জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে?হালনাগাদ ফি, নিয়ম ও প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে জমির মালিকানা পরিবর্তন বা উত্তরাধিকার সূত্রে জমির অংশ আলাদা করতে হলে “খারিজ” বা মিউটেশন (Mutation) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। জমি খারিজ হলো এমন একটি সরকারি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনার নামে জমির রেকর্ড (খতিয়ান) হালনাগাদ করা হয়। অনেকেই জানতে চান, জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে, কোথায় আবেদন করতে হয়, কতদিনে কাজ সম্পন্ন হয় — এই সব প্রশ্নের উত্তরই পাবেন আজকের এই বিস্তারিত গাইডে।

আরও পড়ুন-জমির দলিল দিয়ে কোন কোন ব্যাংক লোন দেয়?লোন পাওয়ার নিয়ম ও শর্ত

জমি খারিজ (Mutation) কী?

জমি খারিজ বা মিউটেশন বলতে বোঝানো হয় জমির মালিকানা পরিবর্তনের পর সরকারিভাবে সেই পরিবর্তন রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা।
যেমন:

  • কেউ জমি বিক্রি করলে ক্রেতার নামে রেকর্ড হালনাগাদ করা
  • উত্তরাধিকার সূত্রে জমি ভাগ হওয়া
  • দান, রায় বা আদালতের মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর

এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন না করলে ভবিষ্যতে রেজিস্ট্রেশন, নামজারি বা অন্যান্য আইনি কাজ করা সম্ভব হয় না।

জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে

জমি খারিজের খরচ মূলত দুই ধরনের হয় —
১️⃣ সরকারি নির্ধারিত ফি
২️⃣ অন্যান্য প্রশাসনিক বা জরিপ সংক্রান্ত খরচ

নিচে ২০২৫ সালের সরকারি ও গড় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে আনুমানিক খরচ তালিকাভুক্ত করা হলো 👇

খরচের ধরন আনুমানিক পরিমাণ (টাকা) মন্তব্য
আবেদন ফি ২৫.০০ অনলাইনে বা হাতে আবেদন জমা দেওয়ার সময়
কোর্ট ফি ২০.০০ সরকারি কোর্ট ফি স্ট্যাম্প
মিউটেশন ফি ১০০.০০ প্রতিটি দাগের জন্য নির্ধারিত ফি
রেকর্ড রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৫০.০০ রাজস্ব দপ্তরে জমা দিতে হয়
খতিয়ান (নামজারি) সার্ভে ফি ২৫০.০০–৫০০.০০ এলাকা ও দাগসংখ্যা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে
সেবা চার্জ / টিআইএন যাচাই ফি ৫০.০০ অনলাইন আবেদন হলে
মোট আনুমানিক খরচ ৪০০–৭০০ টাকা সাধারণত এক দাগ বা প্লটের জন্য

📌 দ্রষ্টব্য: যদি জমির দাগ একাধিক হয় বা যৌথ মালিকানা থাকে, তবে প্রতি দাগ অনুযায়ী ফি বাড়তে পারে।

জমি খারিজের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

জমি খারিজ করতে হলে নিচের কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে:

  1. দলিলের মূল কপি ও ফটোকপি
  2. রেজিস্ট্রেশন রসিদ
  3. পূর্বের খতিয়ান বা নামজারি কপি
  4. ভূমি উন্নয়ন কর (Land Development Tax) পরিশোধের রসিদ
  5. আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  6. হালনাগাদ জমির মানচিত্র (প্রয়োজনে)
  7. উত্তরাধিকার সূত্রে হলে মৃত্যু সনদ ও ওয়ারিশ সার্টিফিকেট

জমি খারিজের আবেদন করার ধাপসমূহ

অনলাইন আবেদন

বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইন জমি খারিজ আবেদন করা যায় ভূমি সেবা পোর্টাল (https://land.gov.bd) এর মাধ্যমে।
ধাপগুলো হলো:

  1. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
  2. “মিউটেশন আবেদন” অপশনে ক্লিক করুন।
  3. আবেদন ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজ আপলোড করুন।
  4. নির্ধারিত ফি অনলাইনে পরিশোধ করুন।
  5. আবেদন জমা দিন এবং রিসিট প্রিন্ট করে রাখুন।

সরাসরি অফিসে আবেদন

যারা অনলাইন করতে চান না, তারা স্থানীয় উপজেলা ভূমি অফিস (AC Land Office)-এ গিয়ে হাতে আবেদন করতে পারেন।
সেখানে প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণ করে ফি জমা দিতে হয়।

জমি খারিজ সম্পন্ন হতে কতদিন লাগে?

সাধারণত অনলাইন বা সরাসরি আবেদন করার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মিউটেশন সম্পন্ন হয়।
তবে কিছু ক্ষেত্রে, যেমন — জমির সীমা বা মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকলে, সময় ৬০ দিন পর্যন্ত লাগতে পারে।

অনলাইন খারিজ আবেদন ট্র্যাক করার উপায়

অনলাইনে আবেদন করার পর আপনার আবেদনটির অগ্রগতি দেখতে পারেন নিচের ধাপে:

  1. https://mutation.land.gov.bd ভিজিট করুন।
  2. “আবেদন ট্র্যাক করুন” অপশন নির্বাচন করুন।
  3. আপনার আবেদন আইডি দিন।
  4. স্ট্যাটাস চেক করুন (Pending / Approved / Rejected)।

জমি খারিজের সুবিধা

  • জমির মালিকানা আইনগতভাবে প্রমাণিত হয়
  • রেকর্ড আপডেট থাকায় বিক্রয় বা বন্ধক সহজ হয়
  • কর প্রদানের ঝামেলা কমে
  • ভবিষ্যতে বিরোধের সম্ভাবনা হ্রাস পায়

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: জমি খারিজ না করলে কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: খারিজ না করলে নতুন মালিকের নামে সরকারিভাবে জমির রেকর্ড থাকবে না, ফলে বিক্রয় বা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না।

প্রশ্ন ২: জমি খারিজ করতে কত দিন লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে কাজ শেষ হয়, তবে এলাকাভেদে সময় কিছুটা বাড়তে পারে।

প্রশ্ন ৩: অনলাইনে খারিজ করলে কি অফিসে যেতে হয়?
উত্তর: অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনলাইনেই সম্পন্ন করা যায়, তবে দলিল যাচাই বা স্থল পরিদর্শনের জন্য একবার অফিসে ডাকা হতে পারে।

প্রশ্ন ৪: খারিজের পরে কীভাবে জানব আমার নামে জমি হয়েছে?
উত্তর: মিউটেশন কপি বা নতুন খতিয়ান ইস্যু হলে সেটিতে আপনার নাম দেখা যাবে, এবং অনলাইনেও তা যাচাই করা যাবে।

উপসংহার

জমি খারিজ করা প্রতিটি জমির মালিকের আইনি দায়িত্ব। এটি জমির সঠিক মালিকানা নিশ্চিত করে এবং ভবিষ্যতের ঝামেলা থেকে রক্ষা করে। তাই জমি ক্রয়, উত্তরাধিকার বা দান যেকোনো প্রক্রিয়ার পরই দ্রুত খারিজ সম্পন্ন করা জরুরি। অনলাইনে আবেদন ব্যবস্থা শুরু হওয়ায় এখন কাজটি আরও সহজ ও স্বচ্ছ হয়েছে।

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!

আরও পড়ুন-জমির দলিল সংশোধন করার কারন

👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।