বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আইনি প্রক্রিয়া। আপনি যখন কোনো জমি কিনবেন, তখন সেই জমির মালিকানা আপনার নামে স্থানান্তর করতে হলে রেজিস্ট্রেশন (Land Registration) করতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো — জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত ২০২৫-২০২৬ সালে?
সরকার প্রতি বছর জমি রেজিস্ট্রেশনের ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি ও ট্যাক্সের হার নির্ধারণ করে থাকে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য এই খরচে কিছু পরিবর্তন এসেছে। আজকের এই গাইডে জানুন জমি রেজিস্ট্রির সর্বশেষ খরচ, হিসাব পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন-অনলাইনে খতিয়ান নাম্বার দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম (আপডেট)
জমি রেজিস্ট্রেশন কী?
জমি রেজিস্ট্রেশন হলো জমির মালিকানা আইনত নতুন মালিকের নামে হস্তান্তরের সরকারি প্রক্রিয়া।
রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো জমি কেনা-বেচা আইনগতভাবে বৈধ নয়। রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে জমির দলিল সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয় এবং ক্রেতা জমির পূর্ণ মালিকানা পান।
জমি রেজিস্ট্রি খরচ নির্ধারণের উপাদান
রেজিস্ট্রেশনের মোট খরচ নির্ভর করে কিছু বিষয়ের উপর, যেমন:
- জমির অবস্থান (শহর, উপজেলা বা গ্রাম)
- জমির ধরন (আবাসিক, বাণিজ্যিক বা কৃষিজমি)
- সরকারি নির্ধারিত মূল্য (Government Valuation)
- স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি হার
জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত ২০২৫-২০২৬
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটির হার নিচের মতো:
| ফি/কর এর ধরন | হার (%) | ব্যাখ্যা |
|---|---|---|
| স্ট্যাম্প ডিউটি | ১.৫% | ক্রয়মূল্যের উপরে প্রযোজ্য |
| রেজিস্ট্রেশন ফি | ১% | মোট বিক্রয়মূল্যের উপরে |
| ট্রান্সফার ট্যাক্স (মিউনিসিপ্যাল এরিয়া হলে) | ২% | সিটি কর্পোরেশন বা পৌর এলাকায় প্রযোজ্য |
| স্থানীয় সরকার কর / সারচার্জ | ১% পর্যন্ত | এলাকাভেদে ভিন্ন হতে পারে |
| দলিল লেখার খরচ | ৫০০–১৫০০ টাকা | দলিল লেখক (Deed Writer) এর সার্ভিস ফি |
| দলিল যাচাই ফি | ২০০–৩০০ টাকা | সাব রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিতে হয় |
📌 মোট আনুমানিক খরচ:
সাধারণভাবে এক লক্ষ টাকার জমি কিনলে রেজিস্ট্রেশনের মোট খরচ প্রায় ৫,০০০–৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে (অবস্থান ও শ্রেণিভেদে কিছুটা পার্থক্য হয়)।
উদাহরণসহ হিসাব
ধরুন, আপনি ১০ লাখ টাকায় জমি কিনেছেন।
তাহলে হিসাব হবে 👇
| খরচের ধরন | হার | পরিমাণ (টাকা) |
| স্ট্যাম্প ডিউটি | ১.৫% | ১৫,০০০ |
| রেজিস্ট্রেশন ফি | ১% | ১০,০০০ |
| স্থানীয় কর (সিটি কর্পোরেশন) | ২% | ২০,000 |
| দলিল লেখার খরচ | – | ১,০০০ |
| অন্যান্য আনুষঙ্গিক | – | ৫০০ |
| মোট আনুমানিক খরচ | ৪৬,৫০০ টাকা |
অর্থাৎ, আপনি ১০ লাখ টাকার জমি কিনলে মোট রেজিস্ট্রি খরচ প্রায় ৪.৫%–৫% এর কাছাকাছি হবে।
জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বিক্রয় চুক্তিপত্র বা দলিলের খসড়া
- ক্রেতা ও বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- জমির পূর্বের খতিয়ান (CS, SA, RS)
- পরিশোধিত ভূমি উন্নয়ন করের রসিদ
- নামজারি (Mutation) কপি (প্রয়োজনে)
- দুইজন সাক্ষীর জাতীয় পরিচয়পত্র
- জমির ম্যাপ বা পরিমাপের স্কেচ (যদি থাকে)
জমি রেজিস্ট্রি করার ধাপসমূহ
