাৎ, পুরনো ১ টাকার কয়েনের “৯ কোটি টাকার মূল্য” কথাটি সম্পূর্ণ গুজব ও মিথ্যা তথ্য।
তবে এই কয়েনটি যদি সংগ্রাহক বা নুমিসমেটিক (Numismatic) বাজারে পাওয়া যায়, তাহলে কিছু মূল্য হতে পারে—কিন্তু তা ৯ কোটি নয়, বরং ২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে (কয়েনের অবস্থা অনুযায়ী)।

তাহলে কয়েনের আসল মূল্য কোথায় জানা যাবে?

যদি আপনি সত্যিই জানতে চান আপনার পুরনো কয়েনের কোনো সংগ্রাহক মূল্য আছে কি না, তাহলে নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারেন—

  1. বাংলাদেশ নুমিসমেটিক সোসাইটি (Bangladesh Numismatic Society)-এর সাথে যোগাযোগ করুন।

  2. eBay, OLX, বা Numista.com এর মতো আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে ওই কয়েনের ধরন ও অবস্থা অনুযায়ী বাজারদর দেখে নিন।

  3. স্থানীয় কোনো সংগ্রাহক ক্লাব বা প্রাচীন জিনিসপত্রের দোকানের সাথে কথা বলুন।

কিন্তু কোনোভাবেই ফেসবুক বা অচেনা পেজের মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করবেন না—এতে প্রতারণার সম্ভাবনা থাকে।

প্রতারক চক্র থেকে সাবধান থাকুন!

এখন অনেকেই এই সুযোগে “পুরনো কয়েন কিনব” বলে ইনবক্সে যোগাযোগ করে বিকাশ বা নগদে আগাম টাকা চেয়ে নেয়।
তারা বলে, “আপনার কয়েন যাচাই করতে ফি লাগবে” — এরপর টাকা নিয়ে তারা উধাও!
সুতরাং, মনে রাখুন —

“সরকার বা কোনো ব্যাংক কখনও পুরনো কয়েন কিনতে আগাম টাকা চায় না।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

“এই ধরনের গুজব সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। পুরনো কয়েন বা নোটের কিছু ঐতিহাসিক মূল্য থাকতে পারে, কিন্তু তা কোটি টাকায় পৌঁছানোর মতো নয়।”

তাদের মতে, ফেসবুকের এসব পোস্ট সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক, এবং মানুষকে সচেতন হওয়া জরুরি।

শেষ কথা

পুরনো ১ টাকার কয়েন আমাদের দেশের ইতিহাস ও স্মৃতির অংশ—এটি সংগ্রহযোগ্য হতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই কোটি টাকার সম্পদ নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এইসব “৯ কোটি টাকার পুরস্কার” খবরগুলো সম্পূর্ণ গুজব, তাই প্রতারক চক্রের ফাঁদে না পড়ে সতর্ক থাকুন।

আপনার কাছে যদি এমন কোনো পুরনো কয়েন থাকে, তা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে—কিন্তু তা দিয়ে রাতারাতি ধনী হওয়া সম্ভব নয়!

আরও পড়ুন-মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।