ষাট গম্বুজ মসজিদের ইতিহাস-বাংলার ঐতিহ্যের অমূল্য নিদর্শন

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট জেলা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। এখানেই অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম ইসলামী স্থাপত্যগুলোর একটি — ষাট গম্বুজ মসজিদ। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত এই মসজিদ আসলে ষাটটি গম্বুজ নয়, বরং ৮১টি গম্বুজ নিয়ে নির্মিত। তবে ভেতরে থাকা ৬০টি স্তম্ভের কারণে একে ষাট গম্বুজ মসজিদ বলা হয়ে থাকে

১৫শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে খান জাহান আলী এটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং বাংলাদেশের একটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র।

আরও পড়ুন-ইতিহাসের জনক কে?

ষাট গম্বুজ মসজিদের ইতিহাস

মসজিদটির ইতিহাস জড়িয়ে আছে খান জাহান আলী-এর নামের সাথে। তিনি ছিলেন একাধারে মুসলিম শাসক, সুফি সাধক ও সমাজসংগঠক। ১৪৫০-এর দশকে তিনি বাগেরহাটে প্রতিষ্ঠা করেন ‘খলিফাতাবাদ’ নগরী, যা ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই সময়কালে তিনি অসংখ্য মসজিদ ও স্থাপত্য নির্মাণ করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ষাট গম্বুজ মসজিদ, যা শুধু ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, সামাজিক ও শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

ষাট গম্বুজ মসজিদের স্থাপত্যশৈলীর বৈশিষ্ট্য

ষাট গম্বুজ মসজিদকে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলা হয়। এর কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো—

১. গম্বুজ

  • মোট ৭৭টি ছোট গম্বুজ এবং চার কোণের ৪টি বড় গম্বুজ রয়েছে।

  • সব মিলিয়ে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১টি

২. স্তম্ভ

  • মসজিদের ভেতরে রয়েছে ৬০টি স্তম্ভ, যা ছাদ ও গম্বুজকে ধারণ করছে।

  • এই স্তম্ভের সংখ্যা থেকেই নাম হয়েছে “ষাট গম্বুজ মসজিদ”।

৩. দরজা ও জানালা

  • পূর্ব দিকে ১১টি বড় দরজা রয়েছে, যা আলো ও বাতাস চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হত।

  • উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে আরও কয়েকটি দরজা।

৪. মিহরাব ও সজ্জা

  • পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে সুন্দরভাবে অলঙ্কৃত একাধিক মিহরাব।

  • ইট ও টেরাকোটা অলঙ্করণের ব্যবহার স্থাপত্যে অনন্য সৌন্দর্য এনেছে।

৫. দেয়ালের গঠন

  • দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৬ ফুট।

  • এটি ইট, চুন-সুরকি ও চুনকাম দিয়ে তৈরি, যা তুঘলক স্থাপত্যশৈলীর অনুসরণে নির্মিত।

ষাট গম্বুজ মসজিদের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ষাট গম্বুজ মসজিদসহ পুরো বাগেরহাট নগরীকে “Mosque City of Bagerhat” নামে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে এই মসজিদ খ্যাতি অর্জন করে এবং সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।

ষাট গম্বুজ মসজিদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

  • মসজিদটি শুধু নামাজের স্থান নয়, বরং ধর্মীয় শিক্ষা ও সমাজসংগঠনের কেন্দ্র ছিল।

  • খান জাহান আলীর ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের অন্যতম স্মারক এটি।

  • আজও স্থানীয় মানুষ এখানে নামাজ আদায় করেন এবং পর্যটকরা এর স্থাপত্য উপভোগ করতে আসেন।

ষাট গম্বুজ মসজিদের সংরক্ষণ কার্যক্রম

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ইউনেস্কোর সহায়তায় মসজিদটি সংরক্ষণ করছে।

  • ক্ষয় রোধে দেয়াল সংস্কার করা হচ্ছে।

  • ভেতরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা।

  • পাশাপাশি কাছাকাছি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে আবিষ্কৃত নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়েছে।

ষাট গম্বুজ মসজিদের পর্যটন তথ্য

  • অবস্থান: বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে।

  • ঢাকা থেকে যাতায়াত: সড়ক ও নৌপথে সহজে যাওয়া যায়।

  • সেরা সময়: শীতকাল (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি)।

ষাট গম্বুজ মসজিদ কে নির্মাণ করেন কত সালে?

ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন মুসলিম শাসক ও সুফি সাধক খান জাহান আলী। ধারণা করা হয়, ১৪৪২ থেকে ১৪৫৯ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। তিনি বাগেরহাটকে “খলিফাতাবাদ” নামে একটি ইসলামী নগরী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন, যার অন্যতম নিদর্শন এই মসজিদ।

ষাট গম্বুজ মসজিদ সম্পর্কে রচনা

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের একটি অনন্য ঐতিহাসিক স্থাপত্য। এটি শুধু নামাজ আদায়ের স্থান ছিল না, বরং শিক্ষা ও সমাজ সংগঠনের কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হত। এর অনন্য স্থাপত্যশৈলী, মজবুত দেয়াল ও অসংখ্য গম্বুজ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি মসজিদটির গুরুত্বকে আরও বৃদ্ধি করেছে।

ষাট গম্বুজ মসজিদ এর গম্বুজ সংখ্যা

মসজিদের নাম “ষাট গম্বুজ” হলেও এর প্রকৃত গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি। এর মধ্যে ৭৭টি ছোট গম্বুজ এবং চার কোণে ৪টি বড় গম্বুজ রয়েছে। ভেতরে থাকা ৬০টি স্তম্ভ গম্বুজগুলিকে ধারণ করছে।

ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বলা হয়?

যদিও মসজিদে ৮১টি গম্বুজ রয়েছে, তবুও ভেতরের ৬০টি স্তম্ভের কারণে একে “ষাট গম্বুজ মসজিদ” বলা হয়। এ নাম স্থানীয়দের মধ্যে প্রচলিত হয়ে ইতিহাসে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে।

ষাট গম্বুজ মসজিদ কোন আমলের?

ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল ১৫শ শতকে, সুলতানি আমলে। তখন বাংলার স্থাপত্যে তুঘলক শৈলীর প্রভাব দেখা যায়, যার প্রতিফলন এই মসজিদের নকশায় স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়।

ষাট গম্বুজ মসজিদ নিয়ে উক্তি

বাংলাদেশের স্থাপত্য ইতিহাসে ষাট গম্বুজ মসজিদকে বলা হয় —
✨ “বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য মহাকাব্য।”
✨ “বাগেরহাটের মুকুটমণি।”
✨ “ইতিহাস, ধর্ম ও সংস্কৃতির মিলনস্থল।”

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রকৃত গম্বুজ সংখ্যা কত?
উত্তর: প্রকৃত সংখ্যা ৮১টি (৭৭টি ছোট + ৪টি বড় গম্বুজ)।

প্রশ্ন ২: কেন একে ষাট গম্বুজ মসজিদ বলা হয়?
উত্তর: মসজিদের ভেতরে মোট ৬০টি স্তম্ভ আছে, তাই একে ষাট গম্বুজ মসজিদ বলা হয়।

প্রশ্ন ৩: কে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন?
উত্তর: খান জাহান আলী ১৫শ শতকে এটি নির্মাণ করেছিলেন।

প্রশ্ন ৪: ইউনেস্কোর স্বীকৃতি কবে পাওয়া যায়?
উত্তর: ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

উপসংহার

ষাট গম্বুজ মসজিদ শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত সাক্ষী। খান জাহান আলীর দূরদর্শিতা ও স্থাপত্য প্রতিভার এক অসাধারণ নিদর্শন এটি। সঠিক সংরক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।

ℹ️ আরও কন্টেন্ট নিয়মিত পেতে- ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকুন!
ℹ️ ভিডিও আকারে কনটেন্ট নিয়মিত পেতে –ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন!

আরও পড়ুন-কে এই অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী?

👉টেক নিউজের সকল খবর সবার আগে পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন!

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।