১️⃣ দলিল তৈরি
প্রথমে বিক্রয় চুক্তি বা দলিল তৈরি করতে হয় একজন অনুমোদিত দলিল লেখকের (Licensed Deed Writer) মাধ্যমে।
২️⃣ স্ট্যাম্প ডিউটি পরিশোধ
দলিলের ক্রয়মূল্যের উপর ভিত্তি করে স্ট্যাম্প ডিউটি পরিশোধ করতে হয়। এটি ই-পেমেন্টের মাধ্যমে বা ব্যাংকে জমা দেওয়া যায়।
৩️⃣ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে জমা
এরপর ক্রেতা ও বিক্রেতা দুজনকেই সাব রেজিস্ট্রার অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিলে স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ দিতে হয়।
৪️⃣ অফিস যাচাই ও রেকর্ড সংরক্ষণ
সাব রেজিস্ট্রার অফিস দলিল যাচাই করে অফিসিয়ালি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে এবং রেকর্ড সংরক্ষণ করে।
৫️⃣ দলিল কপি সংগ্রহ
রেজিস্ট্রেশন শেষে আপনি রেজিস্টার্ড দলিলের কপি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ট্র্যাক করার পদ্ধতি
বাংলাদেশ সরকারের “e-Nothi” ও “Land.gov.bd” পোর্টালের মাধ্যমে আপনি এখন অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন আবেদন ট্র্যাক করতে পারেন।
ধাপগুলো হলো 👇
- https://land.gov.bd ওয়েবসাইটে যান।
- “রেজিস্ট্রেশন স্ট্যাটাস” বা “Mutation/Registry Tracking” অপশন সিলেক্ট করুন।
- আপনার রেজিস্ট্রেশন আইডি দিন।
- স্ট্যাটাস দেখুন (Pending / Approved / Delivered)।
জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- সর্বদা সরকারি মূল্য তালিকা (Govt. Valuation) দেখে দাম নির্ধারণ করুন।
- রেজিস্ট্রেশন অফিসে সরকারি ফি ব্যতীত অতিরিক্ত অর্থ প্রদান থেকে বিরত থাকুন।
- দলিল লেখার আগে সব কাগজপত্র যাচাই করুন।
- জমি ক্রয়ের আগে জমির রেকর্ড ও মালিকানা যাচাই করুন।
- দলিলের একাধিক কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন।
কেন জমি রেজিস্ট্রি জরুরি?
- আইনগতভাবে জমির মালিকানা নিশ্চিত হয়
- ভবিষ্যতে বিক্রয় বা বন্ধক সহজ হয়
- জমির ওপর কোনো দাবি বা বিরোধ এড়ানো যায়
- সরকারি রেকর্ডে মালিকের নাম সংরক্ষিত থাকে
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: জমি রেজিস্ট্রি করতে কত দিন লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৫–৭ কর্মদিবসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়।
প্রশ্ন ২: রেজিস্ট্রেশন খরচ কি জমির দামের সঙ্গে পরিবর্তন হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, জমির দাম যত বেশি হবে, স্ট্যাম্প ও রেজিস্ট্রেশন ফিও তত বেশি হবে।
প্রশ্ন ৩: কি অনলাইনে জমি রেজিস্ট্রি করা যায়?
উত্তর: আংশিকভাবে হ্যাঁ — কিছু ধাপ অনলাইনে করা যায়, তবে শেষ ধাপে অফিসে স্বাক্ষর ও যাচাই প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৪: রেজিস্ট্রেশন না করলে কী হবে?
উত্তর: রেজিস্ট্রেশন না করলে জমি ক্রয়-বিক্রয় আইনত অবৈধ গণ্য হবে এবং ভবিষ্যতে মালিকানা দাবি করা সম্ভব হবে না।
উপসংহার
জমি রেজিস্ট্রি করা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয় — এটি আপনার সম্পত্তির আইনগত সুরক্ষা। ২০২৫-২০২৬ সালের হালনাগাদ ফি অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ ও ডিজিটাল হয়েছে। তাই জমি ক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করুন, ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে আপনার সম্পত্তির মালিকানা নিশ্চিত করুন।
ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
আরও পড়ুন-জমির মামলা থেকে বাঁচতে আগে থেকেই যেসব কাজ করবেন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔


