যাকাত শব্দের অর্থ কি?

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি শুধু আর্থিক ইবাদতই নয়, বরং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যাকাত শব্দের অর্থ কি? এটি কেন ইসলামে এত গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। যাকাত শুধু ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি একটি সামাজিক দায়িত্বও বটে। এটি সম্পদকে পবিত্র করে, এর বরকত বৃদ্ধি করে এবং সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা যাকাত শব্দের অর্থ, এর তাৎপর্য, নিয়ম, হিসাব এবং এর সামাজিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যাকাত সম্পর্কে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এখানে পাবেন। চলুন, শুরু করা যাক।

যাকাত শব্দের অর্থ কি?

আরবি শব্দ “যাকাত” (زكاة) এর আক্ষরিক অর্থ হলো পবিত্রতা, বৃদ্ধি এবং প্রশস্ততা। ইসলামী পরিভাষায়, যাকাত হলো একজন মুসলিমের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব-দুঃখী ও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা। এটি আল্লাহর নির্দেশিত একটি ফরজ ইবাদত, যা সম্পদকে পবিত্র করে এবং এর বরকত বৃদ্ধি করে।

আরও-বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়?

যাকাতের গুরুত্ব

যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ। এটি শুধু ধর্মীয় কর্তব্যই নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম। যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও গরিবের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান কমে, সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়।

কুরআন ও হাদিসে যাকাতের গুরুত্ব

কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো।” (সূরা বাকারা, আয়াত ১১০)

হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি যাকাত দেয় না, তার সালাত কবুল হয় না।” (ইবনে মাজাহ)

যাকাত কাকে দিতে হয়?

যাকাত শুধু গরিব-দুঃখীকে দেওয়া হয় না, বরং ইসলামে যাকাতের হকদার ৮ শ্রেণীর লোক রয়েছে। কুরআনে এদের উল্লেখ করা হয়েছে:

“যাকাত তো শুধু ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য।” (সূরা তাওবা, আয়াত ৬০)

যাকাতের নিসাব ও হিসাব

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ (নিসাব) অতিক্রম করতে হবে। নিসাব হলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য। বর্তমানে নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য স্বর্ণ বা রূপার বাজার মূল্য বিবেচনা করা হয়।

যাকাতের হিসাব

যাকাতের পরিমাণ হলো সম্পদের মোট পরিমাণের ২.৫%। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সম্পদের মূল্য ১,০০,০০০ টাকা হয়, তবে আপনার যাকাত হবে ২,৫০০ টাকা।

যাকাতের সময়

যাকাত প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। তবে প্রতি বছর একবার সম্পদের হিসাব করে যাকাত আদায় করা উচিত। অনেকেই রমজান মাসে যাকাত আদায় করেন, কারণ এই মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

যাকাতের ফজিলত

যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদে বরকত বৃদ্ধি পায়, গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। হাদিসে বলা হয়েছে,

“যাকাত সম্পদ কমায় না, বরং তা বৃদ্ধি করে।” (মুসলিম)

যাকাত না দেওয়ার পরিণতি

যাকাত ইসলামের একটি ফরজ ইবাদত। এটি অস্বীকার করা বা আদায় না করা কবিরা গুনাহ। কুরআনে বলা হয়েছে,

“যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।” (সূরা তাওবা, আয়াত ৩৪)

যাকাতের সামাজিক প্রভাব

যাকাত শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতই নয়, বরং এটি সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। যাকাতের মাধ্যমে গরিব-দুঃখীরা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

প্রশ্ন-উত্তর 

১. যাকাত কখন ফরজ হয়?

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নিসাব পূর্ণ হওয়া এবং এক বছর পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন।

২. যাকাতের নিসাব কী?

নিসাব হলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য।

৩. যাকাত কাকে দেওয়া যায়?

যাকাত ফকির, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং মুসাফিরদের মতো ৮ শ্রেণীর লোককে দেওয়া যায়।

৪. যাকাতের পরিমাণ কত?

যাকাতের পরিমাণ হলো সম্পদের মোট পরিমাণের ২.৫%।

৫. যাকাত না দেওয়ার পরিণতি কী?

যাকাত না দেওয়া কবিরা গুনাহ এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির কথা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।

উপসংহার

যাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা সম্পদকে পবিত্র করে এবং এর বরকত বৃদ্ধি করে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নিয়মিত যাকাত আদায় করা এবং এর মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

Assalamu Alaikum wa Rahmatullah. I am Md. Sanaul Bari. I am a salaried employee by profession and the admin of this website. Apart from my job, I have been writing on my own website for the past 14 years and creating content on my own YouTube and Facebook. Special Note - If there is any mistake in the writing, please forgive me. Thank you.