পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট-সত্য না গুজব?(আপডেট)

বাংলাদেশে পাসপোর্ট করতে গেলে “পুলিশ ভেরিফিকেশন” নামটি আমরা সবাই একবার না একবার শুনেছি। আবেদন করার পর পুলিশ এসে বাসায় খোঁজ নেয়, তথ্য যাচাই করে, তারপরই আবেদন অনুমোদনের ধাপ শুরু হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে—

“এখন আর পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না।”

অনেকে বলছেন, সরকার নাকি নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিল করেছে।
কিন্তু সত্যি কি তাই?
চলুন, যাচাই করি “পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট” — সত্য না গুজব?

আরও পড়ুন-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?সর্বশেষ ফি কত?

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন আসলে কী?

পুলিশ ভেরিফিকেশন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে আবেদনকারীর ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), নাগরিকত্ব ও পরিচয় যাচাই করা হয়।
এর মূল উদ্দেশ্য হলো —
✅ আবেদনকারী বাংলাদেশের নাগরিক কিনা তা নিশ্চিত করা
✅ কোনো অপরাধমূলক বা আইনি জটিলতা আছে কি না তা যাচাই করা
✅ পাসপোর্টের অপব্যবহার ঠেকানো

অতীতে এই যাচাই প্রক্রিয়া হাতে হাতে করা হতো, ফলে আবেদন বিলম্বিত হত, আবার অনেক ক্ষেত্রে দালাল বা ঘুষের ঝুঁকিও থেকে যেত।

নতুন ডিজিটাল ই-পাসপোর্টের যুগ

২০২৫ সালে বাংলাদেশ এখন ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে আবেদন থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত বেশিরভাগ ধাপই ডিজিটাল হয়েছে।
এখন আবেদনকারী অনলাইনে তথ্য পূরণ করে, ফি জমা দিয়ে, নির্দিষ্ট অফিসে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করতে পারেন—দালাল ছাড়াই।

👉 এই ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমেই “পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট” কথাটি অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি করছে।

কারণ বাস্তবে “পুলিশ ভেরিফিকেশন বাদ দেওয়া হয়নি”, বরং এটি এখন স্বয়ংক্রিয় (Automated Verification System) হিসেবে ইন্টিগ্রেট হয়েছে।

কীভাবে চলছে নতুন ভেরিফিকেশন সিস্টেম

আগে পুলিশের আলাদা টিম আবেদনকারীর বাড়িতে গিয়ে তথ্য যাচাই করত। এখন তা অনেক ক্ষেত্রেই ডিজিটাল ডাটাবেসের মাধ্যমে যাচাই হচ্ছে।
নতুন সিস্টেমে যা হচ্ছে:

  1. আবেদনকারীর NID, জন্ম নিবন্ধন, ও ঠিকানার তথ্য জাতীয় ডাটাবেস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করা হচ্ছে।

  2. যদি কোনো তথ্যের অসঙ্গতি না থাকে, তাহলে পুলিশকে সরাসরি বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

  3. তবে যদি তথ্য অস্পষ্ট বা সন্দেহজনক হয়, সেক্ষেত্রে স্থানীয় থানার পুলিশ যাচাই করতে যেতে পারে।

অর্থাৎ —

পুলিশ ভেরিফিকেশন বাদ যায়নি, বরং এটি এখন ডিজিটালভাবে দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে।

কোন ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন নেই

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে —

  • বিদ্যমান ই-পাসপোর্ট নবায়ন (Renewal):
    যদি আপনার আগের ই-পাসপোর্ট থাকে এবং সেটি নবায়ন করতে চান, তাহলে পুনরায় পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না।

  • বিদেশে অবস্থানরত আবেদনকারী:
    প্রবাসে যারা দূতাবাসের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন করেন, তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পুলিশ যাচাই প্রয়োজন হয় না।

