বাংলাদেশে জমি মানেই শুধু সম্পদ নয়—এটি একজন নাগরিকের সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের প্রতীক। কিন্তু অনেকেই জানেন না, জমির উপর আপনার মালিকানা কেবল দলিল বা খতিয়ান থাকলেই শেষ নয়; নিয়মিত খাজনা প্রদান করাও সেই মালিকানা টিকিয়ে রাখার অপরিহার্য শর্ত। আপনি যদি বছরের পর বছর ধরে খাজনা না দেন, তাহলে সরকার সেই জমিকে ‘খাস জমি’ ঘোষণা করতে পারে।
এই বিষয়টি অনেকের কাছেই বিভ্রান্তিকর—“কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয়?”, “খাস হলে কি ফেরত পাওয়া যায়?”, “এটার আইনি ভিত্তি কী?”—এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানার আগ্রহ সবার মধ্যেই থাকে।
আজকের এই পোস্টে আমরা জানব, খাজনা না দিলে জমি কখন খাস হয়, আইন কী বলে, এবং কীভাবে নিজের জমি রক্ষা করবেন — ধাপে ধাপে বিস্তারিতভাবে।
আরও পড়ুন-অনলাইনে খতিয়ান নাম্বার দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম (আপডেট)
খাজনা কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
খাজনা হলো সরকারের কাছে জমির মালিক কর্তৃক প্রতি বছর প্রদেয় নির্দিষ্ট ট্যাক্স বা ভাড়া, যা জমির মালিকানার প্রমাণ ও স্বীকৃতির প্রতীক। এটি জমির রেকর্ড সংরক্ষণ, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ যোগান এবং ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সুশৃঙ্খল রাখার অন্যতম মাধ্যম।
যদি কেউ টানা কয়েক বছর খাজনা প্রদান না করেন, তাহলে সরকার ধরে নেয় — ওই জমির মালিকানা তিনি ত্যাগ করেছেন বা অরক্ষিত অবস্থায় রেখেছেন। তখন প্রশাসন আইনগত প্রক্রিয়ায় জমিকে খাস জমি হিসেবে চিহ্নিত করে।
কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয়?
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, যদি কেউ টানা ২০ বছর ধরে তার জমির খাজনা পরিশোধ না করেন, তবে সরকার সেই জমিকে খাস জমি হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।
তবে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে না। জমিকে খাস ঘোষণার আগে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা ভূমি অফিস থেকে নোটিশ প্রদান, তদন্ত, এবং রেকর্ড যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
যদি দেখা যায় মালিক দীর্ঘমেয়াদে খাজনা না দিয়েছেন, এবং কেউ তাতে মালিকানা দাবি করছেন না — তখন জমিটি সরকারের নামে চলে যায়।
📌 মূল কথা:
খাজনা না দিলে ২০ বছর পর জমি খাস হতে পারে, তবে প্রশাসনিক যাচাই-বাছাইয়ের পরেই এটি কার্যকর হয়।
খাস জমি ঘোষণার আগে যেসব ধাপ অনুসরণ করা হয়
১. উপজেলা ভূমি অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট মালিককে নোটিশ প্রদান করা হয়।
২. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাজনা না দিলে রেকর্ড যাচাই করা হয়।
৩. স্থানীয় ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে জমির দখল অবস্থা ও মালিকানা প্রমাণপত্র যাচাই করেন।
৪. প্রমাণিত হলে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে জমি খাস ঘোষণা করে সরকারের নামে রেকর্ড স্থানান্তর করা হয়।
খাজনা না দিলে জমির মালিকানায় প্রভাব
খাজনা পরিশোধ না করলে প্রথমে আপনি জরিমানার আওতায় পড়বেন, তারপর জমি নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হবে।
খাজনা না দিলে:
-
জমির উপর দখল হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়।
-
নামজারি নবায়ন করা যায় না।
-
বিক্রি বা হস্তান্তর নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
-
দীর্ঘ সময় পর সরকার সেই জমি খাস ঘোষণা করতে পারে।
খাস জমি কি ফেরত পাওয়া যায়?
