সহবাসের দোয়া ও নিয়ম এবং করণীয় কাজ সুমহ

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। দাম্পত্য জীবনও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসলামে দাম্পত্য সম্পর্ককে পবিত্র ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য কিছু নিয়ম ও আদব রয়েছে। সহবাসের ক্ষেত্রেও ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং এ সম্পর্কে কিছু দোয়া ও নিয়ম নির্ধারণ করেছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা সহবাসের দোয়া ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সহবাসের গুরুত্ব ও ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামে দাম্পত্য জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ককে একটি পবিত্র বন্ধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক ও মানসিক সংযোগ তৈরি করে। ইসলামে সহবাসকে হালাল ও পবিত্র কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে এর জন্য কিছু নিয়ম ও আদব মেনে চলা আবশ্যক।

সহবাসের পূর্বে করণীয়

নিয়ত পরিশুদ্ধ করা:
সহবাসের পূর্বে নিয়ত পরিশুদ্ধ করা জরুরি। এটি শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা উচিত।

দোয়া পড়া
সহবাসের পূর্বে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া সুন্নত:
“بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا”
অর্থ: “আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং আমাদের যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখো।”
এই দোয়া পড়লে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং সন্তান শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়।

পর্দা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা
সহবাসের সময় পর্দা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসলামের একটি মৌলিক নীতি।

সহবাসের সময় করণীয়

আদব রক্ষা করা:
সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আদব রক্ষা করা জরুরি। এটি একটি পবিত্র কাজ, তাই অশ্লীলতা বা অসৌজন্যমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত।

স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করা:
ইসলামে স্ত্রীর সাথে সদাচরণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সহবাসের সময়ও স্ত্রীর প্রতি স্নেহ ও মমতা প্রদর্শন করা উচিত।

সহবাসের পরে করণীয়

গোসল করা
সহবাসের পরে গোসল করা ফরজ। এটি শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দোয়া পড়া
সহবাসের পরে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া সুন্নত:
“الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا”
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাধ্যমে বংশ ও শ্বশুরবাড়ির সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।”

আরও আপনার জন্য –শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস

আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা
সহবাসের পরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এটি একটি নেয়ামত যা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন।

সহবাস সম্পর্কে ইসলামিক বিধান

হালাল পদ্ধতি:
ইসলামে শুধুমাত্র বৈধ স্ত্রীর সাথে সহবাস করা জায়েজ। অবৈধ সম্পর্ক বা ব্যভিচার সম্পূর্ণ হারাম।

স্ত্রীর অধিকার:
ইসলামে স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বামীর উচিত স্ত্রীর সাথে ন্যায়বিচার করা।

গোপনীয়তা রক্ষা:
সহবাসের বিষয়টি গোপন রাখা উচিত। এটি ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বিষয়, তাই অন্যের সামনে আলোচনা করা উচিত নয়।

সহবাসের দোয়া কি?

بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা জান্নিবনা আশ-শাইত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ-শাইত্বানা মা রযাক্তানা।

অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আপনি আমাদেরকে যে সন্তান দান করবেন, তাকেও শয়তান থেকে রক্ষা করুন।

বাসর রাতে কি দোয়া পড়তে হয়?

দোয়া:بَارَكَ اللَّهُ لَكَ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ، وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ

উচ্চারণ (বাংলায়):বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকাল্লাহু আলাইকা, ওয়া জামা’আ বাইনাকুমা ফি খাইরিন।

অর্থ:আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন, তোমার প্রতি বরকত বর্ষণ করুন এবং তোমাদের দু’জনকে কল্যাণের সঙ্গে একত্রিত করুন।

স্ত্রী সহবাসের উত্তম সময় কখন?

