প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে হঠাৎ ঘটে যাওয়া ও ভয়াবহ হলো ভূমিকম্প। এটি এমন একটি দুর্যোগ, যা কোনো ধরনের পূর্বাভাস ছাড়াই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে। তাই ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত না হয়ে, সচেতন ও প্রস্তুত থেকে সঠিক করণীয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। এ অবস্থায় সবাইকে সচেতন করা এবং ভূমিকম্পের সময় কীভাবে নিরাপদ থাকবেন—তা জানানোই মূল লক্ষ্য।
সব মিলিয়ে একটি সম্পূর্ণ, তথ্যভিত্তিক ও উপকারী গাইড যা আপনার এবং আপনার পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন-প্রবাসীদের ডাকযোগে ভোটের সুযোগ ২০২৬ -কিভাবে নিবন্ধন করবেন?
ভূমিকম্প কেন হঠাৎ ঘটে?
ভূমিকম্প সাধারণত পৃথিবীর অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ, ভাঙন এবং সরে যাওয়ার কারণে ঘটে। যখন প্লেটগুলো শক্তি জমতে থাকে এবং হঠাৎ করে মুক্তি পায়, তখন মাটিতে কম্পন সৃষ্টি হয়—এটাই ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পের মাত্রা সাধারণত রিখটার স্কেলে মাপা হয়।
-
৩ থেকে ৪ মাত্রা: হালকা
-
৫–৬ মাত্রা: মাঝারি
-
৬-এর উপরে: শক্তিশালী ও বিপজ্জনক
তাই ভূমিকম্প সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়
নীচে ছবিতে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয় এখানে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো—
গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দিন
ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো গ্যাস লাইনে লিক বা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগা।
তাই—
-
গ্যাসের চুলা, রেগুলেটর দ্রুত বন্ধ করুন।
-
ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড/সার্কিট ব্রেকার বন্ধ করে দিতে চেষ্টা করুন।
-
বাড়িতে যদি এলপিজি সিলিন্ডার থাকে, সেটিও অফ করুন।
এগুলো করতে গিয়ে জীবন ঝুঁকিতে ফেলবেন না। যদি নড়াচড়া সম্ভব হয় এবং নিরাপদ মনে হয়—তখনই করবেন।
লিফট ব্যবহার করবেন না—সিঁড়ি দিয়ে বের হন
ভূমিকম্প হলে লিফট সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা। কারণ—
-
লিফটের তার ছিঁড়ে যেতে পারে
-
বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফট আটকে যেতে পারে
-
কম্পনের কারণে লিফটের দরজা না খুলতে পারে
তাই সবসময়—
✔ সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
✔ দৌড়াবেন না, ধীরে নিচে নামুন।
✔ অন্যদের সাহায্য করে বেরুন।
ঘরের ভিতরে থাকলে মাথা ঢেকে টেবিল বা শক্ত জিনিসের নিচে আশ্রয় নিন
ভূমিকম্প চলাকালীন সবচেয়ে সঠিক নিয়ম হলো—
Drop → Cover → Hold
অর্থাৎ—
-
নীচে বসে পড়ুন
-
মাথা ও গলা হাত বা শক্ত জিনিস দিয়ে ঢেকে ফেলুন
-
যেটার নিচে আশ্রয় নিয়েছেন সেটি ধরে রাখুন
এটি করলে উপরের কোনো জিনিস পড়ে গেলে আপনার মাথা সুরক্ষিত থাকবে।
বাইরে থাকলে উঁচু বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছপালা থেকে দূরে সরে যান
বাইরে থাকা অবস্থায় আশেপাশে ভেঙে পড়ার মতো কিছু থাকলে তা সবচেয়ে বড় বিপদ।
তাই ভূমিকম্প শুরু হলে—
-
ভবন, ওভারব্রিজ, সাইনবোর্ড, গ্লাসওয়াল থেকে দূরে যান
-
লাইটপোস্ট, বৈদ্যুতিক তার, বড় গাছ—এসব থেকে সরে খোলা জায়গায় দাঁড়ান
-
গাড়িতে থাকলে সড়কের পাশে নিরাপদ স্থানে থামুন
ইমার্জেন্সি কিট সঙ্গে রাখুন
জরুরি পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে একটি Emergency Kit অত্যন্ত প্রয়োজন।
