তারাবি নামাজ রমজান মাসে এশার নামাজের পর আদায় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ইবাদত। নিয়ত মূলত অন্তরের ইচ্ছা; তাই মনের মধ্যে তারাবি নামাজ পড়ার সংকল্প করলেই নিয়ত সম্পন্ন হয়। তবে ইচ্ছা করলে মুখেও নিয়ত উচ্চারণ করা যেতে পারে।
তারাবি নামাজের নিয়ত (আরবি):
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَيْنِ صَلَاةَ التَّرَاوِيحِ سُنَّةً لِلّٰهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اَللّٰهُ أَكْبَر
তারাবি নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাতাইনি সালাতাত তারাবিহি সুন্নাতাল্লিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরিফাহ, আল্লাহু আকবার।
তারাবি নামাজের নিয়ত বাংলা অর্থ:
আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।
যদি জামাতে নামাজ আদায় করা হয়, তাহলে নিয়তে “এই ইমামের পেছনে” অংশটি যোগ করা যেতে পারে।
যাদের আরবি উচ্চারণে সমস্যা হয়, তারা বাংলায়ও নিয়ত করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ: “আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।”
তারাবি নামাজ দুই রাকাত করে সালাম ফিরিয়ে আদায় করা হয়। প্রতি চার রাকাত পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া সুন্নত, যা “তারাবি” শব্দের অর্থের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
রোজার নিয়ত
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা রমজান মাসে প্রতিদিন ফজরের পূর্বে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের পর ইফতারের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। রোজা পালনের জন্য নিয়ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা মূলত অন্তরের ইচ্ছা প্রকাশ করে। মনে মনে নিয়ত করলেই রোজা সহীহ হয়, তবে ইচ্ছা করলে মুখেও নিয়ত উচ্চারণ করা যেতে পারে।
রোজার নিয়ত আরবি
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمَضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضًا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّلْ مِنِّي اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতু আন আসুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজার নিয়ত বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের আপনার সন্তুষ্টির জন্য ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা করছি। আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
সেহরির সময় এই নিয়ত করা সুন্নত, তবে মনে মনে নিয়ত করলেই রোজা সহীহ হবে।
রোজা কত তারিখে ২০২৫
২০২৫ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২5 তারিখে রমজানের চাঁদ দেখা যেতে পারে, এবং সেই অনুযায়ী ১ মার্চ ২০২5 তারিখে রোজা শুরু হতে পারে।
অন্যদিকে, কিছু সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে রমজান মাস শুরু হতে পারে।
চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে রমজান মাসের সঠিক তারিখ নির্ধারিত হয়। তাই, স্থানীয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রমজান শুরুর তারিখ একদিন আগে বা পরে হতে পারে। সঠিক তারিখ জানতে স্থানীয় ইসলামিক কর্তৃপক্ষের ঘোষণার ওপর নির্ভর করা উচিত।
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা রমজান মাসে প্রতিদিন ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পালন করা হয়। রোজা পালনকালে কিছু কাজ রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জানা উচিত। নিচে রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:
- ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা: রোজা অবস্থায় সচেতনভাবে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যায়।
- স্বামী-স্ত্রীর সহবাস: রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন রোজা ভঙ্গের কারণ হয়।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা: নিজ ইচ্ছায় বমি করলে রোজা ভেঙে যায়।
- হায়েয বা নিফাস (মাসিক বা প্রসব পরবর্তী রক্তস্রাব): রমজান মাসে দিনের বেলায় নারীদের হায়েয বা নিফাস শুরু হলে রোজা ভেঙে যায়।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটানো: হস্তমৈথুন বা অন্য কোনো উপায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটালে রোজা ভেঙে যায়।
- শিঙ্গা লাগানো বা রক্তদান করা: শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করা বা রক্তদান করলে রোজা ভেঙে যায়।
- ইচ্ছাকৃতভাবে ধূমপান করা: রোজা অবস্থায় ধূমপান করলে রোজা ভেঙে যায়।
- ইনজেকশন বা স্যালাইন গ্রহণ করা: যদি ইনজেকশন বা স্যালাইনের মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহ করা হয়, তবে রোজা ভেঙে যায়।
- ইচ্ছাকৃতভাবে নাক বা কান দিয়ে কিছু প্রবেশ করানো: নাক বা কানের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো পদার্থ শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যায়।
- ইচ্ছাকৃতভাবে দাঁতের মাজন বা টুথপেস্ট গিলে ফেলা: দাঁত পরিষ্কার করার সময় যদি টুথপেস্ট বা মাজন গিলে ফেলা হয়, তবে রোজা ভেঙে যায়।
