বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায়?

রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই মাসে মুসলিমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং অন্যান্য কিছু কাজ থেকে বিরত থাকে। তবে রোজা রাখার সময় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন বমি হওয়া। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ এবং শরীয়তের বিধান সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা “বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায়?” এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাশাপাশি রোজা সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিও তুলে ধরব।

বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায়?

ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী, বমি করলে রোজা ভাঙে কি না তা নির্ভর করে বমির পরিমাণ এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা হয়েছে কি না তার উপর। নিম্নে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

  1. অনিচ্ছাকৃত বমি:
    যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করে এবং তা কম পরিমাণে হয়, তাহলে তার রোজা ভাঙবে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
    “যে ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তার উপর কাফফারা (রোজা ভঙ্গের ক্ষতিপূরণ) নেই।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ২৩৮০)
    অর্থাৎ, অনিচ্ছাকৃত এবং সামান্য পরিমাণে বমি হলে রোজা ভাঙে না।
  2. ইচ্ছাকৃত বমি:
    যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে। হাদিসে উল্লেখ আছে,
    “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তার রোজা ভেঙে যাবে।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস নং ৭২০)
    তাই ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

আরও-তারাবির নামাজ ৮ রাকাত পড়া যাবে কি?

  1. বেশি পরিমাণে বমি:
    যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি পরিমাণে বমি হয় এবং তা গলা দিয়ে ফিরে আসে, তাহলে রোজা ভেঙে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে। কিছু আলেম মনে করেন, বেশি পরিমাণে বমি হলে রোজা ভেঙে যায়, আবার কিছু আলেম মনে করেন তা ভাঙে না। তবে সতর্কতার জন্য এই অবস্থায় রোজা পুনরায় রাখা উচিত।

রোজা ভঙ্গের অন্যান্য কারণ

বমি ছাড়াও রোজা ভঙ্গের আরও কিছু কারণ রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:

  1. ইচ্ছাকৃত পানাহার:
    রোজা রাখা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা রোজা ভঙ্গ করে।
  2. ঋতুস্রাব বা প্রসব:
    মহিলাদের ঋতুস্রাব বা প্রসবের সময় রোজা রাখা যায় না। এই সময়ে রোজা ভেঙে যায় এবং পরে কাজা (কাফফারা) রাখতে হয়।
  3. ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত:
    রোজা রাখা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটানো রোজা ভঙ্গ করে।
  4. ধূমপান বা ধোঁয়া গ্রহণ:
    ধূমপান বা ধোঁয়া গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যায়।
  5. ইনজেকশন বা স্যালাইন গ্রহণ:
    পুষ্টিকর ইনজেকশন বা স্যালাইন গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যায়।

রোজা ভঙ্গ হলে কী করণীয়?

যদি কোনো কারণে রোজা ভেঙে যায়, তাহলে ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত:

  1. কাজা রোজা:
    রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে পরে কাজা রোজা রাখতে হবে। অর্থাৎ, রমজান মাসের পরে অন্য সময়ে একই সংখ্যক রোজা রাখতে হবে।
  2. কাফফারা:
    যদি রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ভঙ্গ করা হয়, তাহলে কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা হলো ৬০ দিন ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখা। যদি কেউ তা করতে অক্ষম হয়, তাহলে ৬০ জন মিসকিনকে খাবার দান করতে হবে।

বমি হওয়ার সময় করণীয়

রোজা রাখা অবস্থায় বমি হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এই সময়ে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত:

  1. শান্ত থাকা:
    বমি হওয়ার সময় শান্ত থাকা এবং অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া উচিত।
  2. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
    বমি হওয়ার পরে মুখ এবং হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।
  3. পানি দিয়ে কুলি করা:
    বমি হওয়ার পরে পানি দিয়ে কুলি করা উচিত, যাতে মুখের স্বাদ এবং গন্ধ দূর হয়।
  4. ডাক্তারের পরামর্শ:
    যদি বমি হওয়ার সমস্যা বারবার হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

হালকা বমি হলে কি রোজা ভাঙ্গে?

না, হালকা বমি হলে রোজা ভাঙে না। তবে, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে বা প্রচুর পরিমাণে বমি করে, তবে রোজা ভেঙে যায়। সাধারণত, স্বাভাবিকভাবে বা অজান্তে বমি হলে রোজা ভাঙে না, এবং সে ক্ষেত্রে রোজা ঠিক থাকে।

তবে, যদি কোনো শারীরিক সমস্যা বা অসুস্থতার কারণে বমি হয়ে থাকে এবং আপনি উদ্বিগ্ন হন, তাহলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভাল।

অজ্ঞান হলে রোজা ভাঙ্গা যাবে কি?

না, অজ্ঞান হলে রোজা ভাঙ্গে না। রোজা ভাঙার শর্ত হল কিছু খাওয়া-দাওয়া বা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করা (যেমন, ইচ্ছা করে বমি করা বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা)। যদি অজ্ঞান হয়ে যান, তাহলে আপনার রোজা ঠিক থাকে, কারণ এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ঘটনা।

তবে, যদি আপনি দীর্ঘ সময় অজ্ঞান থাকেন এবং এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু খেতে বা পান করতে হয়, তাহলে সেটা আলাদা ব্যাপার, তবে শুধু অজ্ঞান হওয়া রোজা ভাঙার কারণ নয়।

বমি করলে কি ওযু ভেঙে যায়?

হ্যাঁ, বমি করলে ওযু ভেঙে যায়। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, যদি কেউ বমি করে, তাহলে তার ওযু ভেঙে যায় এবং তাকে নতুন করে ওযু করতে হবে।

তবে, যদি কেউ অজান্তে বা স্বাভাবিকভাবে বমি করে, তবে তার ওযু ভাঙবে, এবং তার জন্য নতুন করে ওযু করা জরুরি।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: বমি হওয়ার পরে রোজা ভেঙে গেলে কী করব?
উত্তর: যদি বমি হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যায়, তাহলে পরে কাজা রোজা রাখতে হবে। তবে অনিচ্ছাকৃত এবং সামান্য পরিমাণে বমি হলে রোজা ভাঙে না।

প্রশ্ন ২: রোজা রাখা অবস্থায় বমি হওয়ার আগে বমি বন্ধ করার চেষ্টা করা কি ঠিক?
উত্তর: হ্যাঁ, বমি হওয়ার আগে তা বন্ধ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রশ্ন ৩: বমি হওয়ার পরে মুখে পানির স্বাদ থাকলে কি রোজা ভেঙে যায়?
উত্তর: না, মুখে পানির স্বাদ থাকলে রোজা ভাঙে না। তবে পানি গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে।

উপসংহার

রোজা রাখা অবস্থায় বমি হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী, অনিচ্ছাকৃত এবং সামান্য পরিমাণে বমি হলে রোজা ভাঙে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা ভেঙে যায়। তাই রোজা রাখার সময় সতর্ক থাকা এবং শরীয়তের বিধান মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো কারণে রোজা ভেঙে যায়, তাহলে পরে কাজা রোজা রাখতে হবে। আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছে।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আমি মোঃ সানাউল বারী। পেশায় আমি একজন চাকরিজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকরির পাশাপাশি, আমি গত ১৪ বছর ধরে আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং আমার নিজস্ব ইউটিউব এবং ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করছি। বিশেষ দ্রষ্টব্য - লেখায় যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। ধন্যবাদ।