  • সরকারি কর্মকর্তা বা ডিপ্লোম্যাট:
    এই ক্যাটাগরিতে নির্দিষ্ট আইনি অনুমোদনের ভিত্তিতে পুলিশ যাচাই ছাড়াই পাসপোর্ট ইস্যু হয়।

গুজব কেন ছড়িয়েছে

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই পোস্ট করেছেন —
“এখন থেকে পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না।”

কিন্তু এই তথ্যের উৎস যাচাই করলে দেখা যায়, এটি একটি ভুল ব্যাখ্যা।
সরকার পুলিশ ভেরিফিকেশন পুরোপুরি বাতিল করেনি, বরং প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় করেছে যাতে আবেদনকারীকে অপেক্ষা করতে না হয়।

এই ডিজিটাল ভেরিফিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে আবেদনকারীর তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভার (NID Server) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাটাবেস থেকে যাচাই হয়।
ফলে আর বাড়িতে গিয়ে শারীরিক যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে না—এই কারণেই অনেকে ধরে নিয়েছেন ভেরিফিকেশন বাতিল হয়েছে।

নতুন সিস্টেমের সুবিধা

নতুন ই-পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে মিলছে বেশ কিছু বড় সুবিধা—

সময় বাঁচে: আগে যেখানে ভেরিফিকেশনে ২–৩ সপ্তাহ লাগত, এখন তা কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয়।
ঝামেলামুক্ত আবেদন: পুলিশ আসবে কি না—এই দুশ্চিন্তা থাকে না।
দালাল ও ঘুষ কমে গেছে: সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেমে দেখা যায়।
নিরাপদ তথ্য যাচাই: জাতীয় ডাটাবেসের সাথে সরাসরি সংযোগ থাকায় ভুলের সম্ভাবনা কমে।

২০২৫-২৬ সালের সর্বশেষ আপডেট

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের “পাসপোর্ট ও অভিবাসন অধিদপ্তর (DIP)” জানিয়েছে—

“যেসব আবেদনকারীর তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেসের সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়, তাদের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন নেই। তবে কোনো অসঙ্গতি থাকলে যাচাই বাধ্যতামূলক।”

অর্থাৎ, এখন পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া “ডেটা-বেইজড সিস্টেমে” পরিচালিত হচ্ছে।

প্রশ্নোত্তর

❓ প্রশ্ন ১: তাহলে কি এখন সবাই পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পাবে?
👉 না। যাদের তথ্য স্পষ্ট ও ডাটাবেসে মিলে যায়, শুধু তারাই ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট পাবে।

❓ প্রশ্ন ২: কিভাবে বুঝব আমার পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন কি না?
👉 আবেদন জমা দেওয়ার পর SMS বা ইমেইল মাধ্যমে জানানো হবে আপনার ফাইল ভেরিফিকেশনে গেছে কি না।

❓ প্রশ্ন ৩: ভেরিফিকেশন বাদ পড়লে সময় কতটা কমবে?
👉 আগে যেখানে ২১–২৫ দিন লাগত, এখন ৭–১০ দিনেই পাসপোর্ট ডেলিভারি সম্ভব।

উপসংহার

পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট— এটি পুরোপুরি গুজব নয়, আবার পুরোপুরি সত্যও নয়।
আসলে, এখন বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়।
যাদের তথ্য পরিষ্কার ও সঠিক, তাদের জন্য কোনো অফিসারকে বাসায় যেতে হয় না।

ডিজিটাল বাংলাদেশের এই নতুন পদক্ষেপ শুধু আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করেনি, বরং সাধারণ নাগরিকদের সময়, অর্থ ও হয়রানি — তিনটিই কমিয়ে এনেছে।
তাই ভুল তথ্য নয়, সঠিক উৎস থেকে তথ্য জেনে অনলাইনে আবেদন করুন এবং স্মার্ট নাগরিক হিসেবে নিজের ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন ঘরে বসেই।

আরও পড়ুন-১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।