যদি আপনার জমি খাজনা না দেওয়ার কারণে খাস ঘোষিত হয়, তবুও কিছু ক্ষেত্রে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
আপনি যদি যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করেন—যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আইনি বিরোধ, বা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে খাজনা দেওয়া সম্ভব হয়নি—তাহলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুনরায় আপনার নামে জমি পুনঃবন্দোবস্ত হতে পারে।
তবে এর জন্য শক্ত প্রমাণপত্র, পূর্বের রেকর্ড, এবং খাজনা বকেয়ার টাকা একত্রে পরিশোধ করতে হয়।
খাস জমির আইনগত ভিত্তি
বাংলাদেশে খাস জমি সংক্রান্ত বিষয়টি মূলত নিম্নলিখিত আইন ও নীতিমালার আওতায় নিয়ন্ত্রিত হয়ঃ
-
বাংলাদেশ ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল, ১৯৯০
-
বাংলাদেশ ভূমি পুনর্বিন্যাস আইন, ১৯৮৪
-
খাস জমি বন্দোবস্ত নীতিমালা, ২০১৭
এই আইনগুলোতে খাজনা না দিলে জমি খাস ঘোষণা ও পুনর্বন্দোবস্তের বিস্তারিত প্রক্রিয়া বর্ণিত আছে।
জমি খাস হয়েছে কিনা তা জানবেন কীভাবে?
আপনি সহজেই জানতে পারেন আপনার জমি খাস হয়েছে কিনা — DLRMS (https://dlrms.land.gov.bd) পোর্টালের মাধ্যমে।
ধাপগুলোঃ
-
ব্রাউজারে যান: https://dlrms.land.gov.bd
-
“খতিয়ান অনুসন্ধান” অপশন সিলেক্ট করুন।
-
জেলার নাম, মৌজা, দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর দিন।
-
জমির স্ট্যাটাস দেখুন—যদি সেখানে সরকার বা প্রশাসনের নামে রেকর্ড থাকে, বুঝবেন জমি খাস ঘোষণা হয়েছে।
জমি খাস হওয়া রোধে করণীয়
১. প্রতি বছর নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করুন।
২. জমির রেকর্ড আপডেট ও নামজারি নবায়ন করুন।
৩. জমি যদি যৌথভাবে মালিকানাধীন হয়, তাহলে দায়িত্ব ভাগ করে দায়িত্বশীলভাবে খাজনা দিন।
৪. অনলাইনে ভূমি অফিসে আবেদন করে ডিজিটাল খাজনা রসিদ সংরক্ষণ করুন।
অনলাইনে খাজনা দেওয়ার সহজ উপায়
এখন আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে জমির খাজনা দিতে পারেন —
-
ভিজিট করুন: https://ldtax.gov.bd
-
লগইন করে জমির তথ্য দিন।
-
মোবাইল ব্যাংকিং (bKash/Nagad) এর মাধ্যমে খাজনা পরিশোধ করুন।
-
ডিজিটাল রসিদটি সংরক্ষণ করুন।
উপসংহার
খাজনা দেওয়া কেবল আইনগত বাধ্যবাধকতাই নয়—এটি আপনার জমির নিরাপত্তা ও মালিকানার সুরক্ষা।
২০ বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হতে পারে, তাই এখনই সময় নিয়মিত খাজনা প্রদান নিশ্চিত করার।
আজই আপনার জমির রেকর্ড ও খাজনা স্ট্যাটাস দেখে নিন DLRMS পোর্টালে এবং ভূমি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখুন।
নিজের জমি সম্পর্কে সচেতন থাকুন—কারণ অবহেলা মানেই জমির মালিকানা হারানোর ঝুঁকি!
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-জমির মামলা থেকে বাঁচতে আগে থেকেই যেসব কাজ করবেন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


