বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। কখনো বাজারে, কখনো কারখানায়, আবার কখনো বাসাবাড়িতেও আগুন লেগে যাচ্ছে হঠাৎ করেই। এই অগ্নিকাণ্ড শুধু সম্পদের ক্ষতি করে না, অনেক সময় কেড়ে নেয় নিরীহ মানুষের প্রাণও।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য— অনেকেই জানেন না আগুন লাগলে তাৎক্ষণিক কী করতে হবে কিংবা কোন নাম্বারে ফোন করলে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত সহায়তা দিতে পারে।
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানব—
👉 আগুন লাগলে তাৎক্ষণিক করণীয়,
👉 ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়,
👉 আগুন প্রতিরোধে সচেতনতা ও প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন-বাংলাদেশের জরুরি ফোন নাম্বার ২০২৫
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স – আমাদের প্রথম রক্ষাকবচ
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এবং বড় বড় উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। তারা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকে যেকোনো অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধস বা উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে।
তাদের জরুরি নাম্বার হলো ১৬১৬৩ —
📞 ফায়ার সার্ভিস হেল্পলাইন: ১৬১৬৩
এই নাম্বারে ফোন করলে কাছের স্টেশন থেকে দ্রুত টিম রওনা দেয় এবং সম্ভব হলে ফোনেই আপনাকে প্রাথমিক নির্দেশনা দেয় কিভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনবেন।
আগুন লাগলে প্রথমে কী করবেন (তাৎক্ষণিক করণীয়):
অগ্নিকাণ্ডের সময় আতঙ্কিত না হয়ে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন —
-
🔔 দ্রুত সতর্ক সংকেত দিন:
চিৎকার করে আশেপাশের মানুষকে জানিয়ে দিন “আগুন! আগুন!” যেন সবাই দ্রুত সরে যেতে পারে। -
☎️ ফায়ার সার্ভিসে কল করুন:
তৎক্ষণাৎ ১৬১৬৩ অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করুন।
ফোনে বলুন—-
কোথায় আগুন লেগেছে
-
ভবনের নাম বা এলাকা
-
আগুন কত বড়
-
কোনো মানুষ আটকা পড়েছে কিনা
-
-
🔌 বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করুন:
যদি নিরাপদে সম্ভব হয়, তাহলে মূল সুইচ বন্ধ করে দিন। এতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ছড়ানো বন্ধ হবে। -
🚪 দ্রুত নিরাপদ পথে বের হয়ে যান:
সিঁড়ি ব্যবহার করুন, কখনোই লিফট ব্যবহার করবেন না।
ধোঁয়া বেশি থাকলে নীচু হয়ে হাঁটুন বা মুখে ভেজা কাপড় রাখুন। -
💧 প্রাথমিকভাবে পানি বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করুন:
যদি আগুন ছোট হয়, তাহলে নিকটস্থ ফায়ার এক্সটিংগুইশার (Fire Extinguisher) ব্যবহার করুন।
রান্নাঘরের তেল বা গ্যাসের আগুনে কখনোই পানি ঢালবেন না— এতে আগুন আরও বেড়ে যেতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় যে ভুলগুলো করা যাবে না
-
আগুন লাগার সময় দৌড়াদৌড়ি করে আতঙ্ক ছড়াবেন না।
-
নিজে আটকা পড়লে জানালা বা বারান্দা থেকে লাফ দেবেন না, বরং চিৎকার করে সাহায্য চান।
-
আগুনে জ্বালাময়ী পদার্থ (যেমন গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল) কাছে রাখবেন না।
-
শিশুকে কোলে নিয়ে আগুনের এলাকায় প্রবেশ করবেন না।
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আগাম সচেতনতা ও প্রস্তুতি
অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব যদি আগে থেকেই আমরা কিছু সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করি —
✅ প্রতি পরিবারে অন্তত ১টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখুন।
✅ গ্যাস চুলা ব্যবহার শেষে সবসময় গ্যাসের রেগুলেটর বন্ধ করুন।
✅ বৈদ্যুতিক তার, মাল্টিপ্লাগ বা চার্জার ব্যবহার শেষে খুলে ফেলুন।
✅ রান্নাঘরে শিশুদের একা যেতে দেবেন না।
✅ ভবনে নিয়মিত ফায়ার ড্রিল (Fire Drill) বা অনুশীলন করুন।
✅ বাসা বা অফিসের বৈদ্যুতিক সার্কিট নিয়মিত ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করান।
ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পাওয়ার পদ্ধতি (ধাপে ধাপে):
-
ফোন করুন ১৬১৬৩ বা ৯৯৯
-
আপনার এলাকা, বিল্ডিং ও পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে বলুন।
-
যদি কেউ আহত হয়, ফায়ার সার্ভিসকে জানান যাতে তারা মেডিকেল টিমও পাঠাতে পারে।
-
তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকা খালি করুন।
-
ফায়ার টিম পৌঁছানোর পর সহযোগিতা করুন এবং নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।
জনসচেতনতার আহ্বান
অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা কমানোর সবচেয়ে বড় উপায় হলো “সচেতনতা”।একটি ছোট ভুল — যেমন গ্যাস লিক, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা অবহেলা — মুহূর্তের মধ্যে বড় দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে।তাই নিজের পরিবার, প্রতিবেশী ও অফিসের সহকর্মীদের এই বিষয়গুলো জানিয়ে দিন।
একটি সচেতন পদক্ষেপই হয়তো বাঁচাতে পারে অনেক জীবন।
উপসংহার
আগুন মানেই আতঙ্ক নয়, যদি আমরা প্রস্তুত থাকি। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সবসময় জনগণের পাশে রয়েছে। শুধু একটি কল— আর তারা ছুটে আসবে আপনার সাহায্যে।
📞 তাই আজই আপনার মোবাইলে এই নাম্বারটি সেভ করুন: ১৬১৬৩ (Fire Service)
একটি ছোট সচেতনতা পারে বড় দুর্ঘটনা রোধ করতে। 🔥
আরও পড়ুন-মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


