কোন সিমের নেটওয়ার্ক সবচেয়ে দুর্বল? ৯০% মানুষ জানে না আসল সত্য!

বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটিরও বেশি মোবাইল সংযোগ রয়েছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ কল করে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে, ভিডিও দেখে, ব্যবসা পরিচালনা করে—সবকিছুই এই মোবাইল নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু একটা বিষয় আমরা সবাই অনুভব করি: কখনো সিগন্যাল চলে যায়, কল কেটে যায়, বা ইন্টারনেটের গতি একদম turtle স্পিডে নেমে আসে! তখনই মনে প্রশ্ন জাগে — “এই দেশে আসলে কোন সিমের নেটওয়ার্ক সবচেয়ে দুর্বল?”

অনেকে বলে গ্রামীণফোন ভালো, কেউ বলে রবি বা বাংলালিংকই সেরা, আবার কেউ বলে “টেলিটক তো কাজই করে না!” — কিন্তু আসল সত্যটা অনেকেই জানেন না।

আরও পড়ুন-গ্রামীণফোন নিয়ে এলো কিস্তিতে স্মার্টফোন+ইন্টারনেট + মিনিট একসাথে

বাংলাদেশের প্রধান মোবাইল অপারেটরগুলো

বর্তমানে বাংলাদেশে চারটি প্রধান মোবাইল অপারেটর সক্রিয়ভাবে সেবা দিচ্ছে:

  1. গ্রামীণফোন (Grameenphone)

  2. রবি (Robi Axiata Limited)

  3. বাংলালিংক (Banglalink Digital Communications)

  4. টেলিটক (Teletalk Bangladesh Ltd)

এদের মধ্যে গ্রামীণফোন ও রবি বেশি জনপ্রিয় হলেও, প্রতিটি কোম্পানির শক্তি ও দুর্বলতা দুই-ই রয়েছে। নিচে বিস্তারিতভাবে দেখা যাক।

নেটওয়ার্ক কাভারেজে কারা এগিয়ে, কারা পিছিয়ে?

গ্রামীণফোন (GP)

গ্রামীণফোনকে সাধারণত “বাংলাদেশের সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক” বলা হয়। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রায় সব এলাকায় তাদের টাওয়ার রয়েছে। কল সংযোগ ভালো, ইন্টারনেটও তুলনামূলক দ্রুত।
তবে কিছু প্রত্যন্ত এলাকা, বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চল বা বনাঞ্চলে, GP সিগন্যালও দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া, তাদের ইন্টারনেট প্যাকেজ তুলনামূলক ব্যয়বহুল।

রবি (Robi)

রবি অনেক এলাকায় দ্রুত ইন্টারনেট সেবা দিলেও, কিছু জায়গায় কল ড্রপ ও সিগন্যাল ফ্লাকচুয়েশন সমস্যা দেখা যায়। তারা ৪.৫জি কাভারেজের দাবি করে, তবে বাস্তবে সেটা সব জায়গায় পাওয়া যায় না।

বাংলালিংক (Banglalink)

বাংলালিংক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেট গতিতে ভালো উন্নতি করেছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে তাদের স্পিড বেশ প্রশংসনীয়। তবে গ্রাম বা সীমান্ত এলাকায় সিগন্যাল স্থায়িত্ব কম। অনেকেই অভিযোগ করেন, “ডাটা কানেকশন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।”

টেলিটক (Teletalk)

টেলিটক হলো বাংলাদেশের সরকারি অপারেটর। সরকারি সেবা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, পরীক্ষার ফি প্রদান ইত্যাদিতে এই সিমটি প্রয়োজনীয়। কিন্তু বাস্তবতায়, টেলিটকের নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও স্পিড দুই-ই সবচেয়ে দুর্বল।
বিশেষ করে ঢাকার বাইরে, অনেক এলাকায় টেলিটক সিগন্যাল ধরাই যায় না। কল ড্রপ, ইন্টারনেট কানেকশন সমস্যা এবং নেটওয়ার্ক অনুপস্থিতি হলো তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

ইন্টারনেট স্পিড বিশ্লেষণ

নানা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী (বিভিন্ন ফোরাম, গ্রুপ, রিভিউ বিশ্লেষণে) গড় ডাউনলোড স্পিডের চিত্র এমন দেখা যায়:

অপারেটর গড় ডাউনলোড স্পিড মন্তব্য
গ্রামীণফোন 12–18 Mbps শহরে চমৎকার, গ্রামে মাঝারি
বাংলালিংক 10–16 Mbps শহরে ভালো, কিন্তু অনেক এলাকায় ওঠানামা
রবি 9–14 Mbps অনেক জায়গায় স্থিতিশীল নয়
টেলিটক 3–5 Mbps খুব ধীর, অনেক সময় কাজই করে না

এখানে স্পষ্ট বোঝা যায় — টেলিটক সবচেয়ে পিছিয়ে।

কল কোয়ালিটি ও নেটওয়ার্ক স্থিতিশীলতা

বাংলাদেশে অনেকেই মোবাইল কলের সময় “কল কেটে যাওয়া” বা “ভয়েস বিকৃত” হওয়ার অভিজ্ঞতা পান।
এই ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন সাধারণত সবচেয়ে স্থিতিশীল, এরপর রবি ও বাংলালিংক।
টেলিটকে কল কোয়ালিটি প্রায়ই দুর্বল থাকে, এমনকি অনেক সময় “নেটওয়ার্ক ব্যস্ত” বা “নম্বর পাওয়া যাচ্ছে না” বার্তা আসে।

কেন টেলিটকের নেটওয়ার্ক সবচেয়ে দুর্বল বলা হয়?

১. অবকাঠামোগত ঘাটতি:
টাওয়ার সংখ্যা সীমিত, ফলে দেশের বড় অংশে কাভারেজ দুর্বল।

২. সরকারি প্রকল্প নির্ভরতা:
বেসরকারি অপারেটরদের মতো বড় বিনিয়োগ নেই; তাই উন্নয়ন ধীর।

৩. কম গ্রাহক ব্যবহার:
টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক কম, তাই নেটওয়ার্ক উন্নয়নে প্রণোদনা কম।

৪. সিগন্যাল ফ্লাকচুয়েশন:
কখনো সিগন্যাল আসে, কখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায় — বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে।

৫. ইন্টারনেট স্পিডে দুর্বলতা:
৪জি কাভারেজ অনেক এলাকায় অনুপস্থিত, এবং গতি কম।

তাহলে কোন সিম কেনা উচিত?

আপনার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে সঠিক সিম বেছে নেওয়া উচিত:

ব্যবহার ধরন কোন সিম উপযুক্ত
দৈনন্দিন কল, স্ট্যাবল নেটওয়ার্ক গ্রামীণফোন
কম খরচে ইন্টারনেট বাংলালিংক
সন্তোষজনক প্যাকেজ ও অফার রবি
সরকারি ফর্ম, পরীক্ষা বা ভর্তি কাজে টেলিটক

তবে যদি আপনি এমন এলাকা থাকেন যেখানে সিগন্যালই দুর্বল, সেখানে যে সিমই ব্যবহার করুন না কেন, সমস্যা থেকে যাবে। সেক্ষেত্রে WiFi বা নেটওয়ার্ক বুস্টার ব্যবহার করাই উত্তম।

নতুন সিম কেনার আগে যা করবেন

  1. আপনার এলাকায় সিগন্যাল কেমন তা আগে জেনে নিন।

  2. বন্ধু বা প্রতিবেশীর অভিজ্ঞতা জিজ্ঞাসা করুন।

  3. ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করে দেখুন।

  4. সঠিক ৪জি/৫জি সাপোর্ট রয়েছে কিনা নিশ্চিত করুন।

  5. নেটওয়ার্কের গ্রাহক সেবা কেমন, সেটিও জেনে নিন।

উপসংহার

বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবার মান এলাকাভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে বিচার করলে, টেলিটক এখনো সবচেয়ে দুর্বল নেটওয়ার্ক হিসেবে পরিচিত।
তারপর তুলনামূলকভাবে মাঝারি মানের হলো রবি ও বাংলালিংক। আর সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করছে গ্রামীণফোন, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে।

তাই আপনি যদি নতুন সিম কেনার পরিকল্পনা করেন, আগে নিজের এলাকায় কার সিগন্যাল ভালো সেটা যাচাই করুন — কারণ “একজনের জন্য সেরা সিম” অন্যের জন্য “সবচেয়ে দুর্বল সিম” হতে পারে।

আরও পড়ুন-প্রাইম ব্যাংকের জিরো ক্রেডিট কার্ড -কোন ফি নেই, সব প্রিমিয়াম সুবিধা

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!
👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।