পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে

বর্তমানে বিদেশ ভ্রমণ, চাকরি বা শিক্ষার জন্য পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য নথি। আগে পাসপোর্ট করতে জটিল কাগজপত্র আর দীর্ঘ সময় লাগত, কিন্তু এখন বাংলাদেশ সরকার প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ করেছে।
২০২৫ সালে নতুন নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য আর পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার নেই। অর্থাৎ, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও সঠিক তথ্য থাকলেই ঘরে বসে সহজে অনলাইনে আবেদন করা যায়।

আরও পড়ুন-১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

পাসপোর্ট করতে যা যা লাগে ২০২৫

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক নিম্নলিখিত ডকুমেন্ট দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন —

  1. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (১৮ বছরের নিচে হলে)

  2. জন্ম নিবন্ধন সনদ ও অভিভাবকের NID (অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে)

  3. আবেদনকারীর সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে)

  4. পুরনো পাসপোর্ট থাকলে সেটির কপি

  5. ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন বিদ্যুৎ বিল/টেলিফোন বিল/ভাড়ার চুক্তিপত্র)

  6. অনলাইন আবেদন ফর্ম প্রিন্ট কপি

  7. ফি জমার রসিদ (চালান কপি)

🆕 ২০২৫ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী:
আবেদনকারীর তথ্য ও ঠিকানা জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে মিল থাকলে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন নেই। এটি বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী চালু হয়েছে।

পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৫

বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় —
১. ই-পাসপোর্ট (e-Passport)
২. এমআরপি পাসপোর্ট (MRP)

তবে এখন নতুন আবেদনকারীদের জন্য মূলত ই-পাসপোর্টই প্রদান করা হচ্ছে

পাসপোর্ট ধরণ মেয়াদ পৃষ্ঠা সংখ্যা ডেলিভারি টাইপ ফি (টাকা)
সাধারণ ই-পাসপোর্ট ৫ বছর ৪৮ পৃষ্ঠা সাধারণ (২১ দিন) ৳৪,০২৫
সাধারণ ই-পাসপোর্ট ৫ বছর ৪৮ পৃষ্ঠা জরুরি (৭ দিন) ৳৬,৯০০
সাধারণ ই-পাসপোর্ট ৫ বছর ৪৮ পৃষ্ঠা অতি জরুরি (২ দিন) ৳৯,২০০
সাধারণ ই-পাসপোর্ট ১০ বছর ৬৪ পৃষ্ঠা সাধারণ ৳৬,৯০০
সাধারণ ই-পাসপোর্ট ১০ বছর ৬৪ পৃষ্ঠা জরুরি ৳৯,২০০
সাধারণ ই-পাসপোর্ট ১০ বছর ৬৪ পৃষ্ঠা অতি জরুরি ৳১২,৬৫০

💡 নোট: সরকারি বা প্রবাসী আবেদনকারীদের জন্য কিছু ক্ষেত্রে আলাদা চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে। ফি অনলাইনে পাসপোর্ট পেমেন্ট গেটওয়ে বা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেওয়া যায়।

অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম

পাসপোর্টের আবেদন করতে এখন আর অফিসে লম্বা লাইন নয় — ঘরে বসেই করা যায় 👇

  1. অফিসিয়াল সাইটে যান 👉 www.epassport.gov.bd

  2. “Apply Online” বাটনে ক্লিক করে নতুন একাউন্ট খুলুন

  3. আবেদন ফর্ম পূরণ করুন

  4. ছবি ও সিগনেচার আপলোড করুন

  5. ফি জমা দিন (অনলাইন বা ব্যাংকে)

  6. নির্ধারিত অফিসে সাক্ষাতের তারিখ বেছে নিন

  7. নির্ধারিত দিনে বায়োমেট্রিক ও ছবি তোলার পর আবেদন সম্পন্ন হবে

পাসপোর্ট হাতে পেতে কতদিন লাগে

  • সাধারণ আবেদন: ১৫–২১ কার্যদিবস।

  • জরুরি আবেদন: ৫–৭ কার্যদিবস।

  • অতি জরুরি আবেদন: ২–৩ কার্যদিবস।

পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করবেন যেভাবে

বর্তমানে অনলাইনে ঘরে বসেই আপনি সহজে জানতে পারবেন আপনার পাসপোর্ট হয়েছে কিনা। এজন্য শুধু www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে “Track Application” অপশনে ক্লিক করুন। সেখানে আপনার Application ID বা Delivery Slip Number দিয়ে সার্চ করলেই পাসপোর্টের স্ট্যাটাস দেখা যাবে।

এই সেবাটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং রিয়েল-টাইম আপডেট দেয়। পাসপোর্ট “Printed”, “Ready for Delivery” বা “In Process” কোন অবস্থায় আছে, তা এখান থেকেই সহজে দেখা যায়। ফলে অফিসে না গিয়েই আপনি জানতে পারবেন কখন পাসপোর্ট সংগ্রহ করা যাবে।

পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক করবেন যেভাবে

ভিসা চেক করার জন্য এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো সংশ্লিষ্ট দেশের অফিসিয়াল ইমিগ্রেশন ও ভিসা চেকিং ওয়েবসাইটে সরাসরি প্রবেশ করা। উদাহরণস্বরূপ, UAE, Malaysia, Qatar, Saudi Arabia বা Singapore-এর নিজস্ব সাইটে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা স্ট্যাটাস যাচাই করা যায়।

আপনার পাসপোর্ট নাম্বার এবং জন্মতারিখ দিয়ে সার্চ করলে দেখা যায় ভিসা ইস্যু হয়েছে কিনা, কত দিনের জন্য, এবং ভিসার মেয়াদ কতদিন পর্যন্ত। মনে রাখবেন, ফেসবুক বা তৃতীয় পক্ষের সাইটে কখনও ভিসা চেক করবেন না — এতে তথ্য চুরি বা প্রতারণার ঝুঁকি থাকে।

পাসপোর্ট ফি (বাংলাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী)

বাংলাদেশে বর্তমানে ই-পাসপোর্টের ফি আবেদনকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠা পাসপোর্টের ফি ৪,০২৫ টাকা, আর ১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পৃষ্ঠা পাসপোর্টের ফি ৬,৯০০ টাকা থেকে শুরু হয়। জরুরি বা অতি জরুরি ডেলিভারির ক্ষেত্রে এই ফি যথাক্রমে ৯,২০০ ও ১২,৬৫০ টাকা পর্যন্ত যেতে পারে।

ফি জমা দেওয়া যায় অনলাইনে সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ে, মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন bKash, Rocket) বা ব্যাংক শাখার মাধ্যমে। আবেদন করার আগে ফি জমা দেওয়ার রসিদ প্রিন্ট করে রাখতে হবে, কারণ সেটিই ভেরিফিকেশনের সময় প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে যা যা লাগে

১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এখন বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়, কারণ এতে দীর্ঘমেয়াদে পুনর্নবায়নের ঝামেলা থাকে না। এই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে প্রয়োজন হবে — জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), ঠিকানার প্রমাণ, অনলাইন আবেদন ফর্ম, ফি জমার রসিদ, এবং সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

২০২৫ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পুলিশ ভেরিফিকেশন আর প্রয়োজন নেই, যদি আবেদনকারীর NID-এর তথ্য সঠিক থাকে। এই পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর এবং ৬৪ পৃষ্ঠার হওয়ায় এটি ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও নিয়মিত ভ্রমণকারীদের জন্য বেশ উপযোগী।

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: এখন কি পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে?
👉 না, ২০২৫ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী যদি আবেদনকারীর তথ্য ও ঠিকানা জাতীয় পরিচয়পত্রে সঠিক থাকে, তাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন ২: পাসপোর্টের ফি কীভাবে জমা দিতে হয়?
👉 অনলাইনে সোনালী ব্যাংক পেমেন্ট গেটওয়ে বা এজেন্ট ব্যাংক থেকে ফি জমা দেওয়া যায়।

প্রশ্ন ৩: পুরনো MRP পাসপোর্ট থাকলে কি নতুন e-passport নেওয়া যাবে?
👉 হ্যাঁ, অনলাইন ফর্মে “Reissue” অপশন নির্বাচন করে সহজেই ই-পাসপোর্টে আপগ্রেড করা যায়।

প্রশ্ন ৪: বিদেশে থাকা অবস্থায় কি পাসপোর্ট নবায়ন করা যায়?
👉 হ্যাঁ, প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।

উপসংহার

২০২৫ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন বাদ দিয়ে নাগরিকদের ঝামেলা কমানো হয়েছে, ফলে অনলাইনে মাত্র কয়েক ধাপে আবেদন করে অল্প সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব।
যারা বিদেশে পড়াশোনা, চিকিৎসা, চাকরি বা ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন — এখনই আবেদন করুন এবং সময় বাঁচান।

আরও পড়ুন-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?সর্বশেষ ফি কত?

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।