এর মধ্যে যা যা থাকা উচিত—
-
টর্চ
-
পাওয়ার ব্যাংক
-
অতিরিক্ত ব্যাটারি
-
বাঁশি (Signal দেওয়ার জন্য)
-
পানি ও শুকনো খাবার
-
প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী
-
গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের কপি
-
কিছু নগদ টাকা
-
ওষুধ
-
মাস্ক, গ্লাভস
খোলা মাঠ বা নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিন
যদি কম্পন শুরু হওয়ার সময় আপনি বাইরে থাকেন, তবে—
-
খোলা মাঠে চলে যান
-
আশপাশে মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলুন
-
রাস্তার মাঝখান থেকে সরে দাঁড়ান
এতে কোনো বিল্ডিং বা বড় কাঠামো ভেঙে পড়লেও আপনি নিরাপদ থাকবেন।
ভূমিকম্পের পরে করণীয়
ভূমিকম্প থামার পরে মানুষ সাধারণত আতঙ্কে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই সময়ে আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার।
গ্যাস লিক বা বৈদ্যুতিক শর্ট হয়েছে কি না দেখুন
গন্ধ পেলে বা শব্দ শুনলে—
-
কোনো সুইচ অন/অফ করবেন না
-
আগুন জ্বালাবেন না
-
দরজা–জানালা খুলে দিন
সিড়ি ব্যবহার করে ধীরে নেমে আসুন
আপনার বাসার কাঠামো দুর্বল মনে হলে দ্রুত বেরিয়ে আসুন।
প্রতিবেশী ও পরিবারকে সহায়তা করুন
বিশেষ করে—
-
শিশু
-
বয়স্ক মানুষ
-
শারীরিক প্রতিবন্ধী
-
অসুস্থ ব্যক্তি
আফটারশকের জন্য প্রস্তুত থাকুন
মূল ভূমিকম্পের পর ছোট-বড় কম্পন আরও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন।
মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার বুদ্ধিমানের সঙ্গে করুন
সবাই একসাথে কল করলে নেটওয়ার্ক চাপ বাড়ে।
তাই—
-
SMS, Messenger বা WhatsApp টেক্সট ব্যবহার করুন
-
জরুরি না হলে ভিডিও কল এড়িয়ে চলুন
ভূমিকম্পের আগে যেসব প্রস্তুতি থাকা জরুরি
✔ ঘরের ভারি জিনিস নিচের অংশে রাখুন
যাতে কম্পনের সময় পড়ে গিয়ে আঘাত না করে।
✔ আলমারি, র্যাক, টিভি ওয়াল মাউন্ট শক্ত করে লাগান
ঢিলা বা দুর্বল স্ক্রু বিপদের কারণ হতে পারে।
✔ জরুরি নম্বরগুলো লিখে রাখুন
-
৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা)
-
নিকটস্থ হাসপাতাল
-
ফায়ার সার্ভিস
-
পরিবারের সদস্যদের কন্টাক্ট
✔ শিশুদের ভূমিকম্পের নিয়ম শেখান
তাদের জন্য DROP—COVER—HOLD অভ্যাস করান।
কেন আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকা জরুরি?
ভূমিকম্পে অনেক মানুষ আহত হয় শুধুমাত্র আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করার কারণে।
শান্ত থাকা মানেই আপনি পরিস্থিতি বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
গবেষণা বলছে—
👉 সঠিক নিয়ম জানা থাকলে ভূমিকম্পে আঘাতের ঝুঁকি ৭০% পর্যন্ত কমে যায়।
তাই জ্ঞানই এখানে নিরাপত্তা।
শেষ কথা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি না, কিন্তু সচেতনতা, প্রস্তুতি এবং সঠিক করণীয় আমাদের জীবন ও সম্পদকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে।
ভূমিকম্প কোনো সতর্কতা ছাড়াই আসে, তাই আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা জরুরি।
এই ব্লগে উল্লেখিত নির্দেশনাগুলো আপনার পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশী সবার সাথে শেয়ার করুন—কারণ সচেতনতা ছড়িয়ে পড়লেই দুর্ঘটনা কমবে।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-কোন দেশের ভিসা সহজ, জীবনযাপন আরামদায়ক এবং বেতন সর্বোচ্চ
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