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের নির্দিষ্ট কোনো সময় বাধ্যতামূলক নয়। তবে কিছু সময়কে উত্তম ও উপকারী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। নিচে কিছু সুপরিচিত ও উপকারী সময় উল্লেখ করা হলো:

🕰️ সহবাসের উত্তম সময়সমূহ:

  1. রাতের সময় (বিশেষ করে ঈশার পর)

    • সারাদিনের কাজের পর এই সময়টি প্রশান্তি ও পারস্পরিক ভালোবাসা বিনিময়ের জন্য অনুকূল।
    • নবী (সা.) রাতের সময় পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
  2. তাহাজ্জুদ বা শেষ রাতের আগে

    • এ সময় ইবাদত ও দাম্পত্য সম্পর্ক উভয়ই সুন্দরভাবে রক্ষা করা যায়।
  3. জুমার রাত (বৃহস্পতিবার রাতে) বা জুমার দিন

    • এই সময়কে বিশেষভাবে বরকতময় ও কল্যাণময় বলা হয়েছে।
  4. ঈদের রাতগুলোতে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত)

    • পারিবারিক আনন্দ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
  5. ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর

    • দীর্ঘদিনের দূরত্বের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় দৃঢ় হয়।

⚠️ যেসব সময় সহবাস থেকে বিরত থাকা উচিত:

  1. মাসিক ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে (নিষিদ্ধ)।
  2. দিনের এমন সময়ে যখন ক্লান্তি বা মানসিক অশান্তি থাকে।
  3. ইবাদতের জন্য নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে (যেমন আজানের সময় বা ফরজ নামাজের সময়)।

🌿 স্মরণযোগ্য বিষয়:

  • সহবাসের আগে ও পরে দোয়া পড়া সুন্নত।
  • পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও মনোযোগ থাকা উচিত।
  • মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতির বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি।

সহবাসের দোয়া হাদিস

হাদিসের متن (আরবি):إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْتِيَ أَهْلَهُ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا، فَإِنْ قُضِيَ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ، لَمْ يَضُرَّهُ الشَّيْطَانُ أَبَدًا

উচ্চারণ (বাংলায়):ইজা আরাদা আহাদুকুম আয়্যাটি আহলাহু ফালিয়াকুল: বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা জান্নিবনা আশ-শাইত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ-শাইত্বানা মা রযাক্তানা। ফা-ইন কুযিয়া বাইনাহুমা ওয়ালাদুন, লাম ইয়াদুররুহুশ শাইত্বানু আবাদা।

অর্থ:তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রী সহবাস করতে চায়, তখন সে যেন বলে: ‘বিসমিল্লাহ, আল্লাহুম্মা জান্নিবনা আশ-শাইত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ-শাইত্বানা মা রযাক্তানা।’ অর্থাৎ আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবেন, তাকেও শয়তান থেকে রক্ষা করুন।
যদি সেই সহবাস থেকে সন্তান জন্মায়, শয়তান কখনোই সেই সন্তানের ক্ষতি করতে পারবে না।

🕌 হাদিসের সূত্র:

  • সহিহ বুখারি: হাদিস নম্বর ১৪১ এবং ৩২৭১
  • সহিহ মুসলিম: হাদিস নম্বর ১৪৩৪

সহবাসের দোয়া ও নিয়ম সম্পর্কে প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: সহবাসের পূর্বে দোয়া পড়া কি বাধ্যতামূলক?

উত্তর: সহবাসের পূর্বে দোয়া পড়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি সুন্নত। এই দোয়া পড়লে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়।

প্রশ্ন ২: সহবাসের পরে গোসল না করলে কী হবে?

উত্তর: সহবাসের পরে গোসল করা ফরজ। যদি কেউ গোসল না করে, তাহলে তার নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে না।

প্রশ্ন ৩: স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় কী কী আদব মেনে চলা উচিত?

উত্তর: স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করা, আদব রক্ষা করা এবং তার প্রতি স্নেহ ও মমতা প্রদর্শন করা উচিত।

উপসংহার

ইসলামে সহবাসকে একটি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক ও মানসিক সংযোগ তৈরি করে। সহবাসের পূর্বে, সময়ে ও পরে কিছু নিয়ম ও আদব মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়মগুলি মেনে চললে দাম্পত্য জীবন সুন্দর ও সুখময় হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি। বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।