বাংলাদেশে এক সময় “সিটিসেল” (Citycell) নামটা ছিল মোবাইল নেটওয়ার্ক জগতে এক অনন্য পরিচিতি। নীল-সাদা রঙের লোগো আর CDMA প্রযুক্তির মাধ্যমে চালিত সেই সিম অনেকের প্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) লাইসেন্স বাতিল করার পর সিটিসেলের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন গুঞ্জন — “সিটিসেল আবার ফিরে আসছে!”
তাহলে কি সত্যিই বাংলাদেশের মোবাইল বাজারে আবারও সিটিসেল ফিরে আসবে?
আরও পড়ুন-কেন BTCL সিম জনপ্রিয় হতে পারে?
সিটিসেলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
সিটিসেল ছিল বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর।
🔹 প্রতিষ্ঠিত হয়: ১৯৯৩ সালে
🔹 প্রযুক্তি: CDMA (Code Division Multiple Access)
🔹 মালিকানা: Pacific Bangladesh Telecom Limited (PBTL)
🔹 গ্রাহক সংখ্যা সর্বোচ্চ সময়ে: প্রায় ২০ লক্ষাধিক
প্রথম দিকের ফ্রি ইনকামিং কল, সস্তা রেট, এবং দ্রুত নেটওয়ার্কের জন্য সিটিসেল ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যখন অন্য সব অপারেটর GSM প্রযুক্তিতে চলে যায়, তখন সিটিসেল পিছিয়ে পড়ে।
কেন বন্ধ হয়ে যায় সিটিসেল?
সিটিসেলের বন্ধ হওয়ার পেছনে কয়েকটি বড় কারণ ছিল —
-
CDMA প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা: আন্তর্জাতিকভাবে GSM হয়ে ওঠে জনপ্রিয়, কিন্তু সিটিসেল CDMA তে আটকে যায়।
-
বিটিআরসির পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতা: লাইসেন্স নবায়ন ও বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালে বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিল করে।
-
দ্রুত ইন্টারনেট প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া: 3G/4G সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল সিটিসেল।
-
ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক দুর্বলতা: বিনিয়োগের ঘাটতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা সিটিসেলকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি।
সিটিসেল কি আবার ফিরছে?
২০২৫ সালের শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্টে দেখা যাচ্ছে —
“Citycell Re-Launching Soon in Bangladesh”
অনেকে দাবি করছেন, নতুন মালিকানায় বা নতুন ব্র্যান্ড হিসেবে সিটিসেল 4G বা 5G সেবা নিয়ে ফিরে আসতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত বিটিআরসি বা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
তবে কিছু সূত্র জানাচ্ছে, “Pacific Bangladesh Telecom Limited” আবারও নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজছে, এবং “MVNO” (Mobile Virtual Network Operator) হিসেবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করছে।
যদি সিটিসেল ফিরে আসে, তাহলে কী পরিবর্তন হতে পারে?
যদি সত্যিই সিটিসেল নতুনভাবে ফিরে আসে, তাহলে নিচের পরিবর্তনগুলো হতে পারে —
-
GSM বা LTE নেটওয়ার্কে ফিরে আসা (CDMA নয়)
-
4G/5G ইন্টারনেট সেবা চালু করা
-
সাশ্রয়ী ডেটা ও কল রেট
-
MVNO সিস্টেমে পরিচালিত হওয়া — অর্থাৎ নিজস্ব নেটওয়ার্ক নয়, বরং অন্য কোনো অপারেটরের অবকাঠামো ব্যবহার করে সেবা দেওয়া।
-
পুরনো গ্রাহকদের রিটার্ন অফার বা নস্টালজিক ক্যাম্পেইন।
বাংলাদেশের টেলিকম বাজারে সিটিসেলের অবস্থান কেমন হতে পারে?
বর্তমানে বাংলাদেশে সক্রিয় অপারেটর ৪টি:
Grameenphone, Robi, Banglalink, Teletalk।
যদি সিটিসেল ফিরে আসে, তাহলে এটি ৫ম অপারেটর হতে পারে। তবে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে সিটিসেলকে —
-
উন্নত নেটওয়ার্ক কাভারেজ,
-
দ্রুত ইন্টারনেট,
-
এবং সাশ্রয়ী প্যাকেজ দিতে হবে।
এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না
বর্তমান সময়ে “সিটিসেল ফিরে আসছে” — এমন দাবি অফিশিয়ালি নিশ্চিত নয়।
তবে অনেক পুরনো ব্যবহারকারী এবং টেলিকম বিশেষজ্ঞদের মতে,
👉 সঠিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি পরিবর্তন করলে Citycell আবারও জনপ্রিয় হতে পারে।
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: সিটিসেল কি এখনো কার্যকর?
উত্তর: না, ২০১৬ সালে বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিল করার পর এর সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশ্ন ২: সিটিসেল কি 4G বা 5G সেবা চালু করবে?
উত্তর: অফিসিয়ালি ঘোষণা না থাকলেও গুঞ্জন আছে, নতুন বিনিয়োগে সিটিসেল GSM বা 4G প্রযুক্তিতে ফিরে আসতে পারে।
প্রশ্ন ৩: পুরনো সিটিসেল নম্বর কি পুনরায় চালু হবে?
উত্তর: যদি ব্র্যান্ডটি ফিরে আসে, তাহলে কিছু পুরনো প্রিফিক্স (যেমন 011) পুনরায় ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
উপসংহার
সিটিসেল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক বিশেষ অধ্যায়।যদি এই ব্র্যান্ড আবার নতুনভাবে ফিরে আসে, তাহলে সেটা হবে শুধু নস্টালজিয়ার জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনের সূচনা।
তবে এখন পর্যন্ত এটি শুধু গুঞ্জন মাত্র, তাই অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ — হয়তো আবারও একদিন আমরা শুনবো,
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন- BTCL সিমের দাম কত, কোথায় পাওয়া যাবে ও সুবিধা কী কী
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