উপরোক্ত কাজগুলো রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। তাই রোজা পালনকালে এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
রোজার ক্যালেন্ডার ২০২৫
২০২৫ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ১ মার্চ, যা শনিবার।
রমজান মাস ৩০ দিন স্থায়ী হয়ে ৩০ মার্চ, রবিবার শেষ হবে।
তবে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে এই তারিখগুলো একদিন আগে বা পরে হতে পারে।
নিচে ২০২৫ সালের রমজান মাসের সম্ভাব্য ক্যালেন্ডার উল্লেখ করা হলো:
তারিখ |
দিন |
রমজান |
সেহরির শেষ সময় |
ইফতারের সময় |
১ মার্চ |
শনিবার |
১ রমজান |
৫:০৫ পূর্বাহ্ণ |
৬:২০ অপরাহ্ণ |
২ মার্চ |
রবিবার |
২ রমজান |
৫:০৪ পূর্বাহ্ণ |
৬:২১ অপরাহ্ণ |
৩ মার্চ |
সোমবার |
৩ রমজান |
৫:০৩ পূর্বাহ্ণ |
৬:২১ অপরাহ্ণ |
৪ মার্চ |
মঙ্গলবার |
৪ রমজান |
৫:০২ পূর্বাহ্ণ |
৬:২২ অপরাহ্ণ |
৫ মার্চ |
বুধবার |
৫ রমজান |
৫:০১ পূর্বাহ্ণ |
৬:২২ অপরাহ্ণ |
৬ মার্চ |
বৃহস্পতিবার |
৬ রমজান |
৫:০০ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৩ অপরাহ্ণ |
৭ মার্চ |
শুক্রবার |
৭ রমজান |
৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৩ অপরাহ্ণ |
৮ মার্চ |
শনিবার |
৮ রমজান |
৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৪ অপরাহ্ণ |
৯ মার্চ |
রবিবার |
৯ রমজান |
৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৪ অপরাহ্ণ |
১০ মার্চ |
সোমবার |
১০ রমজান |
৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৫ অপরাহ্ণ |
১১ মার্চ |
মঙ্গলবার |
১১ রমজান |
৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৫ অপরাহ্ণ |
১২ মার্চ |
বুধবার |
১২ রমজান |
৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৬ অপরাহ্ণ |
১৩ মার্চ |
বৃহস্পতিবার |
১৩ রমজান |
৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৬ অপরাহ্ণ |
১৪ মার্চ |
শুক্রবার |
১৪ রমজান |
৪:৫২ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৭ অপরাহ্ণ |
১৫ মার্চ |
শনিবার |
১৫ রমজান |
৪:৫১ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৭ অপরাহ্ণ |
১৬ মার্চ |
রবিবার |
১৬ রমজান |
৪:৫০ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৮ অপরাহ্ণ |
১৭ মার্চ |
সোমবার |
১৭ রমজান |
৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৮ অপরাহ্ণ |
১৮ মার্চ |
মঙ্গলবার |
১৮ রমজান |
৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৯ অপরাহ্ণ |
১৯ মার্চ |
বুধবার |
১৯ রমজান |
৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ |
৬:২৯ অপরাহ্ণ |
২০ মার্চ |
বৃহস্পতিবার |
২০ রমজান |
৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩০ অপরাহ্ণ |
২১ মার্চ |
শুক্রবার |
২১ রমজান |
৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩০ অপরাহ্ণ |
২২ মার্চ |
শনিবার |
২২ রমজান |
৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩১ অপরাহ্ণ |
২৩ মার্চ |
রবিবার |
২৩ রমজান |
৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩১ অপরাহ্ণ |
২৪ মার্চ |
সোমবার |
২৪ রমজান |
৪:৪২ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩২ অপরাহ্ণ |
২৫ মার্চ |
মঙ্গলবার |
২৫ রমজান |
৪:৪১ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩২ অপরাহ্ণ |
২৬ মার্চ |
বুধবার |
২৬ রমজান |
৪:৪০ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩৩ অপরাহ্ণ |
২৭ মার্চ |
বৃহস্পতিবার |
২৭ রমজান |
৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩৩ অপরাহ্ণ |
২৮ মার্চ |
শুক্রবার |
২৮ রমজান |
৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩৪ অপরাহ্ণ |
২৯ মার্চ |
শনিবার |
২৯ রমজান |
৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩৪ অপরাহ্ণ |
৩০ মার্চ |
রবিবার |
৩০ রমজান |
৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ |
৬:৩৫ অপরাহ্ণ |
উপরোক্ত সময়সূচী ঢাকা, বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য।
আপনার অবস্থান ভেদে সময় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে; তাই স্থানীয় সময়সূচী অনুসরণ করা সর্বোত্তম।
উপসংহার
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, ইবাদত, এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। সেহরি, ইফতার, তারাবি, এবং রোজার নিয়ত এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করতে পারি। সঠিক সময়সূচী ও নিয়ম মেনে চলা আমাদের কর্তব্য, যা আমাদের ইবাদতকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: সেহরির শেষ সময় কখন?
উত্তর: সেহরির শেষ সময় সুবহে সাদিক পর্যন্ত, যা ফজরের আজানের পূর্ব মুহূর্ত।
প্রশ্ন ২: ইফতার কখন করতে হয়?
উত্তর: সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ইফতার করতে হয়, যা মাগরিবের আজানের সময়।
প্রশ্ন ৩: তারাবি নামাজ কত রাকাত?
উত্তর: তারাবি নামাজ ২০ রাকাত, যা এশার নামাজের পর আদায় করা হয়।
প্রশ্ন ৪: রোজার নিয়ত কখন করতে হয়?
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