বাংলাদেশে প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার সময় আয়করের নিয়মে কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
২০২৫-২৬ অর্থবছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) ঘোষণা করেছে নতুন করমুক্ত সীমা, ট্যাক্স স্ল্যাব, এবং ই-রিটার্ন সুবিধা যা সাধারণ চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী—সবাইকে প্রভাবিত করবে।
এই পোস্টে আমরা খুব সহজভাবে বুঝে নেব—
-
কত আয়ে ট্যাক্স দিতে হয়,
-
ট্যাক্স কিভাবে হিসাব করা হয়,
-
করমুক্ত আয়সীমা কত,
-
এবং কোন আয় থেকে ছাড় পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-করদাতাদের জন্য সুখবর! এনবিআর সারা দেশে ই-রিটার্ন হেল্প-ডেস্ক চালু করেছে
করমুক্ত আয়ের সীমা (২০২৫-২৬ অর্থবছর)
২০২৫-২৬ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা সরকার কিছুটা বাড়িয়েছে। নিচের তালিকায় আপনি সহজে বুঝতে পারবেন কোন শ্রেণির করদাতা কত আয় পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় পাবেন:
করদাতার শ্রেণি | করমুক্ত আয়সীমা (বাৎসরিক) |
---|---|
সাধারণ পুরুষ | ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত |
নারী ও ৬৫ বছরের বেশি নাগরিক | ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত |
প্রতিবন্ধী করদাতা | ৪,৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত |
মুক্তিযোদ্ধা (গ্যাজেটেড) | ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত |
অর্থাৎ, একজন সাধারণ পুরুষের যদি বছরে আয় হয় ৩.৫ লক্ষ টাকার নিচে, তাহলে তিনি কোনো ট্যাক্স দেবেন না।
কিন্তু এই সীমা অতিক্রম করলে নির্দিষ্ট হারে ট্যাক্স দিতে হবে।
নতুন ট্যাক্স স্ল্যাব (২০২৫-২৬ অর্থবছর)
এনবিআর ঘোষিত বর্তমান আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী ধাপে ধাপে ট্যাক্সের হার হবে নিম্নরূপঃ
আয়ের সীমা | ট্যাক্স হার |
---|---|
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ০% (করমুক্ত) |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ৫% |
পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ১০% |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ১৫% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ২০% |
১৬,৫০,০০০ টাকার বেশি আয়ে | ২৫% |
এই নিয়ম সারা দেশের জন্য একই — অর্থাৎ অঞ্চলভেদে ট্যাক্সের হার পরিবর্তন হয় না, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু ছাড় পাওয়া যায় (যেমন সীমান্ত অঞ্চল বা বিশেষ পেশার জন্য)।
উদাহরণসহ ট্যাক্সের সহজ হিসাব
ধরা যাক একজন সাধারণ চাকরিজীবীর মাসিক বেতন ৪০,৬০০ টাকা।
তাহলে তার বাৎসরিক আয় হবে:
৪০,৬০০ × ১২ = ৪,৮৭,২০০ টাকা
এখন এই টাকায় ট্যাক্স হবে এমনভাবেঃ
-
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা → করমুক্ত ✅
-
বাকি অংশ = ৪,৮৭,২০০ – ৩,৫০,০০০ = ১,৩৭,২০০ টাকা
-
এই টাকার ওপর ৫% হারে ট্যাক্স = ৬,৮৬০ টাকা
তবে যদি তিনি লাইফ ইনস্যুরেন্স, সঞ্চয়পত্র, পেনশন স্কিম বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে সেই বিনিয়োগের জন্য ট্যাক্স রিবেট (ছাড়) পাওয়া যাবে।
রিবেটের পর নেট ট্যাক্স প্রায় ৫,০০০ টাকার মতো হতে পারে।
অঞ্চল বা কর্মক্ষেত্রভিত্তিক ট্যাক্স পার্থক্য হয় কি? (সহজ বিশ্লেষণ)
বাংলাদেশে আয়কর (Income Tax) নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল কাঠামো সারা দেশের জন্য একই। অর্থাৎ আপনি ঢাকায় থাকেন বা রংপুরে, মূল ট্যাক্স হার একই থাকবে।
তবে কিছু বিশেষ অঞ্চল, পেশা বা কর্মক্ষেত্রে কর ছাড় (Tax Rebate) বা বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।
এগুলো সাধারণত সরকারের উন্নয়ন নীতি, প্রণোদনা, বা অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার অংশ হিসেবে নির্ধারিত হয়।
নিচের টেবিলটি দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন অঞ্চলভেদে কোথায় কতটা কর সুবিধা পাওয়া যায়👇
অঞ্চল ও কর্মক্ষেত্রভিত্তিক কর ছাড় ও বিশেষ সুবিধা (২০২৫-২৬ অর্থবছর)
শ্রেণি / অঞ্চল | প্রযোজ্য করহার বা সুবিধা | মন্তব্য |
---|---|---|
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকা | সাধারণ ট্যাক্স স্ল্যাব প্রযোজ্য | এখানে কোনো অতিরিক্ত ছাড় নেই |
অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকা (যেমন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর) | সাধারণ ট্যাক্স স্ল্যাব প্রযোজ্য | ট্যাক্স একই থাকবে |
জেলা শহর ও পৌর এলাকা | সাধারণ স্ল্যাব, তবে কিছু সরকারি প্রণোদনা সেক্টরে রিবেট প্রযোজ্য | যেমন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প |
পৌরসভার বাইরে বা গ্রামীণ এলাকা | ৫% পর্যন্ত কর রিবেট (ছাড়) | গ্রামীণ উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসা বা স্থানীয় কারখানার জন্য |
অর্থনৈতিক অঞ্চল (EPZ, SEZ) | ১০–১৫ বছরের করমুক্ত সুবিধা | সরকার ঘোষিত শিল্পপ্রণোদনা হিসেবে |
হাইটেক পার্ক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক | ১০ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় | আইটি কোম্পানি বা স্টার্টআপের জন্য |
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত কর্মী (গ্রামীণ এলাকায়) | ৫% কর রিবেট | ডাক্তার, শিক্ষক ও সমাজসেবায় যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য |
প্রতিবন্ধী করদাতা (যে কোনো এলাকায়) | করমুক্ত আয়সীমা ৪,৭৫,০০০ টাকা | অতিরিক্ত মানবিক সুবিধা হিসেবে |
৬৫ বছরের বেশি নাগরিক বা নারী করদাতা | করমুক্ত আয়সীমা ৪,০০,০০০ টাকা | বয়স ও সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে |
গ্যাজেটেড মুক্তিযোদ্ধা করদাতা | করমুক্ত আয়সীমা ৫,০০,০০০ টাকা | সর্বোচ্চ কর ছাড়প্রাপ্ত শ্রেণি |
উদাহরণ
ধরা যাক,
দুইজন চাকরিজীবীর মাসিক আয় সমান — ৪০,০০০ টাকা।
একজন ঢাকায় চাকরি করেন, আরেকজন রাজশাহীর গ্রামীণ এলাকায়।
-
ঢাকার চাকরিজীবী ট্যাক্স স্ল্যাব অনুযায়ী প্রায় ৫,৫০০–৬,০০০ টাকা ট্যাক্স দিতে পারেন।
-
রাজশাহীর গ্রামীণ এলাকার কর্মীর ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত ৫% পর্যন্ত রিবেট (ছাড়) প্রযোজ্য হওয়ায়, তার ট্যাক্স প্রায় ৫০০–৭০০ টাকা কমে যেতে পারে।
এখানে করহার পরিবর্তন না হলেও, রিবেটের কারণে কার্যকর করের পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পায়।
কেন এই পার্থক্য রাখা হয়েছে?
সরকার এই পার্থক্য রাখে মূলতঃ
-
গ্রামীণ ও কম উন্নত এলাকাকে অর্থনৈতিকভাবে উৎসাহিত করতে,
-
আইটি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকে শক্তিশালী করতে,
-
নতুন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা দিতে,
-
বিশেষ অবদান রাখা নাগরিকদের (মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী) সম্মান জানাতে।
অনলাইনে ট্যাক্স হিসাব ও ই-রিটার্ন দাখিল
এখন ট্যাক্স দিতে অফিসে লাইন দিতে হয় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) চালু করেছে আধুনিক eReturn Portal (etaxnbr.gov.bd), যেখানে আপনি—
✅ নিজের আয়ের তথ্য দিয়ে অনলাইনে ট্যাক্স হিসাব করতে পারবেন,
✅ রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন,
✅ এবং রসিদ (Acknowledgement Receipt) ডাউনলোড করতে পারবেন।
এই প্রক্রিয়ায় মাত্র কয়েক মিনিটেই আপনি জানতে পারবেন—
“আমার ট্যাক্স কত দিতে হবে?” এবং “কোন কাগজপত্র লাগবে?”
করদাতাদের জন্য টিপস
-
বছরে একবার হলেও নিজের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিন।
-
ব্যাংক লোন, ভিসা, বা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এই রিটার্ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
-
বীমা, সঞ্চয়পত্র, পেনশন স্কিমে বিনিয়োগ করলে রিবেট পাবেন।
-
সবসময় Taxpayer Identification Number (TIN) হালনাগাদ রাখুন।
উপসংহার
২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন ট্যাক্স নীতিতে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির জায়গা হলো —
করমুক্ত সীমা কিছুটা বেড়েছে এবং eReturn ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হয়েছে।
যাদের মাসিক আয় ৩০,০০০ টাকার নিচে, তাদের কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না।
আর ৪০,০০০ টাকার বেশি আয় থাকলে সামান্য ট্যাক্স দিতে হবে, যা দেশের উন্নয়নে আপনার অবদান।
সঠিক তথ্য জানলে ট্যাক্স দেওয়া জটিল নয় — বরং এটি একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয়।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-টিন সার্টিফিকেট কি?টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