“সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” একটি আরবি দোয়া, যা ইসলাম ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটি সাধারণত নামাজ, জিকির ও প্রার্থনায় ব্যবহৃত হয়। এই বাক্যটির অর্থ, উচ্চারণ, পড়ার নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে জানা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগ পোস্টে আমরা “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” এর সম্পূর্ণ বাংলা ব্যাখ্যা, উচ্চারণ, পড়ার পদ্ধতি এবং এর ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা অর্থ কি?
“সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى) একটি আরবি বাক্য, যার বাংলা অর্থ হলো:
“মহান আমার রব, যিনি সর্বোচ্চ।”
এখানে,
Also Read
-
“সুবহানা” (سُبْحَانَ) অর্থ হলো “পবিত্র” বা “মহিমান্বিত”।
-
“রাব্বি” (رَبِّيَ) অর্থ হলো “আমার রব” বা “আমার প্রভু”।
-
“আল-আলা” (الْأَعْلَى) অর্থ হলো “সর্বোচ্চ”।
এই দোয়াটি আল্লাহর মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে।
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বাংলা উচ্চারণ সহ
যারা আরবি ভাষায় দক্ষ নন, তাদের জন্য বাংলা উচ্চারণ সহ এই দোয়াটি নিচে দেওয়া হলো:
আরবি: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
বাংলা উচ্চারণ: “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা”
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ার নিয়ম
এই দোয়াটি সাধারণত নামাজের সিজদা ও রুকু অবস্থায় পড়া হয়। নিচে পড়ার সঠিক নিয়ম দেওয়া হলো:
১. রুকুতে পড়ার নিয়ম
রুকু অবস্থায় এই দোয়ার পরিবর্তে “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ) পড়া হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন মত রয়েছে।
২. সিজদায় পড়ার নিয়ম
সিজদা অবস্থায় নিম্নোক্ত দোয়া পড়া সুন্নত:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
“সুবহানা রাব্বিয়াল আলা”
(অর্থ: পবিত্র আমার রব, যিনি সর্বোচ্চ।)
-
কতবার পড়তে হয়?
কমপক্ষে ৩ বার পড়া সুন্নত, তবে বেশি পড়লে বেশি সওয়াব।
৩. জিকির হিসাবে পড়ার নিয়ম
নামাজের বাইরেও এই দোয়াটি জিকির হিসাবে পড়া যায়। এটি আল্লাহর জিকির ও তাসবিহ হিসাবে গণ্য হয়।
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা এর ফজিলত
এই দোয়াটির অনেক ফজিলত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত উল্লেখ করা হলো:
১. গুনাহ মোচন হয়
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যখন কোনো বান্দা সিজদা করে এবং ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ বলে, তখন তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং 484)
২. সিজদা আল্লাহর নিকটতম অবস্থা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন,
“বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় সিজদার অবস্থায়। সুতরাং সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করো।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং 482)
৩. মর্যাদা বৃদ্ধি ও গুনাহ মোচন
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি সিজদায় ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ বলে, আল্লাহ তার জন্য একটি নেকি লেখেন, একটি গুনাহ মোচন করেন এবং একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।”
(সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং 887)
৪. শান্তি ও প্রশান্তি লাভ
এই দোয়া আল্লাহর স্মরণের মাধ্যম, যা অন্তরে শান্তি আনে। কুরআনে বলা হয়েছে,
“যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।”
(সূরা রাদ, আয়াত 28)
প্রশ্ন-উত্তর(FAQ)
১. “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” কি শুধু সিজদায় পড়তে হয়?
না, এটি সিজদায় পড়া সুন্নত, তবে যেকোনো সময় জিকির হিসাবে পড়া যায়।
২. কতবার পড়লে বেশি ফজিলত পাওয়া যায়?
কমপক্ষে ৩ বার পড়া সুন্নত, তবে যত বেশি পড়া যায় তত ভালো।
৩. এই দোয়া পড়ার বিশেষ সময় আছে কি?
যেকোনো সময় পড়া যায়, তবে নামাজের সিজদায় পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
৪. “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” ও “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম”-এর মধ্যে পার্থক্য কি?
-
“সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” সিজদায় পড়া হয়, অর্থ “পবিত্র আমার রব, যিনি সর্বোচ্চ”।
-
“সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” রুকুতে পড়া হয়, অর্থ “পবিত্র আমার রব, যিনি মহান”।
সুবহানা রাব্বী আল আলা হযরত এর অর্থ কী?
“সুবহানা রাব্বী আল আলা” বাক্যটির অর্থ হলো: “মহান ও পবিত্র হলেন আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালক (আল্লাহ)”।
-
সুবহানা (سُبْحَانَ) = পবিত্র, মহান
-
রাব্বী (رَبِّي) = আমার প্রতিপালক
-
আল আলা (الْأَعْلَى) = সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা কখন বলতে হয়?
“সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى) বলা হয় প্রধানত সিজদার সময়। এটি সুন্নত তাসবিহ, যা নামাজের রুকু ও সিজদার নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ করা হয়।
সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম অর্থ কি
“সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম” (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ) এর অর্থ হলো:
“মহান ও পবিত্র হলেন আমার প্রতিপালক, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত।”
-
سُبْحَانَ (সুবহানা) = পবিত্র, নিষ্কলুষ, মহিমাময়।
-
رَبِّيَ (রাব্বিয়া) = আমার রব, আমার প্রতিপালক।
-
الْعَظِيمِ (আল-আজিম) = মহান, সর্বশ্রেষ্ঠ, পরাক্রমশালী।
সুবহানা অর্থ কি
“সুবহানা” (سُبْحَانَ) শব্দের অর্থ হলো:
“পবিত্র”, “মহিমাময়” বা “সমস্ত ত্রুটি থেকে মুক্ত”। এটি আরবি শব্দ, যা সাধারণত আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়।
সামিআল্লাহু লিমান হামিদা রাব্বানা লাকাল হামদ অর্থ
“সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” (سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ) এবং “রাব্বানা লাকাল হামদ” (رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ) বাক্য দুটির অর্থ হলো:
১. “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”
-
অর্থ: “আল্লাহ তার প্রশংসাকারীর ডাকে সাড়া দেন।”
-
ব্যবহার: নামাজে রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় (ইতিদাল) ইমাম বা মুসল্লি এটি বলেন।
২. “রাব্বানা লাকাল হামদ”
-
অর্থ: “হে আমাদের রব! সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র আপনারই জন্য।”
-
ব্যবহার: ইমাম বা মুসল্লি “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” বলার পর মুক্তাদি (অনুসারী) বা একাকী নামাজ আদায়কারী “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলেন।
উপসংহার
“সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা নামাজের সিজদায় ও অন্যান্য সময় জিকির হিসাবে পড়া যায়। এর মাধ্যমে আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করা হয় এবং গুনাহ মাফ, মর্যাদা বৃদ্ধি ও প্রশান্তি লাভ করা যায়। প্রতিদিন এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